২৮ জুন ২০১৯, শুক্রবার, ৫:৪২

বিদ্যুৎ সংযোগে টিআইএন নিয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টাচ্ছে

কাল পাস হচ্ছে অর্থবিল

বিদ্যুৎ সংযোগে টিআইএন বাধ্যতামূলকের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হচ্ছে। নতুন সংযোগ নিতে ও পুরনো গ্রাহকদের বিদ্যুৎবিল দিতে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে ২০১৯-২০ অর্থবছরের নতুন বাজেটে। আগামীকাল শনিবার অর্থবিল অনুমোদনের সময় এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হবে বলে জানা গেছে। এর আগে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য গত সোমবার একটি ডিও লেটার (আধা সরকারি) অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠান বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দীপু। ডিও লেটারে তিনি লিখেছেন, দেশের ৯৩ ভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎসেবার আওতায় এসেছে। দেশে এখন ৩ কোটি ৩৪ লাখ বিদ্যুৎগ্রাহক। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) গ্রাহকসংখ্যা ২ কোটি ৬৪ লাখ। এই গ্রাহকদের বেশির ভাগই দরিদ্র। এদের পক্ষে টিআইএন করা কষ্টদায়ক ও অমানবিক বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ সংযোগে টিআইএন বাধ্যতামূলকের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার। এ ক্ষেত্রে সব ধরনের বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে টিআইএন জমাদান সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হবে নাকি, শুধু পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের জন্য তা বাদ দেয়া হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রাষ্ট্রের শীর্ষপর্যায়ের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

বর্তমানে বিদ্যুতের সংযোগ পেতে আবেদনকারীর দুই কপি ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের ফটোকপি, জমির দলিল বা লিজের ফটোকপি, ১০ তলার বেশি হলে অগ্নিনির্বাপণ সনদ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মধ্যে হলে ভবন নির্মাণের বৈধ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের ফটোকপি ও দুই কিলোওয়াটের বেশি গ্রাহকের বিদ্যুৎ লোড হলে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের সনদ জমা দিতে হয়।

এ দিকে, বাজেটে প্রস্তাবিত কর খাতে কী পরিবর্তন হবে সে বিষয়ে পরামর্শ নিতে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থসচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এবং এনবিআর চেয়ারম্যান বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করা হয়েছে। এমনকি সংসদেও এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য বলা হয়েছে। তাই সরকার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর বর্ধিত উৎসে কর প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে। তবে এ নিয়ে এখনো দু’টি চিন্তা রয়েছে। এর একটি হলো, বাজারে প্রচলিত সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের ওপর থেকে বর্ধিত কর প্রত্যাহার করা হবে। অপরটি হলো, শুধু পরিবারভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ওপর তা প্রত্যাহার করা হবে। এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এ সিদ্ধান্তের ভার প্রধানমন্ত্রীর হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে রিটেইন আর্নিং ও রিজার্ভ ৫০ শতাংশের বেশি হলে ১৫ শতাংশ কর ধার্য করার কথা বলা হয়। একই সাথে বাজেটে স্টক ডিভিডেন্ডের পরিবর্তে ক্যাশ বা নগদ ডিভিডেন্ড প্রদানকে উৎসাহিত করতে কোনো কোম্পানি স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করলে এ লভ্যাংশের ওপর ১৫ শতাংশ করারোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই সিদ্ধান্তগুলো প্রত্যাহার করা হতে পারে।
এ ছাড়া মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে অগ্রিম কর প্রত্যাহার করা হচ্ছে। নতুন ভ্যাট আইনে এবার অগ্রিম ব্যবসায় ভ্যাটের (এটিভি) পরিবর্তে ৫ শতাংশ আগাম কর (এটি) বসানো হয়েছে। অর্থাৎ মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হবে। এতে দেখা গেছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার পণ্যে এ আগাম কর বসেছে। ভ্যাট রিটার্ন দিয়ে এই আগাম করের টাকা ফেরত নিতে হবে। এই টাকা ফেরত পাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে ব্যাংকের সুদ গুনতে হবে ওই ব্যবসায়ীকে। ফলে আমদানি পর্যায়ে এসব যন্ত্রপাতি ও পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। আর এর সরাসরি প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপর। বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট পাসের সময় তা পরিবর্তন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আগামীকাল অর্থবিল সংসদে পাস করার সময় এই পরিবর্তনগুলো করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।