১৯ মার্চ ২০১৭, রবিবার, ৮:৪৩

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল

ছাত্রীদের প্রতিবাদের মুখে কক্ষ দখলমুক্ত হলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের দুটি কক্ষ গত বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণে নিতে গেলে হলের সাধারণ ছাত্রীরা বিক্ষোভ করেন l ছবি: সংগৃহীতঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে প্রশাসনকে পাশ কাটিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের কক্ষে তুলে দেওয়ার ঘটনার তিন দিন পর এবার ছাত্রীদের রোকেয়া হলেও একই ঘটনা ঘটেছে। তবে বিক্ষুব্ধ ছাত্রীদের প্রতিবাদের মুখে একটি কক্ষ দখলমুক্ত করেছে হল প্রশাসন।


ছাত্রীরা বলছেন, রোকেয়া হলের দুটি কক্ষে বৈধ ছাত্রীদের বের করে দিয়ে আসন বরাদ্দ না পাওয়া ২০-২৫ জন ছাত্রলীগ কর্মীকে তুলতে গেলে গত বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সাধারণ ছাত্রীরা হল দখলমুক্ত করার দাবিতে বিক্ষোভ করেন।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের সবচেয়ে পুরোনো হল রোকেয়া হল। মেয়েদের হলে আসন বরাদ্দ নিয়ে এমন বিক্ষোভ সাম্প্রতিক সময়ে ঘটেনি বলে সাধারণ ছাত্রীরা জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, মেয়েদের হলগুলোতে ছাত্রীদের ওঠানো থেকে শুরু করে আসন বরাদ্দ ও বণ্টনের কাজটি এখনো প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে কিছু ছাত্রীকেও তোলা হয়।


ছাত্রীরা বলেন, হলের বর্ধিত ভবনের ছয়জনের একটি কক্ষে (৩০ নম্বর) গত বৃহস্পতিবার রাতে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি লিপি আক্তারের অনুসারীরা একজনকে তুলে দেন। আরও ছাত্রী ওঠাবেন জানিয়ে তিনি বৈধ ছাত্রীদের কক্ষ ছেড়ে দিতে বলেন। কক্ষের ছাত্রীরা বিষয়টি আবাসিক শিক্ষকদের জানান।


প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, এরপর ওই কক্ষের ছাত্রীরা প্রথমে বিক্ষোভ শুরু করেন। পাশের কক্ষগুলো থেকেও ছাত্রীরা এতে অংশ নেন। তাঁরা প্রাধ্যক্ষের কার্যালয় ঘেরাও করেন। ছাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ নিয়ে প্রাধ্যক্ষ হলে অভিযান চালান। কিন্তু এ সময় অবৈধ কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।


ছাত্রীদের অভিযোগ, হল শাখা ছাত্রলীগের কমিটি হওয়ার পর থেকে তারা গত তিন মাসে অন্তত ১৩টি কক্ষ দখল করে। সেখান থেকে বৈধ ছাত্রীদের অন্য জায়গায় পাঠিয়ে নিজেদের কর্মীদের মূল ভবনের ৩, ৭, ২৩, ৩৮, ৩৯ ও ৪২ এবং বর্ধিত ভবনের ২০, ২১, ২৩, ২৪, ৫৩, ৫৯ ও ৮১ নম্বর কক্ষে তুলে দেন ছাত্রলীগ নেত্রীরা।


রাতে অভিযানে কোনো ফল না পাওয়ায় গতকাল সকাল ১০টা থেকে আবার বিক্ষোভ শুরু করেন ছাত্রীরা। তাঁরা দখলমুক্ত হলের দাবি নিয়ে প্রাধ্যক্ষের কার্যালয়ে যান। কয়েক শ ছাত্রী মিছিল বের করেন। ‘অবৈধ হল দখল, মানি না, মানব না’, ‘দখলমুক্ত হল চাই’ এসব স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁরা দাবি জানান, যে কক্ষগুলো ছাত্রলীগ দখল করেছে, সেগুলো দখলমুক্ত করে সাধারণ ছাত্রীদের ফিরিয়ে দিতে হবে। প্রতি মাসে হলের বিষয় নিয়ে সাধারণ সভা করতে হবে এবং জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী কক্ষ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।


ছাত্রীরা বলেন, পরে দুপুরের দিকে ছাত্রীদের দাবির মুখে প্রাধ্যক্ষ মূল ভবনের ২৩ নম্বর কক্ষটি তালাবদ্ধ করে দেন। পরে আবাসিক শিক্ষকেরা ওই কক্ষের বৈধ ছাত্রীদের সাময়িকভাবে অন্য কক্ষে থাকার ব্যবস্থা করে দেন।


২৩ নম্বর কক্ষের এক ছাত্রী নিজেকে বৈধ দাবি করে বলেন, তাঁর জন্য কক্ষে সিট বরাদ্দ করা হয়েছে, সেখানে কয়েক দিন আগে কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী এসে বলেন, তাঁকে কক্ষটি ছাড়তে হবে। এখন থেকে এটি ছাত্রলীগের কক্ষ। এরপর থেকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করে কক্ষ খালি করতে বলে।


অভিযোগ অস্বীকার করে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি লিপি আক্তার বলেন, এগুলো বাম দলগুলোর অপপ্রচার। একটি মেয়েকে বৈধভাবে একটি কক্ষে তুলতে গেলে বাম দলের মেয়েরা ঝামেলা করে। বিষয়টি জানানোর পর হল কর্তৃপক্ষ কক্ষটিতে তালা দিয়েছে।


এসব বিষয়ে জানতে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমা শাহীনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1111747/