২৭ মার্চ ২০২০, শুক্রবার, ৪:০৯

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধের যুদ্ধ

সারা দেশ কার্যত লকডাউন

বাস, ট্রেন, লঞ্চ, বিমানসহ গণপরিবহন বন্ধ * রাস্তায় বের হলেই জিজ্ঞাসাবাদ * বিভিন্ন স্থানে সেনা ও নৌবাহিনীর টহল

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ট্রেন, লঞ্চের পর সারা দেশে বাস চলাচল বন্ধ। সড়কপথে যাত্রীবাহী অন্যান্য যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। অভ্যন্তরীণ রুটের বিমানও বন্ধ। দু-একটি ছাড়া আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও চলছে না।

বন্ধ হয়েছে সরকারি অফিস-আদালত ও বিপণিবিতান। কফিশপ-রেস্তোরাঁও খোলা নেই। রাজধানীসহ সারা দেশের বেশিরভাগই সড়কই জনমানবশূন্য ও ফাঁকা। কেউ রাস্তায় বের হলেই তাকে পথে পথে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। অযথা আড্ডা দিতে বের হয়ে কোথাও মৃদু পিটুনির শিকার হয়েছেন কেউ কেউ। সবমিলিয়ে কার্যত লকডাউনে সারা দেশ।

যদিও সরকার পুরো দেশে লকডাউন ঘোষণা করেনি। তবে একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘর থেকে বের না হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এদিকে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ৬১ জেলায় কাজ করছে সেনাবাহিনী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যুগান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে বাসায় থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। মানুষও সচেতন হয়ে স্বেচ্ছায় বাসায় অবস্থান করছেন। এরপরও যারা রাস্তায় বের হচ্ছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাসায় থাকার গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। তাদের বোঝানো হচ্ছে- স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এ রোগের সংক্রমণ কম হবে।

নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাসটি যাতে আর ছড়াতে না পারে এজন্য যে যেখানে আছেন, সেখানেই তারা অবস্থান করুন- আমরা এটাই চাচ্ছি। এজন্য সারা দেশে যাত্রীবাহী নৌযান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

বিচ্ছিন্নভাবে কিছু নৌযান চলাচলের চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিআইডব্লিউটিএ, নৌপরিবহন অধিদফতর ও কোস্টগার্ডকে নির্দেশ দেয়া আছে। আর জরুরি সেবায় নিয়োজিত গাড়ি পারাপারে সীমিত আকারে ফেরি চলাচল করছে।

জানা গেছে, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার থেকে সড়কপথের যানবাহন চলাচলের ওপর লকডাউন কার্যকর হয়। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, অফিস-আদালতগুলোতে ১০ দিনের সাধারণ ছুটি চলছে।

এর আগে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় মঙ্গলবার থেকেই বন্ধ করা হয় ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল। বুধবার বন্ধ হয় সিলেট ছাড়া বিমানের অভ্যন্তরীণ সব ফ্লাইটও। এর ফলে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত বন্ধ। তবে জরুরি কাজে নিয়োজিত ও পণ্যবাহী গাড়ি পারাপারে সীমিত আকারে ফেরি চলাচল করছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহ-সভাপতি আবুল কালাম বলেন, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শতভাগ গাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। বিশেষ করে মহাখালী বাস টার্মিনালের খবর সরাসরি আমি নিয়েছি। সেখান থেকে একটি গাড়িও ছেড়ে যায়নি। সাধারণ মানুষও জানেন গাড়ি চলবে না। তারাও টার্মিনালে আসেননি। তিনি বলেন, সরকারের পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা চলবে।

সরেজমিন দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। ঢাকার ভেতরের বাসও চলাচল করেনি। তবে পণ্যবাহী গাড়ি চললেও তা ছিল সীমিত। হাতেগোনা কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। রাজধানীর ফার্মগেট, পল্টন, বাড্ডা, কুড়িল, আসাদগেট, শ্যামলী, মহাখালী, বনানী, খিলক্ষেত, এয়ারপোর্টসহ বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে।

পণ্যবাহী গাড়ি মালিকদের অন্যতম সংগঠন বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী খান যুগান্তরকে বলেন, করোনা সংক্রমণের ভয়ে অনেক চালক-হেলপার ছুটিতে চলে গেছেন। এরপরও যারা আছেন তারাই পণ্যবাহী গাড়ি চালাচ্ছেন। সরকার পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। তিনি বলেন, সারা দেশে হাইওয়েতে হোটেল বন্ধ থাকায় আমাদের শ্রমিকরা খেতে পারছেন না। আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করে তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনালে দুটি খাবার হোটেল খোলার ব্যবস্থা করেছি।

সড়কের মতো নৌ পথেরও একই চিত্র। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক যুগান্তরকে বলেন, পণ্যবাহী জাহাজ চালু রয়েছে। তবে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না। সারা দেশে বিআইডব্লিউটিএ, নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ড সদস্যরা এসব বিষয় নজরদারি করছেন। কেউ নির্দেশনা লঙ্ঘন করলেই তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া আছে।

আর পণ্যবাহী গাড়ি ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন পারাপারে সীমিত আকারে ফেরি চলাচল করছে জানিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশনের পরিচালক (প্রশাসন) সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী রুটে ১৪টি করে ফেরি রয়েছে। তবে স্বাভাবিক সময়ের মতো সেগুলো চলছে না। শুধু পণ্যবাহী গাড়ি এবং জরুরি সেবায় নিয়োজিত গাড়ি পারাপার করছে। তিনি জানান, অহেতুক গাড়ি যাতে পার না হতে পারে সেজন্য ঘাটগুলোতে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

করোনা নিয়ন্ত্রণে ৬১ জেলায় কাজ করছে সেনাবাহিনী : করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে দেশের ৬১টি জেলায় কাজ করছে সেনাবাহিনীর ২৯০টি টহল দল। এসব দলে মোট আড়াই হাজারেরও বেশি সেনাসদস্য রয়েছেন। বাকি উপকূলীয় ৩ জেলায় কাজ করছে নৌবাহিনী। এসব সদস্যরা তৃতীয় দিনের মতো বৃহস্পতিবার স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সাধারণ জনগণকে উৎসাহিত করেছেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ (আইএসপিআর) পরিদফতর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

আইএসপিআর জানায়, বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের বর্তমানে বাংলাদেশের সংক্রমণ এবং বিস্তৃতির ঝুঁকি বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকারের সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তে ২৪ মার্চ প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের পর ২৫ মার্চ থেকে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে সেনাবাহিনী।

সেনাবাহিনীর ২৯০টি দল দেশের ৬১টি জেলায় করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে একযোগে কাজ করেছে। বাইরে কোনো ক্যাম্প স্থাপন না করে স্থানীয় সেনানিবাস থেকেই এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে সেনাবাহিনী বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সাধারণ জনগণকে উৎসাহিত করছে। পাশাপাশি তারা বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের বিষয়টিও পর্যবেক্ষণ করছেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সেনাবাহিনীর এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

চট্টগ্রামে অঘোষিত লকডাউন : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বৃহস্পতিবার ৭০ লাখ বাসিন্দার চট্টগ্রাম শহর ধারণ করেছে এক অচেনা রূপ। ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

এতে সাড়া দিয়ে চট্টগ্রামবাসী অক্ষরে অক্ষরে তা পালন করছেন। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হননি। উৎসুক দু-একজন বের হলেও পুলিশ আর সেনাবাহিনীর লাঠিপেটার ভয়ে তাদের ঘরে ঢুকতে হয়েছে। দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে ক্রেতা না থাকলেও পণ্যবাহী ট্রাক থেকে মালামাল লোড-আনলোড হতে দেখা গেছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার শহরের প্রধান সড়কগুলো ছিল ফাঁকা।

রাস্তায় নেই কোনো মানুষের কোলাহল। নেই গাড়ির হর্নের শব্দ। নগরীর বহদ্দারহাট, রেলস্টেশন, স্টেশন রোড, রিয়াজউদ্দিন বাজার, তিনপুলের মাথা, কোতোয়ালি থানার মোড়, ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদ কিংবা ইপিজেড এলাকা সব জায়গায় ছিল অভিন্ন চিত্র। নগরীতে গণপরিবহন চলেনি।

ছিল না সিএনজি অটোরিকশাও। মুদির দোকান, ওষুধের দোকান ছাড়া সব ধরনের হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল। কোথাও কোথাও ভ্যানগাড়িতে তরিতরকারির পসরা সাজিয়ে বসতে দেখা গেছে ভাসমান বিক্রেতাদের। তবে ক্রেতার দেখা মিলেছে খুব কমই। ঘোষণা না থাকলেও অনেকটা অঘোষিত লকডাউনে পরিণত হয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম।

রাস্তায় অযথা মানুষ বের হতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী : আমাদের ময়মনসিংহ ব্যুরো জানিয়েছে, মানুষের মাঝে সামাজিক দূরত্ব তৈরিতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ময়মনসিংহে মাস্ক ছাড়া রাস্তায় বের হলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের কান ধরে ওঠবস ও লাঠিপেটা করে। কোথাও মানুষের জটলা দেখলেই পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামানের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মাঠে নামে। পুলিশি তৎপরতায় নগরীর অলিগলির দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। নগরীজুড়ে সেনাবাহিনীর টহল অব্যাহত আছে। সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জীবাণুনাশক পানি ছিটিয়েছে। ময়মনসিংহ থেকে কোনো গণপরিবহন চলাচল করেনি। বাসস্ট্যান্ড ও রেলস্টেশনসহ নগরীর ব্যস্ততম সড়কগুলো জনশূন্য ছিল।

ফরিদপুরে রাস্তায় সেনা ও পুলিশের টহল : ফরিদপুর ব্যুরো জানায়, ফরিদপুরে সড়ক-মহাসড়ক প্রায় ফাঁকা। শহরজুড়ে চলছে অঘোষিত লকডাউন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। শহরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল দেখা গেছে। মাঝে মধ্যেই তারা লোকজন থামিয়ে কেন বের হয়েছেন তা জানতে চান। ফরিদপুর পুলিশ সুপার মো. আলীমুজ্জামান জানান, করোনা ঠেকাতে বিনা প্রয়োজনে কেউ যাতে বাইরে না আসে সে লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। বৃদ্ধি করা হয়েছে পুলিশি টহলও।

রাজশাহীতে সেনাবাহিনীর মাইকিং : রাজশাহী ব্যুরো জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজশাহীতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা টহল দিয়েছেন। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও মাস্ক পরাসহ সচেতনতা সৃষ্টির জন্য মাইকিং করেছেন। পাশাপাশি নগরীতে টহল দিয়েছেন পুলিশ সদস্যরাও।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, নিউমার্কেট, শিরোইল বাসস্ট্যান্ড, শহীদ কামারুজ্জামান চত্বর, বর্ণালী মোড়, লক্ষ্মীপুর মোড়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘুরে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি একেবারেই কম দেখা গেছে। গণপরিবহনও বন্ধ।

দু-একটি অটোরিকশা চলাচল করছে। শহরের সব মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ। তবে ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান খোলা আছে। সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নগরীর রাস্তায় গাড়ির মাধ্যমে জীবাণুনাশক ছিটানো হয়েছে। অপ্রয়োজনে কেউ যেন বাসার বাইরে বের না হন এবং বের হলে যেন মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস ব্যবহার করেন সেই অনুরোধ জানিয়ে মাইকিং করা হয়েছে।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, বুধবার থেকে নগরী বেশ ফাঁকা দেখা গেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে ঘরে থাকতে যে বারবার অনুরোধ করা হচ্ছিল, তা এখন বেশ কার্যকর। আশা করি, মানুষ আরও সচেতন হয়ে উঠবেন এবং সবাই মিলে করোনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

ভোলায় নৌবাহিনীর টহল শুরু : স্টাফ রিপোর্টার জানান, নৌবাহিনীর টহল শুরু হওয়ায় পুরো শহর জনশূন্য হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সব উপজেলায় নৌবাহিনীর দুটি কন্টিনজেন্ট মোতায়েন করা হয়। নৌবাহিনীর কন্টিনজেন্ট কমান্ডার নূর মোহাম্মদ জানান, জনগণকে সচেতন করতে ইতোমধ্যে নৌবাহিনীর কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এদিকে জনসমাগম ঠেকানো ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে মাঠে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কাজ করছে। ইতোমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মাস্ক না পরার কারণে ১০ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। অপরদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭ জনসহ মোট ৩৭৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে সদরে ১০৪ জন, দৌলতখানে ৪৯, লালমোহনে ৩৯, চরফ্যাশনে ৫২, তজুমদ্দিনে ৬৫, মনপুরায় ৩১ ও বোরহানউদ্দিনে ৩৫। এদের মধ্যে হোম কোয়ারেন্টিন শেষ হওয়ায় ১২০ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।

যশোরে রাস্তাঘাট ফাঁকা : যশোর ব্যুরো জানায়, করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতায় যশোরে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে মাঠে নেমেছেন জেলা প্রশাসন ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের দোকানপাট বন্ধ ছিল। সাধারণ মানুষের আনাগোনাও কম ছিল। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হয়নি তেমন কেউ। অঘোষিত লকডাউনে বদলে গেছে শহরের দৃশ্যপট। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো জনশূন্য হয়ে পড়েছে।

কোথাও কোথাও বিনা প্রয়োজনে রাস্তায় বের হওয়ায় লাঠিচার্জ করা হয়েছে বলে তথ্য মিলেছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ তার অফিসিয়াল ফেসবুক স্ট্যাটাসে যশোরবাসীকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে বাড়ি বাড়ি ফ্রিজ তল্লাশির গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

দোহার ও নবাবগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল : স্টাফ রিপোর্টার জানান, ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় বৃহস্পতিবার গ্রাম্য সড়ক ও উপজেলা সদরে জনস্রোত দেখা যায়নি। ভোর থেকে ছিল না সড়কগুলোতে জনকোলাহল। ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল। সংবাদকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গুটিকয়েক দোকানি ও স্বল্প আয়ের হাতেগোনা কিছু মানুষ ছাড়া তেমন কেউ বাইরে আসেনি। অধিকাংশ সড়ক ফাঁকা, নেই যানবাহন।

এদিন সকাল থেকে মাঠে কাজ করছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। উপজেলার সড়ক, অলিগলিতে টহল দেয়া ছাড়াও সিভিল প্রশাসনের কাজে সহায়তা করছেন তারা। এছাড়া হোম কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা পর্যালোচনাসহ প্রশাসনকে সহায়তা করছেন সেনাবাহিনী। এদিকে গণপরিবহন না চলায় নবাবগঞ্জ-দোহারে বিরাজ করছে নীরবতা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন জীবাণুনাশক স্প্রে করছেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা। সংক্রমণ ঠেকাতে নবাবগঞ্জ থানা পুলিশ কাজ করেছে রাতদিন। এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ থানার ওসি মোস্তফা কামাল বলেন, জনগণ যাতে ঘরে থাকে, ১-এর অধিক লোকসমাগম না হয় সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।

নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালাউদ্দীন মনজু বলেন, আপনারা জানেন, সরকার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া যাতে কেউ বাইরে না আসে সেজন্য উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে। প্রায় একই ধরনের খবর জানিয়েছেন আমাদের সিলেট ব্যুরো, খুলনা ব্যুরো, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি, চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি, বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি, ওসমানীনগর (সিলেট) প্রতিনিধি, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/293095