পুরান ঢাকার চকবাজারে এবারের রমজানেও বসেছে বাহারি ইফতারসামগ্রীর দোকান :
৮ মে ২০১৯, বুধবার, ১২:২৮

বাহারি ইফতারিতে জমজমাট বাজার, দাম সাধারণের নাগালের বাইরে

বাঙালি মুসলমানের জীবনে আবার ফিরে এসেছে রমজান মাস। সিয়াম সাধনার এ মাসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অনুষঙ্গ ইফতারি। রোজার প্রথম দিনে গতকাল রাজধানীর অভিজাত রেস্তোরাঁ থেকে পাড়া-মহল্লার টং দোকান পর্যন্ত সর্বত্র রকমারি ইফতারি। প্রিয়জনের সাথে একসাথে ইফতার করতে অনেককেই গতকাল দেখা গেছে বাইরে থেকে ইফতারি কিনে নিতে। তবে চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ইফতারি বাজার থেকে শুরু করে সর্বত্রই অভিযোগ, দাম অনেক বেশি। বেশির ভাগ ইফতারিই সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। বিশেষ করে ফলের দাম অস্বাভাবিক বাড়তি। আর গরিব মানুষের ইফতারি হিসেবে পরিচিত পেঁয়াজি-বেগুনির আকার আগের চেয়ে ছোট হয়েছে কিন্তু দাম বেড়েছে বলে অভিযোগ করেন ক্রেতারা।

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার ঘুরে দেখা যায়, তীব্র যানজটের মাঝেই চলছে ইফতারির হাঁকডাক। হোটেল রেস্তোরাঁ, মসজিদ, বিপণিবিতানের সামনে, বাজারগুলোর পথের ধারে, বাণিজ্যিক, আবাসিক এলাকার ফুটপাথে পর্যন্ত বসেছে ইফতার সামগ্রীর দোকান। পুরো রাজধানী যেন পরিণত হয়েছে ইফতারির বাজারে। রাজধানীর বেশির ভাগ সড়কের পাশে শামিয়ানা টানিয়ে রাস্তার পাশে বসানো হয়েছে ইফতারির পসরা। বিকেলের আগেই ভাজা শুরু হয় বেগুনি, পেঁয়াজু, চপ, জিলাপিসহ নানা পদের খাবার। পাশেই টেবিল পেতে বিক্রি। দোকানের সংখ্যা যেমন অগণন, ক্রেতাও তেমনি অসংখ্য।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, ইফতারসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে শিক কাবাব, সুতি কাবাব, ছোপা রুস্তম, মুঠিয়া, বটি কাবাব, জালি কাবাব, রেশমি কাবাব, পাখির রোস্ট, মুরগির রোস্ট, মোরগ মোসাল্লাম, সমুচা, শিঙ্গাড়া, ঘুগনিসহ অনেক পদ। রয়েছে ছোলা, বেগুনি, পেঁয়াজু, চপ, জিলাপির মতো চিরাচরিত ইফতারিও। ক্রেতাদের অভিযোগ, ৫ টাকার পেঁয়াজু ১০ টাকা হয়ে গেছে, কিন্তু আকার হয়ে গেছে ছোট। বাজারে ৯০ টাকা কেজিদরে ছোলা পাওয়া যায় অভিযোগ করে শান্তিনগরের ক্রেতা ইউসুফ বলেন, এক কেজি ছোলা ভাজলে তিন কেজি হয়। সাথে মেশানো হয়েছে দুই কেজি আলু। বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ১২০ টাকা দরে। রোজার দিনে এত বেশি লাভ করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে দামি ইফতারির দাম আরো বেশি। অভিজাত এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, গরুর সুতি কাবাবের দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা হয়েছে। খাসির কাবাব ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। মুরগির রোস্ট বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। কোয়েল পাখির রোস্ট ১০০ টাকা, খাসির শাহী পরোটার দাম ৬০ থেকে ৮০ টাকা। গরু ও মুরগির পরোটার দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা। সাধারণ দোকানগুলোতেও কিমা পরোটা বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। দইবড়া বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ২০০ টাকায়। ফিরনির বাটি ২৫ থেকে ৬০ টাকা, বোরহানির লিটার ১০০ টাকা, নার্গিস কাবাব ১৫ টাকা, হালিমের বাটি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। জিলাপি বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকায়, শাহী জিলাপি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, হরেক রকম দেশী-বিদেশী ফলে ভরপুর রাজধানীর বাজার। বাজারে দেশী ফলের মধ্যে রয়েছে আনারস, কলা, বাঙ্গি, তরমুজ, পেয়ারা, শসা, পেঁপে, বেল, সবেদা, জামরুল ও লিচু। বিদেশী ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল, কমলা, আঙুর, মালটা, নাশপাতি, আম। আরো রয়েছে বাহারি খেজুর। পুরানা পল্টনে আজাদ প্রোডাক্টসের সামনে দেশী-বিদেশী ফলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ফল বিক্রেতা বাবুল হোসেন। তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে ফল বেচাকেনা বেড়েছে। তবে রমজান উপলক্ষে খেজুরের চাহিদা বেশি। এ কারণে দামও তুলনামূলক বেশি।

বাজারে বর্তমানে সাধারণ খেজুরের কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। বরই খেজুর ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। আমবার ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, মরিয়ম মানভেদে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, খুরমা ২০০ থেকে ২৫০, আলজারেয়ার খুরমা প্যাকেট ৫০০ গ্রাম ২৫০, প্যাকেট করা জাবেল ২৫০, প্যাকেট করা খালাস খেজুর ৩৫০ টাকা। তিউনিসিয়ার খেজুর ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে গতকাল ভারতীয় আমের কেজি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা, থাইল্যান্ডের আম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, প্রতি পিস আনারস আকার ভেদে ৩০ থেকে ৬০ টাকা, ১০০টি লিচু ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। প্রতি কেজি পেয়ারা ৮০ থেকে ১৩০ টাকা। সাদা আঙুর ২৬০ টাকা, কালো আঙুর ৪০০ টাকা, ফুজি আপেল ১৬০ টাকা, সাদা আপেল ১৭০ থেকে ২০০ টাকা, কালো আপেল ১৬০ টাকা এবং মাল্টার কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা সাইফুল এই প্রতিবেদককে বলেন, ব্যবসায়ীদের ওপর কোনো মনিটরিং নেই। যার যখন ইচ্ছা তখন দাম বাড়াচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। পকেট কাটছে ক্রেতাদের। কিছুই করার নেই। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি ডালিম ছিল ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা। আজ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। আপেল ছিল ১৫০ টাকা, আজ ২০০ টাকা। এ রকম সব ধরনের ফলের দাম বেড়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/408435