২৮ জুন ২০১৯, শুক্রবার, ৫:৪১

একের পর এক নৃশংস ঘটনায় উদ্বেগ-আতঙ্ক

একের পর এক নৃশংস ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে জনমনে। ভুক্তভোগী অনেকেই রয়েছেন যারা ভয়ে মুখ খুলতেও সাহস পাচ্ছেন না। অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা চেয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। অপর দিকে দুর্বৃত্তরা একের পর এক নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েও পার পেয়ে যাচ্ছে। ফলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আরো বেড়ে যাচ্ছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের এই উদ্বেগ আতঙ্কের কথা উল্লেখ করেছেন। মানবাধিকার কর্মীরা বলেছেন, এভাবে এক একটি ঘটনা ঘটছে; আর অন্যগুলো চাপা পড়ে যাচ্ছে। অপরাধীরা শাস্তি পাচ্ছে না।
বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে শাহনেয়াজ রিফাত শরীফ (২৫) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় তার স্ত্রী আয়শা দুর্বৃত্তদের বাধা দেয়ার অনেক চেষ্টা করেন। চোখের সামনেই দুর্বৃত্তরা তার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় শত শত লোক দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখছিলেন। আর যে স্থানে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সেটি পুলিশের সিসি ক্যামেরার আওতায়। স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় রিফাত শরীফকে খুন করা হয়। যে বিষয়টি দেশজুড়ে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এবং দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে অনেকেই সরব। বরগুনার পুলিশ সুপার মো: মারুফ হোসেন সাংবাকিদদের বলেছেন, রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় চন্দন নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

নৃশংস এই ঘটনায় অনেকেই আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন। তারা এও বলেছেন, দুর্বৃত্তদের ঠিকঠাক শাস্তি না হওয়ার কারণে এ ধরনের নৃশংস ঘটনা ঘটানোর দুঃসাহস পাচ্ছে তারা।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত এ ঘটনাটিকে দুঃখজনক আখ্যায়িত করে বলেছেন, সমাজটা যাচ্ছে কোথায়? গণমাধ্যমে আসা খবরে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস। এরপর আদালত গতকাল বৃহস্পতিবার উল্লিখিত মন্তব্য করেন।

আদালত বলেন, ‘প্রকাশ্য রাস্তায় মানুষটাকে দুর্বৃত্তরা মারল। একজন ছাড়া কেউ এগিয়ে এলো না। বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমন ছিল না। নৃশংস দৃশ্যটি অনেক ভিডিও করল, কিন্তু কেউ ওই ব্যক্তির সাহায্যার্থে এগিয়ে এলো না। এটি জনগণের ব্যর্থতা। তাই এই সামাজিক সচেতনতা তৈরি করবে কে? দাঁড়িয়ে দেখেছে, কেউ প্রতিবাদ করল না। পাঁচজন মানুষ অন্তত এগিয়ে এলে হয়তো দুর্বৃত্তরা সাহস পেত না। হয়তো তারা (দুর্বৃত্তরা) ক্ষমতাবান, হয়তো মানুষ ভয়ে এগিয়ে আসেনি।’

বখাটের ছুরিকাঘাতে সাত দিন মৃত্যুর যন্ত্রণা সহ্য করে ঠাকুরগাঁওয়ের নার্স তানজিনা আক্তার (২০) গতকাল সকালে মারা যান। গত ২০ জুন ঠাকুরগাঁও শহরের মাদরাসাপাড়া এলাকায় জীবন নামে এক বখাটের ধারালো ছুরির আঘাতে আহত হন তানজিনা আক্তার।

গত বুধবার রাতে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় মা ও ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহতরা হলেনÑ ছেলে আমজাদ হোসেন মুকুল (৫৫) ও তার মা রিজিয়া খাতুন (৯৩)।

ব্ল্যাকমেইলিং করে ২০ জনেরও বেশি ছাত্রীকে চার বছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি কান্দাপাড়া মাদরাসা রোডের বেসরকারি অক্সফোর্ড স্কুলের দুই শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষকদের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ এবং ক্যামেরা তল্লাশি করে ছাত্রীর সাথে ধারণকৃত লোমহর্ষক চিত্র জব্দ করে র্যাব। গ্রেফতারকৃত দুই শিক্ষক হলো : ওই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক জুলফিকার ওরফে রফিকুল ইসলাম (৫৫) এবং সহকারী শিক্ষক আরিফুল ইসলাম সরকার ওরফে আশরাফুল (৩০)। র্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আলেপ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, ‘অক্সফোর্ড স্কুলের শিক্ষক ছাত্রীদের যৌন হেনস্তা করেছে এমন খবরের ভিত্তিতে স্কুলে এসে অভিযুক্ত এক শিক্ষককে আটক করি। তার মোবাইলে যে সব ডকুমেন্টস পাই তা অত্যন্ত ভয়ানক।

এভাবেই একের পর এক নৃশংস ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় মানুষ এখন চরম উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা সোহেল বলেছেন, তাদের অনুসন্ধানে তিনটি কারণ উঠে এসেছে; যার জন্য এমন নৃশংস ঘটনা ঘটেই চলছে। কারণগুলো হলো রাজনৈতিক সঙ্কট, দলীয় ও রাজনীতিকীকরণ এবং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন। একটা তরুণ কতটা নৃশংস হলে এভাবে প্রকাশ্যে শত শত লোকের চোখের সামনে একজনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করতে পারে, তা বুঝতে হবে। আমাদের জন্য এটা যেমন লজ্জার তেমনি ভয়ের। এসব ঘটনার কোনো প্রতিকার না হওয়ায় এমন নৃশংস ঘটনা ঘটছে; আরেকটি ঘটনা চাপা পড়ে যাচ্ছে। মানুষ আগেরটা ভুলে যায়। তিনি বলেন, আমরা হতাশ। মর্মবেদনায় ভুগছি।

মানবাধিকার কর্মী রেজা বলেছেন, এভাবে একের পর এক ঘটনায় মানুষ এখন চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন। মানুষ নিজেকে মোটেই নিরাপদ মনে করছেন না। কখন কি ঘটে যায় সেই আশঙ্কায় সবাই তটস্থ। 

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/421036