ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্টের বিতর্কিত এক নির্দেশে সোমবার জেরুজালেমের সার বাহের গ্রামে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ফিলিস্তিনিদের ১৬টি ভবনের শতাধিক অ্যাপার্টমেন্ট- এএফপি
২৩ জুলাই ২০১৯, মঙ্গলবার, ১:০৯

জেরুজালেমে আগ্রাসন

ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিল ইসরায়েল

সার বাহের গ্রামটি পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরের মাঝামাঝি অবস্থিত। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর অঞ্চলটি দখল করে ইসরায়েল

প্রতিরোধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল সোমবার ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বুলডোজার নিয়ে সার বাহের গ্রামে হাজির হয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর শত শত সদস্য। সার বাহের গ্রামটি ইসরায়েলের দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেম এবং পশ্চিম তীরের মাঝামাঝি অবস্থিত। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর ওই অঞ্চলটি দখল করে নেয় ইসরায়েল। এক গ্রামবাসী জানান, প্রায় ১শ'টি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে এমন ১৬টি আবাসিক ভবনে ধংসযজ্ঞ চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। দখলকৃত পশ্চিম তীর এবং ইসরায়েলের সীমান্ত দেয়ালের কাছে অবস্থিত এই আবাসিক ভবনগুলোকে 'নিরাপত্তার জন্য হুমকি' হিসেবে দেখে ইসরায়েল। খবর আলজাজিরার।

বিতর্কিত এক রায়ে গত মাসে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট সার বাহের গ্রামে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের ওই ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিতে নির্দেশ দেন। এ নিয়ে সাত বছর ধরে মামলা চলে। ফিলিস্তিনিরা বলছেন, এর ফলে ইসরায়েল যে নজির স্থাপন করল, তা এখন ওই অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের অন্য ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিতে উৎসাহিত করবে। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে বিকট শব্দে বড় বড় বুলডোজার দিয়ে ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি ভাঙতে শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ওই ভবনগুলোতে বসবাস করে আসা পরিবারের সদস্যরা এ সময় নির্বিকারভাবে ভাংচুরের দৃশ্য দেখতে থাকেন। এক ব্যক্তি রাস্তায় বসে ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে তার বাড়িটি ভাঙার দৃশ্য দেখছিলেন।

ভোরের আলো ফোটার আগেই ইসরায়েলি বাহিনী সার বাহের গ্রামে উপস্থিত হয়ে লোকজনকে জোর করে বাড়িগুলো থেকে বের করে দেয় এবং সেগুলো ধংস করার জন্য বিস্ম্ফোরক লাগাতে থাকে। এ সময় পরিবারগুলোর বাসিন্দারা চিৎকার করে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। দুই ঘণ্টার মধ্যে ৫০ শতাংশ ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি নিপীড়নের আরেকটি চিহ্ন যুক্ত হলো।

ইসরায়েলের এ পদক্ষেপের ফলে নিশ্চিতভাবেই উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনিদের তালিকায় যুক্ত হলেন আরও মানুষ। ফিলিস্তিনিরা বলেন, নিরাপত্তার অজুহাতে ইসরায়েল এখন ওই অঞ্চলের আরও ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিতে পারে। আর সেসব জায়গায় বসতি গড়ে তুলবে ইসরায়েলিরা এবং তা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। ইসরায়েলের দখল করা পশ্চিম তীরের কিছু এলাকায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের শাসন চলে। তারা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বাড়ি বানিয়েছিলেন বলে জানান। ৩৭ বছর বয়সী ফাদি আল-ওয়াহাসের তিনতলা ভবনটি যখন ইসরায়েলি বাহিনী গুঁড়িয়ে দিচ্ছিল তখন তিনি ভাঙা কণ্ঠে বলছিলেন, 'অনেক স্বপ্ন নিয়ে একটির পর একটি পাথর বসিয়ে এই বাড়িটি আমি তৈরি করেছিলাম। আর এখন আমি সর্বহারা। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যথাযথ অনুমতি নিয়েই আমি এ বাড়িটি বানিয়েছিলাম।'

গত সপ্তাহে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সমন্বয়কারী জেমি ম্যাকগোলড্রিক এবং অন্যান্য কর্মকর্তা ইসরায়েলকে সার বাহের গ্রামে ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ স্থগিত করতে বলেছিলেন। তারা বলেছিলেন, ইসরায়েলের এমন সিদ্ধান্তে তাৎক্ষণিক ৩৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি গৃহহীন হয়ে পড়বেন। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলেছে, সার বাহের গ্রাম তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার মধ্যে পড়েছে। ওই বাড়িঘর নির্মাণে তাদের যথাযথভাবে অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল। তবে ইসরায়েলি সুপ্রিম কোর্ট বলেছিলেন, নিয়ম না মেনেই ওই ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়েছে এবং নিরাপত্তা বেড়ার কাছাকাছি হওয়ায় তা নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।

ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। তাদের এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি আদালতকে অভিযুক্ত করে বলা হয়, ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ভেঙে ইসরায়েলি দখলকে আরও পাকাপোক্ত করে তুলতে নজির স্থাপন করেছেন আদালত। অন্যদিকে ইসরায়েলি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে বলেছে, এ ধরনের নীতি চলমান রাখার মধ্য দিয়ে দুই দেশের সংকট সমাধান ও শান্তি প্রক্রিয়ার প্রচেষ্টাকে খাটো করা হয়েছে। তবে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এসব অভিযোগ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।

https://www.samakal.com/todays-print-edition/tp-world/article/19074702