পাহাড় ধস। ছবি: যুগান্তর
৯ জুলাই ২০১৯, মঙ্গলবার, ১২:৪৬

কাপ্তাইয়ে পাহাড় ধসে ২ জনের মৃত্যু

বান্দরবান-খাগড়াছড়িতে সড়ক যোগাযোগ সাময়িক বিচ্ছিন্ন * ঝুঁকিপূর্ণ বসতি ছাড়তে প্রশাসনের মাইকিং

রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলায় পাহাড় ধসে শিশুসহ ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারি বৃষ্টির পর কাদামাটির নিচে চাপা পড়ে তাদের মৃত্যু হয়। সোমবার দুপুরে উপজেলার কলাবাগান এলাকার মালি কলোনিতে এ ঘটনা ঘটে।

বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসে দুটি সড়কে যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ ছিল। এ তিনটি জেলাসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারেও পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে এসব স্থানে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে দিনভর প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রও খোলা হয়েছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

রাঙ্গামাটি : দুপুর ১২টার দিকে কাপ্তাই উপজেলার কলাবাগান এলাকার মালি কলোনিতে আকস্মিকভাবে পাহাড় ধসে দুটি ঘর মাটিচাপা পড়ে। এতে ঘরে থাকা অন্যরা তাৎক্ষণিকভাবে বের হতে পারলেও একটি ঘরে গফুর মিয়ার পরিবারের তাহমিনা বেগম (২৫) এবং আরেক ঘরে সুনীল মল্লিকের শিশু সন্তান উজ্জ্বল মল্লিক (৩) আটকে পড়েন। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে টানা বর্ষণে শহর এলাকার মানিকছড়ি, শিমুলতলী, ভেদভেদী, রূপনগর, নতুনপাড়া এবং কাপ্তাই, নানিয়ারচর ও কাউখালীতে ভূমিধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছেন অসংখ্য মানুষ। কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশ্রাফ আহমেদ রাসেল বলেন, প্রাণহানি রক্ষায় ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে।

জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, জেলা শহরে ২১টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনকে নিরাপদে চলে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। প্রয়োজনে নিরাপদে যেতে তাদের বাধ্য করা হবে।

বান্দরবান : পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে পাহাড়ের পাদদেশে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। সন্ধ্যার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি ছাড়তে বসবাসকারীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রুমা সদর ইউপি চেয়ারম্যান শৈমং মারমা বলেন, রুমা-থানচি সড়কের নয়মাইলে পাহাড় ধসে সড়ক যোগাযোগ সাময়িক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।

পরে সেনাবাহিনী ধসে পড়া পাহাড়ের মাটি সড়ক থেকে সরিয়ে নিলে দুপুর ২টার দিকে সড়কে আবারও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। জেলা প্রশাসক মো. দাউদুল ইসলাম বলেন, অবিরাম বর্ষণে বন্যা ও পাহাড় ধসের শঙ্কা রয়েছে। জেলায় ১২৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে দেড়শ’ জনের মতো আশ্রয় নিয়েছে।

পাহাড় ধসের ঝুঁকি থাকায় বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্র অথবা নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। খাগড়াছড়ি : পাহাড় ধসের আশঙ্কায় পৌর প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরে মাইকিং করে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরে যেতে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।

সোমবার দুপুরে পৌর শহরের হাসপাতাল সংলগ্ন মসজিদের মোয়াজ্জেন মোতালেবের বাড়িটি পাহাড় ধসে ভেঙে পড়ে। এ সময় ঘরে তার পরিবারের কেউ না থাকায় প্রাণে রক্ষা পান তারা। এছাড়া রাঙ্গামাটির লংগদু-খাগড়াছড়ি দীঘিনালা সড়কে পাহাড় ধসে সাময়িকভাবে যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথ বিভাগের সহায়তায় সড়কের মাটি সরিয়ে নেয়ার পর যান চলাচল শুরু হয়।

কক্সবাজার : সোমবার সকাল থেকে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসরত জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করা হয়। বিশেষ করে শহরে পাহাড়বেষ্টিত লাইট হাউসপাড়া, ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, কবরস্থানপাড়া, পাহাড়তলী, সাহিত্যিকা পল্লী, সার্কিট হাউস পাড় এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়।

নিজেরা সরে না গেলে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সরিয়ে নেয়ারও হুশিয়ারি দেয়া হয়। কক্সবাজার সদর ভূমি কর্মকর্তা (এসি ল্যান্ড) শাহরিয়ার মোকতার সাংবাদিকদের জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে জেলার ঝুঁকিপূর্ণ সব এলাকায় মাইকিং করে মানুষকে নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম : পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরে যেতে মাইকিং অব্যাহত রেখেছে জেলা প্রশাসন। পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কায় নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছেন লোকজন। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের খোলা ৯টি অস্থায়ী কেন্দ্রে ৭০০ পরিবারের প্রায় ২ হাজার সদস্য আশ্রয় নিয়েছেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর মাহমুদ উল্লাহ মারুফ বলেন, ভারি বর্ষণে পাহাড় ধসে প্রাণহানি যেন না হয়; সেজন্য কাজ করছে জেলা প্রশাসন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/196913