৩০ জুন ২০১৯, রবিবার, ১:২১

সংশোধিত অর্থবিল পাস : প্রত্যাশিত ছাড় মেলেনি

জমি কিনে কালো টাকা সাদা নয় * শিল্পের কাঁচামালে আগাম কর প্রত্যাহার হয়নি * ব্যবসা ও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে-মির্জ্জা আজিজ * আজ জাতীয় বাজেট পাস * ভ্যাট ও পুঁজিবাজারে আংশিক ছাড় * সঞ্চয়পত্রের উৎসে কর কমেনি * বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে টিআইএন জমায় ছাড় নেই

ভ্যাট ও পুঁজিবাজারে আংশিক ছাড় দিয়ে জাতীয় সংসদে অর্থবিল ২০১৯ পাস করা হয়েছে। শনিবার জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে এ বিল পাস হয়। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে আরোপিত করের মধ্যে যেসব খাতে ছাড় চেয়েছিলেন ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা সেসব খাতে কোনো ছাড় মেলেনি।

সামান্য কিছু সংশোধন করে প্রস্তাবিত অর্থ বিলই পাস হয়েছে। অধিকাংশ খাতেই প্রস্তাবিত করের হার বহাল রাখা হয়েছে। ফলে বাড়তি করের চাপে পড়তে হবে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের। এ চাপে মূল্যস্ফীতির হারও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

সংশোধিত অর্থবিলের মাধ্যমে কালো টাকায় জমি কিনে সাদা করার সুযোগ প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক, ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট ও জমি কেনা এবং ভবন নির্মাণে কালো টাকা বিনিয়োগ করে সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল।

আগে থেকেই নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ ছিল। এ অর্থবিল পাস হওয়ার পর এখন তিনভাবে কালো টাকা সাদা করা যাবে। প্রথমত, নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে। দ্বিতীয়ত, এলাকাভেদে নির্দিষ্ট অংকের কর দিয়ে ফ্ল্যাট কিনলে। তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক বিনিয়োগের মাধ্যমে।

এক্ষেত্রে বিনিয়োগকৃত অর্থের ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। এই তিন পদ্ধতিতে কালো টাকা সাদা করলে পরবর্তীতে এনবিআর অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করবে না।

এছাড়া পাস হওয়া অর্থবিলে মধ্যবিত্তের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর করের হার কমানো হয়নি। শিল্প উদ্যোক্তাদের অন্যতম দাবির মুখেও প্রত্যাহার করা হয়নি শিল্পের কাঁচামালের ওপর ৫ শতাংশ আগাম কর। সব মহলের জোরালো দাবির পরও বাড়ানো হয়নি করমুক্ত আয়ের সীমা।

ব্যবসায়ীদের বহুল প্রত্যাশিত কর্পোরেট করহার রয়েছে অপরিবর্তিত। বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) জমা দেয়ার বিধান বহাল রাখা হয়েছে। বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় আরোপিত ভ্যাটের হার রয়েছে অপরিবর্তিত। অর্থাৎ বাজেট ঘোষণার সময় যে প্রস্তাবিত অর্থবিল পেশ করা হয়েছিল সেটিই আংশিক ছাড় দিয়ে পাস করা হল। আজ রোববার আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পাস করা হবে। আগামীকাল সোমবার থেকে নতুন বাজেট কার্যকর হবে।

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার পর বিভিন্ন মহলের আলোচনা সমালোচনা ও দাবিকে বিবেচনায় নিয়ে অর্থবিল পাসের আগে বেশ কিছু সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়। এর আলোকে অর্থবিল সংশোধন করে তা পাস করা হয়। এবার বাজেট ঘোষণার পর করের বিভিন্ন খাতে ভ্যাট ও করের আওতা বাড়ানোর ফলে সরকার ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাজেট পাস হওয়ার আগে তা সংশোধন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। কিন্তু পাস হওয়া অর্থবিলে এর কোনো প্রতিফলন দেখেননি সংশ্লিষ্টরা।

এবারের বাজেটের মাধ্যমেই বহুল আলোচিত নতুন ভ্যাট আইন সংশোধিত আকারে বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। অর্থবিল পাসের মাধ্যমে এর কাঠামো চূড়ান্ত হয়েছে। আগামীকাল ১ জুলাই নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন থেকেই এটি কার্যকর হবে। এর কিছু অংশ বাজেট ঘোষণার দিন থেকেই কার্যকর করা হয়েছে।

এদিকে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ভ্যাট আদায়ের কাঠামোগত প্রস্তুতি সম্পন্ন না করেই নতুন আইন বাস্তবায়ন হলে মাঠপর্যায়ে সমস্যা দেখা দেবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো সমস্যা হলে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের মাধ্যমে সমাধান করা হবে। বাজেটে ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হলে তার সমাধানের জন্য এনবিআর কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট ১৩ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কিন্তু অর্থমন্ত্রী অসুস্থ থাকায় বাজেট বক্তৃতার সম্পূর্ণ অংশ পড়তে পারেননি। বাকি অংশ প্রধানমন্ত্রী উপস্থাপন করেন।

শনিবারও অর্থমন্ত্রী অসুস্থ থাকায় তার পক্ষে অর্থবিলের সংশোধনী প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিলের ওপর বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা ছাঁটাই প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। কিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়। এরপর তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, অর্থবিলের মাধ্যমে বাজেটের আইনি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে যা ছিল, চূড়ান্তভাবেও মোটামুটি তাই রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি।

ফলে মধ্যবিত্তের ওপর করের চাপ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েই গেল। তিনি বলেন, করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। অপরিবর্তিত রয়েছে কর্পোরেট কর। এতে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছিল। মানুষের প্রত্যাশা ছিল এটি কমতে পারে, তা কমেনি; বরং বহাল রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ভ্যাটের কারণে বেশ কিছু পণ্যের দাম বাড়বে। কয়েকটি পণ্যের আমদানি শুল্ক ও সম্পূরক শুল্কের প্রভাবে আমদানি ব্যয় বাড়বে। এতে ব্যবসা এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে।

মির্জ্জা আজিজ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে দুধের ওপর আমদানি শুল্ক বাড়ানো হয়েছিল। মানুষের প্রত্যাশা ছিল এটা কিছুটা কমবে। কিন্তু এটি আগের মতোই রয়েছে।

তিনি বলেন, কয়েক বছর থেকে বাজেটে একটি বিষয় লক্ষ্য করছি; যা হল- প্রস্তাবিত বাজেটে যা থাকে, সংশোধিত বাজেটেও তা প্রায় হুবহু বাস্তবায়ন করা হয়। এবারও তাই হয়েছে। ফলে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আগে যে উদ্বেগ ছিল, এখনও সেটিই রয়ে গেছে।

বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, আমরা এখনও আশাবাদী। বাজেটে তৈরি পোশাক খাতের যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো নিয়ে পরে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করব। কাঁচামালে আগাম কর বহাল রাখা হয়েছে, এটি শিল্পে সুফল বয়ে আনবে না।

এটি প্রত্যাহার করতে হবে। তাছাড়া রফতানি প্রণোদনায় উৎসে কর, রফতানি আয়ের বিপরীতে উৎসে কর কমানো হয়নি। এগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে বলে আশাবাদী তিনি।

সংসদে পাস হওয়া অর্থবিলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর রিজার্ভ তহবিলের ওপর ও বোনাস শেয়ারের ওপর আরোপিত করে আংশিক ছাড় দেয়া হয়েছে। এছাড়া ভ্যাটের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেয়া হয়েছে। এর বাইরে প্রায় সব খাতেই কর কাঠামো অপরিবর্তিত রয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি অর্থ রিজার্ভ তহবিলে থাকলে তার ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হয়েছিল। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এ কর প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছিল।

তারা বলেছিলেন, এ কর প্রত্যাহার করা না হলে কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেননা তখন কোনো কোম্পানি রিজার্ভ তহবিলে অর্থ জমা রাখবে না। এতে কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে।

একই সঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো বোনাস শেয়ার দিলে যে পরিমাণ অর্থের বিপরীতে বোনাস শেয়ার দেবে তার বিপরীতে ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে। এটিও প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা।

কিন্তু পাস হওয়া অর্থবিলে এ দুই খাতের কর পুরোপরি প্রত্যাহার করা হয়নি। আংশিক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি কোনো অর্থবছরে করপরবর্তী নিট মুনাফার সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ রিটেইন আর্নিং, ফান্ড, রিজার্ভে স্থানান্তর করতে পারবে।

এর ওপর কোনো কর দিতে হবে না। বাকি কমপক্ষে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে প্রতি বছর রিটেইন আর্নিং ও রিজার্ভসহ স্থানান্তর করা মোট অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।

বোনাস শেয়ারের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, কোম্পানি যে পরিমাণ বোনাস শেয়ার দেবে, সেই পরিমাণ নগদ লভ্যাংশও দিতে হবে। নগদ লভ্যাংশের চেয়ে বেশি বোনাস দেয়া হলে সেক্ষেত্রে সব বোনাস শেয়ারের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর প্রদান করতে হবে।

অর্থবিল পাসের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এসব বিষয়ে ব্যবসায়ী সমাজের কেউ কেউ আপত্তি জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বোনাস শেয়ার দিতে না পারলে চাহিদা অনুযায়ী পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে পারবে না।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের এরূপ মন্তব্যের পাশাপাশি পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ভাবতে হয়। কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরাও নগদ লভ্যাংশ প্রত্যাশা করে।

শেয়ারবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে।

অর্থবিল পাসের মাধ্যমে বাজেটে শেয়ারবাজারের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছেন স্টক এক্সচেঞ্জের নেতারা। এ ব্যাপারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. রকিবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বাজেটে শেয়ারবাজারে নগদ লভ্যাংশকে উৎসাহিত করা হয়েছে।

এছাড়াও কোম্পানির মূল আয় থেকে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ রিজার্ভে এবং ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে বলা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা এজন্যই আন্দোলন করছি, যাতে বিনিয়োগকারীরা ভালো লভ্যাংশ পান।

ভ্যাটের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু পরিবর্তনের সুপারিশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে একাধিক মূসক হার প্রচলন করা হচ্ছে। তবে ১৫ শতাংশের নিচের হারগুলোতে উপকরণ কর রেয়াত নেয়ার সুযোগ না থাকায় ব্যবসায়ীরা হ্রাসকৃত হারের পরিবর্তে উপকরণ কর গ্রহণ করে ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদানে সুযোগ সৃষ্টির জন্য দাবি করেছেন। হ্রাসকৃত হারের পাশাপাশি কেউ চাইলে যেন ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে রেয়াত পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন- আইনে সে বিধান বহাল রয়েছে।

দেশে তৈরি সুতার ওপর ৫ শতাংশ মূসকের পরিবর্তে প্রতি কেজিতে ৪ টাকা করে সুনির্দিষ্ট মূসক আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশীয় শিল্পের স্বার্থে, প্রণোদনা প্রদানে প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে শুল্কহার হ্রাস-বৃদ্ধি করা হয়েছে।

সেক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে দেশের কাগজ ও গ্যাস উৎপাদনকারী শিল্পসহ অন্যান্য শিল্প যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দেশীয় মুদ্রণ শিল্পে প্রণোদনা ও বন্ড ব্যবস্থার অপব্যবহার রোধ করতে দেশে উৎপাদন হয় না এমন পেপারগুলোর শুল্ক হার যৌক্তিক করা হবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানিকৃত কতিপয় পণ্যের শুল্ক হার পুনর্নির্ধারণ করা হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্রের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। এটি ৫ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখার জোর দাবি ছিল সংশ্লিষ্টদের। এটি অর্থবিল পাসের সময় কমানো হয়নি। ১০ শতাংশই অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে শিল্পের কাঁচামালের ওপর ৫ শতাংশ আগাম কর আরোপ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এ কর প্রত্যাহারের জোর দাবি করা হয়েছিল কিন্তু বিল পাসের সময় তা করা হয়নি।

করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর জন্য সব পক্ষের জোর দাবি ছিল কিন্তু তা বাড়ানো হয়নি। একই সঙ্গে কমানো হয়নি কর্পোরেট কর।

বিদ্যুতের নতুন সংযোগ নেয়ার ক্ষেত্রে টিআইএন সনদ দেয়ার নিয়ম করা হয় প্রস্তাবিত বাজেটে। এটি তুলে দিতে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে। ব্যবসায়ীরাও এ দাবি করেছেন; কিন্তু তা প্রত্যাহার করা হয়নি। ফলে এখন থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে টিআইএন সনদ দেখাতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর সংসদে বাজেট সমাপনী বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের সুফল ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, এ বাজেটটি ফাউন্ডেশন এই বছরের; কিন্তু এর ফল ২০৪১ সাল পর্যন্ত অর্জন করতে পারব। সেভাবেই আমরা বাজেটটি প্রণয়ন করেছি।

আমি বিশ্বাস করি, ২০২৪ সালে প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে পা রাখবে। ২০২৪ সাল থেকে শুরু করে ২০৩০ সাল পর্যন্ত এ বাজেটের ফলাফল পাওয়া যাবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি মালয়েশিয়ার দিকে তাকাই? ৩০ বছরের মধ্যে মালয়েশিয়া চলে গেছে তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে, কাঙ্ক্ষিত জায়গায়।

চায়নার অবস্থা কী ছিল? চায়না সবচেয়ে দরিদ্র দেশ ছিল। চায়নায় কোনো খাবার ছিল না। চায়না আজকে পৃথিবীর এক নম্বর দেশ। যদি চায়না পারে, মালয়েশিয়া পারে, সাউথ কোরিয়া পারে- তাহলে বাংলাদেশ অবশ্যই পারবে। গত দশ বছরে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নিরলস পরিশ্রম করে আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশকে সেই জায়গায় নিয়ে এসেছি।

ট্রেন একবার যখন ট্র্যাকের উপর উঠে যায়, তখন আর ট্রেন পেছনের দিকে যায় না। কোনো জাতি নেই আমাদের এখান থেকে গতিচ্যুত করতে পারে। আমরা এগোবই, এগোবই ইনশাআল্লাহ। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা বেশি ঋণ করি কিনা? আমাদের ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৫ শতাংশ।

মালয়েশিয়ায় এর চেয়ে বেশি। ঋণের পরিমাণ হিসাব করা হয় জিডিপি দিয়ে। আমরা ঋণ নেই চায়নার কাছ থেকে। চায়নার ঋণের পরিমাণ জিডিপির ২৮৪ শতাংশ। ওরা আমাদের ঋণ দেয়। ২০৩০ সাল নাগাদ আমরা আর ঋণ নেব না; আমরা ঋণ দেব ইনশাআল্লাহ। সারা বিশ্বের মানুষকে ঋণ দেব আমরা।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/193458