২৯ জুন ২০১৯, শনিবার, ৭:৩৬

সুনামগঞ্জে ভারী বর্ষণে প্লাবিত নিম্নাঞ্চল

টানা দুই দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সীমান্ত ঘেরা সুরমা নদীসহ সীমান্তের নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, দিরাই, শাল্লাসহ হাওরের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় জেলার নদ-নদীর পানি আরো বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জানানো হয়েছে জেলার কোথাও বন্যাপরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। তবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

জানা গেছে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গত কয়েক দিনের ক্রমাগত ভারী বর্ষণের ফলে সুনামগঞ্জ জেলার অধিকাংশ নদ-নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সভায় জানানো হয় গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৪ সেমি পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকেলে সুরমা নদীর পানি ৭:২৪ সেমি রেকর্ড করা হয়েছে, যা বিপদসীমা হতে ৪.০ সেমি উপরে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৫০.০০ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পাউবো সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী আগামী ২৪ ঘণ্টায় নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পাবে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হলেও বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের সভাপতিত্বে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: হারুন অর রশীদ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া, জেলা প্রাণিস¤পদ কর্মকর্তা ডা: মো: হাবিবুর রহমান খান, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাকারিয়া মোস্তফা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কাশেম, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ফরিদুল হক প্রমুখ। সভায় উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা আহ্বানের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া সব কর্মকর্তা-কর্মচারী সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে থাকার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, এখনো ফসলের কোনো ক্ষতি হয়নি। মৎস্য অধিদফতর জানিয়েছে হাওরে প্রাকৃতিক মাছ বৃদ্ধির জন্য পানির প্রয়োজন। কিন্তু এখন পর্যন্ত হাওরে পর্যাপ্ত পানি হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন, উজানের ঢল ও বৃষ্টিতে পানি বাড়ছে। তবে এখনো বন্যা পরিস্থিতির মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়নি। বড় বন্যার আশঙ্কা কম জানিয়ে তিনি বলেন, পানি আরো কিছু বাড়তে পারে।

কুলাউড়ার বরমচাল রেলসেতু ঝুঁকিতে
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কুলাউড়ার বরমচাল বড়ছড়া রেলসেতুর বিপদসীমার কাছাকাছি দিয়ে প্রবল স্রোতে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে ব্রিজটি। ফলে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি আড়াইটা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টা বরমচাল স্টেশনে আটকা পড়ে। এতে দুর্ভোগে পড়েন ট্রেনের শতশত যাত্রী। ঝুঁকি থাকায় ট্রেন ছাড়েননি কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার শফিকুল ইসলাম। বরমচাল বড়ছড়া ব্রিজে আন্তঃনগর উপবন ট্রেন দুর্ঘটনার পাঁচ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও ছড়ায় পড়ে থাকা বগিটি উদ্ধার হয়নি। ফলে ছড়ায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পুনরায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

টানা বৃষ্টির পানির প্রবল স্রোতে বড়ছড়া ব্রিজের নিচ থেকে মাটি সরেছে এমন ধারণা বরমচাল স্টেশন মাস্টারের। এ ছাড়াও শ্রীমঙ্গল, শমশেরনগর এলাকায় রেললাইনে পানি উঠেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় বড়ছড়া ব্রিজ ও রেলপথ দিয়ে ট্রেন চলতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

বিষয়টি মাস্টার শফিকুল ইসলাম ঢাকা কন্ট্রোল রুমকে জানিয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে পিডব্লিউডির ক্লিয়ারেন্স ছাড়া ট্রেন ছাড়া যাবে না। তবে পিডব্লিউডির কাউকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান স্টেশন মাস্টার।

কুলাউড়া স্টেশনে কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার মুহিবুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনায় পতিত একটি বগি আড়াআড়িভাবে থাকায় পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় পানি উথলে উঠে। এতে এলাকাবাসী ট্রেন চলাচলে আপত্তি জানালে কিছু সময়ের জন্য পাহাড়িকা ট্রেন আটকানো ছিল। পরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ট্রেন ছাড়েন। তিনি আরো বলেন, দু’টি বগির মধ্যে একটি তুললেও বৃষ্টির কারণে অপরটির উদ্ধার কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/421228