৬ এপ্রিল ২০১৯, শনিবার, ১১:২৬

চিতলমারীতে সুপেয় পানির হাহাকার

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে। পানির সংকট দূর করার জন্য বিভিন্ন সময় সরকারি ও বেসরকারিভাবে স্থাপিত পাইপ ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প, পুকুর ফিল্টারসহ (পিএসএফ) পানি পরিবেশনের স্থাপনাগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে। তা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই।

চিতলমারী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়, মাটির প্রায় ৮০০ ফুট গভীর ভেদ করে বালুর যে স্তর পাওয়া যাচ্ছে তাতে লবণাক্ততা বেশি। মাটির নিচে সুপেয় পানির আধার পেতে কষ্ট হয়। নলকূপের পানিতে মাত্রারিক্ত আর্সেনিক। তাই উপজেলা পরিষদ চত্বরের পুকুরসহ অন্যান্য পুকুরের পানি পান করতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। শুকনোর মৌসুম হওয়ায় এসব পুকুরের পানি শুকিয়ে অনেকটা তলদেশে চলে গেছে। এ অবস্থায় এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সৃষ্টি হয়েছে একটি পানি ব্যবসায়ী চক্র। তাদের পানিও ততটা নিরাপদ নয়। ফলে প্রয়োজনের তুলনায় কম পানি পান করছে এলাকাবাসী। এতে তারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

আদমশুমারী অনুযায়ী, চিতলমারী উপজেলার লোকসংখ্যা এক লাখ ৩৮ হাজার ৮১০ জন। জনপ্রতি আট লিটার হারে প্রতিদিন মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা রয়েছে ১১ লাখ ১০ হাজার ৪৮০ লিটার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চরবানিয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পানির তিনটি স্থাপনা রয়েছে। ব্র্যাক ওয়াশ থেকে ২০১০ সালে নির্মিত পুকুর ফিল্টারটি চালু আছে। সেখানে ব্রহ্মগাতী, খড়খালীসহ কয়েক গ্রামের মানুষ পানি নিতে আসে। পাশের আরেকটি ফিল্টার অকেজো। এলাকাবাসী জানায়, চার-পাঁচ বছর আগে ফিল্টারটি নির্মিত হয়। এর প্রায় ২৫ ফুট উত্তরে রয়েছে পানির বিশালাকার অকেজো স্থাপনা। এর পাশেই ‘মা মনি’ নামে পানি ব্যবসাকেন্দ্র খুলেছেন শাহীন শেখ। তিনি জানান, পাশের ফিল্টারগুলো দেখে তিনি ব্যক্তিগতভাবে নিজ বাড়িতে ফিল্টার বানিয়েছেন। দুই বছর ধরে পানি বিক্রি করছেন। প্রতি দুই লিটার পানির দাম রাখেন মাত্র এক টাকা। নছিমনে প্লাস্টিকের ড্রাম ভরে গ্রাহকের কাছে পানি পৌঁছে দেন তিনি। প্রতিদিন ১৫০০-১৬০০ লিটার পানি দেন। তাঁর মতো শিবপুর গ্রামে আরো দুটি ফিল্টার থেকে পানি বিক্রি হচ্ছে।

চরবানিয়ারী ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের অরুণ সরকার বলেন, ‘কিনতে হয় বলে পরিবারের সবাই অল্প পানি পান করে। এতে আমার মা-বাবা ও স্ত্রী নানা রোগে আক্রান্ত অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পানি আর ওষুধ কেনার টাকা জোগাড় করতেই এখন হিমশিম খাচ্ছি।’

সন্তোষপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নির্মল মণ্ডল জানান, সাড়ে চারআনি ও নাসিরপুর গ্রামে কোনো পিএসএফ নেই। প্রতিদিন বাড়ির মেয়েরা দুই কিলোমিটার দূরের বাগেরহাট সদর উপজেলার আলীপুরে গিয়ে পানি আনে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নলকূপ মেকানিক নুরুজ্জামান জানান, অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে এ উপজেলার মাটির গভীরের পানিও পানের উপযোগী নয়।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আজমল হোসেন জানান, মাটির নিচের শক্ত স্তর ভেদ করে সুপেয় পানি উঠানোর জন্য আধুনিক প্রযুক্তির নলকূপ স্থাপন করা দরকার। অথবা মধুমতী নদী থেকে ভূউপরিস্থ পানি কিংবা ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে মিনি টেস্ট প্লান্ট স্থাপন করে সুপেয় পানি নিশ্চিত করা যেতে পারে।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/priyo-desh/2019/04/06/755416