৬ জুলাই ২০১৯, শনিবার, ১:২৮

জীবন যাত্রার ব্যয় মিটাতে না পেরে শহর ছাড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষ

এইচ এম আকতার : বেশি দামে এলএনজির আমদানির অজুহাতে সরকার বাড়িয়েছে গ্যাসের দাম। এলএনজি আমদানির লোকসান চাপছে জনগণের ঘাড়ে। আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ছে দেশের জ্বালানি খাত। দেশীয় তেল গ্যাস কয়লা উত্তোলন ও অনুসন্ধানে কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সরকার জ্বালানির নিশ্চিত না করেই একের পর এক কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্যোগ নিচ্ছে। এতে করে এ সব প্রকল্প চালাতে জ্বালানি আমদানি করতে হচ্ছে। জীবন যাত্রার ব্যয় এতই বাড়ছে যে মানুষকে শহর ছাড়তে হচ্ছে।

ফারুক হোসেন। একটি ভ্যান চালিয়ে ৫ জনের সংসার চলে তার। দুই রুমের একটি বাসা নিয়ে যাত্রাবাড়ির বিবির বাগিচার ২ নং গেইটে বসবাস করেন তিনি। বড় মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলে পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। বৃদ্ধা মাও থাকে তার এই ছোট্ট ফ্লাটে। এই বাসায় ২০০৫ সালে তাকে ভাড়া দিতে হয়েছে ৪ হাজার টাকা। ১৪ বছরের ব্যবধানে এখন তাকে ভাড়া দিতে হচ্ছে ১২ হাজার টাকা। তার সাথে যুক্ত হচ্ছে গ্যাস বিদ্যুৎ আর পানির বিল।

সব মিলে বাসা ভাড়া বাবদ তার ব্যয় হয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। প্রতি মাসে ভ্যান চালিয়ে তার আয় হয় ২০-২২ হাজার টাকা। বাসা ভাড়া দিয়ে তার হাতে থাকে মাত্র ৫-৭ হাজার টাকা। এ টাকা ছেলে মেয়ের লেখা পড়া খরচ, চিকিৎসা ও খাবার খরচ চালাতে কষ্ট হচ্ছে। তার ওপর আবার এ মাসে গ্যাসের দাম বেড়েছে ১৭৫ টাকা। বেড়েছে ছেলে মেয়ের স্কুলে যাওয়ার খরচও।

অসহায় এই বাবা চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে দৈনিক সংগ্রামকে জানান, আমি আর পারলাম না ঢাকায় থাকতে। ছেলে মেয়ের আর লেখা পড়া হবে না। আমি ঋণে জড়িয়ে গেছি। তার ওপর আবার প্রতি বছরই গ্যাস বিদ্যুৎ আর পানির দাম বাড়ছে। তাহলে আমরা কিভাবে ঢাকায় থাকবো। আগামী মাসেই পরিবার গ্রামের বাড়ি বরিশালে পাঠিয়ে দিতে হবে। ফারুকের মত অসংখ্যা নিম্ম আয়ের মানুষকে ঢাকা ছাড়তে হচ্ছে।

জানা গেছে, গত দশ বছরে গ্যাসের দাম বেড়েছে ৬ বার। জনমতের তোয়াক্কা না করে ৫ বার বেড়েছে বিদ্যুতের দামও। এতে করে জীবত্রযাত্রার ব্যয় বেড়েছে কয়েক গুণ। এর পরে এলএনজি আমদানির নামে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন,গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে যদি সরকার জ্বালানির উৎপাদন বাড়াতে তাহলেই আর সমস্যা হতো না। সরকার কয়লার উৎপাদন না বাড়িয়ে একের পর এক কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছে।

একইভাবে আপদকালীন বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে রেন্টাল এবং কুইক রেন্টার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এতে করে প্রতি ইউনিট গ্যাস ১২-২০ টাকায় ক্রয় করে তা ৬ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে করে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে সরকারকে ১৪ টাকার লোকসান গুণতে হচ্ছে। আর এ লোকসান মেটাতেই সরকার জনমতের উপেক্ষা করে গ্যাসের দাম বাড়চ্ছে। এতে করে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

বর্তমানে অর্ধশতাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চলছে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলে। এজন্য তেলের আমদানি গত ১০ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। বছর দশেক আগেও ৮৮ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো দেশীয় গ্যাস দিয়ে। এখন ৫০ ভাগের কম। মজুদ কমে যাওয়া, অনুসন্ধান কার্যক্রমে স্থবিরতার কারণে গ্যাসের ঘাটতি মোকাবেলায় এখন আমদানি করা হচ্ছে অতি উচ্চমূল্যের এলএনজি। ফলে দফায় দফায় ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হচ্ছে। চাপে পড়ছে সাধারণ মানুষ। জ্বালানি তেল ও গ্যাস আমদানি অব্যাহত থাকলে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না বলে মনে করছেন বিশ্নেষকরা।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত ও মিয়ানমার বঙ্গোসাগরে গ্যাস আবিস্কার করেছে। বাংলাদেশও সাগরে গ্যাস আবিস্কার করতে পারত, যদি সক্রিয় ও কার্যকর উদ্যোগ থাকত। ফলে ৫ গুণ বেশি দাম দিয়ে এলএনজি আমদানি করতে হতো না। আগামী দু-এক বছরের মধ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে কয়লা আমদানি করতে হবে। কারণ, কয়েকটি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ শেষের দিকে। কিন্তু দেশে ৫টি বড় কয়লা খনি রয়েছে। একমাত্র বড়পুকুরিয়া ছাড়া অন্য কোনো খনি থেকে কয়লা তোলার কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। একের পর এক তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রস্থাপন করে বিপুল ব্যয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। কিন্তু গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধান কাজ যথাযথভাবে এগোলে এই পরিস্থিতি হতো না।

দশ বছর আগে দেশীয় গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ছিল ১৭৫ কোটি ঘনফুট। বর্তমানে উৎপাদন হয় ২৭০ কোটি ঘনফুট। দৈনিক চাহিদা এখন ৩৫০ কোটি ঘনফুট। চাহিদা যে হারে বেড়েছে, সে হারে বাড়েনি উৎপাদন। ফলে এলএনজি আমদানি করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে।

দেশীয় গ্যাসের প্রতি ঘনমিটারের দাম ছিল ৫ টাকার কম। আমদানি করা এলএনজির প্রতি ঘনমিটারের দাম পড়ছে ৩২ টাকা ৩১ পয়সা। বর্তমানে দেশী-বিদেশি গ্যাসের গড়ে দাম ৭ টাকা ৩৫ পয়সা। পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, ২০১৮ সালের এপ্রিল মাস থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ১৩ মাসে এলএনজি আমদানির জন্য ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা। ওই পরিমাণ এলএনজি বিক্রি করা হয়েছে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকায়। মাত্র এই ১৩ মাসেই লোকসান হয়েছে ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এই লোকসান ঠেকাতেই গত রোববার ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো ৩২ দশমিক ৮০ শতাংশ।

দেশে জ্বালানি খাতে বেসরকারি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান এনার্জি প্যাকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন রশিদ এ বিষয়ে বলেন, জ্বালানি খাত আমদানিনির্ভর হয়ে পড়লে অর্থনীতিতে একটা ঝুঁকি তৈরি হবে। অতি দ্রত সমুদ্র ও স্থলভাগে নতুন তেল-গ্যাসের খনি আবিস্কার করতে হবে। দেশীয় গ্যাসের উৎপাদনও বাড়াতে হবে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে দেশীয় নতুন খনি থেকে কয়লা তোলার। তাহলে আমদানিনির্ভরতা কমবে।

বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, আমদানি করা জ্বালানির দাম বেশি। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয় এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার জন্য উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বিপুল পরিমাণে আমদানি করা জ্বালানির ব্যবহার সেই পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

গত ১০ বছরে সরকারি খাতে ৫ হাজার ৯৫৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৭টি এবং বেসরকারি খাতে ৬ হাজার ১৭৭ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৬৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্যাসভিত্তিক ৬ হাজার ৩৩৭ মেগাওয়াট, তেলভিত্তিক ৫ হাজার ৪৯৮ মেগাওয়াট, কয়লাভিত্তিক ২৭৪ মেগাওয়াট এবং সৌরভিত্তিক ২৩ মেগাওয়াট। বর্তমানে আমদানি ও দেশীয় গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ৬৫ দশমিক ২২ ভাগ। ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল দিয়ে ২০ দশমিক ৪৯ ভাগ। কিন্তু দশ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশীয় গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হতো ৮৮ দশমিক ৪৪ ভাগ। ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল দিয়ে করা হতো মাত্র ৫ দশমিক ৯৩ ভাগ।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে বিপিসির জ্বালানি তেল আমদানির পরিমাণ ছিল ৩৭ লাখ ৭৮ হাজার টন। ব্যয় হয় ১৬ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিপিসি তেল আমদানি করে ৬৭ লাখ ১৬ হাজার টন। ব্যয় হয় ৩০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ আমদানি ও খরচ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বিশ্নেষকরা বলছেন, এটা দ্রতগতিতে আরও বাড়বে।

২০১০ সাল থেকে আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর গত ৯ বছরে দেশে এলপি গ্যাস বা রান্নার সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবহার বেড়েছে ২১ গুণের বেশি। বর্তমানে কমবেশি ১০ লাখ টন এলপিজি দেশে ব্যবহার হচ্ছে। প্রায় পুরোটাই আমদানি করতে হয়। অথচ ২০০৯ সালে এলপিজির ব্যবহার ছিল মাত্র ৪৭ হাজার টন। দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে গ্রামেগঞ্জে এখন এলপিজি সিলিন্ডারের ব্যাপক চাহিদা। ছোটোখাটো হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে বাসাবাড়িতে এখন এই রান্নার গ্যাসের ব্যাপক চাহিদা। এ চাহিদা আগামীতে বিদ্যুৎগতিতে বাড়বে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে আরও ২০০ কোটি ঘনফুটের সমপরিমাণ এলএনজি আমদানি করা। এ ছাড়া এলএনজি আমদানির আরও কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয় সরকারের বিবেচনাধীন। সরকারের পরিকল্পনা ধরে এক হিসাবে দেখা যায়, ২০৩০ সাল নাগাদ দেশে ব্যবহূত প্রাথমিক জ্বালানির প্রায় ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হবে। যদি বঙ্গোপসাগর বা স্থলভাগে নতুন করে গ্যাস আবিস্কার করা না যায়।

এলএনজির পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ কয়লা আমদানির প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়েছে। সরকার বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে তিনটি বড় কেন্দ্র-পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট, রামপাল ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ও মাতারবাড়ী ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে চালু করার কথা। এই তিনটি কেন্দ্রের জন্য প্রতিদিন কয়লা লাগবে প্রায় ৩০ হাজার টন। পুরোটাই আমদানি করতে হবে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৮ সাল নাগাদ প্রতিবছর প্রায় ছয় কোটি টন কয়লা আমদানি করতে হবে। এরপর তা আরও বাড়বে।

দেশে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বর্তমানে ৫৮টি। উৎপাদন ক্ষমতা পাঁচ হাজার ৭১৪ মেগাওয়াট। এরমধ্যে ডিজেলচালিত ১০টি, ফার্নেস অয়েলচালিত ৪৮টি। এগুলো চালাতে প্রতিদিন কমপক্ষে সাত হাজার টন ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল লাগে। ডিজেলভিত্তিক বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে সরকার প্রতি ইউনিট ক্রয় করে কমবেশি ২০ টাকা দরে। সেই বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করতে হয় গড়ে ৬ টাকা দরে। ফলে প্রতি ইউনিটে সরকারকে ১৪ টাকা ভর্তুকি গুনতে হয়। এ কারণে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হচ্ছে।

গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ৬৭টি। উৎপাদন সক্ষমতা ১০ হাজার ২২৫ মেগাওয়াট। গ্যাসের চাহিদা প্রতিদিন ২১০ কোটি ঘনফুট। এখন সরবরাহ করা হচ্ছে ১১০ থেকে ১৪০ কোটি ঘনফুট। বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা অনুসারে ২০৪১ সালে শুধু গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট। এজন্য দৈনিক ৬২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দরকার হবে। এর মধ্যে নিজস্ব উৎস থেকে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ২০০ কোটি ঘনফুট। বাকি ৪২০ কোটি ঘনফুট এলএনজি আমদানি করতে হবে। নিজস্ব উৎসের গ্যাস সরবরাহ যত কমবে আমদানির পরিমাণ তত বাড়বে।

দেশে আবিষ্কৃত পাঁচটি কয়লাক্ষেত্রে প্রায় ৭৯৬ কোটি টন কয়লা মজুদ আছে। এরমধ্যে শুধু বড়পুকুরিয়া খনি থেকে কয়লা তোলা হচ্ছে, যা দিয়ে দেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চলছে। নির্মাণাধীন তিন হাজার ৮০০ মেগাওয়াট কয়লাচালিত কেন্দ্রের জন্য দৈনিক প্রয়োজন হবে ৩৮ হাজার টন কয়লা। এ পরিমাণ কয়লা আমদানি করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা অনুসারে ২০৪১ সালে শুধু কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়াবে ২০ হাজার ১৯৫ মেগাওয়াট। এ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে বছরে কয়লা প্রয়োজন হবে ৭ সাত কোটি ১০ লাখ টন। এর মধ্যে নিজস্ব খনি থেকে সর্বোচ্চ এক কোটি ১০ লাখ টন কয়লা পাওয়া যেতে পারে। বাকি ছয় কোটি টন কয়লা আমদানি করতে হবে।

বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরও) দিয়ে দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার সক্ষমতা আছে। এছাড়া পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরসহ বিভিন্ন এলাকায় আরও কয়েকটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করার প্রক্রিয়া চলছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ কাছে স্বীকার করেন যে, আগামীতে দেশের প্রাথমিক জ্বালানি খাত অনেকটাই আমদানিনির্ভর হয়ে পড়বে। যেসব বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র আসছে, সেগুলো আমদানি করা কয়লা ও গ্যাসে চালাতে হবে। এতে খরচও বেশি হবে। জ্বালানি আমদানির ব্যয় একটি বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ খুঁজছেন। জ্বালানির সাশ্রয়ী ব্যবহারের ওপর জোর দিচ্ছেন। এতে ব্যবহার কমবে। ব্যয়ও কম হবে।

প্রতিমন্ত্রী স্বীকার করেন, সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হলে নিজেদের কয়লার দিকে নজর দিতে হবে। আমদানি কয়লার দর দুইশ’ ডলারের বেশি হয়ে থাকে। সেখানে দেশীয় কয়লা ১২০ ডলারের মধ্যে পাওয়া সম্ভব। কিন্তু দেশি কয়লা উৎপাদনে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এলএনজি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন তেলের থেকে সাশ্রয়ী। তারপরও এলএনজিতে প্রচুর ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে এলএনজি আমদানিতে ১৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এই অর্থবছরে ছয় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। আগামী অর্থবছর সাত থেকে আট হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া লাগবে। তাই গ্যাসের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। না হলে ভর্তুকি আরও বেড়ে যেত।

দেশে গ্যাসের অনুসন্ধান প্রসঙ্গে নসরুল হামিদ বলেন, সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে মাল্টি ক্লায়েন্ট সার্ভের কাজ শুরু হচ্ছে। এটা আরও কয়েক বছর আগে শুরু হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু কিছু জটিলতার কারণে তা হয়নি। তিনি বলেন, দেশের স্থলভাগেও তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে বাপেক্সের সক্ষমতায় ঘাটতি রয়েছে। তাদের আরও দক্ষ হতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

https://www.dailysangram.com/post/381696