রংপুর : তিস্তায় হঠাৎ পানি বাড়ায় কাউনিয়ার বিশ্বনাথ, চরগনাই, হয়বৎখা ও বালাপাড়া ইউপিতে শতাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে
১১ জুলাই ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১:৩০

রংপুরে তিস্তায় অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দী

মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, রংপুর অফিস : ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রংপুর জেলার কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি এখন বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

তিস্তা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, এবং পীরগাছা উপজেলায় নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের গ্রাম গুলোতে পানি প্রবেশ করে তিস্তার তীরবর্তী চরাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। ফলে প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নদীর পানির প্রবল স্রোতে তিস্তা ব্যারাজ হুমকির সম্মুখিন হওয়ায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুর হক জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে নদীর পানির প্রবল স্রোতে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যারাজ এলাকার ভাটি এলাকার চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, তিস্তার পানি হঠাৎ করে বাড়ছে। এতে ইউনিয়নের বিশ্বনাথ, চর গনাই, হয়বৎখা ও বালাপাড়া ইউনিয়নের ঢুষমারা গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়ে। গতকাল বুধবার সকালে নদী তীরবর্তী ১০ গ্রামের হাজারও পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে অনেক পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কাউনিয়ার ইউএনও উলফৎ আরা বেগম জানান, বন্যায় পানিবন্দী মানুষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সার্বক্ষনিক খোঁজ রাখা হচ্ছে। বন্যার ব্যাপারে সরকারিভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া আছে। জরুরী অবস্থায় সব ব্যবস্থা নেয়া হবে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গঙ্গাচড়া উপজেলার নদীর তীরবর্তী লহ্মীটারী ইউনিয়নের চর শংকরদহ, চর ইচলী, বাগেরহাট, জয়রাম ওঝা, ইসবকুল গ্রামের ১০ হাজার পরিবার ও আলমবিদিতর ইউনিয়নের সাউথপাড়া, পাইকান, ব্যাংকপাড়া, হাজীপাড়া, আলমবিদিতর গ্রামের ৫০০ পরিবার পান্দিবন্দী হয়ে পড়েছে। কোলকোন্দ ইউনিয়নে চিলাখাল বেড়ি বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। সেই সাথে পাটসহ বিভিন্ন উঠতি ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। চর শংকরদহ গ্রামের আনোয়ার হোসেন (৫৮) জানান, হঠাৎ করে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় আমরা পানিবন্দি হয়ে পড়েছি। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে ঘরের চৌকিতে আশ্রয় নিয়েছি। পানি আরো বাড়লে বাড়িতে থাকা যাবে না। ইচলী গ্রামের মনোয়ারা বেগম বলেন, পানি বাড়ির আঙিনায় ঢুকেছে। ঘরের বাইরে বের হওয়া যাচ্ছে না। কাজ না করলে খাব কী ? এখন পর্যন্ত কোন সরকারী সাহায্য আসে নাই। লহ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, তিস্তার পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় এই ইউনিয়নের চর এলাকার ১০ হাজার মানুষ পান্দিবন্দী হয়ে পড়েছে। তাদের ত্রাণ সহায়তা দিতে উপজেলায় যোগাযোগ করা হয়েছে। তিস্তার পানি যেভাবে তেড়ে আসছে, তাতে বন্যা দেখা দিতে পারে। পীরগাছা উপজেলার ছাওলা এবং পাওটানা উইনিয়নের চর গুলোতে ৪শ মানুষ পান্দিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদিকে রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, গত ৪৮ ঘন্টায় রংপুরসহ আশপাশ এলাকায় ১৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন সড়ক প্লাবিত হয়েছে। অনেক জায়গায় সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, তিস্তা নদীর পানি বুধবার বিকেল ৩ টায় কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদ সীমার ২৮ দশমিক ৬৭ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে । তিনি বলেন, বৃষ্টি হলে রাতেই বিপদ সীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে পারে ।

ঝিনাইগাতীতে ৩টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলিন
ঝিনাইগাতী (শেরপুর) সংবাদদাতা : অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গত ৩ দিন ধরে অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির তোরে মহারশী নদীর দীঘিরপাড় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ ভেঙে ৩টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। নদীর ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানি বন্দী হয়ে পরেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষকদের বীজতলা। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কোচনীপাড়া-বাগের ভিটা রাস্তা বিধ্বস্ত হয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে।

পাহাড়ি ঢলের পানিতে ছুড়িহারা, দিঘিরপাড়, চতল, রামনগর, কালিনগর, দরিকালিনগর,বালুরচর, দারিয়ারপাড়, দেবোত্তরপাড়া, জুলগাঁও, হাসলিগাঁও, বাণিয়াপাড়া, রাঙামাটি, হাতিবান্ধা, লয়খা, কামার পাড়া, মাগলার মুখ বেশ কয়েকটি গ্রামের শত শত মানুষ পানি বন্দী হয়ে পরেছে। পানিতে ভেসে গেছে এসব গ্রামের অনেক পুকুরের মাছ। তলিয়ে গেছে কৃষকদের বীজতলা।

বুধবার বিকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবেল মাহমুদ সদর ইউনয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন চাঁন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান মহারশী নদীর দিঘিরপাড় বিধ্বস্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ এলাকা পরিদর্শন করেন। নদী গর্ভে বিলিন হওয়া ৩ পরিবারকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তারা। উপজেলা কৃষি অফিসার হুমায়ুন কবির জানান, ৬শ ৭০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। তন্মধ্যে ১৫ হেক্টর জমির বীজতলা পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. সিরাজুস সালেহীন জানান, পানিতে তলিয়ে কি পরিমাণ মাছের ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি।

লালমনিরহাটে ১৫০টি পরিবার পানিবন্দী
লালমনিরহাট সংবাদদাতা : টানা ভারী বর্ষন ও পাহাড়ী ঢলে লালমনিরহাটে প্রায় ১৫০ টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে ৪০টি পরিবারের মাঝে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার বিকাল ৩টায় শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বুধবার জেলা প্রশাসক আবু জাফর, জেলা ত্রান কর্মকর্তা আলী হায়দার ও প্রকল্প পরিচালক মশিউর রহমান বন্যা কবলিতদের মাঝে শুসনো খাবার বিতরণ করেছেন। এদিকে তিস্তার পানি ৫২.৪০ উচ্চ মাত্রায় প্রবাহিত হচ্ছে। অপর দিকে ধরলার পানি বৃদ্ধি প্রেয়ে ৮১ সে: মি: বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন।

https://www.dailysangram.com/post/382297