১৬ জুলাই ২০১৯, মঙ্গলবার, ৮:৪৫

শেরপুর

৪২টি বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা

ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গতকাল সোমবার শেরপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। ভারি বর্ষণের কারণে শেরপুর, নকলা ও নালিতাবাড়ী পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। অনেক বাসাবাড়িতে পানি উঠেছে। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে।

বন্যার পানি ওঠায় ঝিনাইগাতী ও শেরপুর সদরের ৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঝিনাইগাতীর সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুন্নবী জানান, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার কারণে উপজেলার ৩৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আক্রাম হোসেন জানান, গাজীর খামার ও ধলা ইউনিয়নে চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ওঠায় এবং চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের বেপারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার্তরা আশ্রয় নেওয়ায় এসব বিদ্যালয় সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধির ফলে শেরপুর সদরের চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের বেপারীপাড়াসংলগ্ন চরের ঘরবাড়িতে পানি ঢোকায় ৫০টি পরিবার পাশের বেপারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এমন তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জাফর মিয়া।

এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে নকলার চরমধুয়া নামাপাড়া এলাকার ১৫-১৬টি পরিবারের ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। মৃগী নদীর ভাঙনে বাছুর আলগা দক্ষিণপাড়া ও চকবড়ইগাছী গ্রামের দুটি পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। দুপুরে নালিতাবাড়ী পয়েন্টে চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৬৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার (পানি পরিমাপক) মো. আলমগীর হোসেন। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে জামালপুর ফেরিঘাট পয়েন্টে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ১১ হাজার কেভি সঞ্চালন লাইনের উত্তর প্রান্তের প্রধান পিলার বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।

ভাঙনের ফলে পিলারের প্রায় ২০ গজের মধ্যে এসে পড়েছে নদীর স্রোত। এখনই ভাঙন রোধ করা না গেলে পিলারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শেরপুরের পাঁচ উপজেলাসহ পাশের জামালপুরের বকশীগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজীবপুর জেলার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন পিডিবির প্রকৌশলীরা। পাহাড়ি ঢলের তোড়ে দুপুরে ঝিনাইগাতীতে পূর্ব দীঘিরপাড় এলাকায় মহরশি নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কিছু অংশে ভাঙন দেখা দেওয়ায় স্থানীয় লোকজন ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা চালায়।

ঝিনাইগাতীতে পাহাড়ি ঢলে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি এলাকাগুলোতে কোথাও নৌকা, কোথাও কলার ভেলা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। মালিঝি নদীর পাগলারমুখ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে হাতীবান্দা-কামারপাড়ার মধ্যে সড়ক যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বানিয়াপাড়া এলাকায় ব্রিজ বিধ্বস্ত হয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সোমেশ্বরী নদীর পানির তোড়ে বাগেরভিটা, কুচনীপাড়া সড়ক বিধ্বস্ত হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাগেরভিটা ব্রিজটিও এখন হুমকির মুখে।

গতকাল উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম এ ওয়ারেজ নাইম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ বিভিন্ন স্থানে বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট ও পানিবন্দি এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/priyo-desh/2019/07/16/791937