৮ অক্টোবর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১১:৩০

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা

চলতি বছরের মার্চ মাসে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করার প্রায় ছ'মাস পর সিদ্ধান্ত এলো যে ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। এর পরিবর্তে পরীক্ষার্থীদের ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করা হবে। তবে সরকারি এই সিদ্ধান্তকে অনেক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীই ইতিবাচকভাবে নেননি। বরং তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
অনেক শিক্ষার্থীই বলছেন, সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থাৎ জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের গড়ের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার ফল নির্ধারণ করবে সেটি আসলে যৌক্তিক নয়। তারা বলছেন, অনেক শিক্ষার্থী হয়তো জেএসসি কিংবা এসএসসি পরীক্ষায় ভাল না করলেও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে সেটি পুষিয়ে নেয়। কিন্তু এর ফলে সেই সুযোগ আর থাকছে না। এমনই একজন রংপুরের এক শিক্ষার্থীর মা মমতাজ বেগম। তিনি নিজেও একজন শিক্ষক।
মমতাজ বেগম বলেন, এই বিষয়টিতে তেমন ভালভাবে দেখছেন না তিনি। কারণ তিনি মনে করেন, সব বাচ্চা জেএসসি বা এসএসসি-তে ভাল রেজাল্ট করেছে বিষয়টি তেমন নয়। তিনি বলেন, "অনেকেই এইচএসসিতে এসে কামবাক করতে পারতো। কিন্তু সেই সুযোগ তো তারা পেল না।" এটি তাদের ভবিষ্যৎ জীবনেও প্রভাব ফেলবে বলে তিনি মনে করেন। "অনেকে বলতে পারে, ও আচ্ছা তোমরা ২০২০ ব্যাচ? তোমরা তো পরীক্ষা না দিয়েই পাস করছো। আমাদের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তো আমরা এমনটা চাই না," বলেন তিনি। রিদুয়ান আবরার নামে এক পরীক্ষার্থী জানান, জেএসসির ফল বেশ ভাল তার। তবে অসুস্থ থাকার কারণে এসএসসির ফল ভাল করতে পারেননি। ভেবেছিলেন যে, এইচএসসির ফলে সে বিষয়টি পুষিয়ে নেবেন। সেরকম প্রস্তুতিও ছিল। তবে এমন সিদ্ধান্তের কারণে তার আর সে সুযোগটি থাকছে না বলে জানান রিদুয়ান আবরার। তিনি বলেন, "এইচএসসি যদি হতো তাহলে হয়তো আমি রিকভার করে আরো ভাল করতে পারতাম। আমার বিশ্বাস ছিল যে আমি ভাল রেজাল্ট করতে পারবো। এদিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে গেলাম।" নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পরীক্ষার্থী বলেন, সরকারি এই সিদ্ধান্তে তার আপত্তি রয়েছে।
কারণ, তিনি মনে করেন, এসএসসি ও এইচএসসির ফল যেহেতু মেডিকেল, বুয়েট ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ তাই এক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত অনেক পরীক্ষার্থীর জন্যই বাধার সৃষ্টি করতে পারে। যা নিয়ে চিন্তিত তিনি। তিনি বলেন, মেডিকেলে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু এমন সিদ্ধান্তের কারণে তিনি এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। কারণ তার জেএসসির ফল ভাল হলেও এসএসসি-তে তেমন ভাল করতে পারেননি তিনি। "এইচএসসির ফলের প্রতি পয়েন্টের সাথে ২৫ আর এসএসসির পয়েন্টের প্রতি পয়েন্টের সাথে ১৫ গুন করে আলাদা ২০০ নম্বর লিখিত পরীক্ষার নম্বরের সাথে যোগ করা হয়। আমার যদি পয়েন্ট কম থাকে এই ফলাফলের কারণে তাহলে আমি লিখিত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেলেও আমার নম্বর অনেক পেছনে থাকবে। আমি হয়তো সরকারি মেডিকেলে চান্স নাও পেতে পারি।" অনেকটা একই ধরণের মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরাও। তারা সরকারি এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক বললেও উচ্চ শিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত বিবেচনায় নেয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে তারা মনে করছেন।
এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক রায়হান আরা জানান, করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে যেহেতু নিরাপত্তার কারণে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব নয়, সে হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। তবে সেই সাথে এটি যেহেতু একটি বিশেষ পরিস্থিতি, তাই উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি বিবেচনায় নেয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। ২০২০ সালের বিষয়টি যেহেতু সব থেকে আলাদা সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের অবশ্যই চিন্তা করার সুযোগ থাকবে। "কোন কোন ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্তের জন্য ঝামেলা হতে পারে সেই বিষয়গুলো নজরে আনতে হবে।" উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, এই ফলের কারণে যদি কোন শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ না পায় বা সমস্যা তৈরি হয় সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে। তিনি মনে করেন, কর্তৃপক্ষ এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মেডিকেল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। সরকারি হিসাবে এ বছর বাংলাদেশে এইচএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি। যার মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ লাখ ৭৯ হাজার ১৭১জন। আর অনিয়মিত পরীক্ষার্থী ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫০১ জন।

 

https://dailysangram.com/post/429926