কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত কারণে আহত ও নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ আয়োজিত মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় -সংগ্রাম
২২ মার্চ ২০১৭, বুধবার, ৭:৪৭

৭ বছরে কর্মক্ষেত্রে প্রাণ হারিয়েছে ৫ হাজার ৪৬৭ শ্রমিক

গত ৭ বছরে কর্মক্ষেত্রে প্রাণ হারিয়েছে ৫ হাজার ৪৬৭ জন শ্রমিক এর মধ্যে ২০০৮ থেকে ১৫ সাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৫,৩৩৯ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। আর পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন ১০,৮৩০ জন। অপরদিকে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২৮ জন শ্রমিক ও আহত হয়েছেন ১০০ জন। পঙ্গুত্ব বরণকারী মানুষের জীবন যাপন চলছে মানবেতরভাবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিল্স ও শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)-এর যৌথ উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার ‘কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত কারণে আহত ও নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ বিষয়ে জাতীয় মানদন্ড’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য দেয়া হয়েছে। এতে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিলসের অ্যাডভোকেসি কর্মকর্তা এডভোকেট মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি ও বিলসের ভাইস চেয়ারম্যান শুক্কুর মাহমুদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বিলসের যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ওয়াজেদুল ইসলাম। মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন,শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক। ]বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) ইসরাত হোসেন খান, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব আনিসুল আউয়াল, শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের আহ্বায়ক হামিদা হোসেন, বিজিএমএ’র ভাইস-প্রেসিডেন্ট (ফাইনান্স) মোহাম্মদ নাসির প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডা: ওয়াজেদুল ইসলাম খান।
সেমিনারে বলা হয় ২০১৫ সালে পরিবহন সেক্টরে নিহত হয়েছেন ১২৫ জন, আহত ৪২। নির্মাণ সেক্টরে নিহত ৬১, আহত ১১৯। কারখানায় নিহত ৩৭ জন, আহত ১৭। ঐ বছরে গৃহশ্রমিক নিহত হয় ৩৯ জন, আহতের সংখ্যা ৩৯। তৈরি পোশাক শিল্পে নিহত ২১জন, আহত ১১০। কৃষি খাতে নিহত ৯। অপরদিকে দিনমজুরের কাজে ঐ বছরে নিহত হন ২৮ জন ও আহত হন ২ জন।
দুর্ঘটনার এসব তথ্য দিয়ে আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয় কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত কারণে আহত ও নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ পায় না। আর এজন্য তারা শ্রম আইন সংশোধন করে ক্ষতিপুরনের পরিমাণ বৃদ্ধি ও আইনের ঘাটতি দূর করার পরামর্শ দেয়া হয়। দেয়া হয় আইনে মানদন্ড নির্ধারণ করা এবং সময়ের সাথে আনুপাতিক হারে ক্ষতিপুরণের বৃদ্দি করার পরামর্শও। অপ্রাতিষ্ঠানিক ও স্বনিয়োজিত সব শ্রমিকের জন্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতেরও পরামর্শ দেন তারা।
সেমিনারে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, কর্মক্ষেত্রে দূর্ঘটনায় কোন গার্মেন্ট শ্রমিকের মৃত্যু ঘটলে তার ক্ষতিপূরণ এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা করার ঘোষণা আগামী মাসেই আসতে পারে।
গার্মেন্ট শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের স্বার্থ দেখা মালিকপক্ষের একান্ত কর্তব্য। কিন্তু অধিকাংশেই শ্রমিকদের স্বার্থ দেখেন না। তাই সরকারের পক্ষ থেকে নতুন নীতিমালা ঘোষণা করা হবে। এ ঘোষণা অনুযায়ী গার্মেন্ট মালিকরা গার্মেন্ট শ্রমিকদেরকে ক্ষতিপূরণ (কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে) বাবদ পাঁচ লাখ টাকা দিতে বাধ্য থাকবে। আহত শ্রমিকদের জন্য যুক্তিযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকবে। আগামী মাসের প্রথম (১ এপ্রিল) তারিখেই এই নীতিমালা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হতে পারে’। এজন্য ইন্সুরেন্স কোম্পানিদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা হবে।
তিনি আরও জানান, সকল ধরনের শ্রমিকদের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন করা হবে। কোন শ্রমিক মারা গেলে সেখান থেকে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া হবে। এজন্য ত্রিপক্ষের (শ্রমিক-মালিক-সরকার) সমন্বয়ে একটি নীতিমালা করা হতে পারে বলে জানান তিনি।
সভায় উপস্থিত বক্তারা মন্ত্রীর কাছে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ (কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটলে) হিসেবে পনের লাখ টাকা করার প্রস্তাব করলে মন্ত্রী বলেন, ‘অবাস্তব চিন্তা করবেন না। সরকারের সীমাবদ্ধতা আছে। সরকার সব করবে না। পৃথিবীর এমন কোন দেশ নেই যেখানকার সরকার শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য সব করে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার প্রাইভেট চাকরিজীবীদের ক্ষতিপূরণ দিবে না।

http://www.dailysangram.com/post/276695-