২১ মার্চ ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:১৩

হজ্বের প্রাক-নিবন্ধনে অনিয়মের তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত

চলতি বছর হজে¦র প্রাক-নিবন্ধনে অনিয়ম হয়েছে কিনা এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে। কমিটি প্রতিবেদনটি ধর্মমন্ত্রীর কাছে দাখিল করেছে। যে কোন সময় তা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে ধর্মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। প্রাক-নিবন্ধনে অনিয়মের বিষয়ে যে সকল অভিযোগ করা হয়েছিল তার সত্যতা তদন্ত কমিটি পায়নি বলে সূত্র জানিয়েছে। প্রাক-নিবন্ধনের অনলাইন সার্ভার সিস্টেমে সকলের জন্য সমান সুযোগ ছিল। একসঙ্গে প্রায় ৩০ হাজার প্রাক-নিবন্ধনের জন্য ব্যাংক ইউজারদের অনলাইন আবেদন করায় সার্ভারে চাপ সৃষ্টি হয়। এর ফলে সিরিয়াল নম্বরের ইঞ্জিনটি ধীরগতির হয়। যার কারণে অনেক এজেন্সিকে ব্যাংকে অপেক্ষা করতে হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।


সূত্রমতে, হজ্ব¡ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর পক্ষ থেকে প্রাক-নিবন্ধনে অনিয়মের অভিযোগ এনে তা তদন্ত করার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। তার প্রেক্ষিতে সরকারিভাবে ৩টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর একটি করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। অপর দুটি করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে ধর্মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটিগুলো তাদের তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে তদন্ত প্রতিবেদন ধর্মমন্ত্রীর কাছে দাখিল করেছে। যে কোন সময় তা প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে। অপর দিকে এই রিপোর্টের আলোকে ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে রিপোর্ট প্রকাশ করবে সংসদীয় কমিটি।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফয়েজ আহমেদ ভুইয়া ও যুগ্ম-সচিব (উন্নয়ন) হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন পৃথক দু’টি কমিটি সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য গ্রহণ করেছে ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে।


গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হজে¦র প্রাক-নিবন্ধনের অনিয়ম খুঁজে বের করতে ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুনকে আহ্বায়ক ও ধর্ম সচিব আবদুল জলিলকে সদস্য সচিব করে একটি ‘পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা কমিটি’ গঠন করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এ কমিটিও সংসদীয় কমিটির আগামী বৈঠকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে। বজলুল হক হারুন এমপি বলেন, হজে¦র প্রাক-নিবন্ধনের সঙ্গে সিন্ডিকেট আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হবে। যদি দেখা যায় কারও হস্তক্ষেপে সিন্ডিকেট হয়ে থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার। এতে যদি হজ্ব¦যাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধনে অনিয়মের বিষয়টি প্রমাণিত হয় তাহলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।


হাবের অভিযোগ : ২৬ ফেব্রুয়ারি এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হজ্ব এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) বিজনেস অটোমেশন লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৮টি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়। এতে বলা হয়, ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রাক-নিবন্ধনের জন্য সব এজেন্সি সার্ভার খুলে বসে থাকলেও দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কার্যক্রম শুরু হয়নি। দুপুরের পর নিবন্ধন কার্যক্রম চালু হলেও তার গতি ছিল খুবই ধীর। প্রথম দিনে কোনো এজেন্সি ৪০টির বেশি নিবন্ধন করতে পারেনি। পরের দিন এর গতি আরও কমে যায়। ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সার্ভার বন্ধ ছিল। ফলে কেউ প্রাক-নিবন্ধন করতে পারেনি। অথচ ওই সময়ে চট্টগ্রামের একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ‘অস্বাভাবিক’ সংখ্যায় প্রাক-নিবন্ধন হয়েছে। এছাড়া আইটি প্রতিষ্ঠান বিজনেস অটোমেশনের সিইওসহ সংশ্লিষ্ট অনেকের হজ্ব এজেন্সি লাইসেন্স রয়েছে। তারা একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলে শতাধিক এজেন্সির কাছ থেকে স্বার্থের বিনিময়ে বাণিজ্য করছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার এতই প্রভাবশালী যে, সাধারণ এজেন্সি, হাব এমনিক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদেরও তোয়াক্কা করেন না বলে অভিযোগ করা হয়।


এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে লিখিত জবাব দিয়েছে বিজনেস অটোমেশন। তাতে বলা হয়, ১৯ ফেব্রুয়ারি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রাক-নিবন্ধন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, তদারকি ও তত্ত্বাবধানসংক্রান্ত কমিটির সবার উপস্থিতিতে তাদের সম্মতিতে কার্যক্রম শুরু করা হয়। ওই সময় সার্ভারে কোনো ত্রুটি ছিল না বলে বুয়েটের এ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ মতামত দেন। এ ছাড়া প্রাক-নিবন্ধন কার্যক্রমের সিরিয়াল প্রদানের ইঞ্জিনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। কোনো ধরনের কারসাজি করার সুযোগ নেই সার্ভারে। কাউকে কোনো বিশেষ সুযোগ দেয়া বা কারও কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কোনো পদ্ধতি নেই, বরং বিজনেস অটোমেশনকে বিতর্কিত করতে একটি চক্র হাবের নাম ব্যবহার করে ঢালাওভাবে চিঠি ও মিডিয়ার মাধ্যমে প্রোপাগান্ডা ও ধোঁয়াশা তৈরির অপচেষ্টা করছে। এই চক্রটি নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রাক-নিবন্ধন পদ্ধতি অকার্যকর করার প্রচেষ্টা নেয়। এ চক্রের কারসাজিতে সিদ্ধান্ত বারবার পরিবর্তন হওয়ায় ধর্মমন্ত্রী ঘোষিত ১৫ জানুয়ারিতে প্রাক-নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।


এ বিষয়ে বিজনেস অটোমেশনের প্রধান পরামর্শক বজলুল হক বিশ্বাস জানান, প্রথমে হাব থেকেই দাবি এসেছে- এবার কোনো এজেন্সিতে কমপক্ষে ১৫০ হাজী থাকলে তাকে রেজিস্ট্রেশনের পাসওয়ার্ড দেয়া হবে। এর কম হলে যেন কাউকে না দেয়া হয়। তাদের দাবি ও চাপের মুখে ধর্ম মন্ত্রণালয় তাতেই রাজি হয়। কিন্তু প্রাক-নিবন্ধন চালুর পরদিন আবার এই হাবের পক্ষ থেকে দাবি ওঠে, অনেক ছোট্ট এজেন্সি ১৫০ হজ্বযাত্রী সংগ্রহ করতে পারেনি। তাদেরও সুযোগ দিতে হবে। এজন্য দুই বা তিনটা এজেন্সি মিলেও যদি ১৫০ হয় তবুও যেন রেজিস্ট্রেশনের জন্য পাসওয়ার্ড দেয়া হয়। তাদের এ দাবিও মেনে নেয়া হয়। এতে একাধিক এজেন্সির মালিকরা নিজেদের অতিরিক্ত লাইসেন্স ভাড়া দিয়ে বাণিজ্য করেছে। অভিযোগ রয়েছে, এ চক্রের হোতাদের কারও ১৯টি, কারও ১৭টি আবার কারও ১১টি লাইসেন্স রয়েছে। তারা প্রত্যেকেই একটি করে লাইসেন্স ব্যবহার করে বাকি লাইসেন্স অন্যের কাছে ভাড়া দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।


বিজনেস অটোমেশনের জবাবে আরো বলা হয়, ২২ ফেব্রুয়ারির প্রথম ২ ঘণ্টায় হজ্ব এজেন্সিরা নির্বিঘেœ প্রায় ৩০ হাজার হজ্বে গমনেচ্ছুদের ভাউচার তৈরী করে ব্যাংকে প্রাক-বিন্ধনের জন্য উপস্থাপন করে। প্রতি মুহূর্তে বিপুলসংখ্যক ব্যাংকের ইউজারদের অনলাইন আবেদনের এই চাপ সার্ভারে স্পাইক সৃষ্টি করে, যা প্রাক-নিবন্ধন সিরিয়াল নম্বরের একমাত্র ইঞ্জিনটিকে ধীরগতি করে দেয়। সিরিয়াল নম্বর ফেলার আবেদনের সংখ্যা কমার সঙ্গে সঙ্গে সার্ভার স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্বাভাবিক হতে শুরু করে ও কাজের গতি বৃদ্ধি পায়। ২২ ফেব্রুয়ারি সার্ভার বন্ধের পূর্বে বুয়েটের কম্পিউটার ও প্রকৌশল বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপকবৃন্দ কারিগরি নিরীক্ষা করে জানান যে, সার্ভারে কোন ব্যাাংক/এজেন্সি বা ইউজারকে প্রিভিলেজ দেয়া হয়নি এবং সিস্টেমে সবার জন্য সমান সুযোগ প্রদান করা হয়েছে। সেদিন প্রতি ঘণ্টায় নিবন্ধনের তথ্যও জবাবে তুলে ধরা হয়েছে।

http://www.dailysangram.com/post/276505-