২৪ জুলাই ২০১৯, বুধবার, ২:১০

নারায়ণগঞ্জে একদিনে ৫ লাশ

নারায়ণগঞ্জে পৃথক ঘটনায় একই দিনে ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে ফতুল্লা, আড়াইহাজার, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকি দুইজনের মৃত্যুর ব্যাপারে তদন্ত চলছে। উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

নিহতরা হলেন- আড়াইহাজার উপজেলার মারুয়ার্দী গ্রামের মৃত আহেদ আলীর ছেলে সুরুজ মিয়া (৪০), বন্দর উপজেলার কাইতাখালি এলাকার মৃত সফিউদ্দীন টুক্কি শিকদারের ছেলে মিজান শিকদার মিশর (২৮), একই উপজেলার আব্দুল বারেক (৫৫), ফতুল্লার লালখাঁ এলাকার মৃত আব্দুল হামিদের মেয়ে শেফালী বেগম (৪২) এবং সিদ্ধিরগঞ্জে অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবক (২৫)। আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, গতকাল মঙ্গলবার সকালে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষ ফালান মিয়ার ৩ ছেলে আবুল হোসেন, মোক্তার হোসেন ও রেজাউল করিম, সুরুজ মিয়াকে পিটিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজহারুল ইসলাম জানান, সোমবার গভীর রাতে বন্দর উপজেলায় কাইতাখালি এলাকায় টাকা পয়সার লেনদেন সংক্রান্ত বিরোধে মিশর নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ওই ঘটনায় জড়িত মিঠুসহ ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত মিশর গ্রেপ্তার মিঠুর কাছে ৫০০ টাকা পেতো। সেই টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত মিশর গাজীপুরের একটি গার্মেন্টে কাজ করতো। বড় ভাই সানি শিকদারের বিয়ে উপলক্ষে মিশর গাজীপুর থেকে বাড়ি ফিরেছিল। আগামী শুক্রবার সানির বিয়ের তারিখ ছিল।

পুলিশ গতকাল সকালে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত মিঠু, তার সহযোগী মুন্না, শ্যামল, সাকিব ও জিসানকে গ্রেপ্তার করেছে।

অন্যদিকে, বন্দরের শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আব্দুল বারেক (৫৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নিহত আব্দুল বারেক বন্দর শান্তিনগর বালুরমাঠ এলাকার মৃত সামাদ হোসেনের পুত্র। পরিবারের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার রাতে শীতলক্ষ্যা নদীতে গোসলের জন্য বের হয়ে আর বাসায় ফেরেননি বারেক। পরে সকালে বন্দরের শান্তিনগর এলাকার শীতলক্ষ্যার তীর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

অপরদিকে ফতুল্লার লালখাঁ এলাকার একটি ডোবা থেকে শেফালী বেগম নামে এক নারীর পচন ধরা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাসানুজ্জামান বলেন, পরিবারের অভিযোগ শেফালীর মৃগী রোগ ছিল। এলাকার একটি কচুক্ষেতের পাশের ডোবা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে তার লাশটি উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, মৃগী রোগ থাকায় কচুক্ষেতের পাশের ডোবায় পড়ে গিয়ে তার মৃত্যু হয়। ঘটনাটি ২-৩ দিন আগের হওয়ায় লাশে পচন ধরে গেছে। তবে ময়নাতদন্তে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

এ ছাড়া গতকাল মঙ্গলবার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকার মতিন সড়কে বসুন্ধরা কয়েল কারখানার পাশ থেকে অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবকের (২৫) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ডান হাতে নখ উপড়ানো ছাড়া দুই হাতের বাহুতে কামড়ের দাগ রয়েছে। পুলিশের ধারণা, অন্য কোথাও তাকে হত্যার পর লাশ ওই স্থানে ফেলে রেখে গেছে হত্যাকারীরা।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) এইচ এম জসিম উদ্দিন বলেন, গতকাল মঙ্গলবার সকালে স্থানীয়রা মিজমিজি মতিন সড়ক এলাকার কয়েল কারখানার পাশের রাস্তায় মরদেহটি পড়ে থাকতে দেখে থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ সকাল সাড়ে ৮টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে। তার পরিচয় এখনও শনাক্ত করা যায়নি।
পিবিআই নারায়ণগঞ্জের পরিদর্শক জহির উদ্দিন বলেন, নিহত যুবকের হাতের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে তা সার্ভারে দিয়েও কারো সঙ্গেই মেলেনি। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, যুবকের জাতীয় পরিচয়পত্র হয়নি। সে কারণে আঙ্গুলের ছাপ কারো সঙ্গে মেলেনি।

https://www.mzamin.com/article.php?mzamin=182669