গাইবান্ধায় বন্যায় ডুবেছে ঘর-বাড়ি
১৫ জুলাই ২০১৯, সোমবার, ১২:২৮

বন্যার আরও বিস্তার ॥ ডুবছে নতুন নতুন এলাকা

ইবরাহীম খলিল : দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবল বর্ষণ আর উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে। বাড়ছে দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি। পানির ঢলে ডুবছে নতুন নতুন এলাকা। পরিস্থিতির কোন উন্নতি না হওয়ায় এখনো পানিবন্দী লাখ লাখ মানুষ। আশ্রয় শিবিরে যাওয়া পরিবারগুলোও আছেন খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে। ত্রাণের জন্য মানুষের মধ্যে চলছে হাহাকার।
বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের নদী সংলগ্ন এলাকা ও চার জেলার চরাঞ্চলসহ অন্তত ৯০ টি ইউনিয়ন বন্যা প্লাবিত হয়েছে। পানির কারণে ওইসব এলাকায় গবাদি পশু ও মানুষ একসঙ্গে উঁচুস্থানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সহযোগিতার কথা বলা হলেও নদীর চরাঞ্চল ও দুর্গত এলাকার লোকজন ত্রাণ পায়নি বলে অভিযোগ করছেন। তারা জানান, সরকারি সহযোগিতা পেলে তারা নতুন আশ্রয় ও উঁচুস্থানে যাওয়ার সুযোগ পেতেন।

সীমান্তবর্তী ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও সিকিম, নেপালে বৃষ্টিপাত বাড়ার কারণে দেশের নদীগুলোতে পাহাড়ি ঢলে পানির সমতল উঠে গেছে বিপদসীমার ওপরে। এতে প্লাবিত হয়েছে সীমান্তবর্তী জেলায়। আগামী পাঁচদিনে পানি প্রবাহ বিস্তৃত হয়ে বন্যাকবলিত এলাকা আরও বাড়ার আভাস রয়েছে। গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলার কারণে গত রোববার দুপুরে ব্রহ্মপুত্র নদীর পানির তোড়ে বাগুড়িয়া নামক স্থানে বাঁধের ১০০ ফুট অংশ ধসে গেছে। ফলে এলাকার ৭ শতাধিক বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে।

বুক সমান পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি ও ফসলাদি। লোকজন কোনমতে তাদের গবাদি পশু ও কাঁথা বালিশ নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয়ের জন্য মালামাল স্তূপ করে রেখেছে। কোথায় যাবে তার কোন ঠিকানা নেই। এলাকার লোকজন ডুব দিয়ে তাদের ডুবন্ত ঘর থেকে যতটুকু পারছেন মালামালা সরিয়ে নিয়ে আসছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুয়ায়ী, যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি ৭৮ এবং ঘাঘট নদীর পানি বিপদ সীমার ৫৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে গাইবান্ধার ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার চরাঞ্চলসহ নদী তীরবর্তী অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী। তিস্তা যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে আরও নতুন নতুন এলাকা ডুবে যাচ্ছে। রাজিবপুর, রৌমারী, চিলমারী, লালমনিহাটের আদিতমারীসহ উত্তরের বেশ কিছু উপজেলার চরাঞ্চলগুলোর অনেক এলাকায় এখন মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার রায় কিছু ত্রাণ সহযোগিতা দিয়েছেন রায়দাসবাড়ি ও কামারজানি এলাকায়। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অপরদিকে ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সেলিম পারভেজ ৩ শতাধিক মানুষকে ত্রাণ সহয়তা দিয়েছেন।

বগুড়া : বগুড়ায় যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্ব পাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে সোনাতলা ও সারিয়াকান্দির নিম্নাঞ্চলের ৮০টি গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। সারিয়াকান্দি উপজেলা পয়েন্টে যমুনার পানি ১৫ ঘন্টায় ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে রোববার সকাল ৯টায় বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এর আগে শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় পানি বিপদ সীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সারিয়াকান্দি উপজেলার মথুরাপাড়া পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলা প্রশাসকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার ত্রাণ কর্মকর্তা আজাহার আলী মন্ডল জানান, যমুনা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিপরীতে পূর্বদিকে জেলার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলায় বন্যার পানিতে ৫৬৮ হেক্টর কৃষি জমি ও দুই উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ৮০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪ হাজার ৬০টি পরিবারের ৫৭ হাজার ২৮০ জন মানুষ। ৬০টি কাঁচা ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। সোনাতলা ও সারিয়াকন্দি উপজেলার ২৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার ওই কর্মকর্তা আরো জানান, ত্রাণ হিসাবে সারিয়াকান্দি উপজেলায় ১০০ মেট্রিক টন চাল, ১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। যমুনা তীরবর্তি সোনাতলা উপজেলায় ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, সাড়ে ১০ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে। জেলায় প্রচুর ত্রাণসামগ্রী মজুদ আছে। এদিকে, ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের যমুনা নদীর চরের নিচু এলাকা ডুবে গেছে। এতে পাট, আউশসহ জমির শাকসবজি ডুবে গেছে।

সিরাজগঞ্জ : প্রায় এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে একের পর এক প্লাবিত হচ্ছে নদী অভ্যন্তরের চরাঞ্চল। ভাঙন দেখা দিয়েছে অরক্ষিত নদী তীর এলাকায়। এদিকে গত তিন দিন ধরে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনার পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চলের শত শত একর ফসলি জমি। ডুবতে শুরু করেছে এসব অঞ্চলের বাড়ি-ঘর। বন্যা আতঙ্কে আছেন নদী তীরবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দারা। রোববার সকালে যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ১৩.১৫ মিটার রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিপৎসীমার মাত্র ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (ডেঞ্জার লেভেল-১৩.৩৫)। গত তিন দিনে এখানে পানি যথাক্রমে ৩০, ৪০ ও ৩৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মেছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ ও কাওয়াকোলা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম ভূঁইয়া বলেন, গত কয়েক দিন ধরে পানি দ্রুতগতিতে বাড়ছে। ইতোমধ্যেই চরাঞ্চলের ফসলি জমিগুলো সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। নিচু বাড়িতে পানি ওঠতে শুরু করেছে। শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী ইউপি চেয়ারম্যান মুল্লুক চাঁন জানান, এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণগাঁতী, আড়কান্দি ও হাটপাচিলে নদী তীরবর্তী এলাকায় বেশ কয়েকদিন ধরেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি ওঠতে শুরু করেছে নিম্নাঞ্চলগুলোতে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ৩৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ (১৩.১৫ মিটার) দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত তিন দিনে পানি আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা আরও দুই একদিন বাড়তে পারে।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর আগে শনিবার সকালে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার প্রবাহিত হচ্ছিল যা মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে রোববার সকালে প্রায় তিন গুণ বেড়ে বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। করতোয়া ও যমুনা নদীর পানি যেকোনো সময় বিপৎসীমা অতিক্রম করবে বলে জানিয়েছে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড। দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত জেলা প্রশাসন। বিভিন্ন এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে ত্রাণসামগ্রী। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদীবেষ্টিত ফুলছড়ির উড়িয়া, উদাখালী, এরেন্ডাবাড়ী, ফজলুপুর, গজারিয়া ও ফুলছড়ি; সুন্দরগঞ্জের তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর; সদরের মোল্লারচর ও কামারজানী এবং সাঘাটার ভরতখালী, সাঘাটা, হলদিয়া, জুমারবাড়ী ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, পাটক্ষেত, ধানের বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসলি জমি। এসব এলাকার মানুষ গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে। অব্যাহতভাবে পানি বাড়ার কারণে জেলার চার উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ২০ থেকে ২৫ হাজার পরিবারের বসতভিটায় পানি ঢুকে পড়েছে। সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল মজিদ জানান, বন্যার পানিতে চলাচলের রাস্তা ডুবে গেছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও হুমকির মুখে পড়বে। ফুলছড়ি উপজেলা গজারিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মকবুল হোসেন জানান, আদর্শ গুচ্ছগ্রামটি থেকে এখর আর নৌকা ছাড়া যাতায়াত করা যায় না। এই গ্রাম থেকে ফুলছড়ি বাজারে আসতে যে রাস্তাটি করা হয়েছিল তা স্রোতের তোড়ে বিলিন হওয়ার পথে। কয়েকটি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজ্জ্বল কুমার ঘোষ জানান, বন্যাকবলিত এলাকা পারিদর্শন চলছে। কোথাও তেমন কোনো অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে নগদ অর্থ ও ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে সুরম নদীর পানি বিপদসীমা ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রোববার দুপুর ১২টা থেকে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে সুনামগঞ্জে ত্রানের জন্য হাহাকার চলছে। গ্রামের পরিস্থিতি দেখার জন্য কেউ গেলেই তারা ত্রাণের জন্য ছুটে আসে। গ্রামের মানুষের ভাষ্য, গেরাম ডুইবা গেলে বউ-বাচ্চা লইয়া মরণ ছাড়া গতি নাই। শহরের মানুষেরতো চিন্তা নাই, ফানি বেশী অইলেই কি-না ইইলে কি। তারার তো আর ঢেউয়ের ভয় নাই, ঘরবাড়িও ভাঙ্গেনা। হাওরের আমরা কিভাবে থাকি দেইখ্যা যান। মাঝে-মাঝে মনে অয় এলাকা ছাইড়া চইলা যাই। আবার ভাবি বাপ-দাদার ভিটা-মাটি, জমি-জিরাত আত্মীয়-স্বজন ছাইড়া কই যামু, কি করমু হের লাইগাই যাইনা। বাইস্যা (বর্ষায়) মাসে ঢেউয়ের সাথে যুদ্ধ, চৈত্র-বৈশাখে হাওরের বান্ধ (ফসল রক্ষা বাঁধ) যুদ্ধ, জৈষ্ঠ-আষাঢ়ে টাডার (বজ্রপাত) ভয়ে এখন আমরা চোখে পথ দেখিনা। ট্রলার দেখে এগিয়ে লোকজন জানতে চান, কিছু দিবায়নি। চাউল দিবায় না টেহা (টাকা) দিবায়। আমরাতো বস্তা নিয়া বহু সময় খাড়া হইয়া তোমরার ট্রলার দেখতাছি। ভাবতাছি তোমরা মনে হয় আমরার লাগি কিছু খাওন লইয়া আইতাছো। আইজ সারা দিনে কোন রকম এক বেলা আধা পেট খাইছি। বাচ্ছারার কান্দন সইতা ফারিনা, বুকের দুধ দিয়া চুপ করাইতে হয়। চুলাত ফানি হের লাইগা ভাত রান্দা বন্ধ। তারা জানান, ট্রলার নৌকার শব্দ শুনলেই তারা মনে করেন ত্রাণ নিয়ে আসছেন কেউ। একারণেই পানিবন্ধী ঘর থেকে বাহিরে এসে দাড়িয়ে থাকেন ত্রাণ পেতে। তারা জানান, সরকারী এক প্যাকেট ত্রাণ পেয়েছেন এগুলোই খেয়ে কোন রকম সময় পার করছেন। সুনামগঞ্জের বন্যার্তরা ৫ দিন পর বাড়ি ছাড়লেও বেশীর ভাগ বন্যার্তরা আশ্রয় কেন্দ্রে না গিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। জেলার সব ক’টি উপজেলায় এমন খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে হাওরবাসিরা আতংকে। বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিচ্ছেন আত্মীদের বাড়িতে। জেলার জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, মধ্যনগর, দিরাই, শাল্লা উপজেলার দ্বীপ সাদৃশ গ্রামগুলোর বন্যার্তরা নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। বন্যায় প্রবল ঢেউয়ের সাথে বাড়ছে হাওরবাসীর উদ্ধেগ-উৎকণ্ঠা। অনেক পরিবার এখন খাওয়ার তাগিদে যে কারো কাছে সাহায্য চাইছেন। এভাবেই চলছে বন্যার্ত হাওরবাসীর দিনকাল। হঠামারা, উদয়পুর, নাজিম নগর, শ্রীমন্তপুর, জসমন্তপুর, মিলনপুরসহ বহু গ্রামের বন্যার্তদের চরম বিপর্যয়। কোন কোন জায়গায় খাদ্য, বিশুদ্ধ পানীয়, বাসস্থান ও চিকিৎসাসহ নানাবিদ সঙ্কট বিরাজ করছে। এই বিপর্যয়ে পতিত পরিবারের যেন কষ্টের শেষ নেই। সুনামগঞ্জে টানা ৬ দিনের প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে জনজীবন। বন্যার বিপর্যয়ে হাওরাঞ্চলের মানুষ এখন দিশেহারা। বৈশাখে বোরো ফসল গোলায় ওঠার সময় যে কৃষকরা অকাতরে লোকজনের মধ্যে ধান বিলি করতেন, তাদের অনেকের ঘরে পানি উঠার কারণে ত্রাণের আশায় প্রহর গুনছেন। পানিবন্ধী বহু গ্রামের লোকজন এখন একবেলা, আধাবেলা ও অনেক পরিবারের সদস্যদের শুকনো খাবার খেয়ে কোন রকম দিন কাটাচ্ছেন।

হবিগঞ্জ : টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে পুরনো ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ধসে পড়েছে। এ কারণে ঝুঁকি নিয়ে ওই সড়কে চলাচল করছে যানবাহন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। সড়ক বিভাগ জরুরি ভিত্তিতে ধসে পড়া স্থানে মেরামত কাজ শুরু করেছে। চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মঈন উদ্দিন ইকবাল বলেন, ‘ঢাকা-সিলেট পুরনো সড়কের চুনারুঘাট উপজেলার চন্দ্রি ব্রিজের কাছে রামগঙ্গা এলাকায় শনিবার রাতে সড়ক ধসে পড়ে। বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে সড়ক বিভাগের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কারের উদ্যোগ নেই।’ স্থানীয়দের দাবি, ধসে পড়ার রাস্তার পাশে একটি ছড়া রয়েছে। সেই ছড়া থেকে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত বালু উত্তোলন করেছে। যার কারণে সড়ক ধসে পড়েছে।

জামালপুর : টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে যমুনা-ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদ নদীর পানি বেড়ে জামালপুরে প্লাবিত হয়েছে ১৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের ৭০ হাজার মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজপাঠক আব্দুল মান্নান জানান, গত ২৪ ঘন্টায় যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ৪৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৮৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ি উপজেলার যমুনা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ১৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। সরকারি হিসাবে এসব এলাকার অন্তত সাড়ে ১৩ হাজার পরিবারের ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।’ এদিকে যমুনার তীব্র স্রোতে ইসলামপুরের চিনাডুলি ইউনিয়নের তিনটি সংযোগ সড়ক বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। বন্যা কবলিত এলাকায় শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গো খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার কারণে জেলার ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

নেত্রকোনা : নেত্রকোণায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় জেলার প্রধান নদী সোমেশ্বরী, কংস, ধনু ও উব্ধাখালিতে পানি বেড়ছে। এসব নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টা উপজেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এদিকে জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। স্থানীয় জনগণ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার রাতভর বৃষ্টিতে কলমাকন্দায় নতুন করে আরও ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলায় মোট ৩৪৩টি গ্রামের মধ্যে ২৬২টির প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া কলমাকান্দার সঙ্গে জেলা শহরের প্রধান সড়ক কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোণা গত দুদিন ধরে ডুবে থাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। কলমাকান্দা উপজেলার প্রায় ৮০ ভাগ গ্রামীণ সড়ক পানির নিচে রয়েছে। পানি প্রবেশ করায় এ উপজেলায় ১৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্তত ১৭৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দুর্গাপুরের গাওকান্দিয়া ইউনিয়নের পুরো এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কুল্লাগড়ায় সোমেশ্বরী নদী ভাঙন ধরেছে। এতে করে সমগ্র কুল্লাগড়া ইউনিয়ন হুমকিতে পড়েছে। স্থানীয়রা প্রশাসনের সহযোগিতায় বাঁশ ও বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন ঠেকাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ওই উপজেলায় ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সিলেট: পাহাড়ি ঢলে সিলেটের তিনটি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টি না থাকলেও বিকেল থেকে ফের শুরু হওয়া বর্ষণে পানি বাড়ার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে সুরমা, কুশিয়ারা, পিয়াইন, ধলাই নদীর পানি। এতে গোয়াইনঘাট, কোম্পানিগঞ্জ, জৈন্তাপুরের বেশ কিছু এলাকার মানুষ এখনো পানবন্দী। সিলেট সদর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও পানি নামছে ধীর গতিতে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, শনিবার সকাল ৬টায় সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্ট বিপদসীমার ১০.৭৩ সেন্টিমিটার যা সন্ধ্যা ৬টায় ১০.৭৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, কানাইঘাট পয়েন্টে সকাল ৬টায় বিপদসীমার ১৩. ৬৫ সেন্টিমিটার যা সন্ধ্যা ৬টায় ১৩.৮৪ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর পানি অমলশীদ পয়েন্টে সকাল ৬টায় বিপদসীমার ১৬.১৭ সেন্টিমিটার যা সন্ধ্যা ৬টায় ১৬.৪০ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে সকাল ৬টায় ১৩.১০ সেন্টিমিটার যা সন্ধ্যা ৬টায় ১৩.৩৫ সেন্টিমিটার, শেরপুর পয়েন্টে সকালে ০৮.৪৫ সেন্টিমিটার যা সন্ধ্যায় ০৮.৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। কানাইঘাটের লোভাছড়ায় সকালে ১৫.৩৩ সেন্টিমিটার যা সন্ধ্যায় ১৫.৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া সারি-গোয়াইন নদীর পানি সকালে ১১.৬৮ সেন্টিমিটার যা সন্ধ্যায় ১২.১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

চট্টগ্রাম : মুষলধারার বৃষ্টিতে ছয় দিনের মাথায় আবারও ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। শনিবার নগরীর বেশির ভাগ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি, পাড়া-মহল্লা, বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল-ক্লিনিকে পানি প্রবেশ করে। হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে যায় অনেক এলাকা। যেদিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। নগরীর বেশির ভাগ খাল ও নালা-নর্দমা ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি সরে যেতে পারেনি। অনেক এলাকায় রাস্তা ও জনবসতির মধ্য দিয়ে খালের উপচেপড়া পানি বইতে দেখা যায়। থইথই পানিতে দিনভর চরম দুর্ভোগের মধ্যে কাটাতে হয়েছে নগরবাসীকে। জীবনযাত্রা হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত। সড়ক ডুবে যাওয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ ছিল যানবাহন চলাচল। এ সময় নগরজুড়ে দেখা দেয় তীব্র যানজট। পানি জমে যায় ফ্লাইওভারেও। সড়কের দুর্ভোগ এড়াতে যেসব যানবাহন ফ্লাইওভারে ওঠে সেগুলো সেখানে আটকা পড়ে। স্রোতের কারণে অনেক সড়কে হেঁটেও যাতায়াত করা যায়নি। কর্মজীবী নারী ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি ছিল তুলনামূলক বেশি। গাড়ির অভাবে রাস্তায় রাস্তায় আটকে পড়ে নারী ও শিশুরা। ভয়ে অনেককে কান্নাকাটিও করতে দেখা যায়। নগরীর বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানি অপসারণে সেনাবাহিনীর চারটি টিম কাজ করছে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নেয়া মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে। এদিকে টানা বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে পড়ায় নগরীর বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের সূত্রপাত হয়। বিকাল পর্যন্ত অন্তত দুটি এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণহানি না ঘটলেও দু’জন আহত হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে। ষোলশহর বন গবেষণাগার ইন্সটিটিউটের সামনে রেললাইনে পানি ওঠায় দুপুর পর্যন্ত চলেনি চবি’র শার্টল ট্রেন। চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস জানায়, দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৯৮ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আজ রোববারও বৃষ্টি হতে পারে। তবে সোমবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমতে পারে। গত সোমবার ভারি বর্ষণে নগরীতে সৃষ্টি হয়েছিল মৌসুমের প্রথম বড় আকারের জলাবদ্ধতা। এরপর থেকে বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে প্রতিদিনই নির্দিষ্ট কিছু এলাকা প্লাবিত হয়। এর মধ্যে শনিবার সকালে এক ঘণ্টার মুষলধারার বৃষ্টিতে দেখা দেয় দ্বিতীয় দফা জলাবদ্ধতা। এর কারণে সোমবারের চেয়েও শনিবার নগরবাসীর বেশি ভোগান্তি হয়েছে। শুক্রবার রাতে কয়েক দফা বৃষ্টিতে নালা ও খালগুলো টইটম্বুর হয়ে পড়ে। শনিবার সকাল থেকে ভারি বর্ষণ হতে থাকলে আবারও জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে নগরী। দুপুরের পর বৃষ্টি কিছুটা কমে এলেও অনেক এলাকা থেকে বিকাল নাগাদও পানি সরেনি। যেসব এলাকা জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে তার মধ্যে রয়েছে- আগ্রাবাদ, হালিশহর, ওয়াসা, লালখানবাজার, মেহেদিবাগ, প্রবর্তক, অক্সিজেন মোড়, মুরাদপুর, জিইসি, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, বহদ্দারহাট, চকবাজার, বাদুড়তলা, পাঁচলাইশ, শুলকবহর, কাপার্সগোলা, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়া, গোসাইলডাঙ্গা, নিমতলা। এসব এলাকার কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমর পানিতে তলিয়ে যায়। নগরীর প্রধান সড়ক মুরাদপুর বিশ্বরোডের জিইসি মোড় থেকে দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর হয়ে বহদ্দারহাট পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার এলাকায় সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দেখা যায়। কোমর পানিতে সড়ক তলিয়ে গেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর সংযোগ সড়কগুলো দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।

বান্দরবান : বান্দরবানে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। জেলা শহরের দশটি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৩০০০ বন্যার্ত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্র জায়গার সংকুলান হচ্ছে না। এদিকে সাংগু-মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় টানা পাঁচ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে বান্দরবানের সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ। অন্যদিকে জেলা শহরের সাথে তিন উপজেলা রুমা, রোয়াংছড়ি, থানছি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় রাঙ্গামাটি জেলার সাথেও বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। জেলা শহরের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি এলাকা এখন পানির নিচে। জেলা শহরের বাস স্টেশন, ইসলামপুর, ওয়াবদা ব্রিজ, আর্মি পাড়া মেম্বার পাড়া সহ বিভিন্ন এলাকায় সাঙ্গু নদীর পানি প্রবেশ করায় এসব এলাকার তিন হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলা শহরে বিদ্যুৎ বিভাগের দুটি উপকেন্দ্রে নদীর পানি প্রবেশ করায় গত দুদিন থেকে জেলা শহর ও রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় জেলা শহর ও উপজেলাগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম দ্রুত বাড়ছে। আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে পর্যাপ্ত খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি না থাকায় দুর্ভোগ চরমে আকার ধারণ করেছে। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শফিউল আলম জানিয়েছেন বান্দরবানের সাতটি উপজেলায় ১৩১টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ইতিমধ্যে ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ৭০০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

ভোলা: ভোলায় মেঘনার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার তিন উপজেলায় প্লাবিত হয়েছে অন্তত ৩৫টি গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে বসত-ভিটা, ফসলি জমি ও রাস্তা-ঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষ। পাহাড়ি ঢল ও পূর্ণিমায় সৃষ্ট জোয়ারের চাপে এসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পাউবো জানায়, গতকাল রোববার মেঘনার পানি বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তজুমদ্দিন, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার বাঁধের বাইরের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাউবো ডিভিশন-২ নির্বাহী প্রকৌশলী কাওছার আলম বলেন, মনপুরা উপজেলার মনপুরা, হাজিরহাট, উত্তর ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম, তজুমদ্দিন উপজেলার সোনাপুর, চাচড়া ও সাদপুর ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম ও চরফ্যাশনের মাদ্রাজ ও আসলামপুর ইউনিয়নের চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে বাঁধের বাইরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হলেও বাঁধের ভেতরে কোথাও পানি ওঠেনি। তিনি আরও বলেন, জোয়ারের পানির তীব্রতার কারণে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তিন উপজেলার ২৬ কিলোমিটার বাঁধ। ঝুঁকিপূর্ণ কিছু এলাকায় বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে। এদিকে, জোয়ারের পানিতে ঢালচর, কুকরী-মুকরী ও চরপাতিলাসহ বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হওয়ার তথ্য জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। অপরদিকে, জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের ইলিশা ফেরি ও লঞ্চঘাট। পানিতে ঘাটের র‌্যাম (ফেরিতে ওঠা-নামার পথ) ও গ্যাংওয়ে তলিয়ে যাওয়ায় ফেরিতে ওঠা-নামা করতে পারছেনা কোনো যানবাহন। ফেরির ঘাট সহকারী হেলাল উদ্দিন বলেন, জোয়ারের পানিতে ঘাট প্লাবিত হওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজটের। শিগগিরই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।

পঞ্চগড় : অবিরাম বর্ষণ ও উজানের পানিতে পঞ্চগড় শহরসহ পাঁচ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শহরের করতোয়া, মহানন্দা, ডাহুক, ভেরসাসহ জেলার সবকটি নদীর পানি বেড়েছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই মূল্যবান ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রেখেই বিভিন্ন স্কুল কলেজসহ আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছেন। টানা বৃষ্টির কারণে ভাসমান এবং দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। রোববার জেলা শহরের পৌর এলাকার নিমনগর, খালপাড়া, রামেরডাঙ্গা, রাজনগর, তুলারডাঙ্গা, সদর উপজেলার ধাক্কামারা, কামাত কাজলদিঘী, চাকলাহাট, পঞ্চগড় ইউনিয়ন, তেতুলিয়া উপজেলার শালবাহান, দেবনগর, তীরনইহাট, বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে, বোদা উপজেলার পৌরসভা, বেংহারী বনগ্রাম, কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ, মাড়েয়া ইউনিয়নেও করতোয়া নদীর বেশ কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেকের পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বাংলাবান্ধা, তীরনইহাট, তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের সন্ন্যাসীপাড়া, দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ ও জামাদার গছ এবং ২ নং তিরনইহাট ইউনিয়নের খয়খাটপাড়া, ইসলামপুর, দরগাসিং ও কাশিবাড়ি এবং ৩ নং তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের গোয়াবাড়ি, ভাদ্রুবাড়ি, রণচন্ডি, বুড়িমুটকী ও সরকারিপাড়া গ্রামের ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। পঞ্চগড়ের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা জানান, ঝড় ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২ হাজার মানুষকে শুকনো খাবার এবং ৫০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।

আমাদের সিলেট ব্যুরো ও জেলা সংবাদদাতারা আরো জানান-
কবির আহমদ, সিলেটঃ অতিবৃষ্টি আর পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে সিলেট বিভাগে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। গতকাল রোববার টানা ৭ দিন ধরে বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সুরমা, কুশিয়ারা, পিয়াইন, সারি, ধরাই, মনু নদী ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে। সুরমার গর্জন দেখে নদীর আশেপাশের বাসিন্দারা উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্যে আছেন। বিভাগীয় নগরী সিলেটের অভিজাত এলাকা উপশহরে বেশীর ভাগ বাসাবাড়িতে পানি উঠেছে। যে কোন সময় নগরীর ২৬ নং ওয়ার্ডের ঝালোপাড়ায় সুরমার পানি ঢুকে ঝালোপাড়া, ভার্থখলা, কদমতলী, প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সারাদিন বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়া অব্যাহত ছিল। সিলেট বিভাগের সবক’টি নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ডুবে গেছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি। রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা ও হাসপাতালসহ নানা স্থাপনা পানির নীচে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সিলেট বিভাগে বড় ধরণের বন্যার আশংকা করা হচ্ছে। বন্যার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের ৫ শতাধিক প্রাইমারী স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা। সিলেটে সুরমা নদীর পানি ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেট নগরীর ও আশপাশের অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকায়ও পানি প্রবেশ করেছে। নগরীর উপশহর, তের রতন, ছড়ারপার, শেখঘাট, কলাপাড়া, ঘাসিটুলা ও শামীমাবাদ এলাকার রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অনেক স্থানে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। সিলেটের আবহাওয়াবিদ সাইদ আহমদ চৌধূরী জানিয়েছেন, আগামী ২০ জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সিলেট বিভাগের সবক’টি নদীর পানি গতকাল রোববার বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবধরণের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী প্রেরণ করা হয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয় বলে বন্যার্ত এলাকার লোকজন জানান। সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। শুক্রবারের চেয়ে গতকাল রোববার এক ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ধলাই ও পিয়াইন নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার্ত মানুষজন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। গো-খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। লোকজনের চলাচলের এক মাধ্যম নৌকা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জী জানান, বন্যা মোকাবেলায় সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। লোকজনকে আতংকিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। ছয়টি ইউনিয়নের বন্যার্ত লোকজনের মাঝে ত্রাণ বিতরণের জন্য আট টন চাল বরাদ্ধ করা হয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার গত ৭ দিন ধরে অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে গোটা উপজেলা বানের পানিতে ভাসছে। জেলা সদরের সাথে উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। রোববার বিকেল থেকে আবারও পানি বাড়তে শুরু করেছে। সিলেটের ভারপ্রাপ্ত ডিসি, এডিসি ও ইউএনও লেঙ্গুড়া ইউপির বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেছেন। রোববার আরও ১৬ মে. টন চাল ও ২শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার এসেছে বলে ত্রাণ অফিস জানিয়েছেন। গত শনিবার ১৮ মে.টন বিতরণ করা হয়। দু’লাখ পানিবন্দী মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণের অভাব রয়েছে। বিভিন্ন গ্রামে দূর্গতরা ত্রাণ পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। জকিগঞ্জে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে ও জমির উঠতি ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে উপজেলার বারহাল ইউনিয়ন। গত শনিবার গভীর রাতে বারহাল ইউনিয়নের নূরনগর ও মহিদপুর গ্রামে সুরমা ডাইকে ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় প্রবল বেগে পানি ঢুকে নদী তীরবর্তী এলাকার প্রায় শতাধিক বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যায়। শতাধিক পরিবারের লোকজন গৃহহারা হয়ে পড়েছেন।

বিবিয়ানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা
মুহাম্মদ শওকত আলী, নবীগঞ্জ থেকে : হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জে উপজেলার কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিবিয়ানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিকটবর্তী পারকুল এলাকায় নদীর বাঁধ উপচে ইতিমধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে যেকোন সময় বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কুশিয়ারার পানিতে তলিয়ে যেতে পারে বলে আশংকা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা নদীতে শুক্রবার সকাল থেকে পানি বাড়তে থাকে। দুপুরের পর পানি বিপদসীমার ওপরে চলে যায়। দুপুর ১২টায় নদীর পানি বিপদসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ও সাথে ভারী বর্ষন হলে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিবিয়ানায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে বেড়েছে কুশিয়ারা ডাইকের ভাঙনও। গত দুই দিনে উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের, ফাদ্দুলা, কসবা, কামারগাঁও, রাধাপুর, জামারগাঁও ও মাধবপুর সহ নদী পাড়ের প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি পানি প্রবেশ করায় প্রায় দশ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এই ইউনিয়নে এখন পর্যন্ত বানভাসী লোকজন সরকারিভাবে কোনো ত্রাণ সামগ্রী পায়নি বলে ভুক্তভোগীরা জানান। এব্যপারে বিবিয়ানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (বিপিডিবি) ইঞ্জিনিয়ার সজল বলেন, ‘কেন্দ্রের ভেতরে একটু একটু করে পানি প্রবেশ করছে। এতে বিভিন্ন যন্ত্রাংশে পানি ঢুকছে। পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। দীঘলবাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ এওলা মিয়া জানান, কসবার দিকে পানি প্রবেশ করে ইতোমধ্যে দীঘলবাকসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি প্রবেশ করছে, পশ্চিম পাহাড়পুর (পারকুল) এলাকায় কুশিয়ারা ডাইকটি ঝুঁকিপূর্ণ, যেকোনো মুহূর্তে ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে এবং বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আবারো বন্যায় কবলিত হতে পারে দীঘলবাক। হবিগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ তাওহীদুল ইসলাম বলেন কুশিয়ারার পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ার ডাইক ভাঙ্গন রোধে ইতিমধ্যে বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। ভাঙ্গন রোধে সর্বাত্মক চেষ্ঠা চালিলে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ-বিন হাসান জানান, শুক্রবার কুশিয়ারার পানি বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। কয়েকটি গ্রামে অল্প পানি প্রবেশ করেছে, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে দীঘলবাক এলাকাসহ আশপাশ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতি চরম অনতি
জামালপুর সংবাদদাতাঃ গত ক’দিনের বৃষ্টি ও দেশের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা বক্ষ্মপুত্র নদের পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে জামালপুরের বন্যা দেখা দিয়েছে। গতকাল রোববার দুপুরে ১২ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে বিপদ সীমার ৮৫ সেন্টি মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে জানিয়েছেন জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর নির্বাহী প্রকৌশলী নবকুমার চৌধুরী এবং পানি মাপক গেজ পাঠক আব্দুল মান্নান। জেলা ত্রাণ ও পুর্ণবাসন অফিস সুত্রে জানা যায়, জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, বকশীগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, জামালপুর সদর ও সরিষাবাড়ী এই ৭টি উপজেলার মধ্যে ২৯টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ইসলামপুর উপজেলার কুলকান্দি, বেলগাছা, চিনাডুলী,সাপধুরী, পার্থশী, নোয়ারপাড়া, ইসলামপুর সদর, পলবান্দা, ও ইসলামপুর পৌরসভার সিংহ ভাগ এলাকা এবং দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ী, চিকাজানী, বাহাদুরাবাদ, চরআমখাওয়া ইউনিয়নে বন্যার পানিতে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। ফলে এসব এলাকার প্রায় ৫০হাজার মানুষ পানিবান্দ হয়ে পড়েছে। এদিকে পানির প্রচন্ড স্রোতে চিনাডুলী ইউনিয়নের দেওয়ানপাড়া গ্রামের ১১টি পরিবারের ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। বন্যায় নক্ষতিগ্রস্তরা আশপাশের উঁচু রাস্তায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। চিনাডুলী-উলিয়া বাজার ও গিলাবাড়ী-বামনা সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় ১০ গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি উলিয়া বাজার সংলংগ্ন এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে বন্যার পানি ঢুকছে। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ি রাস্তা ভেঙ্গে পানির হুহু করে ঢুকছে। ইতোমধ্যে চিনাডুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ড্যারাইপ্যাচ ভোকেশনাল দুই উপজেলাপ্রায় অর্ধশত শিক্ষা প্রতষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্যায় এলাকার কৃষকদের বীজতলা, আখ, কাঁচা শাক-সবজি, তরিতরকারী, বন্যার পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে জামালপুরেরর জেলা প্রশাসক আহম্মেদ কবীর ও জেলা ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নায়েব আলী ইসলামপুর উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

কুমিল্লা নগরীর সর্বত্রই জলাবদ্ধতা জনদুর্ভোগ চরমে
রেজাউল করিম রাসেল.কুমিল্লা অফিস : টানা বৃষ্টির পানিতে কুমিল্লা নগরীর সর্বত্রই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক অলি গলি বাসা-বাড়িতে জলাবদ্ধতার কারনে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন স্কুল-কলেজে পুড়য়া শিক্ষার্থী,কর্মজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। নগরীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোতেও জমে আছে হাঁটু পানি। গতকাল রোববার প্রথম দফায় সকাল নয়টা থেকে ১১টা পর্যন্ত গুঁড়ি গুঁিড় বৃষ্টির পাশাপাশি দমকা হাওয়া বয়ে যায়। দ্বিতীয় দফায় বিকাল চারটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ভারি বর্ষনে কুমিল্লা নগরীর অধিকাংশ রাস্তা ডুবে যায়। কুমিল্লা বিমান বন্দর এলাকায় অবস্থিত আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে সকাল ৬টা থেকে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত ৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। তপ্ত গরমের পর বৃষ্টির ফলে নগরীর ধূলাবালি সরে গেলেও অলিগলিতে কাঁদাপানি জমে একাকার হয়ে গেছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে অবহেলায় নগরীর টমচমব্রীজ রাণীরবাজার, চকবাজার, কাপড়িয়াপট্টি, স্টেডিয়াম রোড, মদিনা মসজিদ রোড, বাগিচাগাঁও, মুরাদপুর, ঠাকুরপাড়া,ঝাউতলাসহ নগরীর বিভিন্ন রাস্তায় বৃষ্টির কারনে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পরও প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর কোন ভূমিকা রাখেনি সিটি কর্তৃপক্ষ। এই যখন অবস্থা তখন নির্বাচন আসলেও প্রার্থীদের প্রধান নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি।আর এভাবেই দেশের অন্যতম প্রাচীন পৌরশহর কুমিল্লা ২০১১ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০১২ সালে প্রথম ও ২০১৭ সালে দ্বিতীয় দফায় মেয়র নির্বাচন হয়। দু’টি নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি জলাবদ্ধতা নিরসনের থাকলেও দিন দিন বাড়ছে এ সমস্যা। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে নগরীর প্রায় সর্বত্রই সৃষ্ট হচ্ছে জলাবদ্ধতার।আর বাড়ছে নাগরিক দুর্ভোগ। ডুবে যাচ্ছে রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, দোকান-পাটসহ বাসা-বাড়ি। বর্ষার আগেই চৈত্রের সামান্য বৃষ্টিতে নগরীর এই জলাবদ্ধতায় নগরবাসীর মনে আসন্ন বর্ষায় বৃষ্টির আশঙ্কা চরম দুর্ভোগের কথা স্মরণ করে দিচ্ছে।এই চিত্র পুরো নগরীর। অভিযোগ রয়েছে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেন নির্মান করলেও সেগুলো পানি নিস্কাশনে কোন ভূমিকাই রাখছেনা। একসময় ব্যাংক ও ট্যাঙ্কের শহর কুমিল্লা ব্যাংক সংখ্যা বাড়লেও প্রতিনিয়ত কমছে ট্যাঙ্ক বা পুকুর। এতে জলাধার কমায় বৃষ্টির পানিতে বিগত প্রায় দু’দশক ধরে কুমিল্লা শহরের বিভিন্নস্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে আসছে। দায়িত্বশীল নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুত্র জানায়, বিগত দু’বছর ধরে জাপানী উন্নয়ন সংস্থা (জাইকার) অর্থায়নে নগরীর শাসনগাছা, রেসকোর্স, বাগিচাগাঁও, ফায়ার সার্ভিস রোড, কান্দিরপাড় নজরুল এভিনিউ, রানীরবাজার, অশোকতলা, ষ্টেশন রোড, পুলিশ লাইন, জেল রোড, ধর্মসাগরের পশ্চিমপাড়, ঝাউতলা, বাদুরতলা, মনোহরপুর, সার্কিটহাউজ রোড, আদালতের মোড়, তালপুকুর রোড, ফয়জুন্নেসা স্কুল রোড, ডাক্তার পাড়া, সদরহ্সাপাতাল রোড, ছাতিপট্টি, রাজগঞ্জ, মোগলটুলীসহ প্রায় একশ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতা নিরশনে সিটিকরপোরেশন বক্স ড্রেন নির্মান করলেও অজ্ঞাত কারণে এসব ড্রেন পানি নিস্কাশনে কোন কাজে আসছেনা। অভিযোগ রয়েছে সিটি করপোরেশনের সুষ্ঠু তদারকির অভাবে এসকল ড্রেন অনেকস্থানেই অসমাপ্ত পড়ে রয়েছে।নগরবাসী শীঘ্রই এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ চায়। এ বিষয় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতি চরম অবনতি
মো: লাভলু শেখ, লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতি চরম অবনতি ঘটায় জেলায় ৩৪ টি স্কুল বন্ধ ঘোষনা। মাইিকিং করে জানিয়ে দিয়েছে রেড এলাট জারির কথা। টানা ভারী বর্ষনণ ও পাহাড়ী ঢলে এযাবত লালমনিরহাট জেলায় ২০টি ইউনিয়নে ২০ হাজার পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। তবে জেলার ত্রাণ কর্মকর্তার তথ্য মতে, ১৬ হাজার ৮শত ১৬টি পরিবার পানি বন্দী হয়েছে। লালমনিরহাট জেলার ত্রান কর্মকর্তা আলী হায়দার রোববার জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ১৫০ মে: টন চাউল ও নগদ ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলি হচ্ছে, লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, গোকুন্ডা, রাজপুর, কুলাঘাট, মোগলহাট, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার, কাকিনা ও ভোটমারী, হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী ও গড্ডিমারী, পাটগ্রামের শ্রীরামপুর, বুড়িমারী, পাটগ্রাম, দহগ্রাম ও বাউড়া ইউনিয়নে পানি বন্দী থাকা অবস্থায় শনিবার রাতে ঘুর্নিঝরে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে পাটগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নন্দী রায় জানান, মোট ২০টি ইউনিয়ন বন্যা, নদী ভাংগন ও ঘুনিঝরে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বন্যায় এমন ক্ষতিগ্রস্থের সংবাদ সংশ্লিষ্ট ইউ.পি চেয়ারম্যানগণ নিশ্চিত করেছেন। অপরদিকে এ বন্যায় কয়েক হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলের ক্ষতিসহ ও হাজার হাজার গরু, ছাগল, হাঁস ও মুরগীর খাদ্য অভাব দেখা দিয়েছে। বন্যা কবলিত পরিবার গুলো অনেকেই এখনো ত্রাণ সামগ্রী পাইনি বলে জানা গেছে। ত্রাণ কর্মকর্তা আরো জানান, বন্যা কবলিতদের মাঝে ১৪০৩ কাটুন শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। রোববার দুপুর ১২ টা পর্যন্ত তিস্তার পানি ২৪ সে: মিটার ও ধরলার পানি ২৯ সে: মিটার বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাবিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী বজলে করিম জানান।

নীলফামারীতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
নীলফামারী সংবাদদাতা : তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে কিছটা কমলেও বন্যা পরিন্থিতি এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল রোববার সকাল ৬টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার বন্যাকবলিত ১৫ টি চর গ্রামের অনেক পরিবার এখনও পানিবন্দী রয়েছে। নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পুর্বাভাস ও সর্তকীকরন কেন্দ্র জানায় টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে ধেয়ে আসা পানিতে তিস্তা নদী গত কয়েকদিন ধরে ফুঁসে উঠেছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান গতকালও তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে তিস্তা ব্যারেজের সবকটি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান। এদিকে রোববার সকালে বন্যা কবলিত ডিমলা উপজেলার খালিচা চাপানি ইউনিয়নের বাইশপুকুর ও ফরেষ্টের চর গ্রামের দু’শত পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব কবীর বিন আনোয়ার। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন নীলফামারীর ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শাহীনুর আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আজাহারুল ইসলাম ও ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার।

আবু জাফর সিদ্দিকী, সিংড়া (নাটোর) : অতি বৃষ্টির কারণে নাটোরের সিংড়া উপজেলার চামারী ইউনিয়নের বিলদহর মৎস্যজীবী পাড়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। একটি ড্রেনের অভাবে জলাবদ্ধতায় দূর্ভোগে পড়েছে প্রায় এক হাজার পরিবারের মানুষ। এলাকাবাসীরা জানান, চামারী ইউনিয়নের বিলদহর মৎস্যজীবীপাড়ায় প্রায় ২৫০০ লোকের বসবাস। যাতায়াতের জন্য একটি মাত্র রাস্তা রয়েছে। এই রাস্তাটি ২ বছর হলে জলাবদ্ধ হয়ে আছে, একটি মাত্র ড্রেনের অভাবে প্রতিবছরই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এবারও গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে পানি জমে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে মৎস্যজীবী পাড়াটি। পানি বন্দি হয়ে প্রাইমারি স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিক, হাট-বাজারে যেতে পারছে না এলাকার মানুষরা। বিলদহর মৎস্যজীবী পাড়ার নুরুল ইসলাম বলেন, বর্ষার পানি বের হওয়ার জন্য ড্রেন না থাকায় গত দুই বছর ধরে এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। একই এলাকার দুলাল সরকার জানান, গত দুই বছর ধরে জলাবদ্ধতার শিকার হতে হচ্ছে। এবারও পানি বন্দির কারণে রোগ জীবানু ছড়াচ্ছে। মানুষ যাতায়াত করতে গিয়ে দূর্ভোগ পড়েছে। আমরা দ্রুত এই ভোগান্তির নিরসন চাই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, অতি বৃষ্টির কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সর্বোপরি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে জনসাধারণকেও সচেতন হতে হবে। পরিকল্পনা ছাড়া যেখানে-সেখানে বাড়ি করা যাবেনা।

চট্টগ্রাম ব্যুরো ও লোহাগাড়া সংবাদদাতা : দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পড়েছে সাতকানিয়া উপজেলা। গত বিশ বছরের মধ্যে এমন বন্যা হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ উপজেলার চরতী, আমিলাইশ, কেউচিয়া, ঢেমশা, পশ্চিম ঢেমশা, পৌরসভা, ছদাহা, বাজালিয়াসহ বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী রয়েছে সাড়ে তিন লাখ মানুষ। এসব এলাকায় কোনো কোনো বাড়ির ছাউনি পর্যন্ত ডুবে গেছে বন্যার পানিতে। সাতকানিয়া উপজেলার ৯০ শতাংশই প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন। সাতকানিয়াকে বন্যাতুর্গত এলাকা ঘোষণা করে সরকারিভাবে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। ইতোমধ্যে উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন। এছাড়া মূলধারার গণমাধ্যমে বন্যার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা যথাযথভাবে প্রচার হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছেন উপজেলা মহিলা ভাইসচেয়ারম্যান দুরদানা ইয়াসমিন। স্মরণকালের ডেকর্ড ভেঙে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক কেন্দ্র কেরানিহাট পুরোটাই প্লাবিত হয়েছে। দোকানপাটে এক কোমর পানি। গত কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উপর দিয়ে পানি বাহিত হওয়ায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা। ঘণ্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে পড়ছে তারা। অনেক ছোট ছোট গাড়ির ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বিকল হয়ে গেছে। একনাগাড়ে দুইদিন ধরে পানির নীচে রয়েছে চন্দনাইশের কসাইপাড়া এলাকায় মহাসড়ক। ৩ ঘন্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে দশ থেকে বারো ঘন্টা। শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত এ সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনগুলো আটকে থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন কক্সবাজার, সাতকানিয়া, লোহাগাড়ার যাত্রীরা। হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার ফরহাদ হোসেন বলেন, দোহাজারী, কেরানীহাটসহ বিভিন্ন স্থানে পানি উঠে যাওয়ায় গাড়ি চলছে খুব ধীরগতিতে। এদিকে বারবার এই এলাকা কেন প্লাবিত হচ্ছে তার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে উৎপত্তি হয়ে বঙ্গোপসাগরে মেশা ডলু, টঙ্কাবতী, হাঙ্গর, শঙ্খসহ সাতাটি নদীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দেওয়া হয়নি কখনো। প্রতি বর্ষায় নদীগুলোর পানি দুকুলের প্লাবিত করে ব্যাপক দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে জনজীবনে। এবছর নদীগুলোর কয়েকটিতে পানি বিপদ সীমা গত ২০ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদী নিয়ে জরিপ শুরু হয়েছে। জরিপের ফলাফল দেখে নদীগুলোর বণ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সাধারণত দৈনিক ৫০ মিলিমিটার ভারী বৃষ্টিপাত হলেই আতংক নামে বান্দরবান থেকে চট্টগ্রাম হয়ে বঙ্গোপসাগরে মেশা সাঙ্গু নদীর দুই তীরবর্তী মানুষের মনে। এবার টানা দশদিন ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হয়েছে চট্টগ্রামে। সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, রোববার সাঙ্গু নদীর বান্দরবান পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার সোয়া তিন মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। যা গত ২০বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই নদীর প্লাবনের কারণে সাতকানিয়া-বান্দরবান সড়ক প্রতি বছরই পানিতে তলিয়ে যায়। লোহাগাড়া ডলু খালের ভাঙ্গন--এদিকে লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর, পুটিবিলা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ডলু নদীর ভাঙ্গনে বাড়িঘর বিলীন হবার আশংকা দেখা দিয়েছে। আধুনগর ইউনিয়নের সরদানী পাড়ায় ডলু নদীর ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে ১৫টি বাড়ি। এই এলাকায় পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশংকায় নির্ঘুম রাতযাপন করছেন শত শত পরিবার। এদিকে টানা বর্ষণে মাটি ধসের পর চট্টগ্রাম নগরীর কুসুমবাগ আবাসিক এলাকার পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা ৫০টি বসতঘর উচ্ছেদ করা হয়েছে। সেখানে বসবাসরত পরিবারের সদস্যদের পাহাড় থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।টানা বর্ষণে পাহাড়ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের টিম রোববার এই অভিযান চালায়। কুসুমবাগ আবাসিক এলাকায় গরীবউলাহ শাহ মাজার সংলগ্ন এই পাহাড়ে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত একটানা চলে এই অভিযান। এদিকে কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টিতে আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের মধ্যম বারখাইন গ্রামে শঙ্খের ভাঙন প্রবল আকার ধারণ করেছে। বৃষ্টিতে প্রবল আকারে ভাঙছে এলাকাটি। গত কয়েক বছরে নদীর ভাঙনে তলিয়ে গেছে শতাধিক ঘর, শ্মশান ও ফসলি জমি। নতুন করে বেঁড়িবাধ নিমাণ করা হলেও তা গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফেরিঘাট থেকে কয়েক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত প্রবল আকারে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে ১০ টি পরিবারের বসতঘর নদীতে ভেঙে গেছে। ঘর বিলীন হয়ে যাওয়ায় ভয়ে আছেন শতাধিক পরিবার।স্থানীয় বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য এস.এম আলমগীর চৌধুরী বলেন, এ বৃষ্টিতে ফেরিঘাট থেকে উত্তর দিকে কয়েক কিলোমিটার নতুন বেঁড়িবাধের এলাকা ভাঙছে প্রবলভাবে। ভাঙন না থামলে ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে পুরো এলাকাবাসী।আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, মধ্যম বারখাইনে বেঁড়িবাধ ভাঙনের বিষয়টি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। এছাড়া, বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল।

মো.একরামুল হক, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা : গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে ও পাহাড়ী ঢলের তীব্র স্রোতের পানিতে সৃষ্ট বানের পানিতে হাটহাজারীর বিভিন্ন এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। ফলে পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ। সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির। এই দুর্যোগকালীন সময়ে বিদ্যুৎ না থাকার কারনে রাতের আধাঁরে বিভিন্ন এলাকার বন্যা কবলিতরা সাপ-পোকা আতংক সহ ঘরের মালামাল সরাতে পারছেননা বলে জানা গেছে। যাতায়াতের সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় নিত্য প্রয়োজনে হাট-বাজারে আসা যাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে বলা যায়। সরেজমিনে পরিদর্শন করে ও স্থানীয় বাসিন্ধাদের মাধ্যমে জানা যায়, হাটহাজারী সদরের ৬ নং ওয়ার্ডের মেহেদী পাড়া, উপজেলার গুমাণমর্দ্দন, ছিপাতলী, নাঙ্গলমোড়া,ফরহাদাবাদ,ধলই,কাজী পাড়া, হাধুরখীল, পেশকার হাট, মির্জাপুর ইউনিয়ন এলাকার চারিয়া কাজীপাড়া, ইছাপুর, মোজাফফর পুর, রহিমপুর, জাফারাবাদ,উত্তর মেখল,দক্ষিন মেখল, মিরের হাট, মীরের খীল এবং উত্তর ও দক্ষিণ মাদার্শা, সরকারহাট বাজার, বালুরটাল, চেয়ারম্যান ঘাটা, প্রভৃতি এলাকার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। ভারী বর্ষণের কারণে সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার বেশির ভাগ আঞ্চলিক সড়ক, ঘরবাড়ি, মাছের পুকুর, বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যানরা জানান, প্রবল বর্ষণে হাটহাজারীর বিভিন্ন এলাকায় বন্যার কারনে অসংখ্য পরিবার পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। পাহাড়ী ঢলের তীব্র স্রোতে এলাকার বাড়ী ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় দূর্ভোগে পড়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন ইউপি সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ”অনেক এলাকার অধিকাংশ মানুষই এখন পানি বন্ধী হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন এলাকার ঘরে ঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষদের।অপরদিকে টানা বর্ষণের কারনে উপজেলার জানু বাপের ঘোনা নামক স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনায় দুজনকে আহতাস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় পাহাড়ে ঝুকিপূর্নভাবে বসবাস করা অন্তত ২০টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে জানান সহকারী কমিশনার ভুমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সম্রাট খীসা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুহুল আমিন সাংবাদিকদের জানান,“ উপজেলা প্রশাসন প্লাবিত এলাকায় দুর্যোগ সৃষ্টি হলে তা মোকাবেলায় সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। বন্যায় ডুবে আছে রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিল
রাঙ্গুনিয়া-কাপ্তাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা : গত ৮দিনের টানা বর্ষন ও পাহাড়ী ঢলে রাঙ্গুনিয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় ডুবে আছে শষ্যভান্ডার খ্যাত গুমাইবিল। বিভিন্ন ইউনিয়নে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রবল স্রোতের কারনে রাঙ্গুনিয়া জুড়ে নতুন নতুন এলাকায় তীব্র নদীভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। কর্ণফুলী নদীর পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় গতকাল সকাল থেকে ফেরী চলাচল বন্ধ থাকায় বান্দরবান-চন্দ্রঘোনা-রাজস্থলী-রাঙ্গামাটি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পানির নীচে ডুবে থাকায় সাধারণ মানুষদের চলাচলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বৃহত্তম গুমাইবিল সহ একাধিক বিলের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এ মৌসুমে কৃষকরা নতুন করে চলতি মৌসুমে ধানের চাষ করতে পারবে কি না তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। কৃষকরা জানান, উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। টানা ৮ দিন ধরে উপজেলার বিস্তীর্ণ সবজি ক্ষেত পানির নিচে ডুবে থাকায় কয়েক হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে কৃষকদের উৎপাদিত ঢেঁঢ়শ, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙা, চিচিংগা, শসা, বেগুন, মুলাসহ বিভিন্ন বর্ষাকালীন সবজির ক্ষেত। এছাড়াও ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি মাছের ঘের ও প্রকল্পর লাখ লাখ টাকার মাছ ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। টানা বর্ষণে রাজারহাট ও পদুয়ায় শতশত স্কুল ও ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক এলাকার শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারছে না।

গাইবান্ধায় পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত বন্যার আরও অবনতি
গাইবান্ধা থেকে জোবায়ের আলী : গাইবান্ধার নদ নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে গত শনিবার ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বিপদসীমার ৩৭ সে. মি., তিস্তা ৯ সে. মি ও ঘাঘট নদীর পানি ১১ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া যমুনা, তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি বিপদসীমা ছুই ছুই করছে। ফলে সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা এবং সদর উপজেলায় নদী তীরবর্তী ও বিভিন্ন চরাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ফলে ওইসব এলাকার বিভিন্ন ফসলী জমি ও রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের নিচু এলাকাগুলো তলিয়ে যাওয়ায় সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ দিকে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর উড়িয়া, কাবিলপুর, গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারী, গলনা, ফুলছড়ি ইউনিয়নের দেলুয়াবাড়ী, ফজলুপুর ইউনিয়নের পূর্ব খাটিয়ামারী, উজালডাঙ্গা, বাজে তেলকুপি, এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের হরিচন্ডি, জিগাবাড়ী, সন্যাসীর চর এবং সুন্দরগঞ্জের হরিপুর, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর ইউনিয়নের বেশকিছু এলাকায় তিস্তার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এ দিকে গত এক সপ্তাহে ফুলছড়ি ও সুন্দরগঞ্জের ওইসব এলাকায় শতাধিক পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজ জানান, সদর উপজেলার রায়দাসবাড়ি, ফুলছড়ি উপজেলার দেলুয়াবাড়ি, জামিরা, গজারিয়া ইউনিয়নের গলনা, ফজলুপুর এখন বন্যা কবলিত। এই সমস্ত এলাকায় নদী ভাঙনও তীব্র আকার ধারণ করেছে। এই সমস্ত এলাকায় এ পর্যন্ত ১২০টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান নদীর পানি যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর বাঁধ হুমকির মুখে পড়বে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি দেখা দিয়েছে। ১৫ স্থানে ফাটল ধরায় হুমকির মুখে পড়েছে শ্রীপুর-সুন্দরগঞ্জ মুখী বন্যা নিয়ন্ত্রন বেরি বাঁধ। এতে করে বেলকা, হরিপুর, কাপাশিয়া, শ্রীপুর, চন্ডিপুর, তারাপুর, শান্তিরাম ও কঞ্চিবাড়ী ইউনিয়নের শত শত ঘরবাড়ি পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। পানিবন্দি মানুষেরা অনাহারে অর্ধাহারে জীবনযাপন করছেন। সরকারিভাবে পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই পরিবার পরিজন, গবাদিপশু নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেরি বাঁধ ও উঁচু স্থানসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। তারা খাদ্য, বিশুদ্ধ পানীয় জল ও জ্বালানী না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। ২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদানসহ সমুদয় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। গাইবান্ধা পাউবো সূত্রে জানা গেছে উপজেলায় তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ২২ সে. মি ও ঘাঘট নদীর পানি ৫৪ সে. মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোলেমান আলীর সাথে কথা হলে তিনি জানান পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারের ব্যবস্থা না থাকলেও তাদের মাঝে এ পর্যন্ত ত্রাণ সামগ্রী হিসেবে ৩শ ৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার ও ৭০ মে. টন চাল বরাদ্দ পেয়ে ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদীর তীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করেছে। ইতিমধ্যই চক রহিমাপুর এলাকায় বাঁধের সুইচ গেট টি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। তরফমনু, শাকপালা, রাখালবুরুজ, দরবস্ত, হরিরামপুর, মহিমাগঞ্জ ও শালমারা ইউপি’র অনেকাংশে নদী ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এসব এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, নদী ভাঙ্গনে বেশ কিছু বসতবাড়ী সহ শতশত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছেন, গাইবান্ধার উজানে তিস্তা নদীর লালমনির হাট, ঢালিয়া ও তিস্তা ব্যাড়েজ পয়েন্টে বিপদ ৮০সেঃমিটার থেকে কোথাও কোথাও অনেক উপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় গাইবান্ধার জেলার উপর দিয়ে হয়ে যাওয়া যমুনা, ঘাঘট, করতোয়া নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যবাহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বন্যা দেখা দিতে পারে বলে আশংকা রয়েছে।

https://www.dailysangram.com/post/382815