২৪ মার্চ ২০১৯, রবিবার, ৮:৫৩

ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট চলছে। ওয়াসা পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পানি সরবরাহ করলেও সে পানিতে দুর্গন্ধ থাকায় এ পানি সরাসরি পান করতে পারছেন না বসিন্দারা। বিশুদ্ধ পানির জন্য ওয়াসারই পাম্পে ভিড় করছেন বিভিন্ন এলাকাবাসী। এ ছাড়া অনেকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা এড়াতে ফুটিয়ে খাচ্ছেন। দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে পেটের পীড়া ও চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন নগরবাসী।

রাজধানীর পূর্ব দোলাইরপাড় এলাকায় ওয়াসার পানির পাম্পে প্রতিদিনই এলাকাবাসীকে ভিড় করতে দেখা যায়। সেখানে কলস নিয়ে দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে পানি সংগ্রহ করেন তারা। দিনে-রাতে সবসময়ই এখানে পানিসংগ্রহকারীদের ভিড় লেগে থাকে। পাম্পে পানি নিতে আসা গৃহবধূ পারুল বেগম বলেন, বাসার পানিতে দুর্গন্ধ। খাওয়া যায় না। আবার বাসায় ঠিকমতো গ্যাসও থাকে না। তা ছাড়া ওই পানি ফুটানোর পরও প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায় না। ওই পানি ছেলেমেয়েরা খেতে পারে না। এ কারণে লাইনে দাঁড়িয়ে হলেও পাম্প থেকে ভালো পানি নিয়ে যাই। কিন্তু এত ভিড় থাকে পানি নিতে দুই-তিন ঘণ্টা লেগে যায়।

আরিফুর রহমান নামে এক বাসিন্দা বলেন, ওয়াসার বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করা পানিতে দুর্গন্ধ ও লালচে রঙের। এ পানি দিয়ে গোসল করলেও চর্মরোগ হচ্ছে। আর অনেকে বাসায় জারের পানি কিনে পান করেন। এ জন্য প্রতি মাসে ওয়াসার বিল দেয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।

পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, যাত্রাবাড়ী, মুগদা, মানিকনগর, বাসাবো, মালিবাগ, মগবাজার, মধুবাগ, বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার সরবরাহ করা পনিতে দুর্গন্ধ রয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। মুগদা থানাসংলগ্ন পাম্প ও বাসাবো বালুর মাঠে স্থাপিত ওয়াসার পাম্পে কয়েক বছর ধরে বিশুদ্ধ খাবার পানি নিতে এলাকাবাসীর দীর্ঘ লাইন পড়ে যেত। মানুষ বিনামূল্যে পানি নিয়ে খেতে পারতেন। কিন্তু ওই দুই পাম্পে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করেছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। এখন এলাকাবাসীকে বিশুদ্ধ পানি কিনে পান করতে হচ্ছে। অনেকে নিজে এসে আবার অনেকে বিভিন্ন পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পানি কিনে পান করছেন। প্রতিটি জার ৫০-৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

বাসাবো কদমতলা এলাকার গৃহবধূ রোকেয়া খাতুন নয়া দিগন্তকে জানান, ওয়াসার পানিতে সারা বছরই দুর্গন্ধ থাকে। গরম পড়লে দুর্গন্ধ আরো বেড়ে যায়। এ পানি কখনোই সরাসরি পান করা যায় না। সারা বছরই পানি ফুটিয়ে পান করতে হয়। ফুটানোর পর পানি ঠাণ্ডা হলে তারপর আবার পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্রে দিলে তবেই পান করা যায়। অনেক দিন পান করতে করতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেলেও নুতন আত্মীয়স্বজন এলে প্রথমে তারা এ পানি পান করতে পারেন না। তখন পাম্প থেকে জার পানি কিনে আনতে হয়।

নবাবকাটরা (নিমতলী) এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, ওয়াসার সরবরাহ করা পানি দেড়-দুই ঘণ্টা ফুটাতে হয়। এর পরও গন্ধ থেকে যাচ্ছে। এতে এক দিকে ওয়াসাকে পানির বিল দিতে হচ্ছে, অন্য দিকে গ্যাসও ফুরাচ্ছে। দীর্ঘ দিন থেকেই এ অবস্থা চলে এলেও ঢাকা ওয়াসা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

মুগদা এলাকার বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম বলেন, পানিতে দুর্গন্ধ ও লালচে হওয়ার কারণে বাসার অনেকের চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। মাঝেমধ্যেই ছেলেমেয়েরা পেটের পীড়ায় ভুগছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ওয়াসার কর্মকর্তাদের সাথে কথা বললে তারা জানান সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার থেকে এ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। সেখানে ক্লোরিনসহ বিভিন্ন উপাদান দিয়ে পানি শোধন করা হচ্ছে। এর পরও গন্ধ থেকে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এ গন্ধ যাবে না বলেও তারা জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ওয়াসার মডস জোন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আল আমিন নয়া দিগন্তকে বলেন, পূর্ব দোলাইরপাড় এলাকায় সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার এবং স্থানীয় পাম্প থেকে পানি সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এলাকায় অনেক সময় অবৈধ সংযোগ নিতে গিয়ে এলাকাবাসী ওয়াসার লাইনের সাথে ড্রেনের পানির সংযোগ ঘটিয়ে ফেলেন। তখন পানিতে দুর্গন্ধ হয়। অবৈধ লাইন অপসারণে নিয়মিত অভিযান চালানো হয় বলে তিনি জানান।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/397725