২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার, ১২:৫৯

কোনো উদ্যোগেই নাগালে আসছে না পেঁয়াজের দাম

এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ৩১ শতাংশ

ভারত হঠাৎ পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে এক দিনে দাম দ্বিগুণ হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে সেই দাম কিছুটা কমলেও এখনো ভোক্তাসাধারণের নাগালের বাইরে। অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তা কাজে লাগছে না। গত এক সপ্তাহেই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ৩১ শতাংশ।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা চালালেও তা কাজে লাগেনি। আগাম ঋণপত্র খোলা আছে এমন ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ আটকা পড়ে আছে ভারতে। ভারত সরকার এই পেঁয়াজ ছাড়ার কথা বললেও গত ১৫ দিনে সীমান্তে আটকে পড়া পেঁয়াজের মধ্যে দেশে এসেছে মাত্র পাঁচ হাজার টন। ব্যবসায়ীরা জানান, এসব পেঁয়াজের অর্ধেকই পচা।

টিসিবির তথ্য অনুসারে গতকাল সোমবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৭৪ থেকে ৮২ টাকা দরে, এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। গত এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে ১৫.৫৬ শতাংশ। আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে, এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। গত এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে ৩১.৪৩ শতাংশ।

গতকাল বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে।

শ্যামবাজার পেঁয়াজ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি মাজেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি করলেও বাজারে ওই পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকার কমে বিক্রি করা সম্ভব হবে না। এ ছাড়া মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে খরচ পড়বে কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৬২ টাকা। ওই পেঁয়াজ পাইকারি ৭০ টাকা এবং খুচরায় ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি করতে হবে। নতুন পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত সাধারণ ভোক্তার নাগালে আসবে না পেঁয়াজের বাজার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ১ থেকে ১৯ তারিখ পর্যন্ত পেঁয়াজের জন্য ঋণপত্র খোলা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৪১২ মেট্রিক টনের। এর মধ্যে দেশে এসেছে ৬০ হাজার ৯২৮ টন। তুরস্ক, মিসর, চীন, মিয়ানমার, নেদারল্যান্ডস ও পাকিস্তান থেকে এসব পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে।

পেঁয়াজের সংকট উত্তরণে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বল্প মেয়াদে অন্য দেশ থেকে দ্রুত পেঁয়াজ আনতে হবে। এ জন্য মিয়ানমার, পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আনা যেতে পারে। তবে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল করতে হলে ভারতের সঙ্গে দ্রুত কূটনৈতিক তৎপরতায় পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে। এ ছাড়া নিজেদের উৎপাদন বাড়িয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে।

পেঁয়াজের সংকট মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি কালের কণ্ঠকে বলেন, পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে হবে। এ জন্য ভালো মানের বীজ এবং গ্রীষ্মেও পেঁয়াজের ফলন হয়, এমন পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার। বাজার নিয়ন্ত্রণে ই-কমার্সের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের পাশে দাঁড়াতে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বছরজুড়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারের পরামর্শে গত বছরের মতো এবারও সিটি গ্রুপ পেঁয়াজের বাজারের সংকট কাটাতে পেঁয়াজ আমদানি করবে। গত সপ্তাহে পাঁচ হাজার টন পেঁয়াজের জন্য ঋণপত্র খোলা হয়েছে।

এস আলম গ্রুপের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক কাজী সালাউদ্দিন আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলেছি আমরা। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এসব পেঁয়াজে দেশে এসে পৌঁছাবে।’

https://www.kalerkantho.com/online/national/2020/09/29/960395