৫ এপ্রিল ২০১৯, শুক্রবার, ৭:৩৬

বিজ্ঞান ও ভূগোলের বিষয় নিয়ে আলোচনা সমাজ বইয়ে

মাধ্যমিকের পাঠ্যবই-৭

নবম-দশম শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ের নাম ‘সৌরজগৎ ও ভূমণ্ডল’। অপর দিকে, একই শ্রেণীর ভূগোল ও পরিবেশ বইয়ের একটি অধ্যায়ের নাম ‘মহাবিশ্ব ও আমাদের পৃথিবী’।

উভয় বইয়ের দুটি অধ্যায়ের আলোচিত বিষয় একই। তা ছাড়া, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে সৌরজগৎ ও ভূমণ্ডল অধ্যায়ে যেসব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে তার প্রায় প্রতিটি বিষয় চুতর্থ শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বিজ্ঞান বইয়ে পৃথিবী, সৌরজগত, মহাবিশ্ব, মহাকর্ষ নামক অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। একইভাবে নবম- দশম শ্রেণীর ভূগোল ও পরিবেশ বইয়ের মহাবিশ্ব ও আমাদের পৃথিবী অধ্যায়েরও অনেক কিছু পূর্বের বিভিন্ন শ্রেণীর বিজ্ঞান বইয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অভিযোগÑ নবম-দশম শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের সৌরজগৎ ও ভূমণ্ডল নামক অধ্যায়টি বিজ্ঞান ও ভূগোলের বিষয়। এ বইয়ে এটি আনার দরকার ছিল না। তা ছাড়া, বিশাল পরিসরে বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে। একই শ্রেণীর একাধিক বইয়ে যেমন একই বিষয় পাঠ্য করা হয়েছে তেমনি তার অনেক কিছু পূর্বের শ্রেণীতে বিস্তারিত আলোচনাও করা হয়েছে। উপরের শ্রেণীতে পূর্বের শ্রেণীর অনেক কিছু হুবহু তুলে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে সৌরজগত, মহাকাষ ও মহাবিশ্বসম্পর্কিত আলোচনায় অনেক পুনরাবৃত্তি ঘটেছে বলে জানান তারা।
পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ১৯ পৃষ্ঠাজুড়ে আলোচনা করা হয়েছে সৌরহগৎ ও ভূমণ্ডল অধ্যায়। অপর দিকে, ভূগোল ও পরিবেশ বইয়ে ২৩ পৃষ্ঠাজুড়ে প্রায় একই বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের সৌরজগৎ ও ভূমণ্ডল অধ্যায়ে যেসব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে তা হলোÑ মহাবিশ্ব সম্পর্কে ধারণা, সৌরজগৎ, সূর্য এবং তার প্রতিটি গ্রহের বিবরণ, পৃথবীতে জীবের বসবাসের কারণ, ভূ-অভ্যন্তরের গঠন, কেন্দ্রমণ্ডল, গুরুমণ্ডল, অশ্বমণ্ডল, সময় নির্ধারণ পদ্ধতি তথা অক্ষ, অক্ষরেখা, নিরক্ষরেখা, দ্রাঘিমারেখা, মূলমধ্যরেখা, স্থানীয় সময়ের পার্থক্য, গ্রিনিচ সময়ের মাধমে স্থানীয় সময় নির্ণয়, স্থানীয় সময়, প্রমাণ সময়, প্রতিবাদ স্থান, আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা, আহ্নিক গতি, বার্ষিক গতি, দিবারাত্রির হ্রাসবৃদ্ধির কারণ, ঋতু পরিবর্তন, ঋতু পরিবর্তনের কারণ, জোয়ার-ভাটা, মহাকর্ষ ও মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, প্রভৃতি।

অপর দিকে, নবম-দশম শ্রেণীর ভূগোল ও পরিবশে বইয়ের মহাবিশ্ব ও আমাদের পৃথিবী অধ্যায়ে যেসব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে তা হলোÑ মহাকাশ ও মহাবিশ্ব, গ্যালাক্সি, নিহারিকা, ছায়াপথ, সৌরজগৎ ও তার প্রতিটি গ্রহের বিবরণ, অক্ষরেখা, দ্রাঘিমা রেখা, নিরক্ষ রেখা, আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা, স্থানীয় সময়ের পার্থক্য, গ্রিনিচ সময়, আহ্নিক গতি, বার্ষিক গতি, দিবারাত্রির সংঘটন, জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি, দিবারাত্রির হ্রাসবৃদ্ধি, ঋতু পরিবর্তন প্রভৃতি।

দেখা যায়, একই শ্রেণীর দুুটি বইয়ে একই বিষয় আলোচনা করা হয়েছে সবিস্তারে।

শুধু তাই নয়, পাঠ্যবই পর্যালোচনা করে দেখা গেছে চতুর্থ শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতি শ্রেণীর বিজ্ঞান বইয়ে সৌরজগৎ, মহাকাশ ও মহাবিশ্ব বিষয় পাঠ্য রয়েছে। সেখানে কোনো কোনো শ্রেণীতে সৌরজগৎ, আহ্নিক গতি বার্ষিক গতি, দিবারাত্রির সংঘটন, জোয়ার ভাটা, চাঁদের দশাসহ অনেক বিষয় যেভাবে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে তারপর আর উপরের শ্রেণীতে এ নিয়ে আলোচনার আদৌ কোনো দরকার ছিল না। কিন্তু দেখা যায়, বিভিন্ন শ্রেণীতে একই বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। যেমন চতুর্থ শ্রেণীর বিজ্ঞান বইয়ের একটি অধ্যায়ের নাম সৌরজগৎ। এখানে সৌরজগতের গ্রহের নাম, চাঁদ, চাঁদের দশা, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি, মহাবিশ্ব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণীর একটি অধ্যায়ের নাম মহাবিশ্ব। এখানে আহ্নিক গতি, কক্ষপথ, দিনরাত, ঋতু, চাঁদের দশাসমূহ আলোচনা করা হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণীতে একটি অধ্যায়ের নাম পৃথিবীর উৎপত্তি ও গঠন। এখানে মহাবিশ্ব, মহাবিস্ফোরণ, সূর্য, চন্দ্র ও পৃথবীর পরিচয়, পৃথিবীর গঠন, বায়ুমণ্ডল, ভূপৃষ্ঠ, পৃথবীর অভ্যন্তরীণ গঠন, প্লেট টেকটনিক, আগ্নেয়গিরি, ভূমিকম্প, শিলামণ্ডল, প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সপ্তম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বইয়ের একটি অধ্যায়ের নাম সৌরজগৎ ও আমাদের পৃথিবী। এখানে সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর ঘোরা তথা বার্ষিক গতি, পৃথিবীর নিজ অক্ষের উপর ঘোরা তথা আহ্নিক গতি, সৌরজগতের তথা বিভিন্ন গ্রহের বিবরণ, দিবারাত্রির সংঘটন বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অষ্টম শ্রেণীর বিজ্ঞান বইয়ে পৃথিবী ও মহাকর্ষ এবং মহাকাশ ও উপগ্রহ নামে দু’টি অধ্যায় রয়েছে অন্যান্য অধ্যায়ের মধ্যে। মহাকাশ ও উপগ্রহ অধ্যায়ে মহাকাশ, মহাবিশ্ব, কৃত্রিম ও প্রকৃতিক উপগ্রহ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

অভিভাবক ও শিক্ষকদের অনেকে জানিয়েছেন, বিভিন্ন শ্রেণীতে বারবার একই বিষয় আলোচনার পরিবর্তে নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে বেশি ভালো হতো।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/400653