অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বনানীর এফআর টাওয়ার। গতকাল তোলা ছবি।
৩১ মার্চ ২০১৯, রবিবার, ৯:৪১

সরঞ্জাম অপ্রতুল নেই মহড়াও

ঢাকার বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা

চকবাজারের পর বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীতে বহুতল ভবনের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর পাশাপাশি সচেতনতাও তৈরি হতে দেখা যাচ্ছে। মতিঝিল, গুলশানসহ অনেক স্থানে বাণিজ্যিক বহুতল ভবনে আগুন নেভানোর যন্ত্রপাতি দৃশ্যমান এবং নিরাপত্তাকর্মীসহ অনেক কর্মীর আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণ রয়েছে। তবে আরো সরঞ্জাম, বিশেষ করে ফায়ার জ্যাকেট ও অক্সিজেন মাস্ক দাবি করেছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। রাজধানীতে অনেক বহুতল ভবনে পোশাক কারখানা রয়েছে, সেগুলোর অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। পাশাপাশি ধানমণ্ডির মতো অভিজাত এলাকায় বেশির ভাগ বাণিজ্যিক ভবনে নেই অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম।

মতিঝিলের উঁচু ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা দৃশ্যত জোরালো : গতকাল শনিবার মতিঝিলের দিলকুশা এলাকায় কয়েকটি বহুতল ভবনে দেখা গেছে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বেশ জোরালো। তবে একই এলাকার ২৪ তলা ভবন জীবন বীমা টাওয়ারে ঢুকে দেখা যায় করুণ চিত্র। ওই এলাকার নিরাপত্তাকর্মীরা জানিয়েছেন, তাঁদের আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এখন ফায়ার জ্যাকেট ও অক্সিজেন মাস্ক দিলে আগুনকে ভয় না পেয়ে তাঁরা নির্বাপণে আরো জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবেন।

মতিঝিলের দিলকুশার পিপলস ইনস্যুরেন্স ভবন নামের ২২ তলা উঁচু ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, এ ভবনটিতে রয়েছে অগ্নিনির্বাপনের আধুনিক সরঞ্জাম। নিরাপত্তাকর্মী ও অফিস স্টাফদের মধ্য থেকে অন্তত ৪০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ফায়ার ফাইটার হিসেবে গড়ে তুলেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে ফায়ার জ্যাকেট ও অক্সিজেন মাস্কও। এমনকি আগুন লাগার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি দেওয়া যায়—এমন ফায়ার স্প্রিংকলার (ঋরত্ব ংঢ়ত্রহশষবৎ) ব্যবস্থাপনাও রয়েছে তাদের। আর প্রতিটি ফ্লোরে রয়েছে পানি ছিটানোর হোস পাইপ। এক্সটিংগুইসারও রয়েছে। এ ছাড়া কখনো আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিস এসে যাতে পানির জন্য সংকটে পড়তে না হয় সে জন্য বাইরে দিয়ে হোস পাইপ লাগানোর সিস্টেমও করা আছে। ফায়ার অ্যালার্মসহ রয়েছে জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়ার সিঁড়ি। এ ছাড়া বিভিন্ন অফিসে আসা ব্যক্তিদের সতর্ক করে নির্দেশনাও টানানো রয়েছে। এমনকি ভবনের সিঁড়িতে লাগানো হয়েছে আইপিএস। আগুন লাগার পর বিদ্যুৎ চলে গেলেও সিড়িকে তারা আলোকিত রাখার জন্য এ ব্যবস্থা নিয়েছে। এক মাস পর পর আইপিএস পরীক্ষা করে দেখা হয় বলে সংশ্লিষ্টরা কালের কণ্ঠকে জানান।

একজন স্টাফ জানান, মাস তিনেক আগে ভবনটির তৃতীয় তলায় ককশিটে আগুন লেগেছিল। সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার অ্যালার্ম থেকে শুরু করে আগুন নিয়ন্ত্রণের সব সরঞ্জাম প্রস্তুত করা হয়। তৃতীয় তলায় থাকা হোস পাইপ দিয়ে দুই-তিন মিনিটের মধ্যে মাত্র একজন মাত্র কর্মী আগুন নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হন। ভবনটির মেইনটেন্যান্স শাখার কর্মকর্তা অসিম কুমার কালের কণ্ঠকে জানান, সিকিউরিটি গার্ড থেকে শুরু করে অফিস স্টাফদের অগ্নিনির্বাপণের প্রশিক্ষণ রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।’

দিলকুশায় থাকা ২২ তলা আরেকটি ভবনের নাম সিটি সেন্টার। ওই ভবনটিতে গতকাল বিকেলে গিয়ে দেখা গেছে, অগ্নি প্রতিরোধক ব্যবস্থা ভালো। প্রতিটি ফ্লোরে রয়েছে হোস পাইপ সিস্টেম, এক্সটিংগুইসার, ফায়ার অ্যালার্মসহ আগুন নেভানোর নানা সরঞ্জাম। এমনকি ভবনটিতে আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য ফায়ার ফাইটারদের আলাদা টিমও রয়েছে। যাঁরা সারাক্ষণ দায়িত্ব পালন করেন ভবনে। এ ছাড়া এ ভবনে যে সিকিউরিটি গার্ডরা দায়িত্ব পালন করছেন তাঁদেরও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ফলে তাঁরাও এক্সটিংগুইসার, হোস পাইপ চালানোসহ সব কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এ ভবনটিতে ৩০ বছর ধরে সিকিউরিটির দায়িত্ব পালন করছেন মনির হোসেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এইহানে আমরা যারা দায়িত্ব পালন করছি সবাই আগুন নিভানোর সরঞ্জাম চালাইতে পারি।’

ইউনুস সেন্টার থেকে কিছুটা দূরেই জীবন বীমা টাওয়ার। এ ভবনটিও ২২ তলা। গতকাল বিকেলে গিয়ে দেখা গেছে, এত বড় ভবনে মাত্র দুজন সিকিউরিটি গার্ড দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁরা একটি সিকিউরিটি কম্পানিতে কাজ করেন। ভবনের নিজস্ব মাত্র একজন সিকিউরিটি গার্ড আছেন। গতকাল ছুটির দিন থাকায় তাঁকেও পাওয়া যায়নি। পাশের ভবনের এক নিরাপত্তাকর্মী জানালেন, জীবন বীমা টাওয়ারে নিরাপত্তাব্যবস্থা ভয়াবহ। কিছুদিন আগে ছুটির দিনে একজন অফিস করতে এসে লিফটে আটকা পড়েছিলেন। সেই ব্যক্তি লিফটে থেকে সিকিউরিটি গার্ডকে ফোন করেন। তখন তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তিনি তাঁর স্বজনদের ফোন করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে তাঁকে লিফট থেকে উদ্ধার করেন।

মতিঝিল এলাকায় জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ভবনটি ২৬ তলা। গতকাল বিকেলে গিয়ে দেখা গেছে, ছুটির দিনেও জনতা ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক অমল চন্দ্র সরকার অফিস করছেন। তিনি বলেন, ‘জনতা ব্যাংকে অগ্নি প্রতিরোধব্যবস্থা আগে থেকেই ভালো। আমরা নতুন করে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম আনার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি।’ ব্যাংকটিতে দেখা যায়, প্রতিটি ফ্লোরে হোস পাইপ সিস্টেম রয়েছে। ফায়ার অ্যালার্ম, এক্সটিংগুইসারও রয়েছে সব ফ্লোরে।

দিলকুশা এলকায় রয়েছে বিসিআইসি ভবন। ১৯৮২ সালে ভবনটির উদ্বোধন হয়। ২২ তলা উচ্চতার এ ভবনটিতে গিয়ে দেখা যায়, ৮-৯ জন ভবনের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদের একজন হাবিবুর রহমান জানান, অগ্নি নির্বাপণের সব ধরনের ব্যবস্থাই এখানে আছে। প্রতিটি ফ্লোরে হোস পাইপ সিস্টেম রয়েছে। এক্সটিংগুইসারসহ অগ্নি নির্বাপণের সব সিস্টেম রয়েছে ভবনটির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়। তিনি আরো জানান, ফায়ার সার্ভিস থেকে তাঁরা সবাই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ফলে আগুন নেভানোর সরঞ্জাম তাঁরা চালাতে পারেন। তবে একজন নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘আমাদের জন্য যদি ফায়ার জ্যাকেট ও অক্সিজেন মাস্ক দেওয়া হতো তাহলে আরো ভালো হতো।’ তিনি যুক্তি দেখান, ‘আগুন লাগার পর আমার গায়ে যদি অগ্নি প্রতিরোধক জ্যাকেট থাকে তাহলে ভয় না পেয়ে আগুনের ভেতর দিয়ে গিয়ে আগুন নেভাতে সক্ষম হব।’

ঝুঁকি নিয়ে কাজ

আমতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বনানী বাসস্ট্যান্ডের দূরত্ব দেড় কিলোমিটার। মহাখালী থেকে বনানী যাওয়ার পথে এতটুকু দূরত্বে হাতের বাঁ পাশে অন্তত ১০টি পোশাক কারখানা রয়েছে। রানা প্লাজা ভবন ধসের পর ঢাকা থেকে অনেক কারখানা বাইরে স্থানান্তরিত হলেও এখনো রয়ে গেছে এসব কারখানা। কারখানাগুলো গতকাল ঘুরে দেখা গেছে, ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছে শ্রমিকরা। বিকল্প সিঁড়ি চোখে পড়েনি। চলাচলের জন্য যে সিঁড়ি রয়েছে, তা ততটা প্রশস্ত নয়। অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র দেখা যায়নি কোথাও কোথাও। আবার একাধিক কারখানায় অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র দেখা গেলেও সেগুলো যে অনেক পুরনো, তা দেখেই স্পষ্ট।

আমতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে একটু সামনে যেতেই চোখে পড়ল রেজা কাস্টমার সার্ভিস প্লাজা। এ ভবনটি আটতলা। এ ভবনে আছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান স্যামসাংয়ের সার্ভিস সেন্টার, ফার্নিচারের দোকান, রিক্রুটিং এজেন্সিসহ বেশ কয়েকটি অফিস। ভবনটিতে ওঠার সিঁড়ি অত্যন্ত সরু। দুজন একসঙ্গে হাঁটা বড় দায়। ভবনটিতে কোনো অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র দেখা যায়নি। এ ভবনে পাঁচ বছর ধরে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে আসছেন কুমিল্লার আবদুল মালেক। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘যে হারে ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ড ঘটছে, তাতে কিছুটা চিন্তিত। তবে আমাদের এ ভবনে বিকল্প সিঁড়ির ব্যবস্থা রাখা আছে। কিন্তু অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা নেই।’ অবশ্য চুড়িহাট্টা ও বনানীতে অগ্নিকাণ্ডের পর এ ভবনের মালিকও অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন বলে জানান আবদুল মালেক।

এর একটু সামনে গিয়ে চোখে পড়ল একসঙ্গে বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা। গুড দি অ্যাপারেল, সাঙ্গু ভিলা, তিতাস পোশাক কারখানায় গিয়ে দেখা গেল, ভবনগুলো সব আটতলার। ওঠার সিঁড়ি ততটা প্রশস্ত নয়। এ তিনটি কারখানায় বিকল্প সিঁড়ি দেখা যায়নি। গুড দি অ্যাপারেলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইয়ুব আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের একটিই সিঁড়ি, তবে বেশ চওড়া। বিকল্প সিঁড়ি নেই। আগুন নেভানোর ব্যবস্থা আছে।’ একটু ভালোভাবে উঁকি দিয়ে দেখা গেল, কারখানাগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

একই সঙ্গে লাগোয়া মাসুদ অ্যাপারেল ও শিহা অ্যাপারেল। এ দুটি কারখানারও চিত্র একই। চেয়ারম্যানবাড়ীর সামনে চোখে পড়ল গ্লোরি ফ্যাশন। কারখানার বড় একটি অংশ এখান থেকে স্থানান্তর করা হলেও সাত ও আটতলায় এখনো পোশাক কারখানার কাজ চলছে। শুধু এই কারখানার পেছনে বিকল্প সিঁড়ি দেখা গেছে।

ধানমণ্ডিতে বেশির ভাগ বাণিজ্যিক ভবনে নেই অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম

ধানমণ্ডির গ্রিন তাজ সেন্টার অবস্থিত ৮/এ সড়কের ধারে। ছয়তলা এ ভবন মূলত পরিচিত আলমাস সুপার শপের নামে। গ্রাউন্ড ফ্লোরজুড়ে আলমাস। ভবনের অন্য ফ্লোরে যেতে হলে পেছনে রয়েছে লিফট ও সিঁড়ি। সে পথে যাতায়াত খাবার হোটেলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা ও কর্মীদের। ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় ভর্তাবাড়ী, পিজা পাস্তাসহ হরেক নামের খাবারের দোকান। প্রতিদিন এ ভবনে হাজারো মানুষের যাতায়াত। কিন্তু বাণিজ্যিক ভবনটিতে অগ্নি নিরাপত্তার আয়োজন নিতান্তই তুচ্ছ। কয়েকটি ফায়ার এস্টিংগুইসার ঝোলানো বিভিন্ন ফ্লোরে। নেই কোনো জরুরি নির্গমন পথ। আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণ নেই কর্মীদের।

অপ্রতুল অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম নিয়েই বহুতল ভবনটির দেখভাল করছেন ভবনটির ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি প্রথমে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। পরে সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অকপটে স্বীকার করে নেন ভবনটির অগ্নিঝুঁকির কথা। বলেন, ‘আল্লাহ ভরসা। বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি এর আগে। আগামী দিনগুলো পার হলেই হয়।’ ভবনটির তৃতীয় তলায় অবস্থিত ভর্তাবাড়ী রেস্টুরেন্ট। সেখানকার ম্যানেজার সুজন মাহমুদ বলেন, ‘আগুনের বিষয়ে সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়। নিজেরা কিচেনের দিকে নজরদারি করি। আর আগুনের প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিতে প্রবেশপথে রাখা আছে অগ্নিনির্বাপক দুটি সিলিন্ডার। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে জানালার কাচ ভেঙে নিচে লাফিয়ে পড়া ছাড়া গতি নেই।’

গতকাল শনিবার দুপুরে আলমাস সুপার শপে উপস্থিত ক্রেতাসহ স্টাফরা আগুনের বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ব্যাংক কর্মকর্তা আবু নাসের বলেন, ‘স্টাফরা যা জানালেন, তাতে আতঙ্কিত হতে হয়। একটা বাণিজ্যিক ভবনে ন্যূনতম অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ও প্রাণ রক্ষার সুযোগ থাকবে না, তা ভাবা যায় না।’

ধানমণ্ডিতে এ ভবনের বিপরীত দিকে ফুট ওভারব্রিজের পাশেই ১৬ তলা কেবি স্কয়ার। সেখানকার চিত্র প্রায় বিপরীত। রয়েছে জরুরি নির্গমন সিঁড়ি, যা পুরো সময় খোলা থাকে। প্রায় ২০ জন কর্মী প্রশিক্ষণ নিয়েছেন আগুন নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে। ভবনটির নিচতলায় কন্ট্রোল রুমে বসে ম্যানেজার আকতারুজ্জামান মনিটরে বিভিন্ন ফ্লোরের চিত্র দেখিয়ে বলেন, ‘কোনো ফ্লোরে আগুন লাগলে স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম বেজে উঠবে। প্রতিটি ফ্লোরেই রয়েছে অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম। প্রাথমিক অবস্থায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার প্রস্তুতি রয়েছে। পর্যাপ্ত পানি রাখা হয় রিজার্ভারে।’ বহুতল এ ভবনে ১৪টি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, গ্রিন ডেল্টা ইনস্যুরেন্সসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে। প্রতিটি ফ্লোরেই দেখা যায় হর্সর‌্যাকসহ অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম। আর দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখে বৈদ্যুতিক ও নিরাপত্তাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

ধানমণ্ডি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোথাও বহুতল ভবনের ওপরের অর্ধেকাংশ আবাসিক আর নিচের কয়েক ফ্লোর বাণিজ্যিক। ব্যবসাকেন্দ্রগুলোতে কর্মরত বেশির ভাগ স্টাফ জানেন না ভবনে কী ধরনের অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা রয়েছে। আগুন ধরলে নিজেসহ ক্রেতাদের রক্ষায় কী ভূমিকা রাখবেন এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তাঁরা। জিগাতলা, সায়েন্স ল্যাব এলাকায় ছয়তলা, আটতলা অনেক ভবন গায়ে গায়ে ঘেঁষে উঠে গেছে। নিরাপত্তাকর্মীসহ এসব ভবনসংশ্লিষ্টরা অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে অপ্রতুলতার কথা জানালেও মালিকের ভয়ে বিস্তারিত কথা বলতে চাননি। নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখতে চাইলে তাঁরা মালিক সমিতির ‘অনুমতি’ লাগবে বলে জানান। অথচ সব ভবনেই অগ্নি নিরাপত্তা সামগ্রী দৃশ্যমান স্থানে রাখার কথা। ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থা বিষয়গুলো নিয়ে তদারকি করে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

গুলশানে দৃশ্যমান অগ্নি নিরাপত্তা অনেক ভবনে

গুলশান-২-এর বেশির ভাগ বড় ভবনে অগ্নি নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে। তবে কিছু ভবনে ইমার্জেন্সি সিঁড়ি থাকলেও আগুন নেভানোর যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। ভবনের নিরাপত্তা প্রহরী এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাম্প্রতিককালে রাজধানীতে আগুনে কয়েকটি ঘটনায় অনেক মানুষের মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে যাদের যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে, তারা তা পূরণের চেষ্টা করছেন।

গতকাল শনিবার গুলশান-২ এলাকা থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, ৭-১৫ তলা উঁচু ১৩টি বিল্ডিংয়ের মধ্যে দুটির অগ্নি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেই। এমনকি ইমার্জেন্সি এক্সিট সিঁড়িও নেই। এ ব্যাপারে সিকিউরিটি গার্ডের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি ভবনে জরুরি অ্যালার্মের ব্যবস্থাও নেই। শুধু গতানুগতিক সিঁড়ি রয়েছে। ভবনটি সাততলা উঁচু। অন্য ভবনটিতে আগুন নেভানোর জন্য যন্ত্রপাতি থাকলেও বের হওয়ার বিকল্প কোনো সিঁড়ি নেই। তবে সিকিউরিটি গার্ড জানিয়েছে, গতকাল শনিবার থেকে অগ্নি নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে ভবনটিতে কাজ শুরু হয়েছে।

আর বাকি ১১টি বিল্ডিংয়ের মধ্যে বেশ কয়েকটির ইমার্জেন্সি সিঁড়ি থাকলেও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতির অভাব আছে। ভবনের লোকজন জানিয়েছে, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে ভবন মালিককে জানানো হয়েছে। সব ভবনের মালিক দ্রুত সময়ের মধ্যে ফায়ার অ্যালার্মসহ প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি লাগানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে তাদের জানিয়েছেন।

তবে গুলশান-২-এর বেশির ভাগ ভবনে ইমার্জেন্সি এক্সিট পথ, ফায়ার অ্যালার্মসহ আগুন নেভানোর অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2019/03/31/753097