২৮ আগস্ট ২০১৯, বুধবার, ১:২৩

ডেঙ্গু আক্রান্তে ১৭৩ মৃত্যুর তালিকা : স্বাস্থ্য অধিদফতর নিশ্চিত করেছে ৫২

ডেঙ্গু সন্দেহে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে ১৭৩ জনের মৃত্যুর তালিকা রয়েছে। এই মৃত্যু বিভিন্ন হাসপাতালে হয়েছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের। হাসপাতালে চিকিৎসকেরা ডেঙ্গু পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েই চিকিৎসা দিয়েছেন। হাসপাতালে নিশ্চিত ডেঙ্গুর রোগীগুলো মারা গেলে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হচ্ছে না। আরো কিছু পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েই স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। এ পর্যন্ত ৮৮টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে স্বাস্থ্য অধিদফতর ৫২ জনের মৃত্যু ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণেই হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে। সরকারের কাছে আরো ৮৫টি মৃত্যুর তালিকা রয়েছে নিশ্চিত করার জন্য।

এ ব্যাপারে চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষ প্রশ্ন করছেন, তাহলে হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা ডেঙ্গু পরীক্ষা করেই ডেঙ্গুর চিকিৎসা দিলেন কিভাবে? তা হলে হাসপাতাল বা ডায়াগনসিস সেন্টারের ডেঙ্গু পরীক্ষা ভুল? ডেঙ্গু সন্দেহে মৃত্যুর তালিকা থেকে ডেঙ্গুতেই মৃত্যু হয়েছে তা পরীক্ষা করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ‘রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা আইইডিসিআর।’ এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘একটি নিয়ম মেনেই আমরা ডেঙ্গুতে মৃত্যু নিশ্চিত করি। এটি আন্তর্জাতিকভাবেই করা হয়। আমরা সে আন্তর্জাতিক নিয়মটি মেনেই মৃত্যুগুলো নিশ্চিত করছি। এ জন্য একটি সময় লাগছে।’

এখনো আপনাদের কাছে ডেঙ্গু সন্দেহে ১৭৩টি মৃত্যুর তালিকা রয়েছে। ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণেই মৃত্যু হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে কত দিন সময় লাগবে? অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, যেখানে মৃত্যু হয়েছে সে হাসপাতালের রেকর্ড এবং রক্তের নমুনা পরীক্ষা আমরা নিয়ে থাকি। এরপর মৃতু ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনের সাথে মৃত্যু সম্পর্কে জানতে চাই। এর কিছু স্ট্যান্ডার্ড প্রসিডিউর রয়েছে। কিন্তু মৃত ব্যক্তির লোকজনের সাথে কথা বলতে (ভারবাল অটোপসি) কিছুটা দেরি হয়। আত্মীয়স্বজন শোক সামলে নেয়ার পর আমরা তাদের সাথে কথা বলতে যাই। সে জন্য কিছুটা দেরি হয়।

আগামী বছরও কি এডিস মশার এ ধরনের প্রাদুর্ভাব হতে পারে বলে আপনি মনে করেন? এ প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, বাংলাদেশে বছরজুড়েই মশা থাকে। ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী এডিস মশাও থাকতে পারে। এটা নির্ভর করবে আবহাওয়া ও মশা নিধন কার্যক্রম কতটুকু করা যাচ্ছে এর ওপর। এ ছাড়া এডিস মশার চারটি সেরু টাইপ রয়েছে। এ বছর সেরু টাইপ-৩ এর প্রাদুর্ভাব বেশি। গত বছর পর্যন্ত সেরু টাইপ-১ ও সেরু টাইপ-২’র প্রাদুর্ভাব বেশি ছিল। সাধারণত এডিস মশার একটি টাইপ কারো দেহে প্রবেশ করলে সেগুলো প্রতিরোধক (রেজিস্ট্যান্ট) কাজ করে। একবার কারো দেহে কোনো সেরু টাইপ প্রবেশ করলে ওই সেরু টাইপের মশারা কামড়ালে আক্রান্তের ডেঙ্গু জ্বর হবে না। এবার সেরু টাইপ-৩’র প্রাদুর্ভাব বেশি। ফলে এ বছর যাদের দেহে সেরু টাইপ-৩ প্রবেশ করেছে এটাই তার দেহে রেজিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করবে। যারা আক্রান্ত হয়েছে তারা আর এই তিন সেরু টাইপ দ্বারা ডেঙ্গু জ্বরে ভুগবে না। অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, এ পর্যন্ত সেরু টাইপ-১, ২ ও ৩ দ্বারা বাংলাদেশের মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামী বছর অপর সেরু টাইপ-৪ যদি এডিস মশা না ছড়ায় তাহলে আগামী বছর ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব এখনকার চেয়ে কমে যেতে পারে। তবে এটাও নির্ভর করবে আবহাওয়া ও মশা নিয়ন্ত্রণের ওপর। এডিস মশার উৎপাদনের জন্য আগামী বছর এখনকার মতো আবহাওয়া না থাকলে এবং সঠিকভাবে মশা নিধন করতে পারলে আগামী বছর হয়তো এ বছরের মতো এত বেশি হবে না।

সারা দেশে আক্রান্ত ১২৫১ জন : ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গতকাল সোমবার এক হাজার ২৫১ জন আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল পর্যন্ত দেশের বিবিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে পাঁচ হাজার ৫৬২ জন। আক্রান্তদের মধ্যে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫৭৭ জন এবং রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬৭৪ জন।

গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭৭ জন। মিটফোর্ড হাসপাতালে ৮৮ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৭, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৫৬ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩ জন, পুলিশ হাসপাতালে ৫ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫৪ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৪ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১৫ জন, বিজিবি হাসপাতালে একজন, কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে দু’জন, অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে তিনজন। রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগে ১৯২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৮ জন, খুলনা বিভাগে ১৪৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ৭৮ জন, রংপুর বিভাগে ২০ জন, বরিশাল বিভাগে ১১১ জন, সিলেট বিভাগে ৯ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

এ ছাড়া রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে ইবনে সিনা হাসপাতালে চারজন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৯ জন, কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ১৫ জন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ২০ জন, বারডেম হাসপাতালে ১৪ জন, স্কয়ার হাসাপাতালে ১১ জন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ১৭ জন, গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ছয়জন, সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দু’জন, আদদীন হাসপাতালে সাতজন, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ১২ জন, সালাহউদ্দিন হাসপাতালে সাতজন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/435410/