৩ মে ২০২০, রবিবার, ৬:০৮

মশা মারতে ব্যর্থ ঢাকার দুই সিটি

গুলশান পুলিশ প্লাজার পেছনে লেকের পানিতে ময়লা আবর্জনায় ভর্তি হয়ে গেছে। ময়লা দুর্গন্ধময় এ পানির মধ্যে জন্ম নিচ্ছে মশা। এ মশা ছড়িয়ে পড়ছে গুদারাঘাট, বাড্ডা, হাতিরঝিল, গুলশানসহ আশপাশের এলাকায়। ফলে ওই এলাকার বাসিন্দারা এখন দিনরাত মশার অত্যাচারের শিকার হচ্ছে। শুধু ওই এলাকায় নয় পুরো রাজধানী জুড়েই এ পরিস্থিতি চলছে। করোনাভাইরাস বিস্তারের কারণে দুই সিটির মনোযোগ সেদিকে বেশি চলে যাওয়ায় মশা নিধনে ভাটা পড়েছে। ফলে ঘরবন্দী মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। তবে সিটি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে তারা করোনা কার্যক্রমের পাশাপাশি মশা নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে যাচ্ছে।

গত কয়েক দিন ধরে রাজধানীতে একটানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর মধ্যে বেড়েছে মশার উৎপাত। একদিকে করোনাভাইরাস মহামারীতে রূপ নিয়েছে। মৃত্যুর বিভীষিকা মানুষকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এর মধ্যে মশার অত্যাচার বেড়ে যাওয়ায় ঘরে টেকা দায় হয়ে পড়েছে। গত বছর এ সময়ে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। অসুস্থ হয়েছিলেন লক্ষাধিক মানুষ। এ কারণে এ সময়ে মশার উৎপাতে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গুর ভয় বেড়েছে নগরবাসীর মনে। সম্প্রতি সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানান, ঢাকার দুই সিটিতে মশার ওষুধের কোনো অভাব নেই বরং আগামী এক বছরের ওষুধ মজুদ রয়েছে। এ ছাড়া খাল পরিষ্কার, রাস্তা পরিষ্কারসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়েও কাজ চলছে বলে তিনি জানান। কিন্তু এত ওষুধ থাকার পরও মশার অত্যাচার কমছে না বরং আরো বেড়েছে মশার যন্ত্রণা।

আরিফুর রহমান নামে গুলাশান এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, গুলশান লেকে ময়লা আবর্জনার কারণে উৎকট গন্ধ ছড়াচ্ছে। সেখানে মশারও জন্ম হচ্ছে ব্যাপক। এ কারণে সন্ধ্যা হলেই ঘরে মশার অত্যাচার বেড়ে যায়। কয়েল জ্বালিয়ে ও ইলেকট্রিক ব্যাট দিয়েও মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

নিউমার্কেট এলাকার গৃহবধূ সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, এ এলাকায় সিটি করপোরেশনের লোকেরা মাঝে মাঝে মশার ওষুধ দিয়ে যায় কিন্তু কোনো কাজ হয় না। শুধু ধোঁয়া ওড়ে আর শব্দ হয়। কিন্তু সন্ধ্যা হলে আবারো মশার উৎপাত শুরু হয়ে যায়। একদিকে করোনা আবার ডেঙ্গুর মৌসুম এ কারণে সব সময়ে ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়।

এদিকে রাজধানীর নির্মাণাধীন ভবনগুলো মশার নিরাপদ প্রজননের অন্যতম ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে বলে সাম্প্রতিক একটি জরিপে উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সচেতনতা এবং আন্তরিকতার অভাবেই মশা জন্মানোর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। দুই সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডের ১০০টি এলাকায় জরিপ চালানো হয়। এর মধ্যে ডিএনসিসির ৪১ এবং ডিএসসিসির ৫৯টি ওয়ার্ডের এক হাজার বাড়ি ও স্থাপনা ছিল এই জরিপের আওতায়। সম্প্রতি জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ডিএসসিসির ৩৬ শতাংশ আর ডিএনসিসির ৩২ শতাংশ বাড়ির হাউজ ইনডেক্স ১০। আর এই সূচকের বাড়িগুলোর ৪০ দশমিক ৮ শতাংশই নির্মাণাধীন। প্রতি ১০০ বাড়ির মধ্যে পাঁচ বা পাঁচের বেশি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা বা পিউপা পাওয়া গেলে হাউজ ইনডেক্সে তা ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়।

এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মশা নিয়ন্ত্রণে তাদের নানামুখী উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন নয়া দিগন্তকে বলেন, গুলশান লেকের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্য রাজউককে বলা হয়েছে। এখানকার ময়লার কারণে আশেপাশে মশা হচ্ছে। তবে ডিএনসিসির অন্যান্য এলাকায় মশার বিস্তার কমেছে। তিনি আরো বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে আমাদের নিয়মিত ওষুধ ছিটানো কার্যক্রম অব্যাহত আছে। কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে। বাড়ি মালিক, হাউজিং সোসাইটি, নির্মাণাধীন ভবন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সবাইকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে যেন পানি জমে না থাকে। এ ব্যাপারে জনসচেতনতার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। নতুন আধুনিক যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে। ডেঙ্গুর মৌসুমকে কেন্দ্র করেই এ কার্যক্রম চলছে। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতাও প্রয়োজন।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/499507/