কারাগার। প্রতীকী ছবি
৩০ মার্চ ২০১৯, শনিবার, ১২:৩২

চট্টগ্রাম বিভাগে কয়েকটি ঘটনা ফাঁস

অর্থ নিয়ে অন্যের সাজা খাটার সংখ্যা বাড়ছে

জামিন আবেদনে আইডি কার্ড

কক্সবাজারের রামু উপজেলার ওয়াহিদুল হকের (৩৫) বিরুদ্ধে গত বছরের ২২ অক্টোবর ২০ লাখ টাকার চেক প্রতারণার অভিযোগে মামলা করা হয়। আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে ৬ মার্চ আদালতে তার আত্মসমর্পণ করার কথা। কিন্তু সৈয়দ করিম নামে একজন নিজেকে ওয়াহিদুল হক পরিচয় দিয়ে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন।

তার কথাবার্তা অসংলগ্ন হওয়ায় বিচারকের সন্দেহ হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সৈয়দ করিম জানান- তিনি ওয়াহিদুল হক নন। তিনি (সৈয়দ করিম) কক্সবাজার পৌরসভার মো. হোসেনের ছেলে। আর মামলার আসামি হলেন রামু উপজেলার নয়াপাড়ার সামশুল আলমের ছেলে ওয়াহিদুল হক। পরস্পর যোগসাজশে অর্থের লোভে ওয়াহিদুল হক নাম ধারণ করে তিনি কারাভোগ করতে রাজি হন।

চট্টগ্রামে এভাবে টাকার বিনিময়ে একজনের সাজা অন্যজন খাটার বেশ কয়েকটি ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছেন আদালত। প্রতারণার ঘটনায় ওয়াহিদুল হক ও সৈয়দ করিমকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ বখতিয়ার উদ্দীন।

আত্মসমর্পণ করা আসামির জামিন শুনানির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর সত্যয়ন করা আসামির জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্টের ফটোকপি দরখাস্তের সঙ্গে সংযুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আসামির জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট না থাকলে

জন্ম নিবন্ধন/ছবিযুক্ত অন্য কোনো পরিচয়পত্রের ফটোকপি সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর প্রত্যয়নপত্রসহ দরখাস্তের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। এ আদেশ ১৮ মার্চ থেকে চট্টগ্রাম আদালতে কার্যকর হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে এক অফিস আদেশে বলা হয়, ‘সম্প্রতি কয়েকটি মামলায় আত্মসমর্পণ করা আসামির জামিন শুনানির ক্ষেত্রে মূল আসামির পরিবর্তে অনভিপ্রেতভাবে ভিন্ন ব্যক্তিকে উপস্থাপন করার বিষয়টি আদালতের নজরে এসেছে। কিছু ক্ষেত্রে এক আসামির পরিবর্তে অন্য আসামির কারাভোগের ঘটনাও ঘটেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে। এরূপ অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ও অনিয়ম রোধকল্পে আত্মসমর্পণ করা সব আসামির জামিন শুনানির ক্ষেত্রে সঠিক আসামি নিশ্চিত করা আবশ্যক।’

একই আদালতে ২৬ ফেব্রুয়ারি মূল আসামি মোজাম্মেল হকের পরিবর্তে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন তার ফুপাতো ভাই মো. দিদারুল আলম। বিষয়টি আদালতের নজরে এলে মোজাম্মেলকে জিজ্ঞাসাবাদে সত্যতা প্রকাশ পায়। পরে আদালত দু’জনকেই কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ ঘটনায়ও বেঞ্চ সহকারী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় দু’জনকে আসামি করে মামলা করেন।

জানা গেছে, রাউজান উপজেলার দলইনগর এলাকার মোহাম্মদ রফিকের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নেয়ার পর তা ফেরত দেননি কর্ণফুলী চরলক্ষ্যা এলাকার আবদুল হকের ছেলে মোজাম্মেল। এ কারণে মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট আদালতে মামলা করা হয়।

গত বছরের ২২ নভেম্বর মোজাম্মেলকে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। জরিমানার টাকা প্রদানে ব্যর্থ হলে আসামিকে অতিরিক্ত আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাভোগ করতে হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

এর আগে ২২ বছরের সাজাপ্রাপ্ত সমর দাশের চার মাস সাজা খেটেছেন তার চাচাতো ভাই অমর দাশ। ২০১৭ সালে অস্ত্র মামলায় ১৭ বছর এবং বিস্ফোরক আইনে সমরের পাঁচ বছর কারাদণ্ড হয়। সদরঘাট থানা পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে প্রকৃত ঘটনা। এরপর সমর দাশকে গ্রেফতার করা হয়।

এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ওসমান উদ্দিন জানান, প্রতারণার মাধ্যমে একজনের সাজা যাতে অন্যজন খাটতে না পারে এ জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আদালতে আত্মসমর্পণ করা আসামির জামিন শুনানির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর সত্যয়ন করা ছবিযুক্ত আইডি কার্ড জমা দিতে হবে। এতে প্রতারণার লাগাম টেনে ধরা যাবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/160851