১ জুলাই ২০১৯, সোমবার, ১২:৩২

এক চুলায় ৯২৫ দুই চুলায় ৯৭৫ টাকা

আবারও বাড়ানো হয়েছে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ হারে গ্যাসের দাম। আজ ১ জুলাই থেকে এই দাম কার্যকর হচ্ছে। এই দাম অনুযায়ী এক চুলার জন্য গ্রাহকদের ৭৫০ টাকার বদলে ৯২৫ টাকা এবং দুই চুলার গ্রাহকদের ৮শ’ টাকার বদলে ৯৭৫ টাকা করে গুনতে হবে।

গতকাল রোববার বিকাল ৪টায় সাংবাদিক সম্মেলনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এ সময় কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলামসহ অন্যান্য কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে এক চুলা ৯২৫ টাকা ও দুই চুলা ৯৭৫ টাকা করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বিইআরসিতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে গ্যাসের দাম গড়ে ১০২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। বাসাবাড়িতে এক চুলার বর্তমান দর ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৫০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৪০ টাকা করার আবেদন করা হয়েছে।

একই সঙ্গে বিদ্যুৎ, সিএনজি, সার, ক্যাপটিভ পাওয়ার, শিল্প-বাণিজ্যসহ সব খাতে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এ নিয়ে গত মার্চে গণশুনানির আয়োজন করা হয়। বিইআরসি আইন অনুসারে শুনানির ৯০ দিনের মধ্যে কমিশনকে সিদ্ধান্ত জানাতে হয়। জুনে সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে।

আইনে আরও উল্লেখ রয়েছে, কমিশন যদি মনে করে কোম্পানির কাছ থেকে আরও তথ্য নিতে হবে তাহলে সময়সীমা বাড়ানো যেতে পারে। তাই জুনে সময়সীমা ফুরালেও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত জুলাই মাসে নেয়া হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে গত বছরের জুনেও গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে গণশুনানি হয়েছে। কিন্তু সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায় তখন দাম বাড়ানোয় সরকারের সাড়া মেলেনি। তাই গত ১৬ অক্টোবর সরকারকে তিন হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়ার সুপারিশ করে গ্যাসের দাম না বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বিইআরসি।

জ্বালানি বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম অনেক বেশি। আর দেশে গ্যাসের চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন। এ হিসাবে চাহিদা অনুযায়ী এলএনজি আমদানি করতে হলে সরকারকে আরও অনেক বেশি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। কাজেই গ্যাসের দাম বাড়ানো ছাড়া সরকারের সামনে কোনো বিকল্প নেই।

পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা বলেন, এতদিন আমদানি কম হওয়ায় সরকারের ওপর লোকসানের চাপ বেশি হয়নি। এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে এলএনজি আমদানিতে সম্পূরণ শুল্ক, কাস্টমস ডিউটি ও অগ্রিম বাণিজ্য ভ্যাট প্রত্যাহার করায় গ্যাসের দাম অপরিবর্তিত ছিল। আমদানি ১০০০ এমএসিএফডি ছাড়ালে দাম বাড়ানোর তোড়জোড় আরও আগে থেকেই শুরু হতো।

কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণের পর আগস্টে বাংলাদেশ এলএনজি যুগে প্রবেশ করে। কাতার থেকে এলএনজি আমদানি করে ওই টার্মিনালের মাধ্যমে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে দেয়া হচ্ছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সর্বোচ্চ ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার টার্গেট ছিল সরকারের। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় সরকার এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দিচ্ছে জাতীয় গ্রিডে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের এক সদস্য বলেন, তারা গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে জুলাইয়ে দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে। কমিশনের ওই সদস্য জানান, শুনানিতে পাওয়া মতামত যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাব করা হয়েছে।
দাম বাড়ানোর বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, গ্যাস খাতে লোকসান কমাতে হলে প্রথমে চুরি ঠেকাতে হবে। পাশাপাশি সাগর ও স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর জোর দিতে হবে। দেশীয় গ্যাস পেলে কম টাকায় সরবরাহ করা যাবে। এলএনজি আমদানি করে গ্যাস-সংকট দূর করা যাবে না।

 আরও জানানো হয়, গ্যাসের গড় দাম ঘনমিটারে ৭ দশমিক ৩৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৮০ টাকা করা হয়েছে। প্রতি ঘনমিটার বিদ্যুতের জন্য গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ দশমিক ৪৫ টাকা, ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ উৎপাদন (ক্যাপটিভ পাওয়ার) ব্যবহারের জন্য প্রতি ঘনমিটার ১৩ দশমিক ৮৫ টাকা, সার কারখানায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে একই ইউনিটের দাম পড়বে ৪ দশমিক ৪৫ টাকা। এছাড়াও শিল্পে ব্যবহারের জন্য প্রতি ঘনমিটিার ১০ দশমিক ৭০ টাকা, চা বাগানে ব্যবহারের জন্য প্রতি ঘনমিটিার ১০ দশমিক ৭০ টাকা, বাণিজ্যিক খাতে হোটেল-রেস্টুরেন্টে ২৩ টাকা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ১৭ দশমিক ০৪ টাকা ও সিএনজিতে ৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, প্রতি ঘনমিটার সিএনজির মূল্যহারের মধ্যে ফিড গ্যাসের মূল্যহার ৩৫ টাকা এবং অপারেটর মার্জিন ৮ টাকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের আবেদনের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে গিয়ে জানায়, সরকার জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এলএনজি আমদানি করছে। এখন প্রতিদিন ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। বছরের মাঝামাঝি সময়ে যা বেড়ে দাঁড়াবে অন্তত ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটে। বাড়তি দরে এই গ্যাস কিনে কম দামে সরবরাহ করা হবে। এতে করে জ্বালানি খাতে বিশাল ঘাটতি তৈরি হবে। যে কারণে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে কোম্পানিগুলো। 

তারা বলছে, আমদানি করা এলএনজির প্রতি হাজার ঘনফুটের মূল্য ১০ ডলার বা ৮২০ টাকা (প্রতি ডলার ৮২ টাকা হিসাবে), অন্যদিকে দেশে উৎপাদিত প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ১২ টাকা ১৯ পয়সা। দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্র থেকে দৈনিক ২ হাজার ৭১৬ মিলিয়ন ঘনফুট এবং আমদানি করা এলএনজি ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহের হিসাবনিকাশ করে এবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই বছরের মার্চ ও জুলাই থেকে দুই ধাপে তা কার্যকর করার কথা থাকলেও মার্চে দাম কার্যকর হয়। আর জুলাই মাসের দাম হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত করা হয়।

https://www.dailysangram.com/post/381064