১৭ মার্চ ২০১৭, শুক্রবার, ১০:১৮

বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়লেও লেনদেনে ঘাটতি কমছে না

অর্থপাচারই অন্যতম কারণ বলছেন বিশ্লেষকেরা

বৈদেশিক বিনিয়োগ বেড়েছে। বেড়েছে পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহও বেড়েছে। কিন্তু এর পরেও সামগ্রিক হিসাবের ভারসাম্যের ঘাটতি কমছে না। বরং দিন দিন তা বেড়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, হুন্ডি বেড়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। এর বাইরে নানাভাবে বেড়ে গেছে মুদ্রাপাচার। সব মিলে সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। এর কারণ হিসেবে ব্যাংকাররা হুন্ডি তৎপরতা বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের দু’টি টিম এখন মধ্যপ্রাচ্যে সফরে রয়েছে। অপর দিকে, সেবা খাতে বিশেষ করে বিদেশী নাগরিকদের পেছনে ব্যয় বেড়ে গেছে। গত অর্থবছরের ছয় মাসে যেখানে পরিশোধ করা হয়েছিল ৩১১ কোটি ডলার, সেখানে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে হয়েছে ৩৫৩ কোটি ডলারে। একই সাথে রফতানি আয় কাক্সিক্ষত হারে না বাড়লেও আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। এতে পণ্যবাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে হয়েছে ৪৫১ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩৬০ কোটি ডলার। এতে চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে যেখানে চলতি হিসাবের ভারসাম্য ছিল ১৮৫ কোটি ডলার, সেখানে চলতি অর্থবছরে তা ঘাটতি হয়েছে ৭৯ কোটি ডলার।
এ দিকে, আলোচ্য ছয় মাসে বিদেশী বিনিয়োগ বেড়ে গেছে। গত বছরের ছয় মাসে যেখানে বিদেশী বিনিয়োগ ছিল ৭৮ কোটি ডলার, সেখানে চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে তা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৮৬ কোটি ডলার। একই সাথে পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ বেড়ে হয়েছে সাড়ে ১৮ কোটি ডলার, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ৭০ লাখ ডলার। সামগ্রিকভাবে মুদ্রাসরবরাহ বেড়ে গেছে। এতে সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্য বাড়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছরের ছয় মাসে সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত ছিল ২৪৪ কোটি ডলার, সেখানে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে হয়েছে ২২৫ কোটি ডলার।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নানাভাবে মুদ্রাপাচার বেড়ে গেছে। ওভার ইনভয়েজিংয়ের মাধ্যমে অর্থাৎ নির্ধারিত মূল্যের পণ্য বেশি দেখিয়ে অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। এর বাইরে ঘোষিত পণ্য না এনেও অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের পণ্য আমদানির মাধ্যমে বেশি অর্থ পাঠানো হচ্ছে। পাশাপাশি হুন্ডি প্রবণতা বেড়ে গেছে। যেমন ব্যাংকিং খাতে রেমিট্যান্স আহরণের চিত্র দেখলে বোঝা যায়, ছোট ছোট রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের এমডি জানিয়েছেন, তার ব্যাংকের ছোট ছোট রেমিট্যান্স আর আসছে না। তারা জেনেছেন হুন্ডি প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্সের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে অর্থাৎ মুদ্রাপাচার ঠেকানো না গেলে একসময় দেশ বিনিয়োগশূন্য হয়ে পড়বে। চাপে পড়বে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

www.dailynayadiganta.com/detail/news/204286