১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, শনিবার, ১১:৪১

পরামর্শক সেবা : বিদেশ ট্রেনিংয়ের জালে প্রকল্প

অর্থায়নে উন্নয়ন সহযোগীদের সাড়া মিলছে না ; আঞ্চলিক সেতু নির্মাণেই চার ধরনের পরামর্শক ; প্রতি কিলোমিটার সেতু নির্মাণে ৪৪৫ কোটি টাকা

প্রয়োজন থাকুক বা না থাকুক পরামর্শক সেবা এবং বিদেশে প্রশিক্ষণ বা ট্রেনিং যেন উন্নয়ন প্রকল্পের খরচের তালিকায় থাকাটা আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন নাম দিয়ে এই পরামর্শক সেবা নেয়া হচ্ছে। আর একই সংস্থায় একই কাজে ইতঃপূর্বে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল থাকলেও নতুন প্রকল্পমাত্রই আবার বিদেশ প্রশিক্ষণের নাম বিদেশ ভ্রমণ। শুধু বিদেশ ট্যুর না থাকায় একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি আটকে ছিল। উন্নয়ন সহযোগীদের সাড়া না পাওয়ায় পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি এখন নিজস্ব অর্থেই বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্য দিকে আঞ্চলিক এই সেতুটি নির্মাণে ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চার ধরনের পরামর্শকের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রতি কিলোমিটার সেতু নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে ৪৪৫ কোটি টাকা। এই তথ্য সেতু বিভাগের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে।

সেতু বিভাগের প্রস্তাবনার তথ্যানুযায়ী, পটুয়াখালী জেলার কচুয়া-বেতানী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭তম কিলোমিটার পায়রা নদীর উপর সেতু নির্মাণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১৫৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। সেতুর দৈর্ঘ্য হলো ১.৬৯০ কিলোমিটার। সাড়ে পাঁচ বছরে বাস্তবায়ন করার কথা। প্রকল্পের আওতায় ৬০০ মিটার সংযোগ সড়ক, এক কিলোমিটার গাইড বাঁধ, ১.৬৯০ কিলোমিটার পিসি গার্ডার সেতু (২ লেন), টোল বুথ ও টোল মনিটরিং ভবন নির্মাণ, টোল আদায় ও ওজন নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রপাতি স্থাপন, তিন হাজার ৬০০ বর্গমিটার প্রকৌশল সুবিধা, সাড়ে আট হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণসহ ইত্যাদি।

প্রকল্পটির পদক্ষেপ হিসেবে ২০১২ সালে সার্ম অ্যাসোসিয়েটসের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। এই সেতুটি নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পত্রমারফত সেতু বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়। সেতুটি নির্মাণের জন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর অর্থ সহায়তা চাওয়া হলেও আজ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। সে কারণে সরকারি অর্থায়নেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।

ব্যয় বিভাজন বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, এই সেতু প্রকল্পে চার ধরনের পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের ডিটেইল্ড ডিজাইনের জন্য পরামর্শক সেবা, সুপারভিশনের জন্য পরামর্শক সেবা, প্যানেল অব এক্সপার্ট খাত এবং ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ পরিকল্পনা প্রণয়নে পরামর্শক সেবা। এই চারটি পরামর্শক সেবা খাতে ব্যয় হবে ৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্পের ডিটেইল্ড ডিজাইনের জন্য পরামর্শক সেবায় ১৫ কোটি ৬৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা, সুপারভিশনের জন্য পরামর্শক সেবায় ২৩ কোটি ৩৮ লাখ ৩৮ হাজার টাকা, প্যানেল অব এক্সপার্ট খাতে চার কোটি টাকা এবং ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ পরিকল্পনা প্রণয়নে পরামর্শক সেবায় চার কোটি টাকা। আর অনুষ্ঠান ও উৎসবে খরচ হবে দুই কোটি টাকা, অপ্রত্যাশিত ব্যয়ও দুই কোটি টাকা, বিদেশে প্রশিক্ষণ দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা, বিদ্যুৎ খাতে দুই কোটি টাকা, ৬০০ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক করতেই সাত কোটি টাকা ধরা হয়েছে। ১.৬৯ কিলোমিটার সেতু করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে কিলোমিটারে ১১৩ কোটি ১২ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ মতামতে বলছে, পরামর্শক সেবা খাতে যে পরিমাণ ব্যয় ধরা হয়েছে তা কমিয়ে আনতে হবে। আর ভূমি অধিগ্রহণে সাড়ে আট কিলোমিটারের জন্য ৩৬ কোটি আট লাখ টাকা ধরা হয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ব্যয় প্রাক্কলন সংগ্রহ করা হয়নি। স্থানীয় প্রশিক্ষণের জন্য সেতু বিভাগের আওতায় একটি প্রকল্প চলমান আছে। কাজেই স্থানীয় প্রশিক্ষণ খাতে ব্যয় বাদ দিতে হবে। সেতু বিভাগের অন্যান্য সেতু নির্মাণ প্রকল্প খাতে বিদেশ প্রশিক্ষণ নেয়া অনেক কর্মকর্তা রয়েছে। তাদেরকে এই প্রকল্পে যুক্ত করা যেতে পারে। আর এই খাতের ব্যয় কমিয়ে ৭০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে উইংটি। বিদ্যুৎ খাতে দুই লাখ টাকা ধরা হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। এ ছাড়া অনুষ্ঠান ও উৎসবাদি খাতে এবং অপ্রত্যাশিত খাতে মোট চার কোটি টাকা বরাদ্দ অযৌক্তিক। এটার কোনো প্রয়োজন নেই।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/464022/