চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে দেশে মোট ৪৯৬টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ৮০টির বেশি শিশু ধর্ষিত হয়েছে, যা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। ২০১৮ সালে মোট ৫৭১টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে এ সংখ্যা ছিল ৩৫১টি। গত বছরের তুলনায় এ বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে শিশু ধর্ষণ বেড়েছে ৪১ শতাংশ, যা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। এ বছরের এপ্রিল ও মে মাসে ২৪১টি শিশু ধর্ষিত হয়েছে।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম (বিএসএএফ) গতকাল এ তথ্য প্রকাশ করেছে। ১৫টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত শিশু অধিকার লঙ্ঘনের সংবাদ পর্যালোচনা করে এ রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আবদুছ সহিদ মাহমুদ স্বাক্ষরিত এ রিপোর্টে বলা হয়, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে ধর্ষিত ৪৯৬টি শিশুর মধ্যে ৫৩টি শিশুকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। ২৭টি প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং ২৩ শিশুকে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়েছে।
এ ছাড়াও এই ছয় মাসে ৭৪টি শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। চলতি জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের পত্রিকার পাতায় ৪১টি শিশু ধর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ছয়টি শিশুকে গণধর্ষণ করা হয়েছে, পাঁচটি প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং তিন শিশুকে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়াও ১০টি শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী গত চার মাসে সর্বনিম্ন আড়াই বছর বয়সের শিশুও ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের সব ঘটনা প্রকাশ্যে আসে না। তাই প্রকৃত সংখ্যাটা আরো বেশি হবে বলে বিএসএএফ মনে করে।
রিপোর্টে বলা হয়, ধারাবাহিকভাবে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটতে থাকায় এবং এসব ঘটনার নৃশংসতায় নাগরিক হিসেবে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এসব ঘটনা আমাদের সমাজে শিশুদের অসহায় অবস্থার সার্বিক চিত্রই তুলে ধরছে।
শিশু অধিকার ফোরামের মতে, শিশু ধর্ষণের ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণ অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া, দুর্বল চার্জশিট, বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা এবং সর্বোপরি সামাজিক মূল্যবোধের ব্যাপক অবক্ষয়। এসব প্রতিহত করতে আরো দ্রুত হস্তক্ষেপ এবং জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংগঠনটির পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ ও দফতরকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
