২০১৪ সালে হল আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের বিপরীত পাশের এই জায়গাটি দখল করে জবির টিএসসি হিসেবে ঘোষণা দেয়।
৩১ মার্চ ২০১৯, রবিবার, ৯:৪৮

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি

জবরদখলি জমিতে দোকান বসিয়ে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে দোকান বসিয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। প্রতিদিন দোকানভেদে তোলা হচ্ছে ১৫০ থেকে ৪০০ টাকা। যার মাসিক পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। অভিযোগ আছে চাঁদা আদায়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের শাখা কমিটির (বিলুপ্ত) বেশ কয়েকজন কর্মী জড়িত। দোকান থেকে চাঁদা আদায়ের কারণে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দোকানিরা রাখছে পণ্যের বাড়তি মূল্য। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে এই জায়গার সঙ্গে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

জানা যায়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘হল আন্দোলন’-এর সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের বিপরীত পাশের সমবায় ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ছয় কাঠার এই জায়গাটি দখলে নেয় ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, শিক্ষার্থীরা এই জায়গা দখলের পর কয়েকবার বিষয়টি নিয়ে বসা হয়। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থেকে সেভাবে আর সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এগোয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীত পাশের ছয় কাঠার এই জায়গায় ১০টি চা-সিগারেটের দোকান, চারটি বিরিয়ানি-খিচুড়ির দোকান, একটি ফাস্ট ফুড এবং একটি সিঙারা-সমুচার দোকান রয়েছে। এই ছোট্ট জায়গাটিতে দোকানভেদে চাঁদার পরিমাণও হয় ভিন্ন। চা দোকান থেকে প্রতিদিন নেওয়া হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আর বিরিয়ানির দোকান থেকে তোলা হয় প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার টিএসসির চাঁদা আদায় নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এ সময় কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কারও করা হয়। চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্তরা হলো ১২তম ব্যাচের আশিকুর রহমান আশিক, আল-সাদিক হৃদয়, ইমরুল কবীর শাওন, পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী নিয়াজ উদ্দিন হৃদয়, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহিন খান এবং ১০তম ব্যাচের আবু মুসা রিফাত। এদের কারো কারো বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ছিনতাইয়ের অভিযোগও রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বললে আল-সাদিক হৃদয় বলেন, ‘আমি টিএসসি থেকে কোনো চাঁদা তুলি না। আমি দোকানিদের না করে দিয়েছি, যাতে কাউকে চাঁদা না দেয়। এখন অনেকেই ভাবছে আমি টাকা নিই। কিন্তু আমি এসব কিছু করি না।’ অভিযোগ আছে এখানে দোকান বসাতে শিক্ষার্থীদের সুবিধা হলেও মানসম্মত খাওয়ার এবং পণ্যের দাম রাখা হচ্ছে বেশি। তানিম আল-হাসান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এখানে প্রায় সব কিছুরই দামই বেশি। চা ছয় টাকা, কেক প্রতি পিস ১২ টাকা।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দোকানি জানান, ‘বেশ কয়েকজন এসে টাকা নেয়। খরচ বেশি, তাই দাম একটু বেশিই রাখতে হয়। চাঁদার টাকা আর ফাও খাওয়া বন্ধ করা গেলে হয়তো ঠিক দাম রাখতে পারতাম।’

অন্যদিকে এই জায়গাটুকুই জবি শিক্ষার্থীদের জন্য একমাত্র আড্ডার জায়গা হলেও এখানে রাতে বসে মাদকের আড্ডা। রিকশাওয়ালা, ভ্যানচালক, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী এই মাদকের আসর জমিয়ে তোলে। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যার পর এদিকে আসে না। শিক্ষার্থীদের অনেকে মনে করে টিএসসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা এই মাদক সেবনের কারণেই ঘটছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কথা বলে শুধু টিএসসি না, রায়েসাহেব বাজারেও অনেক পোলাপান ফাও খেয়ে আসে। অথচ আমরা তাদের চিনিও না। এর আগে টিএসসি থেকে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে ঝামেলা হলে কয়েকজনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। আমার কাছে অভিযোগ আছে এখনো কামরুল, আসাদ, আশিক, হাসান নামে অনেকেই টিএসসি থেকে চাঁদা তুলছে।’

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘এই জায়গার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছিল না। এখানে কারা দোকান বসাচ্ছে, কারা টাকা তুলছে সেটি আমরা জানি না। যারা তুলছে তারা জানে।’

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে শিক্ষার্থীদের হল আন্দোলনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের বিপরীত পাশের এই জায়গা দখল করা হয়। তার পর শিক্ষার্থীরা জায়গাটিকে জবির টিএসসি ঘোষণা করে।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/dhaka-360/2019/03/31/753178