১৭ জুলাই ২০১৯, বুধবার, ১:২১

মশার সাথে পেরে উঠছে না দুই সিটি কর্পোরেশন

তোফাজ্জল হোসেন কামাল : ঢাকার মশার সাথে পেরে উঠছে না দুই সিটি কর্পোরেশন। নিয়ত প্রানান্তকর চেষ্টা চালালেও ছোট্ট মশাকে বাগে আনতে পারছে না তারা। মশা নিধনে ঢাল-তলোয়ারের সাথে যে দু‘ ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয় , তা এখন আর কাজে আসছে না। ফলে বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকার বাজেট শেষ করেও মশার যন্ত্রনা থেকে নিস্তার পায়নি রাজধানীবাসী।

এখন দুই সিটি কর্পোরেশনই মশার ওষুধ নিয়ে বিকল্প ভাবছে। ইতোমধ্যে মশার উপদ্রব ঠেকাতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ওষুধের মাত্রা বাড়িয়ে শেষ চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) বিকল্প হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছে। দুই সিটি কর্পোরেশনেরই এখন এক ও অভিন্ন টার্গেট। আর সেটি হচ্ছে, মশা খেদাও , মশা তাড়াও সর্বোপরি মশা নিধন।

জানা গেছে , রাজধানীতে মশা নিধনের প্রক্রিয়া দুই ধরনের। এডাল্টিসাইড দিয়ে ফগিং মেশিনে নির্দিষ্ট মাত্রার ওষুধ কেরোসিন তেলের সাথে মিশিয়ে স্প্রে ম্যানরা ফগিং করেন। এ সময় ধোয়া দিয়ে মশা তাড়ানো হয়। আগে এ ধোয়ায় মশা মরলেও এখন সেটা দেখা যায় না। লার্ভিসাইড দিয়ে ঝোপঝাড়, নালা নর্দমা ,ময়লা আবর্জনা ,জমে থাকা পানিসহ যে সব স্থানে মশার উৎপত্তি বা জন্ম ঘটে থাকে- সেসব স্থানে ছিটিয়ে মশার লার্ভা ধ্বংস করা হয়ে থাকে। এটাও এখন কার্যকারিতা হারিয়েছে।

জানা গেছে, রাজধানীর মশা মারতে দুই সিটি করপোরেশন বিদায়ী অর্থ বছরে খরচ করেছে ৪৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কিন্তু তাতেও মশা কমছে না, আর তাই বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এবার বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর স্বজনদের অভিযোগের তীর নগর কর্তৃপক্ষের দিকে; এদিকে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের আন্তরিকতার অভাব নেই, তবে রয়েছে সীমাবদ্ধতা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর গত ১৫ জুন পর্যন্ত ৪৮৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল, যাদের মধ্যে দুজন মারা যান। কিন্তু ১৫ জুনের পর দুই দিনে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৭২ জন বেড়ে যায়। এ সংখ্যা ২০১৮ সালের একই সময়ের চেয়ে বেশি। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৪২৮ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন ডেঙ্গুতে। মারা গিয়েছিলেন তিনজন।

জুন মাসের শুরু থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার কর্মকর্তারা; আক্রান্তদের প্রায় সবাই ঢাকার।

রোগ নিয়ন্ত্রন শাখার পরিচালক ডা. সামিয়া তাহমিনা বলেন, বর্ষা এডিস মশা বিস্তারের উপযোগী সময়। এ কারণে এ সময় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।“এবার এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ গত বারের চেয়ে বেশি। প্রচন্ড গরমের পর এখন বাতাসে আর্দ্রতা বেড়েছে। জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে মশা ডিম পাড়ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ডিম ফুটে বাচ্চা খুব দ্রুত বের হচ্ছে।”

এর আগে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা গত ৩ থেকে ১২ মার্চ ১০ দিন মশার উৎস নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছিল। তখন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ৯৭টি ওয়ার্ডের ১০০টি স্থানের ৯৯৮টি বাড়ি পরিদর্শন করে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। ওই জরিপে ডিএসসিসির ৮০ নম্বর ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের সূচক বা বিআই (ব্রুটাল ইনডেক্স) সবচেয়ে বেশি ৮০ পাওয়া গিয়েছিল।

হাতিরঝিল এলাকার দুপাশে দুই সিটি করপোরেশনেরই কয়েকটি ওয়ার্ড পড়েছে। সেসব এলাকায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব বেশি পাওয়ার কথা জানিয়েছিল রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা।

বর্ষায় এডিস মশার উপদ্রব বাড়তে পারে বলেও তখন সতর্ক করেছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সেই শঙ্কার বাস্তব রূপ নেয় জুনের শুরুতেই।

ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু, হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা
গত মাসের (জুন) শুরুর দিকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুরোগীর জন্য পৃথক ব্যবস্থা করা হয়। শিশু ওয়ার্ডের ভেতরেই আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের । তারা যেন অন্য রোগীদের সঙ্গে মিশে না যান সে জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু মাসের শেষ দিকে এই ব্যবস্থা আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। এত রোগী আসা শুরু হয় যে, ডেঙ্গু রোগীদের আর পৃথক করে চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছিল না। আর এ চিত্র কেবল হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের নয়, রাজধানী ঢাকার প্রায় প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালেই একই চিত্র। এসব হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, এবার ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দুঃস্বপ্নের মতো। বিপুল পরিমাণ রোগী সামাল দিতে তাদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে বলেও জানান তারা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে জানা গেছে, ঢাকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী ভর্তি হয়েছেন ২১৪ জন। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর কথা বলা হলেও প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি বলেও জানান চিকিৎসকরা।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ।

সরকারি হিসাব বলছে, চলতি বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু রোগী ছিল ৩৮, ফেব্রুয়ারিতে ১৮, মার্চে ১৭, এপ্রিলে ৫৮, মেতে ১৯৩, জুনে ১ হাজার ৭৫৯ এবং জুলাইতে দুই হাজার ৪৬৬ জন।

বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আছেন ২২৬ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১২৬, শিশু হাসপাতালে ২৫, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৯৬, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৫৮, বারডেম হাসপাতালে ১২, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ৩০ জন, মুগদা হাসপাতালে ৫০ জন, পিলখানার বিজিবি হাসপাতালে ১৯ জন। এই হিসাবে কেবল সরকারি হাসপাতালেই ভর্তি আছেন ৪১৩ রোগী।

এদিকে, বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে ভর্তি আছেন ৪৫, ইবনে সিনা হাসপাতালে ২২, স্কয়ার হাসপাতালে ৩৯, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৭৬, কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৫৯, ইউনাইটেড হাসপাতালে ৭, খিদমাহ হাসপাতালে ৯, অ্যাপোলো হাসপাতালে ৩০, ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৭, সালাউদ্দিন হাসপাতালে ৩৫, পপুলার হাসপাতালে ২০ জনসহ ঢাকার ৩৬টি হাসপাতালে মোট ৪১৩ জন রোগী ভর্তি আছেন। আর এসব হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ২০৪২ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুম।

এখন ওষুধেও মরছে না মশা: গবেষণা
মশা ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠায় রাজধানীতে দুই সিটি করপোরেশন যে ওষুধ ছিটাচ্ছে, তা কোনো কাজে আসছে না। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে সংগ্রহ করা মশা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এই পতঙ্গের ওষুধ প্রতিরোধের সক্ষমতার প্রমাণ পেয়েছে। গত মে মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান, আইইডিসিআরের একটি সভায় দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।

ইউএস সিডিসির অর্থায়নে পরিচালিত এই গবেষণায় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে এডিস এজিপ্টি ও কিউলেক্স মশার ডিম সংগ্রহ করে আইসিডিডিআর,বির গবেষণাগারে বড় করা হয়।

আইসিডিডিআর,বির গবেষক ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, এসব মশা বড় করার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা করে দেখেন তারা।

ডব্লিউএইচওর প্রটোকল অনুযায়ী, নির্ধারিত মাত্রার ওষুধ দেওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় পর মশার মৃত্যুর হার ৯০ শতাংশের কম হলে সেটি ওষুধ প্রতিরোধী হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।“কিন্তু আমরা দেখেছি, বেশিরভাগ জায়গার মশার মরার হার শূন্য শতাংশ। আবার দ্বিগুণ মাত্রায় ওষুধ দিলেও শতভাগ মশা মরছে না,” বলেন ড. শফিউল।

মশার ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠার বিষয়টি স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যালেরিয়া অ্যান্ড এডিস ট্রান্সমিটেড ডিজিজেজ’র উপ কর্মসূচি ব্যবস্থাপক ডা. এম এম আক্তারুজ্জামানও। তিনি বলেন, কিউলেক্স মশা নিয়ে তারাও একটি গবেষণা করে দেখেছেন, মশার ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে।“আমরা কিছু জটিলতা দেখেছি। মশা মারতে তিন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে। এরমধ্যে একটিতে মশার রেজিস্টেন্স তৈরি হয়েছে। বিষয়টি আমরা সিটি করপোরেশনকে জানিয়েছি।“পূর্ণ বয়স্ক মশা মারতে না পারলেও ওষুধে মশার শুককীট বা লার্ভা দমন হচ্ছে বলে জানান ডা. আক্তারুজ্জামান।

রাজধানীর মশা মারতে দুই সিটি করপোরেশন বিদায়ী অর্থ বছরে ৪৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা খরচ করার পরও কমছে না মশা। ফলে বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে শুরু করে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ডেঙ্গুর প্রকোপের জন্য দুই সিটি করপোরেশনকেই দায়ী করছে নগরবাসী। তাদের অভিযোগ, নগর কর্তৃপক্ষ ঠিকমতো মশার ওষুধ ছিটায় না।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানা যায়, তারা পূর্ণ বয়স্ক মশা নিধনে প্রতি এক লিটার কেরোসিনের সঙ্গে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পারমেথ্রিন, শূন্য দশমিক দুই শতাংশ টেট্রামেথ্রিন এবং শূন্য দশমিক এক শতাংশ এস-বায়োঅ্যালাথ্রিন মিশিয়ে ফগার মেশিন দিয়ে ছড়িয়ে দেন। ১০ লিটার পানিতে ৫ মিলিলিটার টেমিফস নামে একটি ওষুধ মিশিয়ে তা মশার লার্ভার প্রজননস্থলে ছিটানো হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) পূর্ণ বয়স্ক মশা মারতে এক লিটার কেরোসিনের সঙ্গে শূন্য দশমিক দুই শতাংশ পারমেথ্রিন, শূন্য দশমিক দুই শতাংশ টেট্রামেথ্রিন এবং শূন্য দশমিক দুই শতাংশ অ্যালেথ্রিন মেশায়।

গত ১০ বছর ধরে মশা নিধনে এই ওষুধ ব্যবহার করে আসছে দুই সিটি করপোরেশন। নোকন লিমিটেড থেকে মশার ওষুধ সংগ্রহ করে ডিএনসিসি। আর ডিএসসিসিকে মশা মারার ওষুধ সরবরাহ করে নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড।

গবেষণার ফলাফল দেখে পূর্ণ বয়স্ক মশা নিধনের জন্য ওষুধ পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছে আইসিডিডিআর,বি। মশা মারতে পারমেথ্রিনের পরিবর্তে ম্যালাথিয়ন ও ডেল্টামেথ্রিন ব্যবহার করতে বলেছে তারা।

দীর্ঘদিন ব্যবহারের কারণে মশার ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ‘অবগত আছেন’ বলে জানালেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। তারপরও ওষুধ না পাল্টানোর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এজন্য অনেকগুলো প্রক্রিয়া শেষ করে আসতে হয়। “আমরাও চেষ্টা করছি এখানে কিছু পরিবর্তন আনা যায় কি না। অন্য কিছু ব্যবহার করে যদি বেশি সুফল পাই তাহলে আনতে সমস্যা নেই। তবে আমরা যাই করি না কেন, তার প্রেসক্রিপশন আনতে হবে ডব্লিউএইচও থেকে।“এখানে স্বাস্থ্য, পরিবেশগত অনেক ব্যাপার থাকে। এজন্য প্রেসক্রিপশনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ কম।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুনও বলেন, ওষুধ পরিবর্তনের চিন্তা করছেন তারা। তিনি বলেন, “আমরা এই ওষুধ কেনার আগে নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা করি। সেই টেস্টে কিন্তু আমরা ওষুধের কার্যকারিতা কখনোই কম পাই নাই।“তারপরও যেহেতু অভিযোগ আছে, অনেকদিন ব্যবহারের কারণে রেজিস্টেন্স ডেভেলপ করেছে। আইসিডিডিআরবির কাছে আমরা ডকুমেন্ট চেয়েছি। এটা যদি প্রমাণিত হয় ওষুধে কাজ হচ্ছে না আর বাজারে যদি অল্টারনেটিভ থাকে, তাহলে আমাদের কোনো সমস্যা নাই।”

মশা মারতে ওষুধের মাত্রা বাড়াচ্ছে ডিএনসিসি
ঢাকার মশা ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠায় প্রচলিত ওষুধের মাত্রা দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। সোমবার গুলশানে ডিএনসিসির নগর ভবনে মেয়র আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ‘মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ব্যবহৃত অধিকতর কার্যকর কীটনাশক প্রবর্তন’ শীর্ষক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মেয়র আতিক বলেন, নতুন ওষুধ না আসা পর্যন্ত আপাতত বর্তমান ওষুধ মাত্রা বাড়িয়ে ব্যবহার করবেন তারা।“সভায় বিশেষজ্ঞরা পরবর্তী কীটনাশক না কেনা পর্যন্ত বর্তমানে ব্যবহৃত কীটনাশকের ঘনত্ব বাড়িয়ে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন।”

ডেঙ্গুর বিস্তারে নাগরিকদের ক্ষোভ ও আদালতের উষ্মা প্রকাশের প্রেক্ষাপটে মশা নিধনে কার্যকর কীটনাশক ও নতুন প্রযুক্তি সংযোজনের সিদ্ধান্তও সভায় হয়।

মেয়র বলেন, “তবে দীর্ঘমেয়াদী কীটনাশক কেনার আগ পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদে অধিকতর কার্যকর কীটনাশক কেনার ক্রয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শের অনুযায়ী নতুন কীটনাশক সংযোজন করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।”

বর্তমানে পূর্ণ বয়স্ক মশা নিধনে প্রতি এক লিটার কেরোসিনের সঙ্গে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পারমেথ্রিন, শূন্য দশমিক দুই শতাংশ টেট্রামেথ্রিন এবং শূন্য দশমিক এক শতাংশ এস বায়ো অ্যালাথ্রিন মিশিয়ে ফগার মেশিন দিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সিটি করপোরেশন ১০ বছর ধরে কীটনাশকের এই মাত্রা ব্যবহার করে আসছে। এই ওষুধে এখন পূর্ণ বয়স্ক মশা মরছে না বলে আইসিডিডিআরবির একটি গবেষণায় উঠে আসে। তিন বার পরীক্ষার পরও মশা না মারা যাওয়ার ঘটনায় গত সপ্তাহে ওষুধ সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করে ডিএনসিসি।

মশা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক নির্বাচন, কার্যকারিতা পরীক্ষা, ক্রয় প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা এবং কীটনাশকের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণে ১০ সদস্যের কারিগরি কমিটিও গঠন করা হয়েছে সোমবারের সভায়।

ঢাকায় মশার উপদ্রব নিয়ে হাইকোর্টের অসন্তোষ
গত ১৯ ফেব্রুয়ারী ঢাকা শহরে মশার উপদ্রব নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। রাজধানীর বায়ূদূষণ নিয়ে একটি মামলার শুনানিতে আদালত বলেছেন, মশার জন্য মানুষের স্বাস্থ্যগত সমস্যা হচ্ছে। মশার প্রার্দুভাব দিন দিন বাড়ছে। এ ব্যাপারে আমাদের হস্তক্ষেপ করতে হবে কি-না-এমন প্রশ্ন তুলে আরও আদালত বলেন, জরুরিভাবে নিধনে ব্যবস্থা নিন, যাতে মশা কমে। বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান এবং বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ঢাকা সিটি করপোরেশনের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে এই মন্তব্য করেন।

মশার বাজেট
মশক নিধনে বছর বছর বরাদ্দ বাড়াচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তবু মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই মিলছে না নগরবাসীর। বরং বরাদ্দ বাড়ার সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মশার উপদ্রব। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) চলতি অর্থবছরের বাজেটে মশক নিধন কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ২৬ কোটি টাকা। সেখানে খরচ হয়েছিল ১৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা। একই খাতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। যার মধ্যে খরচ হয়েছে মাত্র ১২ কোটি টাকা। বাজেট থাকার পরও কেন প্রায় প্রতিবছর তার পুরোটা খরচ হয় না এর কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ডিএনসিসির বাজেটেও এবার মশক নিধনে অর্থ বাড়ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতে প্রতিষ্ঠানটি ব্যয় করেছে ২১ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যা ছিল ২০ কোটি, তবে তা সংশোধিত বাজেটে ছিল ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ খাতে ডিএনসিসি বরাদ্দ দিয়েছিল ২৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। অথচ মশা মারতে দুই সিটি করপোরেশন এমন বিপুল বাজেট রাখলেও প্রতিবছরই মশাবাহিত রোগের সংখ্যা বাড়ছে।

https://www.dailysangram.com/post/383068