শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) : বন্যার পানিতে ভাসছে হোর দিঘুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়
২৫ জুলাই ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১১:৩৩

উত্তরাঞ্চলে দ্বিতীয় দফা বন্যা শুরু পানি বাড়ছে মধ্যাঞ্চলেও

ইবরাহীম খলিল : পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষণে থাকা দশ নদীর পানি গতকাল বুধবার সকাল থেকে ফের বাড়তে শুরু করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা এবং ঢাকার চারপাশের নদীসহ উত্তরাঞ্চলের বড় নদীগুলোর পানি বাড়তে থাকবে। এদিকে দেশে বন্যার কারণে গত ১২ দিনে ৮৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার।

বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সুনামগঞ্জের সুরমা, শেরপুর-সিলেট জেলার সীমান্তে কুশিয়ারা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস, চাঁদপুরের মেঘনা, কুড়িগ্রামের ধরলা, গাইবান্ধার ঘাঘট, চকরহিমপুরে করতোয়া, চিলমারী ও নুনখাওয়ায় ব্রহ্মপুত্র, ফুলছড়ি, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি, কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ ও আরিচায় যমুনা, বাঘাবাড়িতে আত্রাই, এলাশিনে ধলেশ্বরী, জামালপুরে পুরনো ব্রহ্মপুত্র, গোয়ালন্দে, ভাগ্যকূলে ও সুরেশ্বরে পদ্মা নদীর পানি। এসব নদীতে পানি সর্বোচ্চ ১ থেকে ১৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান বলেন, ‘গত কয়েকদিনে দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও গতকাল থেকে মধ্যাঞ্চলের কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ঢাকার আশেপাশের কয়েকটি এলাকায় বানের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও ঢাকায় বন্যা পরিস্থিতি কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেই ধারণা করছি।’ তিনি বলেন, গতকাল থেকে ভারতের আসাম এবং পশ্চিম বাংলার উত্তরাংশে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় বন্যার পানি বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উত্তরাংশের হাওর অঞ্চলেও বানের পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে, দিন উত্তরাঞ্চলের সবকটি নদীর পানি দু একদিনের মধ্যে ঢাকার দিকে আসবে বলে আগাম সতর্কতা জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা জানান, বানের পানি মধ্যাঞ্চল হয়ে সাগরের দিকে চলে যেতো, তবে দুই দিনের আসামের বৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাবে। এর মধ্যে যদি বাংলাদেশেও বৃষ্টি হয় তাহলে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা বানের পানি তলিয়ে যেতে পারে।

এদিকে, বন্যা পরিস্থিতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলির মধ্যে জামালপুরের অবস্থা বেশ শোচনীয় বলে জানা গেছে। এখন পর্যন্ত এই জেলার ৭০টির মতো ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার হেক্টর ফসলী জমি এবং ৪ লাখ ৫০ হাজার গবাদি পশু। ১১২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যায় জেলার ১৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ও পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। ফলে, খাবারের অভাব, বিশুদ্ধ পানি এবং গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও এই জেলায় বন্যা কবলিত হয়ে এখন পর্যন্ত ২৯ জন মানুষ মারা গেছে।

গাইবান্ধা জেলাতেও প্রায় চারশ গ্রাম বানের পানি তলিয়ে গেছে। বেসরকারী হিসেবে, জেলাটিতে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ এখনও পানিবন্দি হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়া বন্যায় ডুবে গেছে ১১ হাজার ৯২৮ হেক্টর ফসলি জমি, ভেসে গেছে ৬ হাজার ২শ’ ৯০ টি পুকুরের মাছ। চলতি বন্যায় জেলার ২ হাজার ৫৫ মেট্রিক টন মাছ ও ১ কোটি ১১ লক্ষ পোনা ভেসে গেছে। যার বাজার মূল্য ২৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বলে জানা গেছে।

বন্যার পানি একদফা নেমে যাওয়ার পর আবারও নীলফামারী জেলায় তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ডিমলা উপজেলার প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। পানি নেমে যাওয়ার পর আশ্রয় কেন্দ্র থেকে যেসব মানুষ ঘরে ফিরে এসেছিল, দ্বিতীয় দফার বন্যায় তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। উজানের ঢলে তিস্তার পানি ক্রমশ বাড়তে থাকায় নতুন করে আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে ছুটছে বানভাসি মানুষ। লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম জেলা থেকেও বন্যা পরিস্থিতির একই রকম খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে বন্যার কারণে গত ১২ দিনে ৮৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার। জামালপুরের ২৯ জন বাদে গাইবান্ধা জেলায় ১৫ জন, নেত্রকোনায় ১৩ জন এবং টাঙ্গাইল ও সুনামগঞ্জ জেলায় পাঁচ জন করে মারা গেছে। লালমনিরহাট, নীলফামারী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুড়িগ্রাম, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া এবং ফরিদপুর জেলা থেকেও মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এসব জেলায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে। এছাড়া সাপের কামড়, বজ্রপাতসহ কলেরায় ভুগেও বন্যা কবলিত এলাকায় মানুষ মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে তিস্তায় দ্বিতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে ভারত থেকে পানি দ্রুত বেগে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। সতর্ক অবস্থায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হচ্ছে।

তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজানের পানি নেমে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বুধবার দুপুর থেকে আবারও নতুন করে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে পরিবারগুলো স্থানীয় গাইডবান, স্কুল, মাদরাসা, কলেজ ও সড়কে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছেন। এতে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও ত্রাণ সংকট। 

লালমনিরহাট :  লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাটে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গিয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত ১৪ দিন থেকে চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি থাকলেও অধিকাংশ চরেই তেমন কোনো ত্রাণ কিংবা সাহায্য সহযোগিতা পৌঁছায়নি। এতে দুভোর্গে রয়েছে ভানবাসি মানুষ।

জানা গেছে, গত ১৪ দিন ধরে পানিবন্দি রয়েছে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার, সানিয়াজান, ঠাংঝাড়া, পাকশের সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া, দালালপাড়া, রমনীগঞ্জ, সির্ন্দুরনা, পাঠান বাড়ি, হলদি বাড়ী, ডাউয়াবাড়ি, বিছন দই, গড্ডীমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, পাটিকাপাড়া, পশ্চিম হলদি বাড়ি, চর গড্ডীমারী, ধুবনী, সিঙ্গীমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার কালিকাপুর, চর বৈরাতী, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা, গোর্বধন, কুটির পার ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, মোগলহাট, কুলাঘাটসহ নদী তীরবর্তী ১৬টি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। এসব এলাকায় তলিয়ে গেছে বসতবাড়ী, রাস্তাঘাট ও স্কুল কলেজ।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিয়াররহমান জানান, ১৪ দিন ধরে ইউনিয়নের ৪টি ওয়ার্ডে প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। সরকারি সাহায্য পেলেও তা খুবই কম। লালমনিরহাটর জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। সার্বক্ষণিক তিস্তাপাড়ের মানুষের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফের বন্যা মোকাবেলা করতে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত রয়েছে।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে বন্যার পানি কমতে না কমতেই আবারও নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি। বুধবার বিকেলে ধরলা নদীর পানি ব্রিজ পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাশাপাশি টানা বৃষ্টির ফলে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম ভোগান্তি।

বন্যায় ধরলা অববাহিকার ৫০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। কুড়িগ্রাম-সদরের বাংটুর ঘাট থেকে ফুলবাড়ী বাঁধের ওপর পাকা রাস্তাটি বাংলাবাজার নামক স্থানে ভাঙনের মুখে পড়েছে। বাঁধটি ভাঙলে ২০-৩০টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানির তোড়ে ভেঙে গেছে নাগেশ্বরী পৌর এলাকার সাঞ্জুয়ার ভিটা সড়ক। তিস্তার ভাঙনে উলিপুর উপজেলার নাগরাকুড়া টি-বাঁধের ৫০ ফুট এলাকা পানির প্রবল চাপে ধসে গেছে।

টানা দুই সপ্তাহের বন্যায় জেলার ৯টি উপজেলার ৯ লাখ ৫৮ হাজার ৩২৮ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।
গাইবান্ধা : পবিত্র ঈদুল আজহার আগে গাইবান্ধার সঙ্গে রাজধানীর ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে না। ফলে এই ট্রেনযাত্রীদের রাজধানী থেকে উত্তরজনপদে যেতে হবে বিকল্প পথে। গত ১৬ই জুলাই রেলপথ বিধ্বস্ত হওয়ায় লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুরসহ রাজধানীর সঙ্গে এই রেলপথে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

গত ৮ দিন ধরে গাইবান্ধা থেকে সারাদেশের বিশেষ করে রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
রেলপথ মেরামত স্বাভাবিক করতে বুধবার সরজমিন পরিদর্শন করেন রেলের পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো .আফজাল হোসেন। তিনি জানান, রেল চালু করার জন্য জরুরীভাবে মেরামত কাজ চালানো হচ্ছে। তবে এক মাসের আগে এই পথে রেল চলাচল করা সম্ভব হবে না। 

নীলফামারি : প্রথম দফায় বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নীলফামারীতে তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি হয়েছে। বুধবার বিকেল ৩টা থেকে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার (৫২ দশমিক ৯৫) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা অববাহিকার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ৩০ হাজার মানুষ পুনরায় বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। তারা জানান, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে পুনরায় জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের নদী বেষ্টিত চরগ্রাম ও নিচু এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে।

দ্বিতীয় দফায় বন্যা শুরু হলে আরও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। উজানের ঢল সামাল দিতে খুলে রাখা হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট। ফলে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা অববাহিকার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার ১৫টি চর ও গ্রামের পরিবারগুলো বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এতে প্রায় ১০ হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। 

বগুড়া : বগুড়ায় বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল বুধবার যমুনা নদীর পানি কিছুটা কমলেও বাঙ্গালি নদীর পানি এখনও বাড়ছে। ফলে এখনও পানিবন্দী হয়ে আছে বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় যমুনার পানি ১৬ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে বাঙ্গালি নদীর পানি গত ২৪ ঘন্টায় পাঁচ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১০১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বাঙ্গালি নদীর পানি বাড়ায় সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট ও শেরপুরের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি যমুনার চরের মানুষের মতোই ভোগান্তিতে পড়েছে বাঙ্গালি নদীর দুই পাড়ের মানুষ। এখন পর্যন্ত সারিয়াকান্দি উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ফলে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি হিসেবে এই উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার পরিবার। বানভাসী মানুষের আশ্রয়স্থলগুলোতে ল্যাট্রিনের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশুদ্ধ পানির সংকট রোধে  উঁচু স্থানে ৪৪টি নলকূপ বসানো হয়েছে।

এদিকে, সোনাতলায় যমুনার নদীর পানি কমলেও বাঙ্গালি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। উপজেলার পৌরসভা, সদর, মধুপুর, তেকানীচুকাইনগর, পাকুল্লা, জোড়গাছা ও বালুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানিতে পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এছাড়াও ফসলের মাঠ পাট, আউশ ধান, বীজতলা, শাকসবজি ও মরিচের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

অন্যদিকে, শেরপুরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। ধুনট উপজেলার বাঙ্গালি নদীর দুধারে আবাদী জমি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় মানুষের চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। বগুড়া জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, বন্যা দুর্গতদের মাঝে শুকনা খাবার, চাল ও অন্যান্য খরচের জন্য নগদ অর্থ বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপশি বিশুদ্ধ পানির জন্য উঁচু স্থানে নলকূপ বসানো হয়েছে।

https://www.dailysangram.com/post/384051