ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নম্বরপ্লেট ও রুট পারমিট ছাড়াই চলছে গাড়ি -ইনকিলাব
১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, ১২:৪০

নম্বরপ্লেট ছাড়াই চলছে গাড়ি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

নম্বরপ্লেট, রুট পারমিট ও নিবন্ধনবিহীন ২১ সিটের আর এম ট্রান্সপোর্টসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানীর বাস নিয়মিত চলাচল করছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। অথচ এ বিষয়ে নির্বিকার হাইওয়ে পুলিশ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

আরএম ট্রান্সপোর্টের চালক মকবুল হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নম্বরপ্লেট, রুট পারমিট ছাড়াই নিয়মিত চলাচল করছি। কোন সমস্যা হচ্ছে না। তবে মাঝে মধ্যে পুলিশ আটকালেও চা-পানির পয়সা দিলেই ছেড়ে দেয়।

মকবুল বলেন, শুধু আরএম ট্রান্সপোর্ট কেনো রুট পারমিট ছাড়াই এই সড়কে আরো অনেক কোম্পানির বাস চলছে বলে দাবি করেন তিনি। তিনি তথ্য দেন পরিবহন নেতা, পুলিশ ও বিআরটিএ কর্মকর্তাদের মাসিক চাঁদা দিয়ে চলে বাস সার্ভিস। কয়েক মাস যাবৎ এ মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত যাত্রীবাহী মিনিবাস চলাচলের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া চৌরাস্তা থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি পর্যন্ত ২১ সিটের আরএম ট্রান্সপোর্ট নামের ২৪ টি মিনিবাস এ রুটের গজারিয়ার পাখির মোড়, বাউশিয়া, ভবেরচর, ভাটেরচর, বালুয়াকান্দি ও জামালদী বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম মহাসড়কের ওপর দিয়ে নম্বরপ্লেটবিহীন, রুট পারমিট ও নিবন্ধন ছাড়া যাত্রীবাহী বাসে চলাচলরত যাত্রী, পরিবহন সেক্টর নাগরিক কমিটির সদস্য ও প্রশাসনের একটি অংশ মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তিনজনকে জরিমানা ও একজনকে ১ মাসের কারাদন্ড প্রদান করেন। হাইওয়ে সড়কে অবৈধভাবে চলাচলরত ২৪ টি গাড়ির মধ্যে তিনটি গাড়ি জব্দ করেছেন। এ রুটে চলাচলকারী যাত্রী কামরুজ্জামান জনি জানান, অবৈধ গাড়ি হলেও ভাড়া অনেক বেশি। বিপদে পড়ে আমরা বাধ্য হয়ে গাড়িতে উঠি। ব্যস্ত সড়কে নম্বরপ্লেটবিহীন গাড়িগুলো কিভাবে চলাচল করছে?

আরএম ট্রান্সপোর্ট্রের পরিচালক রাসেল মিয়া জানান, নম্বরপ্লেটের জন্য আবেদন করেছি। বিআরটিএ থেকে অনুমোদন দেওয়া হলে নম্বরপ্লেট ও নিবন্ধনসহ সরকারের যথাযথ সব নিয়ম মেনেই গাড়ি চালাব। পরিবহন সঙ্কটের কারণে পুলিশ আমাদের একটু ছাড় দিয়েছে।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ুম আলী সর্দার জানান, এ বিষয়ে কিছুই জানি না। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিষয়টি জেনে তিনি বলেন, একদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কি এগুলো বন্ধ করা যাবে। প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। তাছাড়া সব গাড়ির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করলে কোনো লোকাল গাড়িই রাস্তায় থাকবে না। পরিবহনগুলো সোনারগাঁ এলাকা দিয়ে চলাচলের জন্য কোনো রুট পারমিট নেই এ কথা সত্য। নম্বরপ্লেট ছাড়া সব গাড়ি চলাচল করছে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। অবৈধভাবে তাদের আর চলতে দেওয়া হবে না।

হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম জানান, অবৈধ কোনো যানবাহন মহাসড়কে চলতে দেওয়া হবে না। এর সাথে হাইওয়ে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা থাকলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার জানান, ব্যস্ততম মহাসড়কে চার মাস যাবৎ রুট পারমিট ছাড়া এতগুলো গাড়ি কিভাবে চলে? ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পর কিভাবে গাড়ি চলে, হাইওয়ে রোডের বিষয় দেখভাল করার জন্য হাইওয়ে পুলিশ দায়িত্বে আছে। তিনি আরও বলেন, ‘আইন সবার জন্য সমান। তাই রাস্তায় গাড়ি চালালে অবশ্যই সবাইকে আইন মেনে চলতে হবে।

এদিকে, নিবন্ধনহীন বেশ কিছু মোটরসাইকেলে নাম্বার প্লেটের জায়গায় মোটা হরফে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ লেখা দেখা গেছে। যদিও এসব মোটরসাইকেলের মালিক কারা, কিভাবে তারা নিবন্ধন না নিয়ে এসব যান রাস্তায় নামিয়েছেন, এ ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দলের প্রথম সারির কোনো নেতা কিছু বলতে চাননি। তবে এসব মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় দাপিয়ে বেড়ানো কর্মীদের ভাষ্য, বড় ভাইরা (দলীয় নেতা) মিছিল-মিটিংয়ে যাওয়ার জন্য এসব মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছেন। তা নিয়ে তারা নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন কমর্সূচিতে যোগ দিচ্ছেন। এ সময় ট্রাফিক পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ তাদের চ্যালেঞ্জ করছেন না বলে জানান তারা।
বিআরটিএর উপ-পরিচালক পদমযার্দার একজন কমর্কতার্ বলেন, আইনেই বলা আছে, রাস্তায় রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কোনো গাড়ি রাস্তায় চালানো যাবে না। শুধু পুলিশ কেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী যে কোনো বাহিনী, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কাযার্লয়ে ব্যবহৃত গাড়িরও নিবন্ধন নেয়া বাধ্যতামূলক।

https://www.dailyinqilab.com/article/230887/