৬ মে ২০২০, বুধবার, ২:৩০

বিশ্বে করোনায় আড়াই লাখ ছাড়াল মৃত্যু

মহাপরাক্রমশালীও এক সময় নিস্তেজ হয়ে পড়ে। বড় বড় মহামারীও বেশি দিন টেকেনি। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ থেকে চলমান পৃথিবীর ৫০০০ বছরে ইতিহাসে আতঙ্ক সৃষ্টি করা ২০টিরও বেশি মহামারীর সুরতহালে সে কথাই বলে। অসুরের শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেও শেষ পর্যন্ত কোনোটিই ‘গিলে খেতে’ পারেনি মানুষকে। বড়জোর এক বছর, বেশি হলে ৫ বছর। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কয়েক মাসেই হাঁপিয়ে গেছে। একই অবস্থা করোনারও। মাত্র তিন মাসেই সারা বিশ্বে আড়াই লাখ ছাড়িয়েছে মৃত্যু। এর পরেই যেন দমে গেছে। দুর্বল হয়ে পড়েছে। জন্মভূমি চীন থেকে শুরু করে বিশ্বের সব দেশেই এই একই চিত্র।

কোভিড-১৯ প্রথম আক্রমণ করে চীনে। পহেলা জানুয়ারিতে। প্রথম মাসেই শুরু হয় তীব্র সংক্রমণ। পরের মাসে আরও বেশি। আক্রমণের গতি দেখে শেষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান বিশ্বের বড় বড় সব গবেষক। কিন্তু মার্চে হঠাৎ করেই শক্তি হারিয়ে ফেলে। নিস্তেজ হয়ে যায়। কমে মৃত্যু, কমে সংক্রমণও। একই ঘটনা ঘটে দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স-ইতালি, স্পেন-যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনেও। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী ছড়িয়ে পড়ার টাইমফ্রেম দেখলে পলকেই এ চিত্র চোখে পড়ে। ডাটা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডওমিটারস ও জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ দৃশ্য উঠে এসেছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অণুজীব বিজ্ঞানী ড. আনোয়ার হোসেনও করোনার শক্তিকাল নিয়ে একই কথা বলেছেন যুগান্তরকে। তিনি বলেন, ‘মাস্ক, টেস্টিং, কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং, কোয়ারেন্টিন, সামাজিক দূরত্ব মানলে তিন মাসের আগেই করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। সে ক্ষেত্রে টানা লকডাউন রাখতে হবে, ভাঙা লকডাউনে এ টাইমফ্রেম কার্যকর হবে না।’

করোনাভাইরাস এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৮৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৭১৫ জনে। আক্রান্ত হয়েছে ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ৯২০ জন। আশার আলো ফুটছে যুক্তরাষ্ট্রে। প্রায় দুই মাস পর গত কয়েক দিন ধরেই মৃত্যুর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। সোমবার নতুন করে মৃত্যু হয়েছে দেড় হাজার। আগের দিনের তুলনায় অনেক কম।

চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারিতে প্রথম করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে চীনে। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই আক্রান্ত ও মৃত্যু দুই-ই ব্যাপক হারে কমতে শুরু করে দেশটিতে। ২০ জানুয়ারি প্রথম একসঙ্গে সংক্রমণ শনাক্ত হয় দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে। কঠোর লকডাউন, বেশি বেশি পরীক্ষা নীতি ও সফল চিকিৎসার ফলে দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্চেই কমতে শুরু করে সংক্রমণ ও মৃত্যু। নজিরবিহীন অব্যবস্থাপনা সত্ত্বেও এপ্রিলের শেষ থেকে আক্রান্ত ও মৃত্যু কমতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রে।

একই পরিস্থিতি ইউরোপের দেশগুলোতেও। ফ্রান্সে প্রথম সংক্রমণ ২৮ জানুয়ারি, এপ্রিলের শেষ থেকেই কমতে শুরু করে সংক্রমণ ও মৃত্যু। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহভাবে আক্রান্ত স্পেন ও ইতালি। ৩১ জানুয়ারি প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত করে স্পেন। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই সংক্রমণের রাশ অনেকটাই টানতে সক্ষম হয় দেশটি। ইতালিতে ২১ ফেব্র“য়ারি সংক্রমণ শুরু। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে তা কমতে শুরু করেছে। সংক্রমণ কমে আসায় ৪ মে থেকে লকডাউন শিথিল করেছে দেশটির সরকার। কাজে ফিরতে শুরু করেছে দেশটির লাখ লাখ নাগরিক।

মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ইউরোপে সংক্রমণ চরম আকার ধারণ করে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে ইতালি, ফ্রান্স ও স্পেনে মৃত্যুর সংখ্যা কমতে শুরু করে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন দৈনিক মৃত্যুহারে রেকর্ড করেছে এসব দেশ। এ পরিস্থিতিতে দেশগুলো ধীরে ধীরে নিজেদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় শুরুর পরিকল্পনা করেছে। ইতোমধ্যে লকডাউন শিথিল করে কাজে ফিরতে শুরু করেছেন ইতালি ও স্পেনের অধিবাসীরা। ১১ মে থেকে লকডাউন তুলে নেয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে ফ্রান্স।

ব্রিটেন এখন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের চূড়ান্ত অবস্থানে আছে। তবে হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তির সংখ্যা কমেছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ভারতে ৩০ জানুয়ারি। এরপর ২৪ ফেব্র“য়ারি ও পহেলা মার্চের মধ্যে প্রথম শনাক্ত হয় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে। আর বাংলাদেশে প্রথম ধরা পড়ে ৮ মার্চ। এই চারটি দেশটি সংক্রমণ ও মৃত্যুর চূড়ান্ত অবস্থায় রয়েছে। তিন সপ্তাহের লকডাউনের ফলে ভারতে সংক্রমণ কিছুটা কমে এসেছিল। তবে লকডাউন শিথিল করায় ফের বাড়তে শুরু করেছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/304618