১৭ মার্চ ২০১৭, শুক্রবার, ১০:২০

এক বছরে ৩য় দফা অগ্নিকান্ডে পুড়েছে কয়েকশ’ ঘর, সহায়-সম্বলও

 

রাজধানীর সুউচ্চ ভবনগুচ্ছ, ইট পাথরের সুরম্য অট্টালিকা আর ধনিক বণিক শ্রেণীর বসবাস কাজ-কারবার যে গুলশানে, তার পাশেই লেকের পাড়ে কড়াইল বস্তি। এটা যেন বেমানান। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানী লি: (বিটিসিএল) এর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা এই বস্তিতে হাজারো নর-নারীর বাস। দেশের এ সর্ববৃহৎ বস্তি উচ্ছেদের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ বেশ কয়েকবার চেষ্টাও চালায়। গত বছরও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে চেষ্টা চালানো হয়। বস্তিবাসীর বাধার কারণে উচ্ছেদ সম্ভব হচ্ছে না। এ নিয়ে মামলাও হয়েছে একাধিকবার।
অপরদিকে, এই কড়াইল বস্তিতে একের পর এক অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেই চলছে। এক বছরের মধ্যে তৃতীয় দফা বড় ধরনের অগ্নিকান্ডে পুড়ে গেছে কয়েকশ ঘর। সর্বশেষ গত বুধবার রাতে আগুন লাগে। এভাবে বার বার ওই বস্তিতে যে আগুন লাগে, তার কারণ অজানাই থেকে যায়। তার বিনিময়ে বস্তিবাসীর হৃদয়ে যে ক্ষত ধরে তা জাগরুক থেকে পোড়ায়।
কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগার ইতিহাস পুরনো। গত এক দশকে ১৭ বার আগুন লগেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ। গত বছরের ১৪ মার্চ ও ৪ ডিসেম্বর এখানে ভয়াবহ আগুন লাগে। এতে কয়েকশ ঘরবাড়ি পুড়ে যায়। আগুন লাগানোর পেছনে ষড়যন্ত্রের গন্ধও পুরনো।
এখানে আগুন লাগে অজানা কারণে, তবে নেভানোর চেষ্টা চলে বস্তিবাসীর অদম্য বলেই। বেঁচে থাকার তাগিদে আগুন নেভে বটে, তবে কড়াইলের কান্না যেন শেষ হওয়ার নয়। অদৃশ্য ষড়যন্ত্রের থাবায় হাজার হাজার মানুষের স্বপ্ন নিমেষেই পুড়ে ছাই হচ্ছে বার বার। ছাইয়ের স্তূপে দাঁড়িয়েই ফের স্বপ্ন দেখা চলে এখানে। এভাবেই আগুন আর কান্নাকে আগলে রাখেন কড়াইলবাসী।
ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানীর বুকের মধ্যে গড়ে ওঠা এই বস্তি পোশাক শ্রমিক, রিকশাচালকসহ ঢাকার নিম্ন আয়ের বহু মানুষের ঠিকানা। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ওই বস্তি মাদকের কারবারি ও অপরাধীদের একটি বড় আখড়া হিসেবেও পরিচিত।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, বুধবার রাত পৌনে ৩টার দিকে বস্তিতে আগুন লাগার খবর পেয়ে তাদের ১৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ শুরু করে। পরে আরও চারটি ইউনিট তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। প্রায় সোয়া পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টার পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানান মিজানুর।
বনানী থানার এক কর্মকর্তা বলেন, রাত সোয়া ৩টার দিকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা পৌঁছাতে শুরু করলেও সরু গলির কারণে তাদের কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়। “এখানে অনেক মানুষ থাকে। কিন্তু রাস্তা সব সরু।” আগুনে বস্তির অধিকাংশ টিনের ঘর পুড়ে গেছে বলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান।
বস্তির একজন বাসিন্দা সাংবাদিকদের বলেন, রাত ২টার দিকে বস্তির একটি অংশে আগুন লাগার পর অল্প সময়ের মধ্যে তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর কয়েক ঘণ্টা ধরে বস্তির বহু ঘর জ্বলতে দেখা যায়।
আগুনে কেউ হতাহত হয়েছেন কি না তা জানাতে পারেননি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা। অগ্নিকা-ের কারণও জানা যায়নি।
গুলশান লেকের দুই তীরে দেড়শ একরের বেশি জমির ওপর বিশাল এলাকা নিয়ে এই বস্তিতে কয়েক লাখ লোকের বসবাস। এর আগে গতবছর ৪ ডিসেম্বর এবং তার আগে ১৪ মার্চ দুই দফা অগ্নিকা-ে এ বস্তির কয়েকশ ঘর পুড়ে যায়।
ওই জমির মূল মালিক বিটিসিএল আদালতের আদেশ নিয়ে ২০১২ সালে কড়াইলে জমি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা শুরু করে। প্রথম দিনের অভিযানে শ চারেক ঘর উচ্ছেদ করা গেলেও দ্বিতীয় দিন হাজার হাজার বস্তিবাসী গুলশান-মহাখালী এলাকার সড়কে নেমে ওই এলাকা কার্যত অচল করে দেয়।
এক বছরে তিনবার আগুন : বুধবার দিবাগত রাতে কড়াইল বস্তিতে যে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। তবে কড়াইল বস্তির এই আগুন প্রথম নয়। গত এক বছরে একই বস্তিতে আগুনের ঘটনা ঘটলো তিনবার। ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ এই বস্তির আগুনে পুড়েছে অর্ধশত ঘর, এতে আহত হয় দুজন। সর্বশেষ আগুনের ঘটনাটি ঘটে একই বছরের ডিসেম্বর মাসের ৪ তারিখ। এদিন দুপুরে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে পুড়ে যায় প্রায় ৫০০’র বেশি ঘর। গৃহহীন হয় সহস্রাধিক মানুষ।
গুলশান লেকের দুই তীরে দেড়শ একরের বেশি জমির ওপর বিশাল এলাকা নিয়ে এই বস্তির মূল মালিক বিটিসিএল। তারা আদালতের আদেশ নিয়ে ২০১২ সালে কড়াইলে জমি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা শুরু করে। প্রথম দিনের অভিযানে ৪০০ ঘর উচ্ছেদ করা গেলেও দ্বিতীয় দিন হাজার হাজার বস্তিবাসী গুলশান-মহাখালী এলাকার সড়কে নেমে ওই এলাকা কার্যত অচল করে দেয়। পরে আর তাদের উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি।
সকালের আলোতে তাদের চোখে কেবল শূন্যতা : রাতভর জ্বলতে থাকা আগুনের এই শিখা কেড়ে নিয়েছে হাজার বস্তিবাসীর সর্বস্ব। মধ্যরাতে সবাই তখন গভীর ঘুমে। হঠাৎই ‘আগুন, আগুন’ চিৎকারে ঘুম ভাঙে বস্তিবাসীদের। ঘুম ভেঙে ধাতস্থ হতে হতেই চোখের সামনে পুড়তে থাকে সবকিছু। প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিস যখন আগুন নেভাতে সক্ষম হয়, তখন বাঁচানোর আর কিছু অবশিষ্ট নেই। মধ্যরাতের আগুন ততক্ষণে কেড়ে নিয়েছে বস্তির হাজারও অধিবাসীর সর্বস্ব। সকালের আলোতে তাদের চোখে কেবল শূন্যতা।
ভোরের আলো যখন ফুটেছে, তখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি আগুন। রাতের আঁধারে আগুনের লেলিহান শিখা থেকে বাঁচতে গায়ের কাপড়টি ছাড়া আর কিছুই নিয়ে বের হতে পারেননি এসব ঘরের কয়েক হাজার বাসিন্দা। নিজেদের জীবন বাঁচানো সম্ভব হলেও উপার্জিত অর্থ, সংসারের আসবাবপত্র, ঘর কিছুই রক্ষা করতে পারেননি তারা। চোখের সামনে পুড়ে ছাই হতে দেখেন নিজেদের সবকিছু। সেইসঙ্গে পুড়তে দেখেন নিজেদের স্বপ্ন। তাদের আর্তনাদ আর আহাজারিতে তখন ভারী বাতাস।
কড়াইল বস্তির আগুনে সব হারানো মানুষদের একজন ইলিয়াস। পেশায় রিকশাচালক। তিনি বলেন, ‘প্রথমে আগুন লাগে আদর্শনগরে। পরে তা কুমিল্লা পট্টি, পুরান পট্টি, তালতলা ও কাঠপট্টিতে ছড়িয়ে পড়ে। ‘আগুন, আগুন’ চিৎকার শুনে ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে কোনোমতে ঘর থেকে বের হয়েছি। সঙ্গে কিছুই নিতে পারি নাই। দূর থেকে চেয়ে চেয়ে দেখছি শুধু। দেখতে দেখতে সব পুইড়া গেল। ’
বস্তির পুড়ে যাওয়া একটি ঘরের পাশে কথা হয় খাদিজা বেগম ও তার মেয়ে রাহেলার সঙ্গে। খাদিজা অন্যের বাসায় কাজ করেন। আর রাহেলা কাজ করেন একটি গার্মেন্ট কারখানায়। তিন বছর ধরে এই বস্তির নয় ফুট বাই নয় ফুট একটি ঘরে ছিল তাদের সংসার। রাহেলা বলেন, ‘মানুষের চিৎকার শুইনা বাইরে আইসা দেখি আগুন। ততক্ষণে আমাদের ঘরের কাছাকাছি আগুন চলে আসছে। মা’রে নিয়া তাড়াতাড়ি দূরে চলে আসছি। ঘরের ভিতর সবকিছু পুড়ে গেছে। ট্রাংকের ভিতর টাকা ছিল, সব পুড়ে গেছে। ’
পুড়ে যাওয়া সর্বস্বের সামনে এক নারীর কান্নারাহেলার মা খাদিজা বেগম বলেন, ‘কয়েকবছর কষ্ট কইরা কিছু টাকা জমাইছিলাম। সেটাও পুইড়া গেল। অহন আর কিচ্ছু নাই। আমরা এখন কই যামু!’ বলেই পুড়ে যাওয়া সংসারের ধ্বংসস্তুপ থেকেও যদি কিছু পাওয়া যায়, সেই আশায় এখানে-ওখানে হাতড়াতে থাকেন খাদিজা বেগম।
ইলিয়াস, খাদিজা, রাহেলার মতো কয়েক লাখ মানুষের বসবাস কড়াইলের এই বস্তিতে। এখানে বুধবারের আগুনে সর্বস্ব হারিয়েছেন অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবার। তাদের অধিকাংশই খেটে খাওয়া মানুষ। জমির মূল মালিক বিটিসিএল হলেও দীর্ঘদিন ধরে এই বস্তির দখল বস্তিবাসীদের হাতেই।
বারবার আগুন, কারণ তবুও অজানা : কড়াইল বস্তির বউবাজারে মুদি দোকান ছিল সোলায়মান মিয়ার। বেচাকেনা হতো বেশ। দোকানটিতে প্রায় সাত লাখ টাকার পণ্য ছিল। ৪ ডিসেম্বরের আগুনে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিল তাঁর দোকানটি। কিন্তু বুধবার রাতের ভয়াবহ আগুনে আর রক্ষা পায়নি, সোলায়মানের দোকানের সব পুড়ে ছাই। গত বছরের ১৪ মার্চ বস্তিতে আরেক দফা আগুন লাগার পর বেশ কষ্ট করে দোকানটি রক্ষা করেছিলেন চল্লিশোর্ধ্ব সোলায়মান।
ধ্বংসস্তুূপের ওপর দাঁড়িয়ে সোলায়মান মিয়া বলেন, ‘কেউ কয় কারেন্টের তার জ্বইল্যা আগুন লাগছে। আরেকজনে কয় কয়েল ধইরা লাগছে। অনেকে কয় জায়গা দখল করনের লইগ্যা আগুন ধরাইছে। কথা তো অনেক আছে। তয় আগুন একটা কারণে লাগে। হেইডাই জানলাম না। ’
সোলায়মানের মতো কড়াইল বস্তির বাসিন্দাদের কাছে বারবার অগ্নিকা-ের কারণ অজানা। বারবারই আগুনের লেলিহান শিখা এই বস্তিতে ছোবল মারে। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক দশকে ১৫ বারের বেশি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে এখানে। বারবার এই বস্তিতে আগুন লাগলেও কারণ বস্তিবাসীর মতো অজানা প্রশাসনের কাছে। অন্যদিকে যাদের চেষ্টায় এই আগুন নেভানো হয়, সেই ফায়ার সার্ভিসের কাছেও এ ব্যাপারে পরিষ্কার উত্তর পাওয়া যায়নি।
বারবার অগ্নিকা-ের কারণ ও এর সমাধান নেই নগর কর্তৃপক্ষের কাছে। সকালে কড়াইল বস্তির ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনে করার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বলেন, ‘এ প্রশ্ন করা সহজ। কিন্তু এর উত্তর মাইলের পর মাইল লম্বা। এখানে যারা থাকেন, তারা অবৈধভাবে ঘর তৈরি করে থাকেন। ফায়ার সার্ভিসকে এখানে পানি দেওয়ার জন্য পাইপ প্রায় দেড় কিলোমিটার ঘুরিয়ে আনতে হয়েছে। এত ঘিঞ্জি পরিবেশ সেখানে স্থায়ী কোনো সমাধানের কথা বলা সহজ কিন্তু করা কঠিন। তবে আপাতত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করব। ’
আগুন যেমন কড়াইল বস্তিকে বিধ্বস্ত করেছে, তেমনি বস্তি উচ্ছেদের চেষ্টা চলেছে একাধিকবার। কখনো রাষ্ট্রপক্ষ, কখনো সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও এই চেষ্টা চালানো হয়। বস্তিবাসীর বাধায় এ উচ্ছেদ সম্ভব হয়নি।
আগুনে পুড়ল মা-ছেলের ৮ বছরের জমানো সম্বল : গভীর রাতের আগুনে চারদিকের মানুষের আর্ত চিৎকারে ঘুম থেকে জেগে দৌড়ে নিরাপদে আসতে পারলেও ঘরে থাকা সুঁই-সুতোও রক্ষা হয়নি পঞ্চাশোর্ধ জরিনা বেগমের। পোশাক কারখানায় কাজ করা একমাত্র ছেলে মামুনকে নিয়ে বস্তির এক ঘরে থাকতেন স্বামীহারা শেরপুরের এই নারী। বুধবার গভীর রাতের ওই আগুনে সব হারিয়ে আশ্রয়হীন এ মা-ছেলে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাস্তার পাশে বসে বিলাপ করছিলেন।
পরনের কাপড় ও ছেলের মোবাইল ফোনটি ছাড়া তাদের আর কিছু বাকি নেই বলে জানান জরিনা। সঙ্গে নিয়ে আসতে পারা ওই ফোনেই প্রৌঢ়া এ নারীকে আমিনুল নামে নিজের বোনের এক ছেলেকে সাহায্যের জন্য টাকা-পয়সা নিয়ে আসার তাড়া দিতে দেখা যায়।
পেশায় রিকশাচালক ওই ভাগ্নের উদ্দেশে তাকে বলতে শোনা যায়, “তুই আয় বাবা, খাওয়া-দাওয়া কিচ্ছু নাই, তুই আইয়া পড়; তাড়াতাড়ি আয় বাবা, ট্যাহা-পয়সা নিয়া আইস বাবা, খাওনের অবস্থা নাই। “খাওনের কিচ্ছু নাই, কই যামু, কই খামু, কিচ্ছু নাই; তাড়াতাড়ি আয় বাবা, এক্ষুনি আয়।”
এক বছরের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো লাগা এবারের আগুনে বস্তির অধিকাংশ টিনের ঘর পুড়ে গেছে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।
আট বছর ধরে কড়াইল বস্তিতে থাকেন বলে ঘাটপাড় এলাকার মহাখালী-গুলশান রোডের ফুটপাতে বসে বিলাপ করে বলছিলেন জরিনা। বিলাপে মা-ছেলের হাঁড়ভাঙা খাটুনির কঠিন দিনের কথা বলে চলেন এ নারী। “মাইনষের বাড়ি বাড়ি কাম করি, মাঝে মইদ্যে (ফাকে ফাকে) ইট ভাইঙা রোজগার করি। পোলায় একটা গার্মেন্টসে কাম করে। মা-পোলায় কষ্ট কইরা টেহা জমাইতাম; আট বছরের জমাইন্না সব টেহা এক রাইতের আগুনে পুইড়া ছাই অইয়া গেছে।”
জমানো টাকায় গ্রামের ভিটাতে জরিনার একটা ঘর বানানোর ইচ্ছা ছিল বলে জানান তার ছেলে পোশাককর্মী মামুন। তিনি বলেন, “মায়ের ইচ্ছা আছিল, আর কিছু টেকা জমাইতে পারলে গ্রামের ভিটায় একটা ঘর করার, কিন্তু হেই আশা ভাইঙা গেসে; আমরার থাহন-খাওনের কোনো সম্বল নাই।”

পুড়ে যাওয়া সোহাগ মিয়া শঙ্কামুক্ত : আগুনে পুড়ে যাওয়া বস্তির সোহাগ মিয়া শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি ও বার্ণ ইউনিট বিভাগের আবাসিক সার্জন পার্থ শঙ্কর পাল। সোহাগের ঘাড় থেকে কাঁধ পর্যন্ত শরীরের পাঁচ শতাংশ পুড়ে গেছে বলে জানান এই চিকিৎসক। আহত সোহাগ মিয়া (২৫) পেশায় একজন ভ্যানচালক।
তদন্ত কমিটি গঠন : অগ্নিকা-ের প্রকৃত কারণ খুঁজতে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ কমিটি গঠনের বিষয়টি জানান ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ। তিনি বলেন, খুব শিগগিরই এই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (উন্নয়ন) আব্দুল মান্নানকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। এই কমিটির অপর সদস্যরা হলেন উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল জলিল ও ফায়ার সার্ভিসের তেজগাঁও স্টেশনের সিনিয়র অফিসার ফয়সালুর রহমান।
তদন্তে আগুন লাগার যে কারণই বেরিয়ে আসুক না কেন, তাতে আর ভাগ্য বদল হবে না সব হারানো বস্তিবাসীদের। সব হারানোর নির্মম বেদনাই কেবল সঙ্গী তাদের।
লালবাগে প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকান্ড : এদিকে, পুরান ঢাকার লালবাগে একটি প্লাস্টিক কারখানায় আগুন লেগে ২০টি টিনশেড ঘর পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা আতাউর রহমান জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে ৬৪ আরএনডি রোডের ওই কারখানায় আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। “পুড়ে যাওয়া ঘরগুলিতে প্লাস্টিক সামগ্রী ছাড়াও রাসায়নিক ও পুরাতন সাইকেলের যন্ত্রাংশ ছিল। বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুন লাগে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।” অগ্নিকা-ে ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে আতাউর জানান। এ ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

http://www.dailysangram.com/post/276003-