১৪ জুলাই ২০২০, মঙ্গলবার, ১২:৩৭

কূটনীতিকদের রিজেন্টে যেতে নোট ভারবাল পাঠানো হয়েছিল

করোনা পরিস্থিতির সূচনাতে নিজেদের এবং পরিবারের সুরক্ষায় অব্যাহত উদ্বেগের প্রেক্ষিতে উত্তরার বহুল আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতালসহ ৩টি হাসপাতাল বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য ডেজিগনেটেড বা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছিল। ২৪শে মার্চ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই তিন হাসপাতালের নাম উল্লেখ করে ঢাকাস্থ সব বিদেশ মিশনে নোট ভারবাল পাঠায়। তাতে করোনা চিকিৎসার জরুরি প্রয়োজনে কূটনীতিকদের ওই ৩ হাসপাতালে যোগাযোগ এবং যেতে বলা হয়েছিল। ওই দিন (২৪শে মার্চ) করোনা পরিস্থিতি বিশেষত কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষায় সরকারের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, জাপান, ইতালি ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ যৌথভাবে সাক্ষাতে গিয়েছিলেন সেগুনবাগিচায়। সেখানে মন্ত্রণালয়ের করোনা সেলের প্রধান অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ড. খলিলুর রহমান তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং পরিস্থিতি ব্রিফ করেন। তিনি কূটনীতিকদের অভয় দিয়ে সেদিন বলেছিলেন, করোনা একটি বৈশ্বিক মহামারি। গোটা দেশকে রক্ষায় সরকার নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। বিদেশি কূটনীতিকদের সুরক্ষার বিষয়ে সরকারের বিশেষ নজর রয়েছে।

উল্লেখ্য, তারও আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৯ জন রাষ্ট্রদূত বৈঠক করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে। তারাও করোনা পরিস্থিতি বিশেষত কূটনীতিকদের জন্য স্বতন্ত্র ব্যবস্থার অনুরোধ করছিলেন। সচিব তাদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালের সিট ও কেবিন সংরক্ষণে সরকারের চিন্তার কথা জানিয়েছিলেন। ২৪শে মার্চ মিশনগুলোতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো কূটনৈতিক পত্রে (নোট ভারবাল) জানানো হয়, করোনা আক্রান্ত হলে ঢাকার ৩ হাসপাতালে সেবা পাবেন বিদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। সরকার বিদেশিদের জন্য তিনটি হাসপাতাল সুনির্দিষ্ট করেছেন। হাসপাতাল তিনটি হলো- স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেড এবং বসুন্ধরাস্থ এভারকেয়ার (পুরাতন এ্যাপোলো) হাসপাতাল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে ওই হাসপাতালত্রয়ে বিদেশিরা কী ফ্যাসিলিটিজ পাবেন- তারও উল্লেখ ছিল। বলা হয়, পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের নতুন আইসোলেশন ইউনিটে কূটনীতিকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে আইসিইউ সুবিধাসহ আটটি কেবিন তাদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে কূটনীতিকদের জন্য আইসিইউ সুবিধাসহ ১৫ বেডবিশিষ্ট একটি ফ্লোর সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এভারকেয়ার বা এ্যাপোলো হাসপাতালে তাদের জন্য আইসিইউ সুবিধাসহ আটটি বেড নির্ধারণ করা হয়েছে। করোনা চিকিৎসা সুবিধা সংক্রান্ত কূটনৈতিক মিশনগুলোতে পাঠানো প্রথম ওই চিঠিতে টেস্টের বিষয়েও নির্দেশনা ছিল। বলা হয়েছিল- কোনো কূটনীতিক বা আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত ব্যক্তি বা তাদের পরিবারের সদস্যের করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে জরুরি পরীক্ষার প্রয়োজনে আইইডিসিআর’র নির্ধারিত ফোন নম্বরে (একটি নম্বর নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়) যোগাযোগ করবেন। সেখানে অবহিত করামাত্র যত দ্রুত সম্ভব বাসস্থানে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করবে আইইডিসিআর কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, ২রা এপ্রিল সব মিশনে দ্বিতীয় দফায় বিদেশিদের করোনা চিকিৎসা সংক্রান্ত নোট ভারবাল পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে আরো একটি হাসপাতাল বিদেশিদের জন্য ডেজিগনেটেড বা সুনির্দিষ্ট করার কথা জানানো হয়। দ্বিতীয় কূটনৈতিক পত্রে বলা হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে বিদেশি কূটনীতিক ও নাগরিকদের চিকিৎসায় ঢাকায় চারটি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগেই সরকারি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল এবং বেসরকারি এভারকেয়ার (সাবেক এ্যাপোলো) ও রিজেন্ট প্রস্তুতির কথা জানানো হয়েছে। এবার চতুর্থ যে হাসপাতালটি প্রস্তুত করা হয়েছে এবং ইতিমধ্যে অনেক কূটনীতিক তা সরজমিন পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তা হলো, অত্যাধুনিক ফ্যাসিলিটিজ সমৃদ্ধ শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটাল।

কূটনীতিকদের করোনা চিকিৎসায় লাইসেন্সবিহীন রিজেন্ট হাসপাতাল নির্দিষ্ট করার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনা সেলের প্রধান ড. খলিলুর রহমান মানবজমিনকে গতকাল বলেন, এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঠিক করে দিয়েছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেবল বিদেশি মিশনগুলোকে অবহিত করেছে। এতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো দায় থাকার বিষয় অস্বীকার করে তিনি বলেন, রিজেন্ট বা এভারকেয়ারকে কখনোই তারা আমলে নেননি। কূটনীতিকদের বরাবরই সরকারি হাসপাতাল স্যার সলিমুল্লাহ এবং শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভারে যেতে উৎসাহিত করা হয়েছে। ওই দু’টি হাসপাতাল তিনি এবং পররাষ্ট্র সচিব ভিজিট করেছেন জানিয়ে ড. খলিল বলেন, কূটনীতিকদেরও আমরা গ্যাস্ট্রোলিভার দেখিয়েছি। তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রিজেন্টের নাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কূটনীতিকদের জন্য ডেজিগনেটেড হাসপাতালের তালিকায় দিলেও তিনি বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কেউ তাতে পা ফেলেননি বলেও দাবি করেন তিনি। বিদেশিদের সঙ্গে করোনা বিষয়ক যোগাযোগের সমন্বয়ক বা ফোকাল পয়েন্ট ড. খলিল বলেন, ভাগ্যিস কোনো বিদেশিকে করোনাকালে হাসপাতালে যেতে হয়নি!

https://mzamin.com/article.php?mzamin=235166