২০ মার্চ ২০১৭, সোমবার, ৮:০২

দফায় দফায় তল্লাশি

বিমানবন্দরে ব্যাপক নিরাপত্তা

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট জোরদার করা হয়েছে। গোলচত্বরে প্রবেশপথ থেকে শুরু করে বোর্ডিং ব্রিজ পর্যন্ত সর্বত্রই চোখে পড়ার মতো নিরাপত্তা আয়োজন। আশকোনায় র্যাব ক্যাম্পে উগ্রবাদী হামলার পর থেকেই সতর্কাবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ, আনসার ও এপিবিএন-এর সহায়তা নেয়া হচ্ছে।
তবে লোকবলের অভাবে শতভাগ সন্তষ্ট নয় কর্তৃপক্ষ। স্পর্শকাতর বেশ কয়েকটি পয়েন্টে স্বল্প প্রশিক্ষিত আনসার সদস্যদের দিয়ে নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এদিকে আনসারসহ বিভিন্ন সংস্থার এক হাজার ৫০০ সদস্যকে পর্যায়ক্রমে ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। তবে সবার ট্রেনিং শেষ হতে আরো এক বছর লেগে যেতেপারে। স্পর্শকাতর স্থানে আনসার দিয়ে ডিউটি করানোয় পুরো কার্যক্রমে কিছুটা ‘দুর্বলতা’ রয়েছে বলে মনে করছেন বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টরা। তবে এ বিষয়টির সাথে দ্বিমত পোষণ করে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কাজী ইকবাল করিম।
গতকাল হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক যাত্রী ও যাত্রী টার্মিনাল-২-এ কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে জানান, এয়ারপোর্ট এখন খুবই নিরাপদ। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যাত্রীর সাথে কেউ আসতে চাইলে টিকিট কেটে আসতে পারবে। তবে তল্লাশি হচ্ছে কঠোরভাবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, আগে শুধু বহির্গমন টার্মিনালের গেট দিয়ে যাত্রীরা প্রবেশ করার সময় স্ক্যানিংয়ের মুখোমুখি হতেন। এখন বোর্ডিং কার্ড নেয়ার সময় পেছনে থাকা স্ক্যানিং মেশিনে দ্বিতীয় দফা লাগেজ তল্লাশি করা হচ্ছে। কোনো সমস্যা পাওয়া গেলে সাথে সাথে ওই লাগেজ অফ লোড করা হচ্ছে। এ ছাড়া পুরো বিমানবন্দরেই এই মুহূর্তে পুলিশ, আনসার, এপিবিএন ছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কঠোর নজরদারি করছেন। ইচ্ছা করলেই বহিরাগতরা ভেতরে প্রবেশ করতে পারছে না। বহিরাগত নয়, আমরা যারা স্টাফ রয়েছি তাদেরও এখন এন্ট্রি করেই নির্ধারিত বহির্গমন টার্মিনালের ৫ নম্বর গেট ও উত্তর পাশের ভিআইপি গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হচ্ছে। তাদের মতে বিমানবন্দরের এই মুহূর্তের নিরাপত্তা চোখে পড়ার মতো।
টার্মিনালে দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বিমানবন্দরের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় জনবল সঙ্কটের কারণে এখনো আনসার সদস্যদের নামমাত্র ট্রেনিং দিয়ে ডিউটি করানো হচ্ছে। তা-ও আবার বোর্ডিং ব্রিজ এলাকায়। ওই কর্মকর্তাদের মতে, সম্প্রতি বিমানবন্দর বহির্গমন টার্মিনালের মূল গেটে স্ক্যানিং করার সময় লাগেজে ধারাল অস্ত্র শনাক্ত হয়। পরে কর্তব্যরতরা ওই যাত্রীকে ব্যাগ থেকে ধারাল অস্ত্র বের করার কথা বললে এ নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতিতে এক নিরাপত্তা সদস্য আহত হন। পরে ওই যাত্রীর যাত্রা বাতিল করে পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়। এ ছাড়া মাঝে মধ্যে বিমানবন্দরে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গত শনিবার রাতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কাজী ইকবাল করিমের সাথে যোগাযোগ করে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সার্বিক নিরাপত্তা বলতে প্রথমত বহিরাঙ্গনের নিরাপত্তার জন্য আমরা এপিবিএনের সাহায্য নিয়েছি। এপিবিএন তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। তল্লাশি বৃদ্ধি করেছে। সেই সাথে আমাদের সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তাগুলো যেমন প্রবেশমুখগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা এনসিওর করা হচ্ছে। ভিজিটর যারা আসছে তাদের ইজারাদারদের মাধ্যমে একবার তল্লাশি করা হচ্ছে। ভেতরে ঢোকার পর আরেকবার তল্লাশি করা হচ্ছে। প্রতিটি যাত্রীর সাথে একজন ভিজিটর ঢুকার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। ভিজিটরের সাথে কোনো ধরনের ব্যাগ কিংবা অন্য কিছু সাথে নিতে দেয়া হচ্ছে না। নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। পেট্রোলিং বাড়ানো হয়েছে।
বিমানবন্দরের স্পর্শকাতর এলাকা যেমন বোর্ডিং ব্রিজ এলাকায় আনসার সদস্য দিয়ে ডিউটি করানো হচ্ছে। এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন ইকবাল করিম নয়া দিগন্তকে বলেন, এগুলো যারা বলছে- এটি এক ধরনের অপপ্রচার। প্রশিক্ষিত আনসার দিয়েই তো আমরা করতেছি। এই আনসার যারা সেখানে ডিউটি করছে তারা প্রত্যেকেই ব্রিটিশ কোম্পানি রেডলাইন দ্বারা ট্রেইনড। ট্রেইনড ছাড়া ওখানে কাউকে ডিউটি দিচ্ছি না। সার্টিফাইড ট্রেইনড হওয়ার পরও যদি এ ধরনের অপপ্রচার চালানো হয় তাহলে আর কী বলার থাকে। কত দিনের ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন এটি দুই সপ্তাহের ট্রেনিং হয়। অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আনসার তো এই বিমানবন্দরে আজকে থেকে না। আনসার তো বিমানবন্দরে ভালো সার্ভিস দিচ্ছে। তবে কিছু নতুন আনসার সদস্য ছাড়া আমি তো কোনো সমস্যা দেখছি না। আমি কিন্তু সবার ওপর সন্তুষ্ট। তবে অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী জনবল সঙ্কট রয়েছে।
ড্রাইভওয়ে বহির্গমনের গেট গেটের সামনে স্ক্যানিং করার সময় যাত্রীর হাতে একজন নিরাপত্তাকর্মী আহত হয়েছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের সিভিল এভিয়েশনের একজন কর্মীকে যাত্রী আহত করেছেন। তাকেও জেলহাজতে রাখা হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/205122