রাজশাহী: অবিক্রিত চিনি পড়ে আছে রাজশাহী সুগার মিলের গুদামে
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, সোমবার, ৫:৩৫

রাজশাহী সুগার মিলের চিনি গুদামবন্দী শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন নেই ৩ মাস

শত শত মেট্রিক টন চিনি অবিক্রীত পড়ে থাকায় তিন মাস ধরে বেতন বন্ধ রয়েছে রাজশাহী সুগার মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের। তারা আশঙ্কা করছেন, সরকারি পাটকলের মতো রাজশাহী সুগার মিলও না বন্ধ হয়ে যায়।

সর্বশেষ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন এবং পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে চিনিকল বিষয়ে সার্বিক তথ্য চেয়ে পাঠানো চিঠি পেয়ে আরো আশঙ্কার মধ্যে পড়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকরা। সুগার মিল থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯০ সালের পর থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ লোকসান গুণতে থাকা রাজশাহী সুগার মিলে মাঝখানে কয়েকবছর চিনির উৎপাদন কমতে থাকলেও পর্যায়ক্রমে আবার তা বাড়ছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ লাখ ২৯ হাজার ২৫১ মেট্রিক আখ মাড়াই থেকে চিনি উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ৮ হাজার মেট্রিক টন। আগামি অর্থবছরে ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চিনি উৎপাদনে প্রতিকেজিতে ১০৮ টাকা খরচ হলেও তা সরকার নির্ধারিত বিক্রয়মূল্যে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছিল। তারপরও বাজারে চিনির দাম কমে যাওয়ায় রাজশাহী সুগার মিলের গুদামে চার মাস ধরে ২ হাজার ১৬৬ মেট্রিক টন চিনি অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যার বাজার মূল্য ১৩ কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ চিনি অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে থাকায় রাজশাহী সুগার মিলের ৭২১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকের তিন মাস ধরে বেতন বন্ধ রয়েছে। শ্রমিক-কর্মচারীরা জানান, পাবনার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত বাংলাদেশ সুগার ক্রপ রিসার্চ ইন্সটিউটিউট কৃষকদের মাঝে ভালো মানের আখের জাত সরবরাহ না করায় আখ থেকে চিনি আহরণের হার কমে গেছে। আগে যেখানে আখ থেকে চিনি আহরণের হার ৮ থেকে ৯ শতাংশ ছিল এখন সেটা অনেক কমে গেছে। এবছর চিনি আহরণের হার ছিল ৬ দশমিক ২১ শতাংশ। এছাড়া বাজারের চেয়ে সরকার নির্ধারিত চিনির দাম বেশি হওয়ায়ও চিনির দাম কমে গেছে। বাজারের যেখানে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫৭ টাকা কেজি দরে সেখানে সরকার নির্ধারিত চিনির মূল্য ৬০ টাকা কেজি দরে।

রাজশাহী চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রহিদুল ইসলাম কালু জানান, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণেই চিনিকলগুলো মার খাচ্ছে। যখন চিনির দাম বাজারে বেশি তখন চিনিগুলো ছেড়ে দেয় না। আবার বড় বড় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কাছে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে তারা কমদামে বিদেশি চিনি আমদানি করে কম দামে বাজারে ছেড়ে দেয়। সেইসব চিনি স্বাস্থ্যসম্মতও নয়। আর আখ থেকে মাড়াই চিনি পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত। এছাড়া পাবনার ঈশ্বরদীতে ক্রপ ইনস্টিটিউট থেকে যে ধরনের আখের জাত সরবরাহ করা হয় তা থেকে চিনি আহরণের হারও খুবই কম। এসব কারণেই চিনিকলগুলো মার খাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের ১৬টি চিনিকলের মধ্যে আখ থেকে চিনি আহরণের হারে তৃতীয় নম্বরে এবং চিনির গুণগতমানের দিক থেকে এক নম্বরে থাকা রাজশাহী সুগার মিলের সাথে প্রায় ১১ হাজার আখচাষী জড়িত রয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় লাখখানেক মানুষের কর্মসংস্থান ঘটে এই সুগার মিলের মাধ্যমে। সেখানে গত কয়েকদিনের ব্যবধানে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে চিনিকলের বিষয়ে সার্বিক তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানোতে আশঙ্কার মধ্যে ফেলেছে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের। তারা আশঙ্কা করছেন, সরকারি পাটকলের মতো না চিনিকলও বন্ধ করে দেয়া হয়। রাজশাহী চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মজিবর রহমান জানান, আমরা আতঙ্কিত। এমনিতে তিন মাসের বেতন বন্ধ থাকায় আমরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। সেখানে এই ধরনের চিঠি আমাদের শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে। এরকম চিঠি কখনো দেয়া হয় না। তবে রাজশাহী চিনিকলের একজন কর্মকর্তা জানান, চিনি বিক্রি করে বেতন পরিশোধের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে। আর চিঠি দিয়ে শুধু তথ্য চাওয়া হয়েছে। চিনিকল বন্ধ করা হবে কি না তা আলোচনা হয়নি।

https://dailysangram.com/post/428804