২৮ জুলাই ২০১৯, রবিবার, ৩:২৯

ঢাবি’র হলে হলে ডেঙ্গু আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা

রাজধানীতে দুর্যোগ হিসেবে দেখা দেয়া ডেঙ্গুর প্রকোপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিক্ষার্থীর খবর পাওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এক শিক্ষার্থী ও এক কর্মচারী। দু’জনের মৃত্যুতে ডেঙ্গু নিয়ে চিন্তিত প্রশাসনও। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় তৎপরতা শুরু করলেও শিক্ষার্থীরা বলছেন তা যথেষ্ট নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাড়াও হলগুলোতে হল প্রশাসনের সঙ্গে হল সংসদ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিতে নানা ধরনের প্রচারণা ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ভিত্তিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একটি ক্লোজড গ্রুপে (স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ক্যাম্পাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের একটি হিসাব দেখানো হয়। যেখানে দেখা যায় প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।

আক্রান্তদের অনেকে ক্যাম্পাসে থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। অনেকে বাসায় গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় আমাদের সর্বাত্মক প্রয়াস থাকবে। আমরা হলগুলোতে ইতিমধ্যে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছি। হলগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ডাকসুও এ দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করবে। আমরা কাল থেকে প্লাটিলেট কাউন্ট করার জন্য আলাদা প্যাথলজির ব্যবস্থা শুরু করছি। ল্যাবরেটরিতে সবাইকে সার্বক্ষণিক সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়াও আমরা সিটি করপোরেশন ও ঢাকা মেডিকেলের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। জানা গেছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত শুক্রবার রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফিন্যান্স বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ফিরোজ কবির স্বাধীন। এর আগে প্রকৌশল বিভাগের বিদ্যুৎ সেকশনের এক কর্মচারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রুপে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের হিসাব চেয়ে একটি পোস্ট করেন গ্রুপের একজন মডারেটর। পোস্টটিতে কমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হলের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের তথ্য দেন। এ পোস্টে দেয়া তথ্য অনুযায়ী প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী ইতিমধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। এর মধ্যে ফজলুল মুসলিম হলে ১১ জন, মাস্টার দা সূর্যসেন হলে ১২ জন, কবি জসীমউদ্‌দীন হলে ৪ জন, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ১৪ জন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ১৩ জন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ৯ জন, সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের বারান্দায় থাকা ৫ জন, অমর একুশে হলে ১ জন, জগন্নাথ হলে ৫ জন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ৮ জন, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ৫ জন, স্যার এএফ রহমান হলে ১ জন। বিজয় ৭১ হলে ১৪ জন। অন্যদিকে, মেয়েদের হলগুলোর মধ্যে- ফজিলাতুননেছা মুজিব হলে ১ জন, শামসুন্নাহার হলে ২ জন এবং সুফিয়া কামাল হলে ৯ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত। এদিকে এ সংখ্যাটি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন হল প্রাধ্যক্ষরা। কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমান বলেন, আমার হলে ১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল। পরে আমরা তাকে অভিভাবক ডেকে তাদের কাছে দিয়ে দিই। এছাড়া কোনো ডেঙ্গু আক্রান্ত শিক্ষার্থীর তথ্য আমাদের নেই। বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনই জ্বর নিয়ে অনেক শিক্ষার্থী চিকিৎসার জন্য সেখানে যাচ্ছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় অনেকেই বাইরের মেডিকেলে গিয়ে পরীক্ষা করাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং এর সম্ভাবনা দেখছেন তারা মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে রক্ত পরীক্ষা করছেন। কবি জসীমউদ্‌দীন হলের কামরুল হাসান নামের এক শিক্ষার্থী জানান, তার রুমের এক ভাইয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে রক্ত পরীক্ষা করতে যান। সেখানে তার সিরিয়াল আসে ৮৫ নম্বরে।

হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ হিল বাকী বলেন, মূলত প্রশাসনের গাফিলতি ও পর্যাপ্ত মশক নিধন কার্যক্রম চালু না রাখার ফলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর দায় সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। পুরো ক্যাম্পাসে ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করেছে এই ভাইরাসটি। তিনি ক্যাম্পাসে জরুরি অবস্থা জারি করে ঈদের ছুটির সঙ্গে মিলিয়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার দাবি জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির আহ্বায়ক ও কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমান বলেন, সারা শহরে ডেঙ্গু মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আমরা শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য হলগুলোতে স্প্রে করছি। আগে যেখানে সপ্তাহে ১ বার করা হতো এবার সেখানে আমরা দুই থেকে তিনবার করে করতে হলগুলোর প্রভোস্টদের বলা হয়েছে। হলগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছি। ছাত্র-ছাত্রীদেরও সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করছি। তিনি বলেন, আমরা আমাদের সামর্থ্যের চেয়েও বেশি দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি। যেন কোনো শিক্ষার্থী এতে আক্রান্ত না হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের সাইফুল্লাহ

https://www.mzamin.com/article.php?mzamin=183360