২৯ আগস্ট ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৩:৪২

সাত কলেজ সমস্যা সমাধান কতদূর?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকেই নানা সমস্যার সম্মুখীন রাজধানীর সাত সরকারি কলেজ। সেশনজট ও ‘গণহারে ফেল’সহ নানা সমস্যার কথা বারবার ওঠে এলেও এর স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। যার কারণে ভুগতে হচ্ছে বৃহৎ এ সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীদের। অন্যদিকে জনবল সংকটের কারণে এ সাত কলেজের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় হিমশিম খেতে হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। নিজেদের ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অতিরিক্ত সাত কলেজের প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এর জন্য ভুগতে হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও। তারাও সাত কলেজের অতিরিক্ত চাপের কারণে নিজেদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ করছেন। গেল জুলাইয়ে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অচল হয়ে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম।
এ ছাড়াও নিয়মিত পরীক্ষা ও ফলাফল না হওয়া এবং গণহারে ফেলসহ বিভিন্ন দাবিতে কিছুদিন পরপর আন্দোলনে নামে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এমতাবস্থায় এর স্থায়ী সমাধান খুঁজছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনের মুখে সাত কলেজের অধিভুক্তি সমস্যা সমাধানে গত ২৪শে জুলাই একটি কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মু. সামাদের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ জমা দিতে বলা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারার সম্ভাবনা থেকে কমিটি ২৯শে জুলাইয়ের এক সভায় আরো ৩০ কার্যদিবস সময় বাড়িয়ে নেয়।

এদিকে সাত কলেজ সমস্যার সমাধানে গঠিত কমিটির কার্যক্রমও চলছে ধীরগতিতে। গত ১৫ কার্যদিবসে এ কমিটি মাত্র দুটি সভা করেছে। গতকাল সন্ধ্যায় এ কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মু. সামাদ জানিয়েছেন, একটা সমাধানে আসতে কমপক্ষে আরো ১০টি সভা করতে হবে। এখন প্রশ্ন উঠছে, যেখানে গত ১৫ কার্যদিবসে এ কমিটি মাত্র দুটি সভা করেছে সেখানে আগামী ২৫ কার্যদিবসে ১০টি সভা করার সক্ষমতা নিয়ে। আগামী ৪ঠা সেপ্টেম্বর এ কমিটির পরবর্তী সভা অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। পর্যালোচনা কমিটির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক মু. সামাদ মানবজমিনকে বলেন, আরো এক মাস পর যোগাযোগ করো। কারণ হলো, মিটিং কেবল শুরু হলো। ৪ঠা সেপ্টেম্বরে একটা করবো। দুটি মিটিং করেছি, মিনিমাম ১০টি মিটিং লাগবে আরো। কারণ, যারা এটার স্টেকহোল্ডার- এর সঙ্গে জড়িত ছাত্র-শিক্ষক বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান এদের ডাকা শুরু হয়েছে। তাদের মতামত নিতে হবে। মিনিমাম মাসখানেক লাগবে। তারপর বুঝা যাবে কোন দিকে যায়।

এদিকে সাত কলেজের সমস্যা সমাধানের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। সাত কলেজবিরোধী আন্দোলনকারী আদনান রহমান বলেন, যেখানে ১০ কার্যদিবসে রিপোর্ট দেয়ার কথা ছিল সেখানে ১৫ কার্যদিবসে কমিটি মাত্র দু’বার বসেছে এটা দুঃখজনক। আমরা কোনো দীর্ঘসূত্রতা দেখতে চাই না। আমরা চাই এর স্থায়ী সমাধান। তবে সাত কলেজের আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমরা আমাদের সমস্যাগুলো নিয়ে কমিটিকে একটি স্মারকলিপি দিয়েছি। আমরা চাইবো অধিভুক্তি হওয়ার পর আমরা যেসব সমস্যায় পড়েছি সেগুলো বিবেচনায় রেখে যেন সমাধান বের করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাগজে কলমে সাত কলেজের কার্যক্রমের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের সম্পর্ক না থাকলেও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসসহ প্রশাসনিক ভবনের এমন কিছু শাখা রয়েছে যেগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের সামগ্রিক কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাই এসব শাখায় কাজের দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিচ্ছে। কমিটির অগ্রগতির বিষয়ে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক বলেন, এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রাথমিকভাবে রাখা না রাখার পক্ষে আলোচনা ওঠে আসছে। আর এ বিষয়ে সামাদ স্যার কথা বলতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন যা বলার তিনিই বলবেন। তবে ইউনিভার্সিটি সংশ্লিষ্ট অনেকে বাদ দেয়ার পক্ষে। সাত কলেজের এডমিনিস্ট্রেটিভ অধিভুক্তি রেখে সমাধান করার পক্ষে।

https://www.mzamin.com/article.php?mzamin=187908