১৪ অক্টোবর ২০২০, বুধবার, ১২:১৮

৭৪ শতাংশ বস্তিবাসীর দেহে প্রতিরোধক সৃষ্টি

করোনায় আরো ২২ মৃত্যু

রাজধানীর বস্তিবাসীদের ৭৪ শতাংশই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে গড়ে তুলেছে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা। এদের সবার মধ্যেই আইজিএম ও আইজিজি ইমুনোগ্লোবিন-এম ও ইমুনোগ্লোবিন-জি) গড়ে উঠেছে বলে রোগ তত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ও আন্তর্জাতিক কলেরা গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকার ৪৫ শতাংশ মানুষের মধ্যে গড়ে উঠেছে প্রতিরোধ ব্যবস্থা। এই ৪৫ শতাংশের মধ্যে আইজিএম ও আইজিজি নামক অ্যান্টিবডি গড়ে উঠেছে। উল্লেখ্য, শরীরের এই দু’ধরনের অ্যান্টিবডি ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলে।

আইসিডিডিআরবির সিনিয়র বিজ্ঞানী ও মিউকাসল ইমিউনোলজি অ্যান্ড ভ্যাক্সিনোলজি ইউনিটের প্রধান ড. ফিরদৌসি কাদরী করোনাবিষয়ক উপস্থাপনায় বলেন, কোনো ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে শরীর ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য অ্যান্টিবডি গড়ে তুলে। শরীরে টি সেল ও বি সেল ছাড়াও অ্যান্টিবডি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং ভাইরাস অকার্যকর করে দিতে অথবা ভাইরাসকে নিরপেক্ষ করে দিতেও অ্যান্টিবডি কাজ করে। তিনি বলেন, ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে প্রথমে তা প্রতিরোধক ব্যবস্থা আইজিএম তৈরি হয় এবং আইজিএম স্বল্প সময়ের জন্য শরীরে থাকে। কিন্তু ভাইরাস প্রবেশের পর অনেক দিন পর্যন্ত শরীরে আইজিজি থাকে।

ড. ফিরদৌসি কাদরী বলেন, করোনাভাইরাসের লক্ষ্মণ রয়েছে রোগীদের চেয়ে লক্ষ্মণ নেই এমন রোগীদের দেহে অনেক বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে থাকে। মৃদু লক্ষ্মণ রয়েছে এমন করোনার রোগীদের দেহে প্রথম এক মাস শতভাগ আইজিজি নামক অ্যান্টিবডি থাকে। আর করোনায় সংক্রমিত কিন্তু লক্ষ্মণ নেই এমন রোগীদের দেহে ৪৫ শতাংশ আইজিজি নামক অ্যান্টিবডি থাকে। অন্য দিকে করোনায় সংক্রমণের দুই সপ্তাহ পর্যন্ত মৃদু লক্ষ্মণ রয়েছে এমন রোগীদের ৭২ শতাংশ পর্যন্ত আইজিএম অ্যান্টিবডি থাকে। করোনায় আক্রান্ত কিন্তু লক্ষ্মণ নেই এমন রোগীদের দেহে আইজিএম ২২ শতাংশ পর্যন্ত আইজিএম অ্যান্টিবডি থাকে।

আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবির গবেষকরা ঢাকা শহরের তিন হাজার ২২৭টি খানার (হাউজহোল্ড) করোনার লক্ষ্মণ রয়েছে এমন ৫৫৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৩৩ জনের দেহে করোনার অ্যান্টিবডি পেয়েছেন। আবার লক্ষ্মণ নেই এমন ৮১৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৫৯ জনের দেহে অ্যান্টিবডি পেয়েছেন। অন্য দিকে ঢাকা শহরের বস্তিগুলোর মধ্যে থেকে ৯৬০ খানার করোনার লক্ষ্মণ রয়েছে এমন ৯৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৬ জনের দেহে অ্যান্টিবডি পেয়েছেন তারা। একই খানার লক্ষ্মণ নেই এমন ৩২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৮৯ জনের নমুনার মধ্যে অ্যান্টিবডি পেয়েছেন।

ড. ফিরদৌসি কাদরী বলেন, গত জুলাই মাসে ঢাকার বস্তিতে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দীর্ঘ সময় থাকে আইজিজি নামক অ্যান্টিবডি উচ্চ হারে পাওয়া গেছে। বস্তিতে আইজিজি সবচেয়ে কম পাওয়া গেছে এপ্রিল মাসে এবং এপ্রিল মাসেই গবেষণাটি শুরু হয়।

বস্তিবাসীদের মধ্যে আইজিজি পাওয়া গেছে ৭১ শতাংশ এবং আইজিএম পাওয়া গেছে ৩৩ শতাংশ। বস্তিবাসী ছাড়া ঢাকা শহরের অন্যান্য অংশের মানুষের মধ্যে আইজিজি পাওয়া গেছে ৪৪ শতাংশ এবং আইজিএম পাওয়া গেছে ৩৯ শতাংশ।

গবেষণার ফল হিসেবে বলা হয়েছে, ঢাকার মানুষের মধ্যে উৎসাহব্যঞ্জক প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা হার্ড ইমিউনিটি গড়ে উঠছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৫ ওয়ার্ডের একটি করে মহল্লার মানুষের মধ্যে এই গবেষণা করা হয়। প্রতি মহল্লা থেকে ১২০টি খানা এতে অংশ নেয়।
করোনায় আরো ২২ মৃত্যু : শনাক্ত ১৫৩৭

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এ নিয়ে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচ হাজার ৫৭৭ জনে। অন্য দিকে করোনা পজিটিভ হয়েছেন এক হাজার ৫৩৭ জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত তিন লাখ ৮১ হাজার ২৭৫ জন শনাক্ত হলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৪৮২ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন দুই লাখ ৯৫ হাজার ৮৭৩ জন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর এ তথ্য জানায়।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ জন এবং পাঁচজন নারী। এখন পর্যন্ত চার হাজার ২৯২ জন পুরুষ ও এক হাজার ২৮৫ জন নারী করোনায় মারা গেছেন। গতকাল করোনায় মারা যাওয়া ২২ জনের সবাই হাসপাতালে মারা গেছেন। বয়স বিশ্লেষণে দেখা গেছেন, গতকাল করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব বয়সী ১৪ জন, ৫১-৬০ বছরের মধ্যে তিনজন, ৪১-৫০ বছরের মধ্যে একজন, ৩১-৪০ বছরের মধ্যে তিনজন, ২১-৩০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছেন। অন্য দিকে বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গতকাল ঢাকা বিভাগে ১৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে পাঁচজন এবং রংপুরে দুইজন মারা গেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত করোনায় মৃতদের মধ্যে ঢাকায় দুই হাজার ৮৪৪ জন, চট্টগ্রামে এক হাজার ১২২ জন, রাজশাহীতে ৩৫৯ জন, খুলনায় ৪৪৯ জন, বরিশালে ১৯৩ জন, সিলেটে ২৩৮ জন, রংপুরে ২৫৪ জন এবং ময়মনসিংহে ১১৮ জন মারা গেছেন।

শজিমেক হাসপাতালে ৬ দিন ধরে করোনা পরীক্ষা বন্ধ
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের আরটি পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণ দেখিয়ে তিন দিন নমুনা পরীক্ষা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। তবে ৬ দিন পার হওয়ার পরেও সেখানে এখনো করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়নি। এমনকি কবে নাগাদ নমুনা পরীক্ষা শুরু হবে তা কেউ বলতে পারছেন না।

জানা গেছে, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের আরটি পিসিআর ল্যাবে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গত ৮ অক্টোবর থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত তিন দিন করোনা পরীক্ষা এবং নমুনা সংগ্রহ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় জেলা স্বাস্থ্য অধিদফতর। কিন্তু ঘোষণার তারিখ পার হয়ে আরো তিন দিন বন্ধ থেকেও সমস্যার সমাধান হয়নি। কেউ বলতে পারছেন না, কবে থেকে এখানে নমুনা পরীক্ষা শুরু হবে। এতে সাধারণ মানুষ পড়েছেন দুর্ভোগে। বেসরকারি হাসপাতাল টিএমএসএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা নমুনা পরীক্ষা অব্যাহত থাকলেও সেখানে ব্যয়বহুল হওয়ায় সাধারণ মানুষ সেখানে যান না। গত ২০ এপ্রিল থেকে বগুড়া শজিমেকের আরটি পিসিআর ল্যাবে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনা পরীক্ষা শুরু করা হয়।

বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন বলেন, শজিমেক হাসপাতালের আরটি পিসিআর ল্যাবে যান্ত্রিক জটিলতা সমাধানে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে। কবে নাগাদ আবার পরীক্ষা চালু করা যাবে তা এখনো সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে শজিমেকের জিন-এক্সপার্ট মেশিনে সীমিত আকারে করোনা পরীক্ষা চলছে।
রাজশাহী বিভাগে গত পাঁচদিনে কোনো মৃত্যু নেই

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী বিভাগে টানা পাঁচদিন করোনাভাইরাসে কারো মৃত্যু হয়নি। সর্বশেষ গত বুধবার বিভাগে দুইজনের মৃত্যু হয়েছিল করোনায়। এরপর সোমবার পর্যন্ত কারো মৃত্যু হয়নি। বিভাগে এখন পর্যন্ত ৩১০ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: গোপেন্দ্রনাথ আচার্য্য সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বিভাগে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বগুড়ায়। এ ছাড়া বিভাগের অন্য জেলাগুলোর মধ্যে রাজশাহীতে ৪৬ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৪ জন, নওগাঁয় ২১ জন, নাটোরে ১২ জন, জয়পুরহাটে সাতজন, সিরাজগঞ্জে ১৩ জন এবং পাবনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার বিভাগে নতুন ২৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে রাজশাহীতে পাঁচজন, জয়পুরহাটে একজন, বগুড়ায় ১৫ জন, সিরাজগঞ্জে দুইজন এবং পাবনায় একজন শনাক্ত হয়েছেন। এ দিন বিভাগে ৪৯ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। এর মধ্যে রাজশাহীতে ছয়জন, নাটোরে ১১ জন, জয়পুরহাটে দুইজন, বগুড়ায় ২১ জন এবং পাবনায় ৯ জন করে ব্যক্তি করোনামুক্ত হয়েছেন। বিভাগে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ২০ হাজার ৪৩০ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৮ হাজার ৭০৭ জন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২ হাজার ৪৬১ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আটজন।
চট্টগ্রামে ৬০ জনের করোনা শনাক্ত

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে ৬০ জন করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫৬ জন নগরীর ও ৪ জন উপজেলার বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা: সেখ ফজলে রাব্বি।

চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১৯ হাজার ৭০৮ জন। এর মধ্যে ১৪ হাজার ২৬৪ জন নগরীর ও পাঁচ হাজার ৪৪৪ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।

গতকাল মঙ্গলবার সিভিল সার্জন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে ২৮ জন, ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডিতে ৯ জন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারজন, ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনজন, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ১২ জন, মা ও শিশু হাসপাতালে চারজনের শরীরে করোনা ভাইরাসের জীবাণু পাওয়া গেছে।
চুয়াডাঙ্গায় ৩ জনের করোনা শনাক্ত

চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা জানান, চুয়াডাঙ্গায় নতুন করে ৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৪৫৮ জন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করে। জেলায় এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৩৫৫ জন। নতুন আক্রান্ত তিনজনই পুরুষ এবং চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বাসিন্দা। তাদের বয়স ৩২ থেকে ৫৮ বছর।

চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিস থেকে গতকাল দেয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, জেলা থেকে এ পর্যন্ত মোট নমুনা সংগ্রহ পাঁচ হাজার ৯৪৩টি, প্রাপ্ত ফলাফল পাঁচ হাজার ৮০০টি, পজিটিভ এক হাজার ৪৫৮টি, নেগেটিভ নয় হাজার ৩৪৪টি। করোনায় এ জেলায় মারা গেছেন ৩৪ জন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/535233/%E0%A7%AD%E0%A7%AA