রেলে ২০৩১ ঝুঁকিপূর্ণ লেভেল ক্রসিং: দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রতি মুহূর্তেই। ছবি: যুগান্তর
২০ জুলাই ২০১৯, শনিবার, ৪:০৩

রেলে ২০৩১ ঝুঁকিপূর্ণ লেভেল ক্রসিং: দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রতি মুহূর্তেই

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় একটি অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে সোমবার ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসে থাকা ১১ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। সেখানে ছিল না কোনো ‘গেট বেরিয়ার (লোহার বার)’ বা ‘গেটকিপার (প্রহরী)’।

এমন অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং শুধু সিরাজগঞ্জেই নয়, প্রায় সারা দেশের রেলপথেই বিদ্যমান। কারণ বৈধ ও অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের ৮১ শতাংশের বেশি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আর এসব লেভেল ক্রসিং দিয়েই প্রতিদিন পার হচ্ছে দেশের বিভিন্ন রুটের ট্রেন। স্বাভাবিক কারণে প্রায় সময়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। অকালে ঝরে পড়ছে অসংখ্য প্রাণ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ট্রেনের ইঞ্জিনসহ রেলপথ।

রেলপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশের রেলপথে ২ হাজার ৪৯৭টি লেভেল ক্রসিং আছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৫টি অবৈধ। যেখানে কোনো ‘গেট বেরিয়ার’ বা ‘গেটকিপার’ নেই। আর বাকি ১ হাজার ৪১২টি বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে মাত্র ৪৬৬টিতে আছে গেট বেরিয়ার ও গেটকিপার।

অর্থাৎ ৯৪৬টি বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে কোনো গেটকিপার বা বেরিয়ার নেই। সব মিলিয়ে এ মুহূর্তে বৈধ ও অবৈধ ২০৩১টি (৮১.৩৩ শতাংশ) লেভেল ক্রসিং রয়েছে অত্যন্ত ঝুঁকিতে। আরও জানা যায়, গত ১০ বছরে ৪ হাজার ৮৮৮টি ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪০২ জন ও আহত হয়েছেন ২ হাজার ৩০০ জন। এসব দুর্ঘটনার প্রায় ৮০ শতাংশই ঘটেছে লেভেল ক্রসিংয়ে। সেই হিসাবে এসব ক্রসিংয়ে প্রায় ৩২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আহত হয়েছেন ১৮৪০ জন।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, কোনো স্থানে নতুন রেললাইন নির্মাণ করলে প্রয়োজনে লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করে সেখানে প্রহরী বা গেটকিপার নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু রেলকে না জানিয়ে বা অনুমোদন না নিয়ে এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তিপর্যায়ে রেললাইনের ওপর লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করে থাকে, যা রেলওয়ের আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু এ আইন কেউ মানছে না। তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অবৈধ লেভেল ক্রসিং নির্মাণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশীর্বাদ থাকে।

অন্যদিকে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ- ঝুঁকিপূর্ণ লেভেল ক্রসিংগুলোয় ‘সতর্কীকরণ’ সাইনবোর্ড টানিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে। ওই সাইনবোর্ডে লেখা থাকে- ‘এটি অনুমোদিত একটি লেভেল ক্রসিং। নিজ দায়িত্বে পারাপার হোন। যে কোনো দুর্ঘটনার জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়।’ কিন্তু এটি লিখে দায়িত্বপ্রাপ্তরা দায় এড়াতে পারে না। এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, যেসব বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে প্রহরী রয়েছেন তার মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশ ক্রসিংয়ে স্থায়ী অর্থাৎ রেল থেকে নিয়োগ দেয়া গেটম্যান। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া প্রহরীদের ঠিকমতো বেতন দেয়া হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে। মাসের পর মাস বকেয়া থাকছে তাদের বেতন।

এদিকে যেসব বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে প্রহরী নেই, সেসব লেভেল ক্রসিংয়ে অস্থায়ীভাবে সৃজনকৃত লোক নিয়োগ দেয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে লোক নেয়া হচ্ছে না। ২০১৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ১০৩৮ জন এবং ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর ১৯০ জন, ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি ২২১ জনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো লোক নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে বৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোয়ও প্রহরী বা গেটম্যান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈধ কিংবা অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলো মৃত্যুর ফাঁদের বিষয়টি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বা সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে অজানা নয়। বরং জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভার বৈঠকে একাধিকবার প্রহরীবিহীন বৈধ-অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ২০১১ সালে রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠনের পর থেকে আগের চার মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ছিল- ‘রেলে কোনো অবৈধ লেভেল ক্রসিং থাকবে না। প্রহরী নিয়োগ সম্পূর্ণ করা হবে।’ কিন্তু অদ্যাবধি এগুলো আলোর মুখ দেখেনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বর্তমান রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি নয়, অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে কোনো দুর্ঘটনায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়। এসব দুর্ঘটনায় যেমন প্রাণহানি ঘটছে, তেমনি রেলওয়েরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। সব কটি বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে প্রহরী নিশ্চিত করা হবে। অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলো নিয়ে আমরাও বেশ চিন্তিত। দীর্ঘদিন ধরে এসব অবৈধ লেভেল ক্রসিং গড়ে ওঠায় বিভিন্ন কারণে কঠোরও হওয়া যাচ্ছে না।’

তিনি আরও জানান, বৈধ কিংবা অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোয় প্রাণহানি কিংবা আহতের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। মানুষ যদি একটু সচেতন হয়, তাহলেই এ দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব ছিল। মানুষের জীবনের চেয়ে সময় তো কখনও বড় হতে পারে না। পথচারী তথা বিভিন্ন যানবাহন লেভেল ক্রসিংগুলোর বরাবর এসে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। লোহার বার ফেলা থাকলেও তা উঠিয়ে রাস্তা পারাপার হয়।

সরকারি, বেসরকারি তথা ব্যক্তিপর্যায়েও সম্পূর্ণ অবৈধভাবে লেভেল ক্রসিং তৈরি করে ফেলছে। তবে আমরা প্রকল্প নিয়েছি, বৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোকে অত্যাধুনিক করাসহ সব কটি লেভেল ক্রসিংয়ে প্রহরী নিশ্চিত করা হবে। যারা এসব করেছে, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে লেভেল ক্রসিংয়ে ২০০৯ সালে এক দুর্ঘটনায় মারা যান ৯ জন। আহত হন আরও ৩১ জন। ২০১১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সীতাকুণ্ড এলাকায় একটি অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় টেম্পো উল্টে ৬ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল কমলাপুর টিটিপাড়া লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের সঙ্গে বাসের ধাক্কায় ৮ জনের মৃত্যু হয়। একই বছরের ১২ ডিসেম্বর গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়।

২০১৫ সালে জয়দেবপুর-টঙ্গী রেলপথে ধীরাশ্রম রেলওয়ে স্টেশনের অদূরে লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় নিহত হন ৮ জন এবং আহত হন ১৭ জন। ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় ৪ জন নিহত হন। একই সালের ১৭ অক্টোবর কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলায় অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় টেম্পো খাদে পড়ে ৪ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৮ সালে ৫২টি দুর্ঘটনা ঘটে লেভেল ক্রসিংয়ে, মারা যান ১৩ জন।

রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) মো. আনোয়ারুল হক মঙ্গলবার যুগান্তরকে জানান, লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। লাইন ঘেঁষে ১০-১৫টি বাড়ি কিংবা ছোটখাটো একটি বাজার হলেই লোকজন গায়ের জোরে অবৈধভাবে রেললাইনের আড়াআড়ি করে পথ তৈরি করে ফেলছেন। কোনো কোনো এলাকায় রাতের আঁধারে অবৈধভাবে লেভেল ক্রসিং তৈরি করেছে। এ যেন প্রতিনিয়তই হচ্ছে। রেলের আইন কেউই মানছে না।

তিনি বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় যে লেভেল ক্রসিংটিতে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা সম্পূর্ণ অবৈধ। এক প্রকার জোর করে এটি করা হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলপথে ১ হাজার ৪২৩টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। যার মধ্যে ৩৮৯টি লেভেল ক্রসিং সম্পূর্ণ অবৈধ। ১ হাজার ৩৪টি বৈধ ক্রসিংয়ের মধ্যে মাত্র ৩১৯টিতে প্রহরী রয়েছেন, বাকি ৭১৫টিতে কোনো প্রহরী নেই। আমাদের বৈধ ক্রসিংগুলোতেই প্রহরী দেয়া নিশ্চিত করতে পারছি না।

মো. আনোয়ারুল হক আরও বলেন, পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে ১ হাজার ৮৫টি অবৈধ ক্রসিংয়ের মধ্যে এলজিইডি করেছে ৪৫২টি, সওজ করেছে ১১টি, ইউনিয়ন পরিষদ করেছে ৩৬৩টি, পৌরসভা করেছে ৭৯টি, সিটি কর্পোরেশন করেছে ৩৪টি, জেলা পরিষদ করেছে ১৩টি, চট্টগ্রাম বন্দর করেছে ৩টি, বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ করেছে ১টি, জয়পুরহাট চিনিকল কর্তৃপক্ষ করেছে ১টি, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান (প্রাইভেট) করেছে ৩টি, অন্যান্য ৯২টি, জানা নেই ৩৩টির। এসব লেভেল ক্রসিং করতে গিয়ে রেলওয়ের কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি। সম্পূর্ণ জোরপূর্বক এসব ক্রসিং তৈরি করা হয়েছে। শত বাধা দিয়েও এসব অবৈধ ক্রসিং নির্মাণ ঠেকাতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে বহুবার এর ব্যাখ্যা চেয়েও ব্যর্থ হয়েছে। এসব ক্রসিং নিজেদের বা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে নিয়ে প্রহরী নিয়োগ এবং গেট নির্মাণের কথা বললেও কেউ কথা রাখেনি।

রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়াজাহান যুগান্তরকে জানান, রেলে যে কটি বৈধ লেভেল ক্রসিং রয়েছে, সেগুলোই রক্ষণাবেক্ষণ করতে কষ্ট হচ্ছে আমাদের। কারণ কোনো পথচারী এবং যানবাহনের চালকই আইন মানে না। ট্রেন এলে ক্রসিংয়ের দু’পাশে বার ফেলা হলেও এক প্রকার জোর করে এসব বার উঠিয়ে পার হতে চায় লোকজন ও যানচালকরা।

অপারেশন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কোনো দুর্ঘটনার পর ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। এতে যাত্রীদের কেনা টিকিটের পুরো টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে। এতে ঘটছে সিডিউল বিপর্যয়ও।

প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় নিহত কিংবা ক্ষয়ক্ষতির দায় রেলের নয়। প্রতিটি দুর্ঘটনায় রেলওয়ের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। যেসব যানবাহনের কারণে ক্রসিংয়ের ওপর দুর্ঘটনা ঘটছে, সেসব যানবাহন আটকসহ মালিক ও চালকদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। এমনকি বৈধ ক্রসিংগুলোয় যে দুর্ঘটনা ঘটছে, সেগুলোয়ও রেলওয়ের পক্ষ থেকে মামলা করা হচ্ছে। কারণ রেল তার নির্ধারিত পথে চলে। এর দু’পাশে সব সময় ১৪৪ ধারা জারি থাকে। বৈধ ক্রসিংগুলোয় দু’পাশে থাকা লোহার বার উঠিয়ে যান চালাতে উঠেপড়ে লাগে চালকরা। এতে দুর্ঘটনা ঘটে।

রেলওয়ে অ্যাক্ট-১৮৬১ ও রেলওয়ের ম্যানুয়াল অনুসারে অন্য বিভাগের মাধ্যমে লেভেল ক্রসিংগুলো নির্মিত। এর গেটগুলো সংশ্লিষ্ট মাধ্যমে পাওয়া ডিপোজিটের অর্থে মেইনটেন্যান্স ও অপারেটিং কস্ট ব্যবস্থাপনার কথা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি। রেলওয়ে অ্যাক্ট ১৮৬১ সালের ৫নং আইনের ১২ নম্বর ধারা মোতাবেক রেললাইনের দু’পাশে ২০ ফুটের মধ্যে নির্দিষ্ট লোকবিহীন কোনো মানুষ বা গবাদিপশু প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ। সে আইন অমান্য করে অবৈধভাবে লেভেল ক্রসিং তৈরি করা হচ্ছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/201114/