সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষার্থীকে নকলে বাঁধা দেয়ায় পরীক্ষার হলে ঢুকে শিক্ষককে পেটানো মামলার সেই আসামি তোফাজ্জলকে গত তিনদিনেও গ্রেফতার করতে পারেনি থানা পুলিশ।
ঘটনারপর মামলা দায়ের করা হলেও তোফাজ্জলসহ তার সহযোগীরা অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে থানা পুলিশের নিকট অধরাই রয়ে গেছে।
এদিকে তোফাজ্জল ও তার সহযোগীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে টানা তৃতীয় দিনের মতো উপজেলার বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদাঘাট বাজারে বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী বিদ্যালয় চত্বরে মানববন্ধন সমাবেশ করেছেন বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা। উপজেলার বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী বিদ্যালয় চত্বর থেকে বুকে কালোব্যাজ ধারণ করে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
মিছিলটি হাসপাতাল, পুলিশ ফাঁড়ি, বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদাঘাট, কলেজরোড প্রদক্ষিণ শেষে বিদ্যালয়ে গিয়ে এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।
মানবন্ধন চলাকালে সমাবেশে শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্যে বলেন, গত রোববার সকালে বিদ্যালয়ের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা চলাকালে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে নকলে বাঁধা দেন বিদ্যালয়ের এক সহকারি শিক্ষক। তারপর ওই শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়া অন্যান্য শিক্ষার্থীকে হলে উত্যক্ত করছিল।
এসময় বাধ্য হয়ে ওই শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন ওই সহকারি শিক্ষক।
এদিকে ওই শিক্ষার্থী পরিবারের কাছে তাকে হল থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা জানানোর পর শিক্ষার্থীর নানা আবু তাহের বিদ্যালয়ে গিয়ে ওই শিক্ষককে ছাত্র-ছাত্রী, অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মচারীদের সামনে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন ও চাকুরিচুত্য করার হুমকি দেন।
উল্লেখ্য, আবু তাহের ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির একজন সদস্য।
এদিকে ঘটনাটি আবু তাহেরের ছেলে তোফাজ্জলের কানে এলে তিনি তার সহযোগীদের নিয়ে ফের বিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষার হলে ঢুকে শিক্ষক মাজেদুল ইসলামকে মারধর করে পরীক্ষায় অংশ নেয়া অন্যান্য শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতা টেনে ছিড়ে ফেলেন।
ঘটনাটি দেখে প্রধান শিক্ষক দৌড়ে এসে তোফাজ্জলকে বাঁধা দিলে তোফাজ্জল প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম দানুকেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং এক পর্যায়ে গুলি করে হত্যার হুমকিও প্রদান করেন।
এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসলে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে তোফাজ্জল তার সহযোগীদের নিয়ে পালিয়ে যান।
ঘটনার পরপরই আহত সহকারি শিক্ষককে রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পরদিন থানায় আবু তাহের, তোফাজ্জলসহ ৮ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
ওই ঘটনার জের ধরে রোববার ও সোমবার বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও একদিনের পরীক্ষা স্থগিতের পর ফের টানা তৃতীয়দিনের মত মঙ্গলবার বিদ্যালয় চত্বরে মানববন্ধন সমাবেশ থেকে বুকে কালোব্যাজ ধারণ করে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক সম্মিলিতভাবে তাহের, ছেলে তোফাজ্জল ও তার সহযোগীদের দ্রুত গ্রেফতার এবং তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান।
সমাবেশে শিক্ষার্থীদের আহ্বানে মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন, প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম দানু, সহকারি প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক, আফম মুস্তাকিম আলী পীর, মুক্তার হোসেন, শাহজাহান, শফিকুল ইসলাম শিকদার,মইনুল হক,লোকমান আহমদ, লোকমান হোসেন, অনির্বাণ হাওলাদার, স্বস্থি রঞ্জন সরকার, আরপিনা আক্তার, নুরেসাবা আক্তার, আহত শিক্ষক মাজেদুল ইসলাম , অফিস সহকারি কাজি জয়নাল আবেদীন প্রমুখ সহ শিক্ষার্থীগণ।
বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আফজালুল হক শিপলু অভিযোগ করেন, অতীতে আরও একাধিক শিক্ষক তোফাজ্জল গংদের হাতে বিদ্যালয়েই লাঞ্চনার শিকার হয়েছেন। তিনি নিজেও একজন ভুক্তোভোগী বলে জানান।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, তোফাজ্জল গংদের ইভটিজিংয়ের মুখে বিদ্যালয়ের এক মেধাবী ছাত্রীকে তার পরিবার অন্যত্র বাল্যবিবাহ দিতে বাধ্য হন। গত ৫ থেকে ৬ বছরে বিদ্যালয়ের শতশত ছাত্র শারীরিক নির্যাতন, হুমকি এবং অসখ্য ছাত্রী হেনস্তা, মোবাইল ব্ল্যাক মেইলিংয়ের শিকার হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম দানু ও সহকারি শিক্ষক মুক্তার হোসেন বলেন, তোফাজ্জল বিগত দিনে বাজার থেকে রহমত আলী ওরফে রমু নামের ব্যবসায়ীকে ধরে নিয়ে বাড়িতে গাছে বেঁধে মারধর করে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকার জনপ্রিয় চিকিৎসক ডা.আবদুস ছালামকে সে বাদাঘাট বাজারের হাসপাতাল রোডে চেম্বারে ডুকে তার লোকজন নিয়ে মারধর করে।
সিলেটের আদালতে এক কিশোরী অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা, সুনামগঞ্জ আদালতে ব্যবসায়ী অপহরণ ও মারধরের ঘটনায় বিচারাধীন দুটি মামলার আসামি এই তোফাজ্জল।
তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে বাধা দিতে গেলে তোফাজ্জল তার পরিবারের লোকজন এবং তার গ্রুপের সহযোগীদের নিয়ে প্রায়শই এলাকায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানোর একাধিক ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানান শফিকুল ইসলাম দানু।
তিনি বলেন, এভাবেই তোফাজ্জল জনমনে আতংক ও ত্রাসের রাজজ্ব কায়েম করে চলেছে।
মঙ্গলবার তাহিরপুর থানার ওসি মো. আতিকুর রহমান জানান, আসামিরা বর্তমানে এলাকা ছেড়েছে। তাদের গ্রেফতারে পুলিশি চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আবু তাহের মিয়া কিংবা তার ছেলের মোবাইল ফোনের সংযোগ বন্ধ থাকায় কোনোরুপ বক্তব্য নেয়া যায়নি।