২৯ জুলাই ২০১৯, সোমবার, ১২:২০

প্রতিরোধ কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়

ডেঙ্গুর ভয়াল বিস্তার, একদিনে ৮২৪ রোগী ভর্তি

পুরো ঢাকাই এখন ডেঙ্গু ঝুঁকিতে। দ্রুত গতিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। দেশের অন্যান্য জেলায়ও বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে রেকর্ড সংখ্যক ৮২৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে ২৮ জনের উপরে ডেঙ্গু রোগী আইসিইউতে রয়েছে। এর মধ্যে শিশু হাসপাতালে ১২ জন। রেকর্ড ভেঙ্গে এক বছরে সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ১১ হাজার ৬৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এর আগে গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ১৪৮ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এই তথ্য দিয়েছে। রাজধানীর প্রায় ঘরেই এখন ডেঙ্গু রোগীর খবর পাওয়া যাচ্ছে। একই সঙ্গে সারা দেশে থেকেও খবর আসছে। ঢাকার বাইরে থেকে ৬১১ জন আক্রান্তের খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৩৭৩ জন। অধিক সংখ্যক রোগী আসায় বিভিন্ন হাসপাতালে তাদের ঠাঁই দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বেসরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ ছাড়িয়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। এদিকে ডেঙ্গুর এমন পরিস্থিতিতেও রাজধানী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের দৃশ্যমান তেমন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

গতকাল এক ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, পুরো ঢাকাই এখন ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকার ১০০টি এলাকার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। পরবর্তীতে বিশ্লেষণ করে জানানো হবে কোনো এলাকা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনে শয্যা বাড়িয়ে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। জলবায়ু পরিবর্তন ও অধিক হারে নগরায়নের কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে বলে ডিজি মন্তব্য করেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৮২৪জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। প্রতি ঘণ্টায় ভর্তি হচ্ছে ৩৪ জনের উপরে। চলতি জুলাই মাসেই আক্রান্ত হয়েছে ৯ হাজার ৫১০ জন। ঢাকার বাইর থেকেও দিন দিন রোগী আসছে। গতকাল ৬১১ জন আক্রান্তের খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৩৭৩ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের পরিসংখ্যান মতে, জুলাই মাসে গড়ে প্রতিদিন ৩৩৯ জনের উপরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রাজধানীর বাইরে ঢাকার অন্যান্য জেলা থেকে ১৫১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ১৭৯ জন, খুলনা বিভাগ থেকে ৯৬ জন, রাজশাহী থেকে ১৩৭ জন, বরিশাল থেকে ৩৫ জন, সিলেটে ১৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

২৮শে জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আটজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের মধ্যে এপ্রিলে দু’জন, জুনে দু’জন ও জুলাই মাসে চারজন মারা যান। তবে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্র বলছে মৃত্যুর সংখ্যা কমপক্ষে চারগুণের বেশি হবে। এর মধ্যে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৪০ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে বর্তমানে ২২৪ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৯৪ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ২১৭ জন, বারডেম হাসপাতালে ৩৯ জন, বিএসএমএমইউতে ৪৩ জন, পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগ ৪৫ জন, মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ২৩৪ জন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ২০৭ জন, বিজিবি হাসপাতালে ২৬ জন, রাজধানীর ধানমন্ডি বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৪৬ জন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ১০৪ জন, ইবনে সিনা হাসপাতালে ৫৭ জন, স্কয়ার হাসপাতালে ৬৫ জন, গ্রীন লাইফ হাসপাতালে ১৭ জন, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল কাকরাইলে ৯৪ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে ৮২ জন, খিদমা হাসপাতালে ২৬ জন, সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলে ৮৫ জন, এ্যাপোলো হাসপাতালে ৭৭ জন, আদ-দ্বীন হাসপাতালে ১০৬ জন, সালাউদ্দি হাসপাতালে ৫৫ জন, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪০ জন, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৫১ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।