২৫ জুলাই ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১১:৪১

ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা

বন্যায় ক্ষতি ৪৫০ কিমি. সড়ক-মহাসড়ক

১৭টি জেলার এই ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পেয়েছে সওজ * বেশি আক্রান্ত হয়েছে ১৩১টি রাস্তা ও বেশ কিছু সেতু-কালভার্ট * ঈদের এক সপ্তাহ আগেই জরুরি মেরামতের নির্দেশ মন্ত্রণালয়ের

এবারের বন্যায় প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের আওতাধীন ১৩১টি রাস্তার বেশি ক্ষতি হয়েছে।

অনেক সড়কের ওপর দিয়ে এখনও পানি প্রবাহিত হচ্ছে। স্রোতের তোড়ে কয়েকটি সড়কের কিছু অংশ ভেঙে ভেসে গেছে। কোথাও আংশিক, কোথাও সড়ক-মহাসড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

এ ছাড়াও বেশ কিছু সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কিছু সড়কে ভারি যান ও কিছু সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্যা আক্রান্ত ১৭ জেলার সওজের কর্মকর্তাদের পাঠানো প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এদিকে ঈদের এক সপ্তাহ আগেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়কগুলোর চলমান জরুরি মেরামতকাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক জরুরি সভায় মন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশনা দেন।

১৭ জেলা থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বন্যায় সবচেয়ে বেশি রাস্তার ক্ষতি হয়েছে চট্টগ্রাম জেলা। এ জেলার আওতায় অন্তত ৫০টি সড়ক ভেঙে গেছে।

ক্ষতির দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে সিরাজগঞ্জ। এ জেলার ১৮৬ কিলোমিটার রাস্তা ভেঙে গেছে। এ জেলার ওপর দিয়ে বেশির ভাগ যানবাহন উত্তরবঙ্গে যাতায়াত করে। এর পরের স্থান রংপুর।

এ জেলায় ৮৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক জরুরিভাবে মেরামত করতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ কোটি টাকা চেয়েছেন সংস্থাটির মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা।

সওজ কর্মকর্তারা জানান, উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে সে তুলনায় ভালো রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো।

গত ১৬ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত এসব ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, বন্যায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর, লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ এবং চট্টগ্রাম জেলার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে এখন পর্যন্ত সব জেলার প্রকৃত তথ্য আসেনি। বন্যা শেষে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। সংস্থাটির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ইট, বালি, খোয়া, প্যালাসাইডিং, বালি ভর্তি সিনথেটিক ব্যাগ ও জিও ব্যাগ দিয়ে আপাতত মেরামত করছেন।

তারা আরও জানান, বন্যা আরও কিছু দিন চলতে থাকলে আসন্ন ঈদুল আজহায় ঘরমুখো মানুষের যাত্রায় ভোগান্তিতে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। সড়কের ওপর থেকে পানি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত সড়ক মেরামত করা সম্ভব হবে না। আর যেসব সড়কের পানি নেমে গেছে সেগুলো গাড়ি চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে।

বন্যা ও ভূমিধসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চট্টগ্রাম জেলা। এ জেলার আওতায় অন্তত ৫০টি সড়ক ভেঙে গেছে। সেগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী-রাঙ্গামাটি জাতীয় মহাসড়কের ৩০ দশমিক ৫৬ কিমি., চট্টগ্রাম পোর্ট এক্সেস সড়কে ১২ দশমিক ৫০ কিমি., বারইয়ারহাট-হেঁয়াকো-নারায়ণহাট-ফটিকছড়ি সড়কে ৪৭.৪১ কিমি. ও হেঁয়াকো-রামগড় সড়কে ১৭ দশমিক ৬৬ কিমি ভেঙে গেছে।

অন্য সড়কগুলোর মধ্যে হাটহাজারী-ফটিকছড়ি-মানিকছড়ি-মাটিরাঙ্গা-খাগড়াছড়ি সড়কে, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক, কাঁটাখালী-রাউজান সড়কসহ অন্যান্য সড়ক ভেঙে গেছে।

জানা গেছে, উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন চলাচল করে সিরাজগঞ্জের ওপর দিয়ে। বন্যায় এ জেলার অন্তত ১৬টি সড়ক ও মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এর মধ্যে ঢাকা থেকে বগুড়া, রংপুর বাংলাবান্ধা (এন-৫ সড়ক) সড়কের সিরাজগঞ্জ অংশে ১৫ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সড়কের বিভিন্ন স্থানে সড়কে সোল্ডার ভেঙে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বাঘাবাড়ী সেতুর অ্যাপোচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।

এ জেলায় হাটিকুমরুল-বনপাড়া (১৬ কিলোমিটার), এলেঙ্গা-নলকা-হাটিকুমরুল (০.২৪ কিলোমিটার), উল্লাপাড়া শহর (২.৫ কিলোমিটার), উল্লাপাড়া-পূর্ণিমাগাঁতী-তাড়াশ (২৭ কিলোমিটার), সিরাজগঞ্জ-কাজিরপুর-ধুনট (২২ কিলোমিটার) ও সিরাজগঞ্জ-রায়গঞ্জ (১৪ কিলোমিটার) সড়ক ভেঙে গেছে। ক্

ষতিগ্রস্তের তালিকায় রয়েছে এ জেলার আরও কয়েকটি সড়ক। ইট, সুরকি, খোয়া দিয়ে জরুরিভাবে মেরামত করা হয়েছে। রংপুর জেলার ১০টি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে ঢাকা-পাটুরিয়া-নাটাখোলা-কাশিনাথপুর-বগুড়া-রংপুর-বেলডাঙ্গা-বাংলাবান্ধা সড়কের বিভিন্ন অংশে ২০ কিলোমিটার, রংপুর-বড়বাড়ী-কুড়িগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার, রংপুর পুরাতন শহর (মডার্ন মোড়-মেডিকেল মোড়) জাতীয় মহাসড়কের চার কিলোমিটার, হাজিরহাট (রংপুর-সৈয়দপুর মহাসড়ক)-বেতগাড়ী-লাঙ্গলেরহাট-গংগাচড়া জেলা মহাসড়কের ১৬ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ ছাড়া এ জেলার রংপুর-বদরগঞ্জ-পার্বতীপুর-দিনাজপুর, রংপুর-গঙ্গাচড়া, সাদুল্লাপুর-পীরগঞ্জ-নবাবগঞ্জ ও রংপুর-সাহেবগঞ্জ-মাহীগঞ্জ-পীরগাছা জেলা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত ও ভেঙে গেছে। একই অবস্থা পাগলাপীর-ডালিয়া-তিস্তা ব্যারাজ আঞ্চলিক মহাসড়ক ও মিঠাপুকুর-সাহেবগঞ্জ-মধ্যপাড়া-ফুলবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের।

লালমনিরহাট : জেলার চারটি সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লালমনিরহাট-ফুলবাড়ী সড়কের ৯ কিমি.তে প্রায় ১২০ ফুট সড়ক একটি পুরনো পাইপ কালভার্টসহ ধসে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে জোড়াতালি দিয়ে অস্থায়ীভাবে যান চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ অংশ মেরামতে এক কোটি টাকা জরুরি বরাদ্দ চেয়েছেন সওজের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা। এছাড়া এ জেলার বড়বাড়ী-লালমনিরহাট-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়ক, রংপুর-বড়বাড়ী-কুড়িগ্রাম মহাসড়ক ও লালমনিরহাট-হারাগাছ সড়কের বিভিন্ন অংশে বড় বড় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে।

কুড়িগ্রাম : বন্যায় কুড়িগ্রাম জেলার ১১টি সড়কে ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো হচ্ছে- কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী-ভূরুঙ্গামারী, ভূরুঙ্গামারী-সোনাহাট স্থলবন্দর-মাদারগঞ্জ-ভিতরবন্দ-নাগেশ্বরী, উলিপুর-বজরা-চিলমারী, নাগেশ্বরী-কাশিপুর-ফুলবাড়ী (ফেরীঘাট), রংপুর-বড়বাড়ী-কুড়িগ্রাম, জামালপুর (নন্দিবাজার)-ধানুয়া কামালপুর-রৌমারী-দাঁতভাঙা ও রৌমারী-নতুন বন্দর সড়ক। এ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত অন্য সড়কগুলো হচ্ছে- বটতলী বাজার-রাজিবপুর, রাজারহাট-তিস্তা সড়ক, নাগেশ্বরী-নেওয়াশী-খড়িবাড়ী-ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম-উলিপুর-চিলমারী, সোনাহাট সংযোগ সড়ক এবং উলিপুর-নাজিমখান-রাজারহাট সড়ক।

নেত্রকোনা : জেলার চারটি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছেন স্থানীয় নির্বাহী প্রকৌশলী। সড়কগুলো হচ্ছে, বিরিশিরি-বিজয়পুর স্থলবন্দর, শ্যামগঞ্জ-জারিয়া-বিরিশিরি-দুর্গাপুর, নেত্রকোনা (ঠাকুরাকোনা)-কলমাকান্দা ও ধর্মপাশা-মধ্যনগর সড়ক।

জামালপুর : জেলার সাতটি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলো হলো- বকশীগঞ্জ-বালুগাঁও-দেয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ-সানন্দবাড়ী-চররাজিবপুর, জামালপুর-ধানুয়াকামালপুর-কদমতলা-রৌমারী, ইসলামপুর থানা সাব রেজিস্টার অফিস-হাকিম চেয়ারম্যান বাড়ী-ঋষিপাড়া বাইপাস, জামালপুর-ইসলামপুর- দেওয়ানগঞ্জ, বাউশী-গোপালপুর ও দিগপাইত-সরিষাবাড়ী-তারাকান্দি সড়ক।

মৌলভীবাজার জেলার তিনটি সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়কগুলো হচ্ছে- জুড়ী-ফুলতলা (বটুলী), কুলাউড়া-শমসেরনগর-শ্রীমঙ্গল সড়ক ও মৌলভীবাজার-শমসেরনগর-চাতলা চেকপোস্ট সড়ক। এসব সড়কের ওপর দিয়ে দুই থেকে তিন ফুট পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

সড়ক পানিতে ঢুবে থাকায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে পারছেন না সওজের কর্মকর্তারা। এ ছাড়াও যেসব জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- রাঙ্গামাটি, ফরিদপুর, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, সিলেটসহ কয়েকটি জেলা।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/202938/