২১ এপ্রিল ২০২০, মঙ্গলবার, ৬:১৬

পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে

নানা সমস্যায় নৌযান শ্রমিকরা

পণ্যবাহী জাহাজের শ্রমিকরা নানা সমস্যায় জর্জরিত। করোনাভাইরাসের পরিস্থিতিতে তাদের চলাচলে বিধি-নিষেধের কারণে অনেকটাই অবহেলিত তারা। নির্দিষ্ট গন্তব্য ছাড়া তারা কোথাও ভিড়তে পারছেন না। ফলে জরুরি প্রয়োজনে নদী সাঁতরিয়ে শ্রমিকদের বাজার করতে হচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পণ্যবাহী নৌযানের শ্রমিকরা দায়িত্বপালন করলেও তাদের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ নৌযান শ্রমিকদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে পণ্য পরিবহন জাহাজের নাবিকেদের তীরে আসা ও মালামাল খালাসের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের জাহাজে উঠতে বাঁধা না দেয়ার নির্দেশনা মানছে না স্থানীয় প্রশাসন। এতে নৌযান শ্রমিকদের সাথে স্থানীয় প্রশাসনের বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল।

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, নৌযান শ্রমিকরা লাইটারেজ জাহাজ থেকে সমুদ্রে সাঁতার কেটে তীরে আসে চাল-ডালসহ নিত্যপণ্য ক্রয় ও বিশুদ্ধ পানির জন্য। এতে যেকোনো সময় শ্রমিক ডুবে মারা যেতে পারেন। আর এ ধরনে দুর্ঘটনা ঘটলে শ্রমিকরা জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিলে এর দায় তারা নেবেন না।

তিনি বলেন, বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ১৩ এপ্রিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে নাবিকদের তীরে আসতে এবং নৌযান শ্রমিকদের জাহাজে উঠতে বাঁধা না দেয়ার জন্য প্রতি জেলার প্রশাসকের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক স্থানেই এই নির্দেশ মানা হচ্ছে না। জরুরি প্রয়োজনেও তারা নৌযানের নাবিক এবং শ্রমিকদের তীরে আসতে দিচ্ছেন না। এতে নৌযান শ্রমিকরা সীমাহীন কষ্টে ভুগছেন।

এ দিকে নৌ-যান শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, বীমা, প্রনোদনা ও বিশেষ ভাতা ঘোষণাসহ সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে আবেদন করেছে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে এক আবেদনে বলা হয়, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পণ্যবাহী নৌযানের শ্রমিকরা দায়িত্ব পালন করলেও শ্রমিকদের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নদী সাঁতরিয়ে শ্রমিকদের বাজার করতে হচ্ছে।

তারা বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব বেশি হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের মুক্তারপুর থেকে কাঞ্চন, বক্তাবলি থেকে পাগলা বাজার পর্যন্ত প্রতিটি ঘাটই ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া নোয়াপাড়া, নগরবাড়ি ঘাট, বাগাবাড়ী, ঢাকার গাবতলি, আমিন বাজার ঘাটেও লেবার মাথায় করে জাহাজের মাল খালাস করছেন। যা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পরেও শ্রমিকরা স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে সহায়তা পাচ্ছে না। স্থানীয় মানুষের দ্বারা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন নৌযান শ্রমিকরা।

যেসব শ্রমিক বেতন পাচ্ছেন তারা তাদের পরিবার পরিজনের জন্য টাকা পাঠানোর জন্য ঘাট এলাকায় কোনো বিকাশ বা রকেট এর এজেন্ট পাচ্ছেন না। অনেকের বেতন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা হলেও ওঠানোর সুযোগ না পেয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন।

তারা বলেন, যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হলেও মালিকরা বেশির ভাগ স্টাফকে মৌখিক ছুটিতে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। যাদের অনেককেই এখন পর্যন্ত মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়নি। যারা জাহাজে আছেন তাদেরকে নামে মাত্র খোরাকি দিয়ে চালিয়ে রাখলেও বেতন না পাওয়ায় পরিবার-পরিজন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/497058