১৩ মে ২০১৯, সোমবার, ১২:০২

চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম

আমদানি ফলের দাম দ্বিগুণ

রমজান ঘিরে বাজারে ফলের বাড়তি চাহিদা রয়েছে। কিন্তু রমজানের আগ মুহূর্তে ফণীর কারণে এসব ফল সরবরাহে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটে। এর প্রভাবে ফলের দাম বেড়েছে দাবি ব্যবসায়ীদের

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা আমদানীকৃত ফল আপেল, মাল্টা ও আঙুরের দাম বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় আমদানি কম হওয়া এবং ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ চলাচল তিন দিন বন্ধ থাকার প্রভাবে এসব ফলের দাম বেড়ে গেছে। পাইকারি বাজারে কিছুটা বাড়লে এর দ্বিগুণ লাভে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। পাইকারিতে তিন শ টাকায় কেনা আঙুর কেজিতে বিক্রি হচ্ছে সাড়ে চার শ টাকা।

চট্টগ্রাম ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি মোহাম্মদ আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, কয়েক মাস ধরে লোকসান দিতে গিয়ে অনেক ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে এসব ফল আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন; অনেকেই আবার আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে করে বাজারে জোগান কমে গেছে কিন্তু রমজান ঘিরে বাজারে চাহিদা বেড়েছে।

তিনি বলেছেন, এপ্রিল মাসেও প্রতি কার্টন (১৫ কেজি) মাল্টা বিক্রি করেছি ১৫০০ টাকায় কিন্তু বন্দর পর্যন্ত পৌঁছতে খরচ হয়েছে সাড়ে ১৬০০ টাকা। অর্থাৎ কার্টনপ্রতি দেড় শ টাকা কমে বিক্রি করেছি। এখন সেই মাল্টা আমরা কার্টনপ্রতি ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি করছি। চাহিদা কমলে আর আমদানি বাড়লে দেখা যাবে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ফলবাহী বিশেষায়িত কনটেইনারগুলো দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন থেকেই জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। ৯২ শতাংশ শুল্ককর পরিশোধ করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এসব কনটেইনার বন্দরে থাকার সময়ই বেশির ভাগ আমদানিকারক বিক্রি করে দেন। আবার অনেকে ফলমন্ডি বাজারে সরবরাহ দিয়ে থাকেন। আর এসব ফল চট্টগ্রাম বন্দর হয়েই দেশজুড়ে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে সেই চট্টগ্রাম বন্দরে সব ধরনের জাহাজ চলাচল তিন দিন বন্ধ ছিল; এতে বহির্নোঙরে জাহাজজট লেগে যায়। এসব জাহাজে অন্যান্য পণ্যের পাশাপাশি ফলবাহী কনটেইনারও ছিল। এই জাহাজ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো ১৫ দিন সময় লাগবে বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম।

জাহাজজটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ফল সরবরাহ কমে গেছে। এতে বাজারে সরবরাহ সংকটেরও সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে ফল আমদানিকারক আল মদিনা ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার নাজিম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, রমজান ঘিরে বাজারে এসব ফলের বাড়তি চাহিদা রয়েছে কিন্তু রমজানের আগ মুহূর্তে ফণীর কারণে এসব ফল সরবরাহে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটে; এর প্রভাবে ফলের দাম বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রামের বিআরটিসি ফলমন্ডি বাজারে আড়তে প্রতি কার্টন ১৮ কেজির আপেল মানভেদে তিন হাজার থেকে ৩১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে; অর্থাৎ কেজি ১৬৬ টাকায়। গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত এই আপেল বিক্রি হয়েছিল কার্টন ২৭০০ থেকে ২৮০০ টাকায় অর্থাৎ কেজি ১৫০ টাকায়। আমদানীকৃত মাল্টা কার্টনপ্রতি (১৫ কেজি) ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারিতেই বিক্রি হচ্ছে ১১৪ টাকা কেজি দরে। আর খুচরা বাজারে সেই মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়।

আর বাজারে বেগুনি রঙের আঙুর বিক্রি হচ্ছে কার্টন (১০ কেজি) তিন হাজার টাকা অর্থাৎ কেজি ৩০০ টাকায়। আর সবুজ রঙের ইন্ডিয়ান আঙুর কার্টন (১১ কেজি) বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১২৫০ টাকায় অর্থাৎ কেজি ১১৪ টাকায়।

পাইকারি বাজারে দাম বাড়লেও এর দ্বিগুণ দামে এসব ফল বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি বেগুনি আঙুর বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায় কিন্তু চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ী খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে চার শ টাকা কেজি দরে। পাইকারি বাজারের চেয়ে কেজিতে দেড় শ টাকা বেশি।

দামে এত ব্যবধানের কারণ জানতে চাইলে খুচরা ব্যবসায়ী সুমন বাবু বলেন, ফ্রিজিং করা ফলগুলো দোকানে এনে খুলে রাখতে হয়; এর এক দিনে সব বিক্রি হয় না। ফলে প্রথমে যে দাম পাই পরে সে দাম আর থাকে না। এ ছাড়া ফ্রিজিং না করায় ধীরে ধীরে ওজনও কমতে থাকে।

কাস্টমসের হিসাবে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কমলা-মাল্টা আমদানি হয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার ১৭০ টন। এর বাজারমূল্য এক হাজার ৮৮ কোটি টাকা; এর বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩৫৪ কোটি টাকা।

বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আপেল আমদানি হয়েছে দুই লাখ ৪৮ হাজার ৪০৩ টন। এর বাজারমূল্য দাঁড়ায় তিন হাজার ২৩০ কোটি টাকা।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/industry-business/2019/05/13/768679