চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছেন ডেঙ্গু রোগী। ১৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বুধবার তোলা ছবি- যুগান্তর
১ আগস্ট ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:২৫

এক মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ১৫ হাজার

অতিরিক্ত রোগীতে কাহিল ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা

আরও ৪ জনের মৃত্যু, ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি ১৪৭৭ * মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও অনারারি চিকিৎসকদের কাজে লাগানোর পরামর্শ * হাসপাতালগুলোতে রি-এজেন্ট ও কিট সংকট

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়েই চলেছে। অন্যান্য রোগীর পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্তদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা।

হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ এতই বেশি যে, রোগীদের সুস্থ করতে মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করায় অনেক চিকিৎসক, নার্স ইতিমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ক্রমবর্ধমান ডেঙ্গু আক্রান্তদের চাপ এভাবে আরও এক মাস চলমান থাকলে বিদ্যমান লোকবল দিয়ে রোগীদের সেবা দেয়া এক প্রকার অসম্ভব হয়ে দাঁড়াতে পারে, এমনকি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলেও শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

মঙ্গলবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৫ জনের মৃত্যুর পর বুধবারও ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আক্রান্তদের মধ্যে পুলিশের এক এসআই রয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী ইতিমধ্যে দেশের ৬৩ জেলাতেই ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৪৭৭ জন। এ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ১৭ হাজার ১৮৩ জন। এর মধ্যে জুলাই মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪ হাজার ৯৯৬ জন।

বিশেষজ্ঞরা জানান, সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ায় এবং দেশের বেশিরভাগ এলাকা বন্যাকবলিত হওয়ায় জেলা-উপজেলা পর্যায় থেকে চিকিৎসক আনা এ সময়ে সম্ভব নয়। আসন্ন ঈদুল আজহায় দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যাপক ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়লে সেখানকার জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।

ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের মূল সময় এখনও প্রায় এক মাস বাকি। যতবারই বাংলাদেশে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে ততবারই তা ছিল আগস্ট থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত।

এ সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মৃত্যু দুই-ই বাড়ে। সামগ্রিক বিবেচনায় রাজধানীসহ সারা দেশের মেডিকেল কলেজগুলোর বেসিক সায়েন্স বিভাগের শিক্ষকদের চিকিৎসায় যুক্ত করার প্রয়োজন বলে মনে করছেন চিকিৎসা ব্যবস্থাপকরা। পাশাপাশি যেখানে রোগীর চাপ বেশি সেখানে ইন্টার্ন চিকিৎসক (শিক্ষানবিশ) অনারারি (প্রশিক্ষণার্থী) চিকিৎসকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগানোর পরামর্শ তাদের।

এদিকে রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের বারান্দায়ও রোগীদের ঠাঁই মিলছে না। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে নেই কোনো ফাঁকা শয্যা। সরেজমিন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখা গেছে, হাসপাতালের প্রথম ও ২য় তলায় ১, ৩, ৪ ও ৭নং ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হলেও ক্রমাগত রোগীর সংখ্যা বাড়ায় এখন ৬নং ও ১১নং ওয়ার্ডেও এসব রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

এসব ওয়ার্ডের মেঝেতে এমনকি বারান্দায় অবস্থান করে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। সেখানে নেই পর্যাপ্ত আলো-বাতাস। গরমে টিকে থাকা দায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবস্থা আরও ভয়াবহ। সেখানে লিফটের সামনে, সিঁড়ির উপরে ও নিচেও রোগীদের গাদাগাদি।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জোহায়ের যুগান্তরকে জানান, রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করাতে গিয়ে জ্বর নিয়ে তাকে সাড়ে তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। রিপোর্ট আনতে গিয়েও একই অবস্থা।

এটি বর্তমানে একটি বা দুটি হাসপাতালের চিত্র নয়। ঢাকার সব সরকারি হাসপাতালের একই চিত্র। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর অত্যধিক চাপ বিদ্যমান। রোগীর চাপ সামলাতে ইতিমধ্যে অনেক চিকিৎসক এবং নার্স অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানান হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের মহাসচিব ইকবাল হোসেন সবুজ যুগান্তরকে জানান, অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে ইতিমধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধিকাংশ নার্স ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।

মুগদার ২০ জন নার্সকে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। অন্যান্য হাসপাতালেও একই অবস্থা। এভাবে বিরামহীন কাজ করতে হলে কয়েক দিনের মধ্যেই নার্সদের অনেকের পক্ষে রোগীর সেবা দেয়া সম্ভব হবে না। তিনি রাজধানীর ডেঙ্গু রোগীদের সেবায় আরও বেশি সংখ্যক নার্স সংযুক্তির দাবি জানান।

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়–য়া যুগান্তরকে বলেন, অধিক পরিশ্রম করায় হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা ইতিমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, দিনরাত ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক এখন অসুস্থ।

এমনকি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ঠিক রাখতে তাকেও দিনরাত পরিশ্রম করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর মৌসুম বাকি এখনও প্রায় দুই থেকে আড়াই মাস। এভাবে ক্লান্তিহীন চিকিৎসা দিলে হাসপাতালের সেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।

তাই আগামী দিনগুলোতে রোগীদের সেবা নিশ্চিতে তিনি মেডিকেল কলেজের বেসিক সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক, অনারারি চিকিৎসক এবং ইন্টার্নদের কাজে লাগানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। এমনকি ইতিমধ্যে তিনি কলেজের অধ্যক্ষকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন বলেও জানান।

পুরো মৌসুমে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আমিনুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে নানা ধরনের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। দ্রুতই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে রি-এজেন্টের অভাবে সোমবার ডেঙ্গু শনাক্তকরণে এনএস-১ টেস্ট বন্ধ ছিল স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গত বৃহস্পতিবারে একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালেও এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

হাসপাতালগুলোতে বিনা মূল্যে পরীক্ষার সুযোগে অনেকে কৌতূহলী হয়ে রক্ত পরীক্ষা করছেন। ফলে অতিরিক্ত চাহিদার কারণে রি-এজেন্টের সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই আক্রান্ত মানুষ ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে গিয়ে ফিরে আসছেন। অথবা এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটছেন। একসঙ্গে অনেক বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি ও পরীক্ষার কারণে রি-এজেন্টের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমরা বড়ুয়া যুগান্তরকে বলেন, কিট এবং রি-এজেন্টের ঘাটতি মেটানো হয়েছে। তবে স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জরুরি প্রয়োজনে সরাসরি স্যালাইন ক্রয়ের অনুমতি দেয়ায় দ্রুত এ সংকট মেটানো সম্ভব হবে।

কিটের অভাবের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, এ সমস্যা ইতিমধ্যে বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে এক লাখ এনএসওয়ান (ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষা) কিট কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

চারজনের মৃত্যু : বুধবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) কোহিনুর আক্তার মারা গেছেন। বুধবার সকালে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশলাইনস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার ২০ মাস বয়সী একটি সন্তান আছে। ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে বুধবার দুপুরে এক ডেঙ্গু রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আবদুর রহমান খান জানান, রবিউল ইসলাম রাব্বি নামের ২২ বছর বয়সী ওই যুবকের বাসা মিরপুর শেওড়া পাড়ায়। এ ছাড়া গৌরনদীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আলেয়া বেগম (৫৫), শরীয়তপুরের জাজিরার বর্ষা আক্তার (২৬) নামের এক স্কুল শিক্ষিকার মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক আয়েশা আক্তার জানান, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১৭ হাজার ১৮৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে জুলাই মাসেই ১৪ হাজার ৯৯৬ জন। এ সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১২ হাজার ২৬৬ জন এবং চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪ হাজার ৯০৩ জন।

ঢাকার বাইরে আরও ৬৩ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। এসব জেলায় ১৪২৭ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সরকারি হিসেবে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। তবে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যে ৫০ ছাড়িয়ে গেছে।

রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যানুযায়ী চলতি বছর ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে ১৫-২৫ বছর বয়সী রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। নারীদের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ৫-১৫ বছর বয়সীরা। আর পুরুষের ক্ষেত্রে ২৫-৩৫ বছর বয়সীরা।

বিনা মূল্যে প্লাটিলেট সংগ্রহ : ঢাকার চারটি বিশেষায়িত হাসপাতাল ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তদের জন্য বিনা মূল্যে রক্ত থেকে প্লাটিলেট সংগ্রহ করে দেবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা এ তথ্য জানান। সারা দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির সর্বশেষ অবস্থা জানাতে বুধবার সকালে অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।

এগুলো হল : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট। অধ্যাপক সানিয়া জানান, রোগীরা নিজেরা বা সন্ধানীর মতো রক্ত পরিসঞ্চালনে সহায়তায় ডোনার নিয়ে এসব হাসপাতালে গেলে তারা বিনা মূল্যে রক্তের প্লাটিলেট আলাদা করে দেবে।

রক্ত থেকে প্লাটিলেট আলাদা করতে যেন একটা নির্ধারিত মূল্য ধরা হয় সে বিষয়েও বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, ডেঙ্গু পরীক্ষায় যেন কোনো সমস্যা না হয় সে জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে এক লাখ এনএসওয়ান (ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষা) কিট কিনবে সরকার। আজ রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের ডেঙ্গু বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, তাদের হিসাব অনুযায়ী এ পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের ডেথ রিভিউ কমিটির ডেঙ্গু রোগে

মৃত্যুবরণকারীদের সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করতে কিছুটা সময় লাগে। মৃতের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করতে দেরি হয়।

এদিকে স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিদেশ সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসছেন। বুধবার রাতে তিনি দেশে ফিরছেন। বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। আজ বৃহস্পতিবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন।

ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) : কালীগঞ্জে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আবদুর রহমান নামে দুই বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে ঢাকার রেনেসাঁ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। নিহত আবদুর রহমান কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের কাপাইস গ্রামের দুবাইপ্রবাসী মো. আরিফ হোসেনের ছেলে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শনিবার শিশু আবদুর রহমান জ্বরে আক্রান্ত হলে চিকিৎসার জন্য তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রোববার চিকিৎসক তাকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে পাঠান। ওই দিনই তাকে সেখান থেকে ঢাকা রেনেসাঁ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। এ হাসপাতালে দু’দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মঙ্গলবার সে মারা যায়।

গাজীপুর : ডেঙ্গুর পর এবার ডায়রিয়া ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১৬০ জন রোগী এবং গত দুই দিনে ৩৯ জন ডেঙ্গু রোগী গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিছানা সংকট দেখা দিয়েছে।

তাই অনেক রোগী মেঝেতে, বারান্দায় বিছানা পেতে অবস্থান নিয়েছেন। বিপুলসংখ্যক রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসকরাও হিমশিম খাচ্ছেন। এদিকে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলমের একান্ত সচিব ও জনসংযোগ কর্মকর্তা (প্রেষণে) ড. সেলিম শেখ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন জেলা (গ) সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আফসার উদ্দিন। তিনি ধানমণ্ডির গ্রিনরোড সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৭ দিন চিকিৎসা নেন। শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে চিকিৎসকরা তাকে রিলিজ দিয়েছেন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/205521/