২১ জুলাই ২০১৯, রবিবার, ৩:৪৯

দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা

ফসল নষ্ট ৭০ হাজার হেক্টর জমির

ক্ষতিগ্রস্ত ৪,১৭৮ কিমি. রাস্তা * বন্ধ ৩ হাজার ১৫২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান * পানিবন্দি প্রায় ৪০ লাখ মানুষ * দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য

ভয়াবহ বন্যায় দেশের ১৩ জেলার ৬৯ হাজার ৭০৮ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ কাঁচা-পাকা মিলে ৪ হাজার ১৭৮ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১১ জেলার ৩ হাজার ১৫২টি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ। স্মরণকালের এই ভয়াবহ বন্যায় এবার ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। এ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ২১ জেলা বন্যাক্রান্ত হয়েছে। তবে এর মধ্যে ৮ জেলার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব ১৯ জুলাই পর্যন্ত সরকারি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (এনডিআরসিসি) সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। প্রসঙ্গত বেসরকারিভাবে জানা গেছে সারা দেশের ২৮ জেলা বন্যাক্রান্ত হয়েছে।

এনডিআরসিসি’র সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের বন্যাকবলিত জেলাগুলোর মধ্যে ১৩ জেলার ৪৫টি উপজেলায় প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে আছে জামালপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, শেরপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিরাজগঞ্জ ও লালমনিরহাট। এসব জেলায় যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, কুশিয়ারা, ধরলা, সোমেশ্বরী, আত্রাই, ঘাঘটসহ ৮ নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫৮ সেমি. ও ফুলছড়ি পয়েন্টে ১৪৭ সেমি. ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে এসব জেলার ৬৯ হাজার ৭০৮ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে। সবচেয়ে বেশি ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে কুড়িগ্রাম (১৫,১৫৯ হেক্টর) ও জামালপুর (১৪,৬৪৫) জেলায়। এছাড়া গাইবান্ধায় ১০ হাজার ৮৩৩ হেক্টর, বগুড়ায় ৮ হাজার ৯৭৮ হেক্টর, সিরাজগঞ্জে ৭ হাজার ৫৪১ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।

ফসলের ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ে জানতে চাইলে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক আবদুল খালেক যুগান্তরকে বলেন, তার আবাদযোগ্য সব জমিতেই পানি উঠেছে। নষ্ট হয়েছে পাট, আমন ধানের বীজতলাসহ বিভিন্ন সবজি। এ ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয় বলেও জানান তিনি।

‘মেসার্স জিএম মৎস্য খামার’র মালিক শফিউল হক মান্না যুগান্তরকে বলেন, দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশনের পাশে প্রায় ১০০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা খামারটিতে ছিল মাছ, গরু, হাঁস, মুরগি, কবুতর। প্রায় ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে গড়ে তোলা খামারটি বন্যায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাল দিয়েও মাছ আটকানো যায়নি। পানির তোড়ে সব ভেসে গেছে। ১৯৮৮ সালের চেয়েও এবার ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। এতে তিনি সর্বস্বান্ত হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন এই মৎস্য ব্যবসায়ী। ১৩ জেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ কাঁচা-পাকা মিলে ৪ হাজার ১৭৮ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে লালমনিরহাট জেলায়। এ জেলায় ২ দশমিক ৬৮ কিমি. রাস্তা সম্পূর্ণ এবং ৯০৫ কিলোমিটার রাস্তা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এরপরই রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলার নাম। এ জেলায় মোট ক্ষতি হয়েছে ৮১৮ কিমি. রাস্তার। এছাড়া গাইবান্ধা জেলায় ৫৬৫ কিমি., মৌলভীবাজার জেলায় ৩৪৬, নেত্রকোনা জেলায় ৩৩৬, সিলেট জেলায় ৩৪০ কিমি. রাস্তা। এছাড়া বন্যার পানির কারণে ১১ জেলার ৩ হাজার ১৫২টি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জামালপুর জেলার। এ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৮৪৬টি। এর মধ্যে ৬৮১টি শিক্ষা ও ১৬৫টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।

এছাড়া উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে সুনামগঞ্জ (৫৫৫টি প্রতিষ্ঠান), কুড়িগ্রাম (৫০৭), নেত্রকোনা (৩৭১), গাইবান্ধা (২৭৭) এবং সিরাজগঞ্জ (১৬৬) জেলায়। বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপজেলা কমিটির সদস্য মোদন মোহন ঘোষ যুগান্তরকে বলেন, ‘জামালপুরের অধিকাংশ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন কোমর পানির নিচে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বুক পানির নিচে। আর যেসব প্রতিষ্ঠানে পানি ওঠেনি সেখানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে বানভাসি মানুষ দু’মুঠো খাবার পাচ্ছে। ফলে দেওয়ানগঞ্জসহ জেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ রয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা অপূরণীয় ক্ষতিতে পড়বেন।’

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/201415/