গাইবান্ধার বাদিয়াখালি রেলপথ এখনো বন্যার পানির নিচে। গতকাল বিকেলে তোলা ছবি -ইনকিলাব
২৮ জুলাই ২০১৯, রবিবার, ৩:২৫

ভোগান্তির শঙ্কা রেলপথে

৭ আগস্ট ঈদযাত্রা শুরু

ঈদে ঘরমুখী মানুষের বড় একটি অংশ যাতায়াত করে রেলপথে। এবারের ঈদের জন্য রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হচ্ছে আগামীকাল সোমবার থেকে। আগামী ৭ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে রেলে ঈদযাত্রা। কিন্তু এ যাত্রাকে শঙ্কাপূর্ণ করে তুলেছে চলমান বন্যা পরিস্থিতি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সেকশন। এর মধ্যে ঈদের আগে দুটো সেকশনে বন্ধ হওয়া ট্রেন চালু করা সম্ভব হবে না বলেই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অন্যদিকে, ঈদের আগে ঢাকা-রংপুর রেলপথে নতুন আন্তঃনগর ট্রেন চালু হতে যাচ্ছে। তবে রুটে পরিবর্তন করায় এ ট্রেনের সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন গাইবান্ধা ও বগুড়া জেলার যাত্রীরা। কারণ ট্রেনটি রংপুর থেকে পার্বতীপুর হয়ে ডুয়েল গেজ রেলপথ দিয়ে ঢাকা যাতায়াত করবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সেকশনগুলো হলো বোনারপাড়া-বাদিয়াখালী, বাদিয়াখালী-গাইবান্ধা, বালাবাড়ি-রমনা, হাসিমপুর-দোহাজারী ও মেলান্দহ দেওয়ানগঞ্জ। ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথগুলো ঈদের আগেই সংস্কার করে ফেলা সম্ভব হবে বলে দাবি করছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাঁচটি সেকশনের মধ্যে বোনারপাড়া-বাদিয়াখালি, বাদিয়াখালি-গাইবান্ধা সেকশনের পানিতে ডুবে যাওয়া রেলপথ কোনোভাবেই মেরামত করা সম্ভব নয়।

রেলভবন সূত্র জানায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ও বন্ধ হয়ে যাওয়া রেলপথ গতকাল ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে সংস্কার করার কথা ছিল। সে অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথগুলো কোনোমতে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে সংস্কার করা হয়েছে। জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের অনেক জায়গায় এখনো লাইনে বন্যার পানি রয়েছে। সেখানে বালির বস্তা ফেলে পানির গতিপথ বদলে লাইনগুলোকে আপাতত ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে রাখা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলোয় ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১০-১৫ কিলোমিটারের বেশি তোলা সম্ভব হবে না। এ কারণে অন্তত ১১টি আন্তঃনগর ট্রেন ঈদের সময় শিডিউল বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। যেসব ট্রেন নিয়ে শিডিউল বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে সেগুলো হলো ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটের তিস্তা এক্সপ্রেস, ঢাকা-তারাকান্দি রুটের অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস, ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটের এগারসিন্দুর প্রভাতী ও এগারসিন্দুর গোধূলি এক্সপ্রেস, ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটের ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস, ঢাকা-লালমনিরহাট রুটের লালমনি এক্সপ্রেস, ঢাকা-রংপুর রুটের রংপুর এক্সপ্রেস, ঢাকা-মোহনগঞ্জ রুটের হাওড় এক্সপ্রেস, ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটের কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস এবং চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটের বিজয় এক্সপ্রেস।

এদিকে বোনারপাড়া-বাদিয়াখালি এবং বাদিয়াখালি-গাইবান্ধা সেকশনের রেললাইন এখনও পানির নিচে রয়েছে। বাদিয়াখালির একটা অংশে রেললাইনের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে এখনও রেললাইন ঝুলে রয়েছে। বন্যার পারি সরার পর সেখানে প্রথমে মাটি ফেলে ভরাট করতে হবে। এরপর সেখানে রেললাইন স্থাপন করতে হবে। গতকাল পর্যন্ত বোনারপাড়া অংশে রেললাইন সংস্কারের কাজ চলছিল। তবে ঈদের আগে এ অংশে কোনোভাবেই ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। বন্যার পর থেকে বগুড়ার সাথে গাইবান্ধার রেল সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ঢাকা থেকে লালমনিরহাটগামী লালমনি এক্সপ্রেস এবং ঢাকা থেকে রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন দুটিও গাইবান্ধা দিয় না চলে কাউনিয়া-রংপুর-পার্বতীপুর-সান্তাহার হয়ে চলাচল করছে। সে কারণে এবার ঈদেও গাইবান্ধা ও বগুড়ার যাত্রীদের জন্য কোন ট্রেন থাকছে না তা গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত বলে জানান রেলওয়ের প্রকৌশলীরা।

এ প্রসঙ্গে রেল ভবনের একজন কর্মকর্তা বলেন, বন্যায় সারা দেশে রেলওয়ের চারটি সেকশনের সাতটি স্পট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথগুলো সংস্কার করে আপাতত ট্রেন চলাচল সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ঈদের কথা মাথায় রেখেই দ্রæত সংস্কারের কাজ চলছে। ঈদের সময় ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলোতে ট্রেন সর্বোচ্চ ১০-১৫ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। এ কারণে কয়েকটি ট্রেন ঈদের সময় শিডিউল বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।

অন্যদিকে, ঈদের আগে ঢাকা-রংপুর রেলপথে নতুন ট্রেন চালু হতে যাচ্ছে। তবে রুটে পরিবর্তন করায় এ ট্রেনের সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন গাইবান্ধা ও বগুড়া জেলার যাত্রীরা। কারণ ট্রেনটি রংপুর থেকে পার্বতীপুর হয়ে ডুয়েল গেজ রেলপথ দিয়ে ঢাকা আসবে। রেল সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধুমাত্র রংপুরের যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি চালালে কখনওই তা লাভের মুখ দেখবে না। কারণ পার্বতীপুর থেকে ঢাকা যাওয়া-আসার চারটি আন্তঃনগর ট্রেন রয়েছে। অথচ রংপুর থেকে গাইবান্ধা-বগুড়া হয়ে ট্রেনটি চললে যাত্রীর জায়গা দেয়া যেতো না। যেমনটি হয় বর্তমানে চলাচলরত রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে। লালমনিরহাট বিভাগের রেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক একজন নেতা বলেন, আমরা রেলমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করে বিষয়টি বুঝিয়ে বলেছি। পার্বতীপুর হয়ে চললে রংপুরসহ গাইবান্ধা ও বগুড়া জেলার যাত্রীরা এই ট্রেনের দেখা পাবে না। এতে রেল বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। উদাহরণ হিসাবে তিনি বলেন, বন্যায় রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বেশ কয়েকদিন ধরে রংপুর ও লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি পার্বতীপুর হয়ে চলছে। এতে দুটি ট্রেনেরই যাত্রী অর্ধেক কমে গেছে। নতুন ট্রেন পার্বতীপুর হয়ে চললে একই দশা হবে। রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, চলতি বছরে ২২০টি অত্যাধুনিক যাত্রীবাহী কোচ দেশে আসবে। এসব কোচ দিয়ে চলতি বছরে ৫টি ও ২০২০ সালের জুনের মধ্যে ৭টি নতুন ট্রেন চালু করা হবে। ঈদের আগেই ঢাকা-রংপুর নতুন ট্রেন চালু হবে জানিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, ইন্দোনেশিয়া থেকে নতুন ২৬টি অত্যাধুনিক কোচ আসছে। সেগুলো দিয়েই নতুন ট্রেন চালু করা হবে।

https://www.dailyinqilab.com/article/223340/